King Lear – William Shakespeare – Bangla Translation |
King Lear – William Shakespeare – Bangla Translation (Part 6 of 7)
কিং লিয়ার - উইলিয়াম শেক্সপিয়ার - বাংলা অনুবাদ - ৬
৫ম পর্বের পর থেকে শুরুঃ
আলবেনি বলল, তুমি এক অকৃতজ্ঞ দুর্নীতিপরায়ণ নারী। এখনও সময় আছে পাপবোধ সম্পর্কে তোমার
সচেতন হবার। এখনও বলছি আমি, নিজেকে ধ্বংস করার আগে তাকে ধ্বংস
কর, নইলে অচিরেই শেষ হয়ে যাবে তুমি।
এমন সময় একজন দূত এসে প্রবেশ করল। আলবেনি
জিজ্ঞেস করলেন, কী খবর দূত?
দূত বলল, হুজুর, গ্লচেস্টারের চোখ তুলে নেবার সময় সে যে আঘাত পায় তাতেই তার মৃত্যু
হয়েছে। এক ভৃত্য সে সময় তাকে বাধা দিলে তিনি রেগে গিয়ে তাকে হত্যা করেন। কিন্তু মৃত্যুর
আগে ওই ভৃত্যের তলোয়ারের আঘাতে তার বুকে ওই ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে।
গনেরিল বলল, পাপের পরিণতি হয় তার শাস্তিতে। আচ্ছা, গ্লচেস্টারের
কি দু-চোখই নষ্ট হয়ে গেছে?
‘হ্যা, উত্তর দিল দূত, আপনার বোনের একটা চিঠি আছে। তাড়াতাড়ি
তার উত্তর দিতে হবে।
চিঠিটা নিয়ে মনে মনে ভাবল গনেরিল, এর উত্তর তো তৈরিই আছে। ঠিক আছে, এর উত্তর দিচ্ছি
আমি—বলে চলে গেল গনেরিল।
গনেরিল চলে যাবার পর আলবেনি জিজ্ঞেস করল
দূতকে,
বলতে পার, যখন গ্লচেস্টারের চোখ তোলা হচ্ছিল,
তখন কোথায় ছিল এডমন্ড?
দূত বলল, ইচ্ছে করেই তিনি সে সময় বাড়ি ছিলেন না। বাবার পরিকল্পনার কথা তিনিই তো
ফাস করে দিয়েছেন ডিউককে।
আলবেনি বলল, তুমি ধন্য গ্লচেস্টার। তোমার প্রভুভক্তি সত্যিই দেখার মতো। আমি প্রতিজ্ঞা করছি তোমার উপর নিষ্ঠুর অত্যাচারের প্রতিশোধ আমি
নেবই। এস বন্ধু, যা জান আমায় নির্ভয়ে বল। চলো, ভেতরে চল।
--------------------------------------------
কেন্ট জিজ্ঞেস করল, বলতে পার কাউকে সেনাপতির পদ না দিয়েই কেন চলে গেলেন ফ্রান্সের রাজা?
‘বোধহয় বিশেষ
প্রয়োজনেই তাকে চলে যেতে হয়েছে,’ বলল দূত।
কেন্ট জানতে চাইল, ‘চিঠিটা পেয়ে
রাজা কী করলেন?
‘বারবার তার
চোখ জলে ভরে উঠছিল চিঠিটা পড়তে পড়তে। একটা বদ্ধ আবেগ যেন মোহিত করেছিল তার মনকে,’বলল দূত।
কেন্ট বলল, উনি কি কিছু জিজ্ঞেস করেছিলেন তোমায়?
