Hamlet – William Shakespeare – Summary in Bengali (Part 2 of 2) |
Hamlet – William Shakespeare – Summary in Bengali (Part 2 of 2)
ওফেলিয়ার বাবা পলোনিয়াস। শুধু এ কারণে
তাকে মেরে ফেলার জন্য মনে মনে খুব অনুতপ্ত হ্যামলেট। ওফেলিয়া মনে-প্রাণে
ভালোবাসে হ্যামলেটকে। সেদিক থেকে কোনও কুটিলতা বা লোকদেখানো ভাব নেই ওফেলিয়ার মনে।
শেষ পর্যন্ত সেই হামলেটের হাতেই মারা গেলেন তার বাবা? ওফেলিয়া
চোখের জল ফেলতে ফেলতে ভাবে তার বাবার কথা। তার মনকে সে কিছুতেই মানাতে পারে না। হ্যামলেট
বুঝতে পারলেন পাগলামোর ভান করতে গিয়ে পলোনিয়াসকে খুন করে তিনি খুবই ভুল করেছেন। এ ভুল
শোধরাবার জন্য ক্লডিয়াসের ইচ্ছে মতো ইংল্যান্ডে যাওয়া ছাড়া তার সামনে অন্য কোনও রাস্তা
নেই। ক্লডিয়াসকে তিনি জানালেন ইংল্যান্ডে যেতে কোনও আপত্তি নেই তার। ক্লডিয়াস মনে মনে
হাসলেন ভাইপোর কথা শুনে। ভাইপোর ইংল্যান্ডে যাবার সব ব্যবস্থাই করে দিলেন ক্লডিয়াস,
সেই সাথে তার কয়েকজন বিশ্বস্ত অনুচরকেও সঙ্গে দিলেন। এবার ক্লডিয়াস ব্যবস্থা
নিলেন পথের কাঁটা সরাবার। সে সময় ইংল্যান্ড ছিল ডেনমার্কের অনুগত। তিনি একটা চিঠি লিখলেন
ইংল্যান্ডের রাজাকে। তাতে লেখা রইল হামলেট ইংল্যান্ডের মাটিতে পা দেবার সাথে সাথেই
তিনি যেন তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেন। ক্লডিয়াসের যে সমস্ত বিশ্বস্ত অনুচরেরা হ্যামলেটের
সাথে যাচ্ছিল, তাদেরই একজনের হাতে চিঠিটা তুলে দিলেন তিনি। কিন্তু
একাজে সফল হলেন না ক্লডিয়াস। জাহাজে করে ইংল্যান্ডে যাবার পথে চিঠিটা হস্তগত হল হ্যামলেটের।
চিঠিতে নিজের নামটা কেটে দিয়ে সে জায়গায় পত্রবাহক আর তার সঙ্গীর নাম লিখে যথাস্থানে
চিঠিটা রেখে দিলেন হ্যামলেট। এদিকে ইংল্যান্ডে পৌছাবার আগে মাঝদরিয়ায় একদল জলদস্যু
এসে আক্রমণ করল তাদের জাহাজ। জলদস্যুরাও জাহাজে করে এসেছিল। খোলা তলোয়ার হাতে হ্যামলেট
ঝাপিয়ে পড়লেন তাদের জাহাজে। যাকে সামনে পেলেন, তাকেই কচুকাটা
করালেন। হ্যামলেটের সহগামী ক্লডিয়াসের বিশ্বস্ত অনুচরেরা কিন্তু তার বিপদে এগিয়ে এলো
না। হ্যামলেটকে একা ফেলে এই ফাকে তারা নিজেদের জাহাজ নিয়ে পালিয়ে গেল। একা একা জলদস্যুদের
সাথে লড়াই করে তিনি শেষে বন্দি হলেন তাদের হাতে। তারা আগেই মুগ্ধ হয়েছিল হ্যামলেটের
সাহস আর বীরত্ব দেখে! এরপর যখন তারা শুনল যে ডেনমার্কের যুবরাজ
হ্যামলেট, তখন তা নিজেদের জাহাজে চাপিয়ে হ্যামলেটকে নামিয়ে দিল
