The outsider /The Stranger - Albert Camus – Summary in Bangla |
দ্যা স্ট্রেনজার / দ্যা আউটসাইডার – আলবার্ট ক্যামুস – কাহিনী সংক্ষেপ
বর্ণনাকারী মারসো (Meursault) আলজিয়ার্সে বসবাসকারী একজন যুবক। তাঁর মা মারেনগোতে (Marengo) অবস্থিত বৃদ্ধাশ্রমে থাকতেন। উপন্যাসের শুরুতেই দেখা যায়, বৃদ্ধাশ্রম থেকে মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে দ্রুত বাসে করে রওনা হয়ে যায়। সে পুরো রাস্তায় ঘুমিয়েই কাটায়। সেখানে গিয়ে সে আশ্রমের পরিচালকের সাথে কথা বলে। পরিচালক তাঁর মাকে দেখার অনুমতি দেয়। লাশের কফিন যার তত্ত্বাবধানে ছিল সে তার মাকে দেখাবে কিনা জিজ্ঞাসা করলে, মারসো না করে দেয়।
সেখানকার নিয়ম অনুযায়ী লাশের পাশে রাত্রী জাগরণ করা হত। সেদিন বর্ণনাকারী ও লাশের তত্ত্বাবধায়ক একসাথেই লাশের পাশে রাত্রী জাগরণ করে। এছাড়া তাদের সাথে সেই আশ্রমের অন্যান্য বৃদ্ধ নারী ও পুরুষরাও ছিল। বর্ণনাকারী সে রাতে কফি খায়, ধুমপান করে কাটিয়ে দেয়।
পরদিন সকালে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানের পূর্বে মারসো আবার আশ্রমের পরিচালকের সাথে কথা বলেন। তিনি জানান এই অনুষ্ঠানে অন্য বৃদ্ধদের কখনোই যেতে দেয়া হয় না। তবে আজকে থমাস পেরেজ নামক একজনকে তাদের সাথে যেতে দেয়া হবে কারন মারসোর মা জীবিত থাকাকালীন সময়ে এই লোকটি তাঁর মায়ের অনেক কাছের একজন মানুষ ছিল। তারা একটি গ্রামের কবরে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্যে যাত্রা করে। বৃদ্ধ থমাস পেরেজের এই যাত্রায় মূর্ছিত হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা হয়। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠান শেষে, রাতেই সে আলজিয়ার্সে ফিরে আসে।
পরের দিন সে বিচে সাতার কাটতে যায়। সেখানে তাঁর সাথে মেরি কারদোনা নামক একজন প্রাক্তন সহকর্মীর দেখা হয়। বিকেলে তাঁর সিনেমা হলে হাস্যরসাত্বক সিনেমা দেখতে যায় এবং একসাথে রাত্রি যাপনের মত অপকর্মে লিপ্ত হয়। সকালে ঘুম থেকে উঠে সে আর তাকে দেখে না। মারসো সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘরে ও ব্যালকনীতে শুয়ে বসে থেকে ও মানুষ দেখে কাটিয়ে দেয়।
পরের দিন অফিসে যায় ও দুপুরে তাঁর বন্ধু ইমানুএলের সাথে দুপুরের খাবার খেয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে বাসায় ফিরে আসে। সিড়ি দিয়ে উঠার সময় সে তাঁর প্রতিবেশী সালামানোর বাসায় যায় যার একটি ঘেয়ো কুকুর ছিল। এরপর সে তাঁর আর এক প্রতিবেশী রেমন্ড সিনতেস এর কাছে যায়। রেমন্ড সিনতেস ছিল বেশ্যাদের দালাল। যদিও সে নিজেকে একজন দারোয়ান হিসেবে দাবী করে। রেমন্ড তাকে রাতের খাবারের জন্যে দাওয়াত করে। খাবার খেতে খেতেই রেমন্ড তাঁর রক্ষিতাকে নিয়ে কিছু কথা বলে। সে জানায় তাঁর রক্ষিতা তাঁর সাথে প্রতারণা করেছে। সে তাকে সকল খরচ দেয়া সত্ত্বেও তাঁর রক্ষিতা আরো অর্থ চায়। রেমন্ড প্রতিবাদ করায় তাঁর ভাইয়ের মাধ্যমে রেমন্ডকে মারপিট করার চেষ্টা করে। রেমন্ড এখন তাকে শাস্তি দিতে চায়। এই জন্যে তাঁর কাছে একটা চিঠি লিখে দিতে হবে। মারসো রাজি হয়ে যায় এবং সে রাতেই একটি চিঠি লিখে দেয়।