‘অন্তর মন্থন
করে অতিকষ্টে তার মুখ থেকে বেরিয়ে আসছিল ‘পিতা’ শব্দটি।
একবার তিনি চিৎকার করে বলেছিলেন, তোমরা মেয়ে জাতির কলঙ্ক - হায় সেই ঝড়ের রাতে’-তারপরই
হঠাৎ চুপ করে গেলেন তিনি’ - বলল দূত।
‘আমি আশ্চর্য
হয়ে যাচ্ছি এই ভেবে যে একই পিতার ঔরসে কীভাবে পরস্পর বিরোধী সন্তানের জন্ম হয়, বলল কেন্ট।
-------------------------------------------------
এ সময় একজন দূত এসে বলল যে ব্রিটিশ সেনাদল
এদিকেই এগিয়ে আসছে।
‘আচ্ছা অসওয়াল্ড, আমার ভগ্নীপতির কি স্বয়ং যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্য পরিচালনা করবেন? জানতে চাইল রিগান।
‘হ্যা’, বলল অসওয়াল্ড, ‘তবে সৈনিক
হিসাবে আপনার বোন তার চেয়েও দক্ষ।’
রিগান বলল, আচ্ছা অসওয়াল্ড, দিদির চিঠিতে কী লেখা ছিল?
নিশ্চয়ই কোনও প্রয়োজনীয় কাজের জন্য তাকে ডাকা হয়েছে। তুমি এখানেই
থাকবে। আগামীকাল থেকে শুরু হবে আমাদের অভিযান।
‘আমার পক্ষে
তা সম্ভবপর নয়,’ উত্তর দিল অসওয়াল্ড।
‘কেন? কী এমন কথা আছে যা মুখে না বলে চিঠিতে লিখলেন দিদি?’ জানতে
চাইল রিগান।
এডগার বলল, মহাশয়, আপনার নির্দেশমতোই আমরা হাঁটতে শুরু করেছি
খাড়া পাহাড়টার উপর দিয়ে।
‘কিন্তু আমার
তো মনে হচ্ছে বনের উপর দিয়ে হাঁটছি। কোনও শব্দ শুনতে পাচ্ছি না। তোমার গলার আওয়াজটা
যেন আগের চেয়ে ভিন্ন মনে হচ্ছে,’ বলল গ্লচেস্টার।
এডগার বলল, ‘চোখের দারুণ
যন্ত্রণাই দুর্বল করে দিয়েছে আপনার ইন্দ্রিয়গুলিকে। আমার যা পরিবর্তন হয়েছে তা একমাত্র
পোশাকে। পাহাড়ের খুব বিপদজনক জায়গায় এখন এসে পৌঁছেছি আমরা। ভাসমান জাহাজগুলিকে খুবই
ছোটো দেখাচ্ছে এখান থেকে। মাথা ঘুরে যাবে নিচের দিকে তাকালে। এখান থেকে মাত্র একফুট
দূরে শেষে কিনারা।’
‘ঠিক আছে
বন্ধু’ – বলল
গ্লচেস্টার, ‘এবার আমায় ছেড়ে দিয়ে
এই মূল্যবান রত্নটাকে তুমি নাও। হে ঈশ্বর, তিল তিল করে ক্ষয়ে যাওয়া
দুঃখের বোঝা কমানোর জন্য আমি স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করব। বিদায় এডগার! ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করুন।’ বলেই
শূন্যে লাফিয়ে উঠলেন গ্লচেস্টার।
তাই দেখে ভাবল এডগার, মানুষ কি এভাবেই নিজেকে শেষ করে। তারপর মিনিট খানেকের মধ্যেই তার কাছে গিয়ে
বলল, ‘ও মশাই! আপনি কি জীবিত না মৃত?’
‘মরতে দাও
আমাকে’, চিৎকার করে বলল গ্লচেস্টার।
এডগার বলল, এত উঁচু থেকে পড়ে গিয়েও আপনি যখন অক্ষত রয়েছেন, তখনই বোঝা যায় আপনার শরীরটা শক্ত ধাতু দিয়ে গড়া।
ক্ষুন্ন মনে জানতে চাইল গ্লচেস্টার, সত্যি করে বল তো আমি কি সত্যিই পাহাড় থেকে নিচে লাফিয়ে পড়েছি? তারপর করুণায় ভেঙে পড়ে সে বলল, আমার আর মরা হল
না। মৃত্যুও এখন ব্যঙ্গ করছে আমায় নিয়ে।
এডগার বলল, কী আশ্চর্যের ব্যাপার? কোনও ব্যথাই অনুভব করছেন
না আপনি। বলুন তো, এই পাহাড়ের মাথায় কে নিয়ে এসেছে আপনাকে?