ডেনমার্কের সমুদ্র উপকূলে। তারপর জলদস্যুরা সবাই চলে গেল।
হ্যামলেট দেশে ফিরে গিয়ে দেখলেন বাবার
শোকে তার প্রেমিকা ওফেলিয়া সত্যি সত্যিই পাগল হয়ে গেছেন। তিনি শুনতে পেলেন মনের দুঃখে
ওফেলিয়া স্নান, খাওয়া-দাওয়া, ঘুম
- সবই বিসর্জন দিয়েছে, সময়মতো সে বাড়িতেও যায় না। দিনরাত হয়
সে তার বাবার কবরের ওপর পড়ে থাকে, নতুবা আপন মনে গান গেয়ে গেয়ে
কবরের চারপাশে ঘুরে বেড়ায়। তার খুশি মতো
আশপাশের গাছ থেকে ফুল পেড়ে কবরের উপর ছড়িয়ে দেয় সে। কেউ কবরখানায় এলে তার হাতে ফুল
তুলে দিয়ে বলে, ‘দাও, কবরের উপর ছড়িয়ে দাও। ওফেলিয়ার জন্য খুব অনুতপ্ত
হলেও হ্যামলেটের করার কিছু নেই, কারণ তার মতো তিনি নিজেও অসহায়।
হ্যামলেটেরই সমবয়সি পলোনিয়াসের ছেলে লিয়ার্টিস।
সেও হ্যামলেটের মতো ওস্তাদ তলোয়ারের লড়াইয়ে। অল্প কিছুদিন
আগে লিয়ার্টিস ফ্রান্সে গিয়েছিল। সেখান থেকে ফিরে এসে সে শুনল পাগলামোর ভান করে তার
বাবাকে হত্যা করেছে হ্যামলেট আর তার বোন ওফেলিয়া পাগল হয়ে গেছে সেই শোকে। সবকিছু শুনে
তিনি হ্যামলেটের উপর বেজায় রেগে গেলেন। সুযোগ বুঝে সে রাগকে আরও উসকিয়ে দিলেন ক্লডিয়াস।
তিনি লিয়ার্টিসকে বললেন, তোমার বাবা ছিলেন আমার অনুগত, খুবই বিশ্বস্ত এক মন্ত্রী। তার মৃত্যুর প্রতিশোধ অবশ্যই নিতে হবে। তবেই শান্তি
পাবে তার আত্মা। সেই সাথে দেশের মানুষও পরিচয় পাবে তোমার পিতৃভক্তির। মায়ের সামনে পাগলামোর
ভান করে অন্যায়ভাবে সে খুন করেছে তোমার বাবাকে। এখন তোমার একমাত্র কর্তব্য হ্যামলেটের
অপরাধের জন্য তাকে যথোচিত শাস্তি দেওয়া। তবে মনে রেখ, উত্তেজিত হয়ে কোনও কাজ করতে যেও না,
তাতে বিপদের সম্ভাবনা আছে। দেশের মানুষ এখনও ভালোবাসে হ্যামলেটকে। এবার
তুমি ভেতরে ভেতরে তৈরি হও প্রতিশোধ নেবার। আর আমার উপর ছেড়ে দাও পুরো ব্যাপারটা,
ব্যবস্থা যা করার তা আমিই করব।
এবার রাজা ক্লডিয়াস এক নতুন মতলব আঁটলেন
হ্যামলেটকে হত্যা করার। তিনি আয়োজন করলেন তার রাজ্যের ভেতর এক তলোয়ার প্রতিযোগিতার
হ্যামলেট ও লিয়ার্টিস-উভয়েই ভালো তলোয়ারবাজ হিসেবে পরিচিত ছিলেন দেশের
অল্পবয়সি যুবকদের কাছে! ক্লডিয়াস স্থির করলেন হ্যামলেটকে মেরে
ফেলতে তার এই খ্যাতিকেই তিনি কাজে লাগাবেন। প্রতিযোগিতায় যে তলোয়ার ব্যবহৃত হয় তার
ফলা থাকে ভোতা, কিন্তু ক্লডিয়াস লিয়ার্টিসকে বোঝালেন যে তার ও
হ্যামলেটের - উভয়ের হাতেই থাকবে ধারালো তলোয়ার, যার ফলা হবে খুবই
সুচোলো। আর লিয়ার্টিসের
