Othello – William Shakespeare – Bangla/Bengali - 2 |
Othello - The Tragedy of Othello, the Moor of Venice – William Shakespeare – Summary in Bengali - Part 2 of 3
পর্ব ১ এর পর থেকে
এতক্ষণ হাঁ করে একমনে ইয়াগোর কথা শুনছিল
রডরিগো। এবার সে বল, আমায় তাহলে কী করতে হবে?
ইয়াগো বলল, কতদিন সাইপ্রাসে গিয়ে থাকতে হবে তা কে জানে। বিদেশ-বিভুই বলে কথা। কখন কী প্রয়োজন হয় তার ঠিক আছে। তাই যেখান থেকে সম্ভব টাকাকড়ির
জোগাড় কর। ওখানে যাবার সময় সাথে করে বেশি টাকা নিয়ে যেতে ভুলো না। হাতে যদি টাকা না
থাকে তবে স্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে টাকার জোগাড় কর। সেখানে গিয়ে ডেসডিমোনার সম্মতি
আদায়ের জন্য হয়ত তাকে দামি উপহার দেবার প্রয়োজন হতে পারে। তখন তো প্রচুর টাকার দরকার
হবে আর সে টাকা কে দেবে তোমায় ? কাজেই বেশি করে টাকা সাথে
নিয়ে যেও।
‘তাই হবে’, মিনমিন করে রডরিগো সায় দিল ইয়াগোর কথায়।
যুদ্ধক্ষেত্রে তাক্বদির সর্বদাই সদয় ওথেলোর
উপর। হয়তো সে জন্য এবারও বিনাযুদ্ধে জয় হল তার। সমুদ্রের ভিতর তুর্কি নৌবাহিনীকে আক্রমণ
করার আগেই শুরু হল প্রচণ্ড ঝড় বৃষ্টি। সে ঝড়ের দাপটে প্রচণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হল তুর্কি
নৌবাহিনী
--- সেনা ও অস্ত্রশস্ত্র সহ তাদের বহু জাহাজ ডুবে গেল সাগরে অল্প
যে কয়েকটি জাহাজ বেঁচে গেল, তারাও পাল ছিড়ে, মাস্তুল ভেঙে এদিক ওদিক ছড়িয়ে পড়ল দিশেহারা হয়ে। তুলনায় ভেনিসের নৌবাহিনীর জাহাজগুলির কিন্তু সেরূপ ক্ষতি হয়নি।
ভেনিসের বিশাল নৌবাহিনীর সাথে নিরাপদে সাইপ্রাসের মাটিতে পা রাখলেন ওথেলো। ডাঙায় নেমেই শুনালেন তার অধীনস্থ সেনানী ইয়াগো অনেক আগেই পৌঁছে
গেছেন ডেসডিমোনাকে সাথে নিয়ে।
একই সাথে গভর্নর এবং সামরিক প্রশাসক হয়ে
সাইপ্রাসে এসেছেন ওথেলো। তাই পূর্ববর্তী
গভর্নর মনট্যানো তার হাতে তুলে দিলেন শাসন ক্ষমতা। এরপর সাইপ্রাস দুর্গে গভর্নরের আবাসে
এসে ওথেলো দেখা পেলেন তার স্ত্রী ডেসডিমোনার। আক্রমণ করতে এসে তুর্কি নৌবাহিনী নিজেরাই
ধ্বংস হয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগে। তাই উৎসবের আনন্দে মেতে উঠল সাইপ্রাসবাসীরা।
ওথেলো জানেন এখানকার মানুষের উৎসব মানেই
আইন-কানুনের পরোয়া না করে রাতভর মদ গেলা। তাই সহকারী ক্যাসিওকে ডেকে বললেন তিনি,
আমি খুব ক্লান্ত ক্যাসিও। এবার আমার প্রয়োজন বিশ্রামের। শহর সহ সমস্ত