একটা ভিখারি আমায় নিয়ে এসেছে এখানে। কিন্তু
কেন জানতে চাইছ তার কথা? বলল গ্লচেস্টার।
এডগার উত্তর দিল, ‘নিচে থেকে
তাকে দেখে আমার মনে হল তার মুখে হাজারটা নাক আর অসংখ্য শিং। তার গায়ে সমুদ্র তরঙ্গের
মতো অসংখ্য পাহাড়। আর মুখের
মধ্যে বড়ো বড়ো দুটো চোখ। নিশ্চয়ই সে কোনও শয়তান?’
‘হ্যা, সে বারবার বলছিল বটে শয়তান। তবে আমি ভেবেছিলাম সে মানুষ। ওই আমায় সে জায়গায়
নিয়ে গিয়েছিল। এবার আমার সব কথা মনে পড়ছে। আনন্দের সাথে বলে ওঠে গ্লচেস্টার।
এডগার বলল, হ্যা, ভালো করে ভাবুন আপনি। এদিক পানে কে যেন আসছে?
নিশ্চয়ই লোকটি অসুস্থ।
------------------------------------------------
‘কেউ আর এখন
টাকার লোভে বন্দি করতে আসবে না আমায়। কারণ এখন
আমিই যে রাজা’ -- মনে মনে ভাবতে লাগলেন রাজা লিয়ার।
‘উঃ কী ভয়ংকর
দৃশ্য!
দেখে মনে হচ্ছে উনিই রাজা লিয়ার’, যন্ত্রণায় কেঁপে উঠে বলল এডগার।
লিয়ার বলতে লাগলেন, ‘চেয়ে দেখ
ওই লোকটার দিকে। মনে হচ্ছে ও যেন মাঠে কাক তাড়াচ্ছে। দেখ দেখ ঐ একটা ইঁদুর। আমি দৈত্যের
উপর পরীক্ষা করব এই সেঁকা রুটিটা দিয়ে। বাদামি রং-এর
টাঙ্গি আর বর্শাটা নিয়ে এস, তীরটা অব্যর্থভাবে লেগেছে ওর বুকে।
‘এর গলার
আওয়াজ শুনে তো রাজা বলেই মনে হচ্ছে’ -- বলল গ্লচেস্টার।।
‘ঠিকই বলেছেন, আমিই রাজা। ঐ তুষারের মত সাদা মেয়েটাকে দেখুন। ওর নারীত্বের আবরণে ঢাকা
রয়েছে নরকের ঘন অন্ধকার, সর্বনাশী আগুনের জ্বলন্ত শিখা সবকিছুকে
পুড়িয়ে দিয়ে ছাই করে দেয়। শত ধিক সে
মেয়েকে। হে রাজবৈদ্য, আমার দূষিত কল্পনাকে হঠিয়ে দিতে একফোটা সুগন্ধী
দাও আমাকে, বললেন লিয়ার।
গ্লচেস্টার বলল, সত্যিই আশ্চর্য, নিয়তির হাতে নিগৃহীত আপনার মতো
একজন মহান ব্যক্তি আমাকে চেনেন।
‘তোমার চোখের
ওই চাউনিকে আমি ভালো করেই চিনি, বললেন লিয়ার, কিন্তু আমি কিছুতেই ভালোবাসব না তোমায়। উঃ তুমিও কি নিঃস্ব ও দৃষ্টিহীন আমারই মতো। তাহলে কীভাবে তুমি বুঝতে পারছ পৃথিবীর গতি কোন দিকে।’
মনে মনে বলল এডগার, স্বচক্ষে না দেখলে মর্মান্তিক অবিশ্বাস্য বলে মনে হত এ দৃশ্যকে।
লিয়ার বললেন, তুমিই বল কে পাগল আর কে চোর। আমি তোমায় বলছি বন্ধু, জমকালো পোশাকের আড়ালে যে পাপ সহজেই লুকিয়ে আছে, মিথ্যেবাদী রাজনীতিকের নকল চোখে তাকাবার ভান করলে তা সব কিছুই দেখতে পাবে
তুমি। এবার সুতো খুলে দাও, বড় লাগছে পায়ে।
