Othello – William Shakespeare – Bangla/Bengalli - 3 |
Othello - The Tragedy of Othello, the Moor of Venice – William Shakespeare – Summary in Bengali - Part 3 of 3
পর্ব ২ এর পর থেকে
ইয়াগোর কথা শুনে ওথেলো নিজেও আশ্চর্য
হয়ে গেলেন, বললেন, ‘কী বলছ তুমি? রুমালটা ক্যাসিও দিয়েছেন তার প্রেমিকাকে? কিন্তু
তিনি রুমালটা পেলেন কোথায় ?
মুখে না বললেও হাব-ভাবে,
আকারে-ইঙ্গিতে ইয়াগো বোঝাতে চাইলেন ওথেলোকে
যে ডেসডিমোনাই রুমালটা দিয়েছেন ক্যাসিওকে। কিন্তু ইঙ্গিতটা ধরতে পারলেন না ওথেলো। খোলাখুলিই বললেন, ‘ডেসডিমোনা কেন ওর রুমালটা
ক্যাসিওকে দেবে? ভালোবাসার উপহার হিসেবেই আমি তাকে দিয়েছিলাম ওটা।
মুখ টিপে হেসে বলল ইয়াগো, তা হোক না কেন হয়তো ভালোবাসার
উপহার স্বরূপ ডেসডিমোনা ওটা দিয়েছেন ক্যাসিওকে।
‘কী বলছ তুমি?’ রাগে জ্বলে
উঠল ওথেলোর দু-চোখ, দাঁতে দাঁত চেপে কোমরে আঁটা
ছোরার হাতলটা চেপে ধরলেন তিনি। ডেসডিমোনার উপর ওথেলো বেজায় রেগে গেছেন একথা আঁচ করে
মনে মনে বেজায় খুশি হল ইয়াগো। তার মতলব
হাসিল হবার পথে, ডেসডিমোনার ব্যাপারে ওথেলোর মনে সন্দেহ জাগাতে পেরেছেন
তিনি। এবার সাহসে ভর করে আর একটু অগ্রসর হল ইয়াগো। ডেসডিমোনা ক্যাসিওকে ভালোবাসে আর দু-জনের
মাঝে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে — একথাই জোর গলায় ওথেলোকে
বোঝাতে চাইল ইয়াগো। ওথেলোর মনে
পড়ে গেল ক্যাসিওর অপরাধ মাফ করে তাকে স্বপদে বসানোর অনুরোধ ডেসডিমোনাই করেছিল তাকে।
ওথেলো ধরেই নিলেন ডেসডিমোনা ভালোবাসে ক্যাসিওকে আর সেজন্যই সে তাকে ওরূপ অনুরোধ করেছিল।
ওথেলোর মন ভেঙে গিয়েছে বুঝতে পেরে ইয়াগো বলতে লাগল, বৃথাই আপনি মন খারাপ করছেন সেনাপতি। আপনার স্ত্রীর ক্ষেত্রে যা ঘটেছে তা
স্বাভাবিক। কোনও নারীর পক্ষে সম্ভব নয় চিরকাল একজন পুরুষকে ভালোবাসা। তাছাড়া ক্যাসিও
আপনার চেয়ে কমবয়সি, দেখতেও সে আপনার চেয়ে বেশি সুন্দর। সেক্ষেত্রে
ক্যাসিওর প্রতি ডেসডিমোনার দুর্বলতা খুবই স্বাভাবিক।
ইয়াগোর মতো নিচু মনের লোকের কথা বিশ্বাস
করতে মন চাইছে না ওথেলোর, তবুও বয়ে যাওয়া ঘটনার স্রোত একে একে ভেসে এল
তার সামনে। ডেসডিমোন যে একজন অসতী, নষ্ট চরিত্রের মেয়ে----
এ ধারণাই গড়ে উঠল তার মনে। তার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠার আগে
ক্যাসিওই ছিল ডেসডিমোনার গুপ্ত প্রেমিক, সবার অলক্ষ্যে তারা
একে অপরকে ভালোবাসতেন। ওথেলোর সাথে ডেসডিমোনার বিয়ে হলে তাদের গোপন প্রেমের সম্পর্ক
বজায় থাকবে। দুজনে কাছাকাছি থাকতে
পারবে —- সে উদ্দেশ্যেই তাদের হিতাকাঙ্ক্ষী সেজেছিলেন ক্যাসিও,
এ কথাই ধরে নিলেন ওথেলো। নইলে তার দেওয়া প্রেমের উপহার কীভাবে ডেসডিমোনা
দিল ক্যাসিওকে? তাছাড়া একটা গুরুতর অপরাধের দরুন তিনি ক্যাসিওকে