পরদিন মারি তাঁর বাসায় এসে জিজ্ঞাসা করে সে কি তাকে ভালো বাসে কিনা। মারসো বলে এর যদি সত্তিকার ভাবেই কোন অর্থ থাকে তবে সম্ববত সে ভালোবাসে না। তারা দুজনেই রেমন্ডের ফ্লাট থেকে চিৎকার শুনতে পেল। হলঘরে বের হয়ে তারা একজন পুলিসকে সে উপস্থিত হতে দেখল। সে পুলিশ রেমন্ডকে থাপ্পর দেয় এবং তাঁর রক্ষিতার গায়ে হাত তোলায় থানায় জবাবদিহিতার জন্যে যেতে বলে। তখন রেমন্ড মারসোকে থানায় তাঁর পক্ষে সাফাই দেয়ার জন্যে বলে। মারসো রাজি হয়। রাতে সালামানোর বিলাপ শুনে তাঁর ঘরে গিয়ে দেখে তাঁর কুকুরটা হারিয়ে গিয়েছে।
মারি বিবাহের ব্যপারে মারসোকে বললে সে আগের মতই উত্তর দেয়। আরো বলে যদি সে চায় তাহলে সে করবে। অফিসে গেলে তাঁর বস তাকে জানায়, সে রাজি থাকলে তারা প্যারিসে তাকে অফিসের কাজে ট্রান্সফার করতে চায়। মারসো জানায় তাঁর কোন সমস্যা নেই। মারসো মারিকেও এই খবর দেয়। মারিও রাজি হয়।
তাঁর পরের রবিবারে মারসো রেমন্ডের অনুরোধে তাঁর বন্ধু ম্যাসনের বীচ হাউজে মারিকে সাথে নিয়ে অবসর যাপনের জন্যে যায়। তারা দুপুরে আনন্দের সাথেই সাঁতার কাটে এবং দুপুরের খাবার গ্রহণ করে। এরপর তারা তিনজন মারসো, রেমন্ড ও ম্যাসন বীচে হাটতে যায়। সেখানে দুজন আরব তাদের পিছু নেয়। যাদেরকে মারসো আগেও দেখেছিল রেমন্ডের পিছু নিতে। এদের একজন রেমন্ডের রক্ষিতার ভাই। তারা কাছে এসে রেমন্ডকে ছুরি দ্বারা আঘাত করে। তারা বাসায় ফিরলে রেমন্ড ক্ষত পরিষ্কার ও বাধাই এর পর দুইজন এক সাথে আবার বের হয়। একটা ঝরনার পাশে সেই দুই আরবকে তারা আবিষ্কার করে। রেমন্ড পিস্তল বের করে গুলি করে দিতে চায়। কিন্তু মারসো তাকে থামায়। কারন তারা নিরস্ত্র ছিল। এই অবস্থায় গুলি করলে সাক্ষাৎ মৃত্যুদণ্ড। বাসায় ফিরে আসার পর মারসো আবার বীচে হাটতে বের হয় এবং সেই দুই আরবের সাথে আবার দেখা হয়। দূর থেকে মারসোর দিকে ছুরি উঁচু করলে মারসো ৫টি গুলি করে তাকে হত্যা করে।
মারসোকে গ্রেফতার করে জেলে নেয়া হয়। তাঁর উকিল তাঁর প্রতি খুবই বিরক্ত হয়। কারন এই অপরাধের পরও তাঁর মাঝে কোন অনুশোচনা ছিল না পাশাপাশি তাঁর মায়ের মৃত্যুর পর তাঁর মাঝে শোকের অভাব ছিল। এর পর তাঁর সাথে এই ঘটনা তদন্তের জন্যে ম্যাজিস্ট্রেট দেখা করে। সে মারসোর এই কাজের কোন কারন খুজে পায় না। ম্যাজিস্ট্রেট মারসোকে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে বলে। সে তা