রাজার কথা শুনে অবাক হয়ে মনে মনে ভাবল
এডগার,
আশ্চর্য, রাজার কথার এই আঘাত উন্মত্ততার
মাঝেও রয়েছে একটা খুশির ভাব।
লিয়ার বললেন, ‘গ্লচেস্টার, তুমি যদি সমবেদনা দেখাতে চাও, তাহলে চোখটাকে ধার
করতে হবে তোমায়। আমি তোমায়
চিনি,
অধৈর্য হয়ো না তুমি, কারণ চোখের জল ফেলাটা
আমাদের উভয়ের জীবনের নিয়তি। পরে আমি তোমায় সব বুঝিয়ে বলব।
‘উঃ মানুষের
কী ভয়ংকর পরিণতি', বলল গ্লচেস্টার।
লিয়ার বলতে লাগলেন, আমরা বোকার মতো কাঁদি যখন এ পৃথিবীতে প্রথম আসি। মাথার টুপি অশ্বারোহী সৈনিকের
ঘোড়র পায়ের নিচে পড়িয়ে পরীক্ষা করব আমি। চুপি চুপি একবার জামাইয়ের কাছে পৌছতে পারলেই
একবারে মেরে ফেলবে তাকে।
‘আমি এখন
অসহায়। যাবে আমার সাথে? একজন ডাক্তারকে দিয়ে মাথার চিকিৎসা করাব। সেখানে তোমরা কেউ যাবে না,
শুধু আমি একা থাকব। কিন্তু না, শোন তোমরা,
রাজার মতো বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করব আমি। এত সহজ নয় আমাকে ধরা,
আমি ছুটব’— বলেই
ছুটতে শুরু করলেন রাজা লিয়ার। রাজাকে ধরার জন্য তার অনুচররাও পেছু পেছু ছুটতে লাগল।
একজন অনুচর বলল, ‘রাজার এ
অবস্থা আর চোখে দেখা যায় না।’
কেন্ট বললেন তাকে, ‘ওহে, আসন্ন যুদ্ধের কোনও খবর রাখ তুমি? কতদূর এগিয়ে
এসেছে শত্রু সৈন্যেরা?’
অনুচর উত্তর দিল, খুব দ্রুত এগিয়ে আসছে তারা। আর আধঘণ্টার মধ্যেই এখানে এসে পড়বে প্রধান সৈন্যদল।
রানি বিশেষ কারণে রয়ে গেছেন কিন্তু সৈন্যরা চলে গেছে।
গ্লচেস্টার বলল, আমার আর বাঁচতে ইচ্ছে করে না। বল যুবক, কে তুমি?'
‘জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতে
বিপর্যস্ত এক যুবক আমি, যে ভালোবাসি মানুষকে সহানুভূতি দেখাতে’- বলল এডগার। তারপর যত্নের সাথে গ্লচেস্টারের শীর্ণ হাত ধরে সে বেরিয়ে গেল
নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে।
-----------------------------------------------
দূর থেকে গ্লচেস্টারকে আসতে দেখে মনে
মনে খুব খুশি হল অসওয়াল্ড।
সে গ্লচেস্টারকে বলল, ওঃ কী ভাগ্যবান আমি। ওহে বুড়ো, এবার এই তলোয়ারের
আঘাতেই মারা যাবে তুমি, বলেই তলোয়ার বের করল সে।
অসওয়াল্ডকে বাধা দিয়ে বলল, খবরদার বলছি, এই হতভাগ্য বুড়োটার কাছে এস না। তোমরা
সরে যাও, যেতে দাও একে। নইলে তোমার জীবন বিপন্ন হবে এই লাঠির
ঘায়ে।
‘দূর হয়ে
যা ঘৃণ্য চাষি,’ বলল অসওয়াল্ড।
‘তবে রে হতচ্ছাড়া
পাজি!