বরখাস্ত করেছেন তার সহকারীর পদ থেকে। তারপর তাকে স্বপদে বহাল করার জন্য কেনই বা তাকে
অনুরোধ করেছেন ডেসডিমোনা। ওথেলোর মনে কোনও সন্দেহ নেই ক্যাসিওর প্রতি ভালোবাসার টানেই
এ কাজ করেছে ডেসডিমোনা? এ সব কথা ভাবতে ভাবতে গরম হয়ে উঠল
ওথেলোর মাথা।।
এরপর আবার একবার এল ডেসডিমোনা। কিছু না
বুঝেই সে তার স্বামীকে অনুরোধ করল ক্যাসিওকে পূর্ব পদে রাখার জন্য। ডেসডিমোনার কথা
শুনে যারপরনাই রেগে উঠলেন ওথেলো। সবার সামনে
তিনি ডেসডিমোনাকে অসতী, নষ্ট মেয়েমানুষ বলে গালি-গালাজ করতে লাগলেন। বেজায় মারও দিলেন তাকে। ডেসডিমোনা স্বপ্নেও ভাবেনি কদিন
আগে যিনি তাকে পাগলের মতো ভালোবেসেছেন, আজ তারই হাতে তাকে
মার খেতে হল। সে ওথেলোর কাছে জানতে চাইল কোন অপরাধে তিনি তার সাথে এরূপ ব্যবহার করছেন।
তাকে মারতে মারতেই জবাব দিলেন ওথেলো ‘বল, কেন হারিয়েছিস আমার মায়ের দেওয়া রুমাল? ভালো চাস
তো বলে দে কোন নাগরকে দিয়েছিস রুমালটা? নইলে তোর কপালে অশেষ
দুর্ভোগ আছে সে কথাটা মনে রাখিস।’
কাঁদতে কাঁদতে জানতে চাইল ডেসডিমোনা, তুমি কি আমায় ভালোবাস না? আগে তো কখনও এরূপ ব্যবহার
করনি আমার সাথে? তুমি কি পার না আগের মতো আমায় ভালোবাসতে?
গলা চড়িয়ে বললেন ওথেলো, ‘না, পারি না। আমার ভালোবাসা যদি পেতে চাও তাহলে রুমালটা এনে আমাকে দেখাও। তবেই
আমি আগের মতো তোমায় ভালোবাসতে পারব, নইলে নয়। আমার শেষকথা তোমায় বলে দিলাম।’
ওথেলোর হাতে বেজায় মার খাওয়া এবং তার
মুখ থেকে এরূপ কুৎসিত গালাগাল শুনে বেদনায় যেন বোবা হয়ে গেল ডেসডিমোনা। সামান্য একটা
রুমাল হারানো যে ওথেলোর কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে তা স্বপ্নেও ভাবেনি ডেসডিমোনা।
সে নিজেও জানে না কোথায় কী করে হারিয়ে গেল সেই রুমাল। তবে কি কেউ সেটা চুরি করেছে? এরূপ নানা প্রশ্ন উঠল তার মনে হতভাগিনী ডেসডিমোনা মাথা ঘামিয়েও জবাব পেল
না এ প্রশ্নের।
এরই মাঝে একদিন রডরিগো এসে সরাসরি বলল
ইয়াগোকে,
কদূর এগুলো আমার কাজ? শুরু থেকেই তো আপনি
আমায় আশ্বাস দিয়ে আসছেন আর অপেক্ষা করতে বলছেন সবুরে মেওয়া ফলে বলে। ডেসডিমোনাকে পাবার
জন্য আমায় অনেক দামি দামি উপহার দিতে হবে। এ কথা আপনি হামেশাই বলেছেন। আপনার কথায় বিশ্বাস
করে প্রচুর টাকা, হিরে-জহরত আর দামি
অলংকার তুলে দিয়েছি আপনার হাতে। আপনি আমায় এও জানিয়েছেন সে সৱ উপহার হাসিমুখেই গ্রহণ
করেছে ডেসডিমোনা। তবু আমি একবারও যাচাই করে দেখিনি আপনার কথার সত্যতা।
ডেসডিমোনার কাছে গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখিনি
সত্যিই সে আমার দেওয়া উপহার সাদরে গ্রহণ করেছে কিনা। আপনার কথা সত্যি হলে এর প্রতিদানে
ডেসডিমোনা আমার প্রতি কিছুটা অনুগ্রহ দেখাবে, এটাই তো আশা করব আমি। আপনি