সাইপ্রাস দ্বীপের শান্তিরক্ষার দায়িত্ব তোমার উপর দিয়ে বিশ্রাম করতে চললাম আমি। রাত
জেগে হলেও এবার তোমাকেই পুরো এলাকার শান্তি রক্ষা করতে হবে। কড়া নজর রাখবে যাতে কেউ
দাঙ্গা-হাঙ্গামা না বাধায়।
ওথেলোকে আশ্বাস দিয়ে বললেন ক্যাসিও, ‘আপনি নিশ্চিন্তে
বিশ্রাম করতে যান সেনাপতি। সারারাত জেগে আমি কড়া নজর রাখৰ চারদিকে। ক্যাসিওর কথায় আশ্বস্ত
হয়ে বিশ্রাম নিতে গেলেন ওথেলো।’
আগেই বলা হয়েছে অনেকদিন থেকেই ইয়াগো সুযোগ
খুঁজছিল ওথেলোর চরম সর্বনাশ করার। সুযোগ বুঝে এবার সে চেষ্টায় উদ্যোগী হল সে। ওথেলোর
সহকারী ক্যাসিও যে খুবই খোলা মনের মানুষ, অবাধে মেলামেশা করেন সবার
সাথে তা অজানা ছিল না ইয়াগোর। ক্যাসিও যে তাকে বিশ্বাস করেন, সে কথাও জানতেন ইয়াগো। ওথেলো বিশ্রাম
নিতে যাবার পর তিনি বললেন ক্যাসিওকে, শহরের সবাই যখন এই আনন্দের
দিনে ফুর্তিতে মেতে উঠেছে, তখন আমরাও এক আধটু ফুর্তি করলে
তাতে বাধা কোথায়? আসুন, ওদের মতো
আমরাও একটু মদ খেয়ে ফুর্তি করি। ইয়াগোর আসল মতলবের কথা জানতেন না ক্যাসিও, তাই ইয়াগোর প্রস্তাবে কোনও দোষ খুঁজে পেলেন না তিনি।
ইয়াগোর প্রস্তাবে সায় দিয়ে বললেন ক্যাসিও, বেশ তো, অল্প-স্বল্প খাওয়া
যেতে পারে।
তার প্রস্তাবে ক্যাসিও রাজি আছেন শুনে
শয়তান ইয়াগো মদ ঢালল দুটো পাত্রে। ইচ্ছে করে সে একটা পাত্রে বেশি মদ ঢালল আর সেটা রেখে
দিল ক্যাসিওর সামনে। নিজের পাত্রে খুব সামান্যই মদ ঢালল ইয়াগো।।
ইয়াগোর মতলবটা তখনও পর্যন্ত ধরতে পারেননি
ক্যাসিও। তাই কয়েক চুমৃকেই তিনি শেষ করে ফেললেন মদের পাত্র। সাথে সাথেই তার পাত্রে
আরও মদ ঢালল ইয়াগো। কিছুক্ষণের
মধ্যে আবার ক্যাসিও খালি করে দিলেন মদের পাত্র। ক্যাসিওর পাত্র খালি হতেই তাতে মদ ঢেলে
দিতে লাগল ইয়াগো। এভাবে প্রচুর মদ খেয়ে নেশা ধরে গেল ক্যাসিওর। এ কথা তিনি ভুলেই গেলেন
ওথেলো যে তাকে রাত্রিবেলায় শহরের শান্তি রক্ষার দায়িত্ব দিয়েছেন। তবুও নেশায় টলতে
টলতে প্রহরীদের কাজকর্মের তদারক করতে রাস্তায় বেরিয়ে পড়লেন তিনি। ক্যাসিও চলে যেতেই
ইয়াগো দেখল তার পথ সাফ। কাছাকাছিই
ছিল রডরিগো। সে তাকে বলল, দেখ, আমার উপরওয়ালা
ক্যাসিও মদ খেয়ে বেহেড মাতাল হয়ে রাস্তায় বেরিয়েছে। প্রহরীদের কাজ-কর্মের তদারক করতে। তুমিও সুযোগের অপেক্ষায় থাক যাতে উনি ফিরে এলে তার সাথে