প্রত্যাখ্যান করে ও জানিয়ে দেয় সে কখনোই ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না। ম্যাজিস্ট্রেট তাঁর এই অবিশ্বাস মেনে নিতে পারে না। তাই ম্যাজিস্ট্রেট তাকে ‘মসিয়ে অ্যান্টিখ্রিস্ট’[Monsieur Antichrist] নামে আখ্যায়িত করে। একদিন মারি তার সাথে দেখা করে যায়। মারি তাকে জোর করে হাসতে বাধ্য করে। তাকে জানায় উকিল ভালোভাবেই কাজ করছেন এবং তাঁর মৃত্যুদণ্ড হবে না। সে খালাস পেয়ে যাবে। তখন তারা বিয়ে করবে।
বিচার প্রক্রিয়া চলাকালিন সময়ে মারসো তাঁর জেল জীবনে খাপ খাইয়ে নেয়। প্রথমে সে সব কিছুর অনুপস্থিতিতে খুব কষ্ট পেতো। এক সময় সেটা সে মানিয়ে নেয়। সে দিনের বেশিরভাগ সময় সে ঘুমিয়েই কাটিয়ে দেয়। বাকি সময় সে তাঁর জেলখানার কামরার ভিতরের জিনিস গুলো নিয়ে চিন্তা করে কাটায়।
বিচারের শেষ সময় ঘনিয়ে আসলে একদিন মারসোকে সকালে কোর্ট হাউজে নিয়ে যাওয়া হয়। সাধারন জনগণ ও সাংবাদিকরা কোর্ট হাউজে ভীর করে। কোর্টে পক্ষের ও বিপক্ষের উকিলের মাঝে কথার লড়াই শুরু হয়। খুনের বিচার থেকে তাদের কথা ঘুরে চলে যায় মারসোর মায়ের মৃত্যুর পরে তাঁর অনুভূতি ও কর্মকাণ্ডের বিচারের দিকে। প্রথমে সেখানে উপস্থিত সবার সাক্ষ নেয়া হয়। তারা সকলেই তাঁর পক্ষে সাক্ষ দিলেও কাজ হয় না।
সরকার পক্ষের উকিল জোড়ালো ভাবে দাবী জানায় যে তাঁর মায়ের মৃত্যুর পরের দিন রক্ষিতা নিয়ে হাসির সিনেমা দেখতে যাওয়া ও এক সাথে রাত কাটানোর মত গর্হিত ঘটনা ঘটাতে পারে, সে আসলে একজন দয়ামায়াহীন দানব ছাড়া আর কিছু না। তাঁর মাঝে নৈতিকতার নূন্যতম গুণ নেই। সে আসলে সমাজের জন্যে খুবই ক্ষতিকর। বিচারকরা রাতে আটটায় তাকে তাঁর অপরাধের জন্যে শিরচ্ছেদের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড দেয়।
মারসো তাঁর জেলের কক্ষে ফিরে আসে ও তাঁর ভাগ্য নিয়ে চিন্তা করে। তাঁর দুর্ভাগ্যকে মেনে নিতে খুব কষ্ট হয়। সে একটি সফল আপীল (আবেদন) এর স্বপ্ন দেখে। চ্যাপলেইন (যাজক) তাঁর সাথে দেখা করতে চাইলে সে রাজি হয় না। একদিন সে জোর করেই তাঁর কক্ষে আসে। সে তাকে তাঁর অবিশ্বাস ত্যাগ করে, ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে বলে। ম্যাজিস্ট্রেট এর মতই সেও অবাক হয় যে, মৃত্যুর পরের জীবন সম্পর্কে মারসোর কোন বিশ্বাস নেই দেখে। মারসো শীঘ্রই রেগে যায় ও যাজককে ধরে চেঁচাতে থাকে। সে বলে মারসোই সঠিক কারন সে এই অর্থহীন পৃথিবীর উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছে। সে আরো বিশ্বাস করে পৃথিবীতে মানুষের উপস্থিতির কোন অর্থ নেই। সে ভবিষ্যৎ নিয়ে সব ধরনের আশা ছেড়ে দিয়েছে। এটাই তাকে আনন্দ দেয়। সে তাঁর ভাগ্যে যা আছে, তাঁর উপর নিজেকে ছেড়ে দিয়ে মৃত্যুর প্রতিক্ষা করছে।মারুফ আল মাহমুদ
No comments:
Post a Comment