বলছেন আমার দেওয়া উপহারগুলি সে সাদরে গ্রহণ করছে, অথচ তার
সাথে দেখা হলে এমন ভাব দেখাচ্ছে যেন আমার প্রতি কোনও আগ্রহ তার নেই। বেশ বুঝতে পারছি
আপনি ঠকিয়েছেন আমায়। যদি ভালো
চান তো আমার টাকা। কড়ি, গয়নাগাটি সব ফেরত দিন, নচেৎ এমন ব্যবস্থা করুন যাতে ডেসডিমোনা আমার প্রতি আকৃষ্ট হয়, ভালোবাসে আমাকে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এর ব্যবস্থা করুন, নইলে তার ফল ভালো হবে না সে কথা আগে-ভাগেই বলে
দিলুম আপনাকে।
রডরিগোর কথা শুনে বেজায় দুশ্চিন্তার মধ্যে
পড়ে গেল ইয়াগো। ডেসডিমোনাকে
পেতে হলে তাকে দামি দামি উপহার দিতে হবে – এতদিন ধরে তাকে এ গপপো
শুনিয়ে প্রচুর টাকা তার কাছ থেকে হাতিয়েছে ইয়াগো। রডরিগোর কথা শুনে বোঝা গেল এ ব্যাপারে সে সরাসরি সন্দেহ করছে ইয়াগোকে।
সে স্পষ্ট বুঝতে পারল রডরিগোকে শোষণ করার এ খেলাটা এবার থামাতেই হবে তাকে, নইলে রডরিগো হয়তো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে নালিশ জানাবে তার বিরুদ্ধে।
তাছাড়া শুধু রডরিগো নয়, ক্যাসিওর দিক থেকেও যে কোনও সময় বিপদ
ঘনিয়ে আসতে পারে। ওথেলো যদি ক্যাসিওকে জিজ্ঞেস করেন ডেসডিমোনা সত্যিই তাকে রুমাল উপহার
দিয়েছে কিনা, তখন ক্যাসিও বলবেন, না, ডেসডিমোনা নয়, অন্য
কেউ এসে রুমালটা রেখেছিল তার ঘরে। সে ব্যাপারে ওথেলো যদি সত্যিই খোঁজ-খবর নেন, তখনই ফাঁস হয়ে যাবে সব কথা ভেস্তে যাবে
তার মতলব। ইয়াগো ভেবে ভেবে স্থির করল এবার থেকে সাবধানে এগুতে হবে তাকে, নইলে নিজের চক্রান্তজালে জড়িয়ে পড়বে সে। সব দিক ভেবে সে স্থির করল বাঁচতে
হলে তাকে প্রথমেই হত্যা করতে হবে ক্যাসিওকে এবং সে কাজের জন্য রডরিগোই উপযুক্ত লোক।
ইয়াগো গোপনে দেখা করল রডরিগোর সাথে। সে তাকে বলল যে তার দেওয়া উপহার গুলি
ডেসডিমোনা নিয়েছেন ঠিকই, তবুও তার অদ্ভুত এক মোহ রয়েছে ক্যাসিওর
প্রতি। ইয়াগো রডরিগোকে আরও বোঝাল পথের কাঁটা ক্যাসিওকে খতম করতে না পারলে কোনও আশাই
নেই রডরিগোর। ইয়াগোর কথায় রডরিগো
রাজি হয়ে গেল ক্যাসিওকে খতম করতে। এর কিছুদিন পরে একদিন রাতের অন্ধকারে রাস্তার মাঝখানে
তলোয়ার হাতে রডরিগো ঝাপিয়ে পড়লেন ক্যাসিওর উপর। কিন্তু রডরিগোর দুর্ভাগ্য, সামান্য চোট পেলেন ক্যাসিও। নিজের তলোয়ার দিয়ে তিনি পালটা আঘাত হানলেন রডরিগোর
উপর। ক্যাসিওর আঘাত সামলাতে না পেরে টাল খেয়ে রাস্তার উপর পড়ে গেল রডরিগো। আড়ালে দাঁড়িয়ে সব কিছু দেখছিল ইয়াগো। আঘাত পেয়ে রডরিগো রাস্তায় পড়ে যেতে সে আর ঝুঁকি না নিয়ে লোকজন
আসার আগেই ছুটে এসে রডরিগোর বুকে সজোরে বসিয়ে দিল তার তলোয়ার। কিছুক্ষণ বাদে স্থানীয়
লোকেরা হাজির হল সেখানে, ধরাধরি করে তারা ক্যাসিওকে বাড়িতে পৌঁছিয়ে