এমন ঝগড়া বাঁধাবে যাতে উনি প্রচণ্ড রেগে যান তোমার উপর। তুমি কিন্তু একদম রাগ করবে
না, ক্যাসিওকে এমনভাবে তাতিয়ে দেবে যাতে তিনি তলোয়ার বের করে
আক্রমণ করেন তোমায়। তাতে হয়তো
সামান্য চোট লাগতে পারে তোমার। তবে ক্যাসিও তেমন সুস্থ নেই। কাজেই চোট লাগার আগেই তুমি
নিজেকে সরিয়ে নিয়ে বাঁচাতে পারবে। মনে রাখবে, তোমার মনোবাসনা পূর্ণ করতে
হলে আমার কথামতোই চলতে হবে।
রডরিগো রাজি হয়ে গেল ক্যাসিওর কথায়। সে বাইরে বেরিয়ে গিয়ে অপেক্ষা করতে লাগল ক্যাসিওর ফিরে আসার জায়গায়। কিছুক্ষণ বাদে রডরিগো এবং ক্যাসিওর উত্তেজিত স্বরে চিৎকার চেঁচামেচির
শব্দ শুনে ইয়াগো বুঝতে পারল তার নির্দেশিত পথেই চলেছে রডরিগো। বাইরে বেরিয়ে এসে ইয়াগো দেখল তারা একে অন্যে তলোয়ার হাতে লড়াই
করছে। রডরিগো চোট পেয়েছে, তার দেহের নানা জায়গা থেকে ঝরছে রক্ত। আঘাত
পেয়ে রডরিগ যা মুখে আসে তাই বলে গালাগাল দিচ্ছে ক্যাসিওকে।
কাছেই ছিল সাইপ্রাসের প্রাক্তন গভর্নর
মনট্যানোর বাড়ি। চিৎকার, চেঁচামেচি আর গালি গালাজের আওয়াজ শুনে বাইরে
বেরিয়ে এলেন তিনি। রডরিগোকে আহত অবস্থায় দেখে তিনি তলোয়ার হাতে ঝাপিয়ে পড়লেন ক্যাসিওর
উপর। ক্যাসিও তখন বেহেড মাতাল, এবার রডরিগোকে ছেড়ে তিনি চড়াও
হলেন মনট্যানোর উপর। ক্যাসিওর তলোয়ারের আঘাতে বেশ ভালোমতন চোট পেলেন মনট্যানো। ঠিক এই সুযোগের অপেক্ষা করছিল ইয়াগো। সে তৎক্ষণাৎ ভিতরে গিয়ে বাজিয়ে দিল পাগলাঘণ্টি। সাইপ্রাসবাসীরা
চমকে উঠল সেই ঘণ্টার আওয়াজ শুনে হয়তো ভূমিকম্প, নয়তো প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি কিংবা বিদেশি শত্রুর আক্রমণ – সাধারণত
এ সব কারণেই বেজে ওঠে পাগলা ঘন্টি। ভয় পেয়ে
তারা বাইরে বেড়িয়ে এসে দিশেহারা হয়ে এদিক-ওদিক ছুটোছুটি করতে লাগল।
পাগলাঘণ্টির আওয়াজ আর লোকজনের চিৎকার-চেঁচামেচি
শুনে ঘুম ভেঙে গেল ওথেলোর। কী ব্যাপার ঘটেছে তা দেখতে বাইরে বেরিয়ে এলেন তিনি। দুর্গের
কিছুটা দূরে রাস্তার উপর মনটানো আর রডরিগোকে আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে অবাক হলেন
ওথেলো। তিনি খোঁজ
নিয়ে জানতে পারলেন তার সহকারী মাতাল অবস্থায় জখম করেছেন এদের দুজনকে।
বেহেড মাতাল হয়ে ক্যাসিও এমন কাজ করেছেন? কথাটা প্রথমে বিশ্বাস করতে চাননি ওথেলো। শেষে ইয়াগোকে ডেকে আসল ঘটনা জানতে চাইলেন তিনি। সুযোগ পেয়ে ইয়াগো
বলল যে মদ খেয়ে বেসামাল অবস্থায় মনটানো আর রডরিগোকে জখম করেছেন ক্যাসিও। কথাটা শুনে