দেখাচ্ছি তোকে মজা’, বলেই লাঠি তুলল এডগার।
এরপর শুরু হয়ে গেল দু-জনের
লড়াই। কিছুক্ষণ বাদেই এডগারের লাঠির আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল অসওয়াল্ড। তার পকেট হাতড়িয়ে
পাওয়া গেল একটা চিঠি, যাতে লেখা আছে—
‘আমাদের একে
অন্যকে দেওয়া প্রতিশ্রুতির কথা মনে রেখে যত শীঘ্র সম্ভব মেরে ফেল তাকে। আর আমাকে অন্যের
শয্যাসঙ্গিনী না করে দয়া করে যত তাড়াতাড়ি পার তোমার শয্যা সঙ্গিনী করে নাও।
ইতি - তোমার প্রিয়তমা স্ত্রী
গনেরিল।’
গ্লচেস্টার বলল, হে ঈশ্বর, এই দুঃখ-কষ্ট
থেকে আমাকে বাঁচাবার জন্য পৃথিবীটাকে অসংলগ্ন করে পাগল করে দাও আমায়।
দূর থেকে রণদামামার আওয়াজ কানে আসতেই
চঞ্চল হয়ে উঠল এডগার, আপনি তাড়াতাড়ি হাত ধরুন আমার। আমি আপনাকে
নিয়ে যাব আমার বন্ধুর নিরাপদ আশ্রয়ে।
-----------------------------------------------------
‘হে মহানুভব
কে! আপনার ঋণ আমি জীবনেও শোধ করতে পারব না, বিনয়ের
সাথে বলল কর্ডেলিয়া, আপনার ওই ছেড়া পোশাক ফেলে দিয়ে নূতন পোশাক
পরুন।
কেন্ট বলল, আপনি আমায় ক্ষমা করবেন ম্যাডাম। আমার উদ্দেশ্য সাধনের জন্য প্রয়োজন আছে
এ ছদ্মবেশের। অনুগ্রহ করে আমার পরিচয় প্রকাশ করবেন না।
‘বেশ, করব না,’ বলে ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করলেন
কর্ডেলিয়া, ‘এখন কেমন আছেন রাজা?’
ডাক্তার বললেন, তিনি ঘুমোচ্ছেন।
‘হে ঈশ্বর, সন্তানের দ্বারা পীড়িত ওর আত্মাকে শান্তি দাও। আচ্ছা, ওকে কি নতুন পোশাক পরানো হয়েছে?’ জানতে
চাইলেন কর্ডেলিয়া।
‘হা ম্যাডাম’, উত্তর দিলেন ডাক্তার। উনি এখনও অসুস্থ। আপনি থাকুন ওর কাছে।
কর্ডেলিয়া মনে মনে বলতে লাগল, “হে আমার
প্রিয় পিতা, আমার এই চুম্বন যেন সারিয়ে তোলে আপনার দুরারোগ্য ব্যাধিকে।
তারপর রাজাকে দেখেই বলে উঠল, “হায় পিতা, রাজা হয়েও আপনি কীভাবে এই বাজে লোকদের সাথে শুয়োরের খোঁয়াড়ে শুয়ে আছেন?
এইতো, জেগে উঠেছেন উনি।
ডাক্তার বললেন, আপনি তাড়াতাড়ি কথা বলুন।
ব্যগ্র কণ্ঠে বলল কর্ডেলিয়া, আপনি কেমন আছেন মহারাজ?