দিল। অবশ্য তার আগেই গা ঢাকা দিল ধূর্ত ইয়াগো।
এদিকে ভেনিসের ডিউকের এক বিশেষ বার্তা
বহন করে সাইপ্রাসে এসে হাজির হলেন লোডোভিকো আর গ্র্যাশিয়ানো নামে ভেনিসের দুজন সেনেটর।
তার জানালেন মৌরিটানিয়া প্রদেশে অশান্তি শুরু হবার দরুন ওথেলোকে সে প্রদেশের গভর্নরের
দায়িত্বভার নেবার নির্দেশ দিয়েছেন ডিউক। আর ওথেলোর অনুপস্থিতে সাইপ্রাসের গভর্নরের
দায়িত্ব পাবেন তার সুযোগ্য সহকারী ক্যাসিও কিন্তু ওথেলো যে ইতিমধ্যে গুরুতর অপরাধের
শাস্তিস্বরূপ ক্যাসিওকে পদচ্যুত করেছেন সে খবর ডিউকের কানে পৌঁছায়নি।
ভেনিসের ডিউকের নির্দেশ পেয়ে মোটেও খুশি
হলেন না ওথেলো। তাকে মরিটানিয়ায়
যেতে হবে আর সাইপ্রাসের শাসনভার থাকবে ক্যাসিওর হাতে। তাহলে ডেসডিমোনার কী হবে? বাইরে যাবার আগে তার দায়িত্বও কি ক্যাসিওকে দিয়ে যেতে হবে? এ প্রশ্ন ওথেলোর মনে এলেও এর উত্তর তিনি জানেন না। ডেসডিমোনা যে ক্যাসিওর
প্রতি আসক্ত তা ধরেই নিয়েছেন তিনি। তার সাথে ডেসডিমোনাকে মরিটানিয়ায় নিয়ে যাবার কথা
বললে সে নিশ্চয়ই তাতে রাজি হবে না।
তিনি স্থির করলেন দূরে যাবার ব্যাপারে
ইয়াগোর সাথে পরে পরামর্শ করে নেবেন। কথায় কথায় ডেসডিমোনার নাম উঠলে তেলে-বেগুনে
জ্বলে উঠলেন ওথেলো। এমন কি ইয়াগোর
সামনে মন্তব্যও করে বললেন, যাবার আগে আমি হত্যা করব ডেসডিমোনাকে – ক্যাসিওর
জন্য বাঁচিয়ে রাখব না তাকে।
ডেসডিমোনার মৃত্যু হলে ইয়াগোও বেঁচে যায় আর সেই সাথে রক্ষা হয় সবদিক। কাজেই
ওথেলোর কথায় সায় দিয়ে বললেন ইয়াগো, আপনি ঠিকই বলেছেন সেনাপতি,
ডেসডিমোনাকে হত্যা করুন আপনি। তবে অস্ত্র দিয়ে নয়, এমনভাবে তাকে গলা টিপে মারুন যাতে কেউ বুঝতে না পারে কীভাবে তার মৃত্যু
হয়েছে। ইয়াগোর কথা শুনে প্রেরণা পেলেন ওথেলো।
তখন গভীর রাত। বিয়ের কনের পোশাক পরে বিছানায়
শুয়ে আছে ডেসডিমোনা! বহু চেষ্টা সত্ত্বেও ঘুমোতে পারছে না সে। তার
দু-চোখের পাতায় জমে থাকা ঘুমকে বারবার দূরে ঠেলে দিচ্ছে একরাশ
অজানা ভয়। ইচ্ছে করেই
বিয়ের পোশাক পড়েছে ডেসডিমোনা। তার আশা বিয়ের পোশাক পরনে দেখলেই তার প্রতি হারানো বিশ্বাস
আবার ফিরে পাবেন ওথেলো।
এমিলিয়াকে বিদায় দিয়ে তিনি দু-চোখ
বুজে অপেক্ষা করতে লাগলেন ওথেলোর জন্য।
কিছুক্ষণ বাদে পা টিপে টিপে ওথেলো শোবার
ঘরে ঢুকলেন। ডেসডিমোনার দিকে তাকাতেই হারানো প্রেম-ভালোবাসার সুখ-স্মৃতি তার অবুঝ মনকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল জলস্রোতের মতো। হাঁটু গেড়ে তার স্ত্রীর খাটের পাশে বসলেন ওথেলো। পাগলের মতো চুমু খেতে লাগলেন ডেসডিমোনার ঠোটে, গলায় আর কপালে। সে চুম্বনের পরশে জেগে উঠল ডেসডিমোনা। চোখ খুলে দেখতে পেল
চুম্বনে চুম্বনে তাকে ভাসিয়ে দিচ্ছেন ওথেলো।
চাপা স্বরে ডেসডিমোনা বলল, ‘প্রিয়তম, উঠে এস!’