ওথেলো বেজায় রেগে গেলেন ক্যাসিওর উপর। তৎক্ষণাৎ তিনি ক্যাসিওকে পদচ্যুত করে সেই পদে
বহাল করলেন ইয়াগোকে। এভাবেই বাস্তবে পরিণত হল শয়তান ইয়াগোর বদমতলব।
এভাবে পদচ্যুত হয়ে, খুবই দুঃখ পেলেন ক্যাসিও। কীভাবে এরূপ একটা ঘটনা তার জীবনে ঘটল তা বুঝে
উঠতে পারছেন না তিনি। এভাবে মদ খেয়ে বেহেড মাতাল হবার মতো লোক মোটেই নন ক্যাসিও। কিন্তু
জীবনের মধ্যভাগে এসে তিনি নেশা করে নিজের পায়ে কুড়োল মেরে বসলেন। একবারও তার মনে হল
না যে তিনি ইয়াগোর চক্রান্তের শিকার হয়েছেন, এ ব্যাপারে নিজেকেই
দায়ী করলেন তিনি।
তাকে সান্ত্বনা দিতে এল ইয়াগো। তার দুঃখে সহানুভূতি জানিয়ে অনেক ভালো ভালো কথা বলার পর সে বলল
তাকে,
এ ব্যাপারে আপনি বরং গভর্নরের স্ত্রী ডেসডিমোনার শরণাপন্ন হোন। তিনি
একটু বললেই এবারের মতো আপনাকে ক্ষমা করে দেবেন ওথেলো, আপনি
আবার নিজ পদে বহাল হতে পারবেন।
ক্যাসিওর মনে ধরল ইয়াগোর কথাটা। ডেসডিমোনাকে
তিনি ভালো করেই চেনেন। বিয়ের আগে ওথেলো যখন ডেসডিমোনার কাছে যেতেন, তখন বহুবার তার সঙ্গী হয়ে গেছেন ক্যাসিও। ওথেলোর দূত হিসেবে বহুবার তিনি
নানারূপ সংবাদ পৌঁছে দিয়েছেন ডেসডিমোনার কাছে।
আর দেরি না করে ক্যাসিও এসে হাজির হলেন
ডেসডিমোনার কাছে, সব কথা খুলে বললেন তাকে। তারপর তিনি বললেন
তাকে, একমাত্র আপনিই পারেন এই অপমান আর অসম্মানের হাত থেকে
আমাকে বাঁচাতে। দয়া করে বাঁচান আমায়।
স্বামীর বিশ্বস্ত সহকারী ছাড়াও ক্যাসিওকে নিজেদের হিতাকাঙক্ষী বলে মনে করতেন
ডেসডিমোনা। তার দুঃখের কথা শুনে সে নিজেও খুব দুঃখ পেল। ক্যাসিওকে আশ্বাস দিয়ে বলল
ডেসডিমোনা, স্বামীকে বলে আমি আপনাকে উদ্ধার করব এই বিপদ থেকে।
ওদিকে ওথেলোর ক্ষতি করার জন্য ফের মতলব আঁটছে ইয়াগো। ক্যাসিও ডেসডিমোনার কাছে গেছেন, হারানো পদ ফিরে পাবার
জন্য গোপনে ধরাধরি করেছেন তাকে – এ খবরটা জানতে পেরে
দুর্গের ভিতরে ঢুকে ওথেলোর সাথে দেখা করেছে ইয়াগো। যেন বিশেষ কাজ আছে এরূপ ভান করে ওথেলোকে কায়দা করে নিয়ে এলেন দুর্গের
সেই অংশে যেখানে কথা বলছিলেন ক্যাসিও আর ডেসডিমোনা। তাদের দুজনকে একসাথে কথা বলতে দেখে
ওথেলোকে শুনিয়ে বললেন ইয়াগো, না, না,
এসব ঠিক হচ্ছে না। ছি ছি সবার চোখের আড়ালে.... না, মোটেই ভালো কথা নয়।
ইয়াগোর মন্তব্য কানে যেতেই ওথেলো বললেন, ‘কী বলতে
চাইছ তুমি? ছি ছি ভালো কথা নয়, এসবের অর্থ
কি?’