‘তুমি এক
স্বর্গীয় আত্মা, কিন্তু আমি কাঁদছি, পুড়ে যাচ্ছি
নরকের আগুনে’– চিৎকার করে বলে উঠলেন লিয়ার।
কর্ডেলিয়া বলল, আপনি আমায় চিনতে পারছেন না বাবা? ডাক্তার!
উনি যে এখনও উন্মাদ।
চিৎকার করে বলতে লাগলেন লিয়ার, এখন আমি কোথায়? সবাই ঠকিয়েছে আমায়, জানি আমি কী বলব। এ হাত তো আমার নয়! না,
না, এই তো আঘাতের বেদনা অনুভব করছি হাতে।
আমার মতো এরূপ অবস্থায় কেউ যেন না পড়ে।
করুণ স্বরে বলল কর্ডেলিয়া, বাবা, আমার দিকে চেয়ে আশীর্বাদ করুন আমায়।।
লিয়ার বললেন, তুমি কি আমার সাথে পরিহাস করছ? আমি এক নির্বোধ
মোহদুর্বল আশি বছরের বুড়ো। কিন্তু তোমায়
যেন কোথাও দেখেছি বলে মনে হচ্ছে। গতরাতে আমি কোথায় ছিলাম আর আজই বা কোথায়। বুদ্ধিসুদ্ধি বলে কিছু নেই আমার। দয়া কর আমায়, পরিহাস করে আমার অন্তরে ব্যথা দিও না। তুমি কি আমার মেয়ে কর্ডেলিয়া?
তুমি আর কেঁদো না মা। বিনাদোষে তোমার বোন আমার উপর অন্যায়-অত্যাচার করেছে। বিষ খেয়ে মরব আমি। আচ্ছা মা, আমি
কি ফ্রান্সে রয়েছি?
বাবাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল কর্ডেলিয়া, না বাবা, এ আপনারই রাজ্য।
ডাক্তার বলল, পাগলামির জন্য পূর্বের কোনও কথা ওর মনে নেই। আপনি একটু ধৈর্য ধরুন ম্যাডাম।
কর্ডেলিয়ার দু-হাত
ধরে বললেন লিয়ার, কর্ডেলিয়া, মা আমার,
এই বুড়ো বাবার সব দোষ ভুলে গিয়ে ক্ষমা কর তাকে।
বাবা ও ডাক্তারকে নিয়ে কর্ডেলিয়া অন্য
জায়গায় চলে যাবার পর কেন্ট বলল তার চাকরকে, তাহলে কর্নওয়ালের রাজ্য চালাচ্ছে
গ্নস্টারের ছেলে এডমন্ড, ডিউকের সম্বন্ধে যা গুজব রটেছে তা
সত্যি। কিন্তু গ্লচেস্টারের নির্বাসিত ছেলে কি জার্মানিতে রয়েছে?
---------------------------------------------------
‘আগে থাকতেই
কিছু বলা যাচ্ছে না, সৈনাদল দ্রুত এগিয়ে আসছে। আজকের যুদ্ধে জয়
পরাজয়ের উপরই নির্ভর করছে আমাদের পরিকল্পনার সফলতা’,বলল
এডমন্ড। তারপর একজন অফিসারকে ডেকে সে বলল, যাও, তুমি গিয়ে জেনে এস অস্থিরচিত্ত ডিউকের শেষ সিদ্ধান্তটা।
অফিসার চলে যাবার পর রিগান বলল, ওগো আমার প্রিয় এডমন্ড! তুমি সত্যি করে বলতো আমার
বোনকে ভালোবাস কিনা?
চালাক এডমন্ড সাথে সাথেই বলে উঠল, না ম্যাডাম, কথাটা মোটেও সত্যি নয়।
‘তার সাথে
তোমার ঘনিষ্ঠ হওয়াটা আমি কিছুতেই সহ্য করব না”, বলল রিগান।
মনে মনে মতলব ভঁজতে লাগল গনেরিল, ‘বোনের সাথে
এডমন্ডের বিয়ে হলে আমার পক্ষে তা হবে যুদ্ধে পরাজয়ের সামিল।
No comments:
Post a Comment