স্ত্রীর কথা শুনেই আবার পর মুহূর্তে ইস্পাতের
মত কঠোর হয়ে উঠলেন ওথেলো। বললেন, ‘আমি তোমায়
হত্যা করতে এসেছি ডেসডিমোনা।’
ওথেলোর কথাটা প্রথমে বিশ্বাস করতে চাইল
না ডেসডিমোনা। কিন্তু কিছুক্ষণ বাদে সে বুঝতে পারল ওথেলো সতিই তাকে হত্যা করতে এসেছেন।
সম্মুখে মৃত্যু নিশ্চিত জেনে কাতর মিনতি করে সে বলল, ‘ওগো, তুমি আমায় হত্যা করো না। আমি অসতী নই।’
কিন্তু সে মিনতিতে গলল না ওথেলোর মন।
খাটের উপর উঠে দু-হাতে ডেসডিমোনার গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা
করলেন তাকে।
কিছুক্ষণ বাদে বাইরে থেকে দরজায় ধাক্কা
দিল এমিলিয়া। ওথেলো দরজা
খুলে দেবার পর ঘরে ঢুকল এমিলিয়া, লোডোভিকো, মনট্যানো
এবং চেয়ারে বসা আহত ক্যাসিও – সেই সাথে ইয়াগোকেও
গ্রেপ্তার করে নিয়ে এসেছেন তারা। ইয়াগোর সব চক্রান্তই ফাস হয়ে গেছে। ডেসডিমোনাকে মৃত
দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ল এমিলিয়া। সবার সামনে
ওথেলো স্বীকার করলেন যে তিনিই গলা টিপে মেরে ফেলেছেন ডেসডিমোনাকে। এ সময় কিছুক্ষণের
জন্যে জ্ঞান ফিরে
এল ডেসডিমোনার। ওথেলো তাকে হত্যা করেননি, তিনি নিজেই আত্মহত্যা করেছেন
– সবার সামনে এ কথা বলে চিরদিনের মতো নীরব হয়ে গেলেন তিনি।
ওথেলো এবং উপস্থিত সেনেটরদের সামনে এমিলিয়া জানাল যে সে তার স্বামী ইয়াগোর নির্দেশেই
ডেসডিমোনার রুমাল চুরি করে ক্যাসিওর ঘরে রেখে এসেছে। রুমাল চুরির চক্রান্ত ফাঁস হয়ে
যাওয়ায় খেপে উঠল ইয়াগো। সবার সামনে
ছুরি বের করে সে তা বসিয়ে দিল স্ত্রী এমিলিয়ার বুকে।
এমিলিয়ার কাছ থেকে আসল ঘটনা জানতে পেরে
খুবই অনুতপ্ত হলেন ওথেলো। ডেসডিমোনার
মৃতদেহের সামনে নিজের বুকে ছুরি বসিয়ে আত্মহত্যা করলেন ওথেলো।
সেনেটর লোডোভিগো তার সঙ্গী গ্র্যাশিয়াননাকে
নির্দেশ দিলেন যে যেন ওথেলোর বিষয় সম্পত্তির দেখাশোনা করে। সেই সাথে ডিউকের প্রতিনিধি
হিসেবে তিনি ক্যাসিওকে দায়িত্ব দিলেন ইয়াগোর উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করার।
No comments:
Post a Comment