সাথে সাথেই নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে বলল ইয়াগো, ও কিছু নয়। আমি ভাবছিলাম
অন্য কথা?
মুখে না বললেও ইয়াগো যে কিছু চেপে যাচ্ছে তা বুঝতে পারলেন ওথেলো। কিন্তু ব্যাপারটার জন্য পীড়াপীড়ি করলেন না তাকে।
ওথেলো নিজেও খুব ভালোবাসতেন ক্যাসিওকে। তিনি ভেবে পাচ্ছিলেন না তার মতো
একজন দায়িত্ববান লোক কীভাবে এরূপ গর্হিত কাজ করতে পারেন।
যাইহোক, ডেসডিমোনার কথা শুনে ওথেলো ভেবে দেখলেন
তার অপরাধের সাজা পেয়েছেন কাসিও। এবার মাফ করা যেতে পারে তাকে। ডেসডিমোনাকে বলে দিলেন
ওথেলো যে এবারের মতো তিনি মাফ করছেন ক্যাসিওকে।
ডেসডিমোনার মাইনে করা সহচরী ছিল ইয়াগোর
বউ এমিলিয়া। দুর্গে ওথেলো
অনুপস্থিত পাকলে ডেসডিমোনাকে সঙ্গ দেওয়া আর তাকে নানা কাজে সাহায্য করাই ছিল এমিলিয়ার
কাজ। এমিলিয়ার মুখে ইয়াগো শুনতে পেলেন যে ডেসডিমোনার অনুরোধে ক্যাসিওর সব দোষ মাফ করে
তাকে পূর্বপদে বহাল করতে রাজি হয়েছেন ওথেলো। কথাটা শুনে
নতুন করে বদবুদ্ধি চাপল ইয়াপোর মাথায়। সে ভাবতে
লাগল কীভাবে ওথেলোর ক্ষতি করা যায়।
নিজ মতলব হাসিল করার জন্য ইয়াগো নানাভাবে
কাজে লাগায় তার স্ত্রীকে। কারও ঘরের খবর আনা, এমন কি দামি জিনিস হাতিয়ে
আনা, এ সব কাজ ইয়াগো তার স্ত্রী এমিলিয়াকে দিয়েই করায়। এসব কাজ এমিলিয়া করতে না চাইলে তাকে বেধড়ক পেটায় ইয়াগো। চাবুক দিয়ে মেরে গায়ের ছাল ছাড়িয়ে নেয় তার।
ওথেলো তার বিয়ের আগে বাহারি নকশা করা
একটা সুন্দর রুমাল উপহার দিয়েছিলেন ডেসডিমোনাকে। মিশরের এক বেদেনীর কাছ থেকে রুমালটা
জোগাড় করেছিলেন ওথেলোর বাবা। তিনি তার স্ত্রী অর্থাৎ ওথেলোর মাকে বলেছিলেন যে রুমালের
ওই নক্সার মধ্যে জাদুশক্তি আছে। রুমালটা তার মাকে উপহার দিয়ে বাবা বলেছিলেন যতদিন এই
রুমালটা তার কাছে থাকবে ততদিন অটুট থাকবে তাদের ভালোবাসা। স্বামীর দেওয়া ওই রুমাল জীবনের
শেষ দিন পর্যন্ত নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন তার মা। মৃত্যুকালে তিনি ওই রুমাল ওথেলোর
হাতে দিয়ে বলেন সে যেন তার স্ত্রীকে সেটা উপহার দেয়। মায়ের নির্দেশে বিয়ের পর ওথেলো সেই রুমাল উপহার দেন ডেসডিমোনাকে।
আর বলেছিলেন সে যেন সাবধানে রাখে রুমালটিকে।
এ খবর জানা ছিল ইয়াগোর। সে স্ত্রীকে চাপ
দিতে লাগল যেন সে ওই রুমালটা এনে তাকে দেয়।।
স্বামীর নির্দেশ অনুযায়ী কাজ না করলে
তাকে যে বেধড়ক মার খেতে হবে তা ভালোই জানা ছিল এমিলিয়ার। ডেসডিমোনার অলক্ষ্যে একদিন
সে রুমালটা চুরি করে এনে দিল তার স্বামী ইয়াগোর হাতে। আগে থেকেই নিজের মতলবটা ঠিক করে
রেখেছিল ইয়াগো। চুপি চুপি
সে রুমালটা রেখে এল ক্যাসিওর ঘরে।।
বাইরে থেকে এসে ঘরে ঢোকার পর রুমালটা
চোখে পড়ল ক্যাসিওর। রুমালটা যে ডেসডিমোনার, ইয়াগোর মত সেটা জানা ছিল
না ক্যাসিওর। তিনি ভাবলেন তার কোনো বন্ধু বেড়াতে এসে ভুল করে ফেলে গেছেন সেটা,
পরে কোনওদিন এসে ফেরত নিয়ে যাবেন।
সাইপ্রাসে এসে ক্যাসিও প্রেমে পড়েছেন
এক সুন্দরী বারবণিতার, নাম রিয়াংকা। রুমালের নকশাগুলি দেখে রিয়াংকার
কথা মনে হল ক্যাসিওর। তার খুবই পছন্দ হয়েছে রুমালের সেলাইকরা নকশাগুলি। তিনি ঠিক করলেন
রুমালের আসল মালিক ফিরে আসার আগেই তিনি রিয়াংকাকে দিয়ে হুবহু ওরুপ একটি রুমাল তৈরি
করিয়ে নেবেন। সেদিনই রুমালটা রিয়াংকার কাছে নিয়ে গেলেন ক্যাসিও। তাকে বললেন,
‘হুবহু এরূপ একটা রুমাল তুমি তৈরি করে দেবে আমায়। রিয়াংকা কথা দিলেন তিনি তা করে দেবেন। এদিকে কাসিওর অজান্তেই
তার গতিবিধির উপর নজর রাখার জন্য লোক লাগিয়েছেন ইয়াগো। নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য আগে-ভাগেই
জেনে নিচ্ছেন ক্যাসিও কখন কোথায় যায়, কার সাথে কথা বলে।
ক্যাসিওর সাথে রিয়াংকার গোপন সম্পর্কের
কথা অজানা নেই ইয়াগোর। ডেসডিমোনার রুমালটা যে ক্যাসিওই দিয়েছেন রিয়াংকাকে, সে খবরও চরের মুখে জানতে পেরেছেন ইয়াগো। তারপর একদিন তিনি বললেন ওথেলোকে, ‘সেনাপতি, আপনার হাতে সেদিন একটা সুন্দর রুমাল দেখেছিলাম যাতে চমৎকার সেলাইয়ের নকশা
ছিল।
সায় দিয়ে ওথেলো বললেন, ‘ঠিকই দেখেছ
তুমি। ওটা আমার মার রুমাল, বাবা দিয়েছিলেন মাকে। মিশরের এক বেদেনীর কাছ থেকে ওটা সংগ্রহ করেছিলেন আমার বাবা।
ওথেলোর কথা শুনে অবাক হবার ভান করে দু-চোখ
উপরে তুলে বলল ইয়াগো, সে কি? ওই রুমাল
তো ক্যাসিও দিয়েছেন তার প্রেমিকা রিয়াংকাকে।
Next Part Link
No comments:
Post a Comment