তলোয়ারের দুধারে এবং ফলায় মারাত্মক বিষ মিশিয়ে রাখবেন তিনি। সে বিষ এমনই তীব্র যে তার
সংস্পর্শে এলেই মৃত্যু অবধারিত। এছাড়া হ্যামলেটের মৃত্যুকে নিশ্চিত করার জন্য অন্য
ব্যবস্থাও তিনি করেছেন বলে জানালেন ক্লডিয়াস। তলোয়ারের আঘাতে যদি হ্যামলেটের মৃত্যু
না হয়,
তা হলে মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করতে তার জন্য নির্দিষ্ট শরবতের গ্লাসে মিশানো
থাকবে বিষ— এ আশ্বাসও তিনি দিলেন লিয়ার্টিসকে। খেলার
ফাকে যখন হ্যামলেটের তেষ্টা পাবে, তখন যাতে বিষ মেশানো শরবত তার
হাতে তুলে দেওয়া হয়, সে ব্যবস্থাও করে রাখবেন তিনি।
পলোনিয়াসের মৃত্যুর জন্য হ্যামলেটের উপর
যতই রেগে থাকুক লিয়ার্টিস, সে কিছুতেই মন থেকে মেনে নিতে পারছে না তলোয়ার
খেলতে খেলতে এভাবে তাকে মেরে ফেলার জন্য ক্লডিয়াসের পরিকল্পনাকে। এ কাজ করতে বিবেকে
বাধছে তার। ঠিক সে সময় এক আকস্মিক দুর্ঘটনায় মারা গেল তার প্রিয় বোন ওফেলিয়া। এবার ক্লডিয়াস সুযোগ পেলেন লিয়ার্টিসের মন থেকে বিবেকের বাধা মুছে
ফেলার।
ঘটনাটা এভাবেই ঘটল। পাগল হবার পরেও কিন্তু
ওফেলিয়া ভুলতে পারেনি হ্যামলেটকে। একদিন কেন জানি তার মনে হল ঐ হ্যামলেটের সাথেই বিয়ে
হবে তার। কথাটা মনে হতেই সে নিজেকে ফুল-মালায় সাজিয়ে ঐ সাজেই নদীর ধারে
হাজির হল। হঠাৎ কী খেয়াল হল তার, নদীর ধারে একটি গাছে উঠল ওফেলিয়া। বাড়িয়ে দেওয়া হাতের মতো গাছের একটি পলকা ডাল এগিয়ে এসেছিল নদীর
উপর। ওফেলিয়া সেই ডালে চেপে বসল।
ওফেলিয়ার ভার সইতে পারল না সেই পলকা ডাল।
মচ করে ভেঙে গেল আর সেই সাথে ওফেলিয়া পড়ে গেল জলে। খরস্রোতা সেই নদীর জলে পড়তে না পড়তেই
ওফেলিয়া তলিয়ে গেল অতলে। পরদিন তার মৃতদেহ ভেসে উঠতেই, সবার
আগে লিয়ার্টিসের কানে এল সে খবর।
নদীর ধারে গিয়ে তিনি দেখলেন যে তার পাগলি
বোনের মৃতদেহের পরনে রয়েছে বিয়ের কনে সাজতে হয়তো বেচারির সাধ হয়েছিল বিয়ের আগে। বিয়ের
সাজ - কথাটা ভেবে একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন লিয়ার্টিস।
রাজধানীতে ফিরে এসে ওফেলিয়ার মৃত্যুর
কথা শুনে ভেঙে পড়লেন হ্যামলেট নিজেও।
হ্যামলেট স্থির করলেন প্রেমিকাকে সমাধি
দেবার সময় তিনি উপস্থিত থাকবেন। বন্ধু হোরেশিওর সাথে দেখা করে তারই সাথে সমাধিস্থলে
চলে এলেন তিনি।
সে সময় কবর খুঁড়তে খুঁড়তে দুজন মজুর আপনমনে
ভালোবাসার গান গাইছিল। তা শুনে হোরেশিওর দিকে তাকিয়ে হ্যামলেট বললেন, ‘দেখেছো হোরেশিও, কী
আশ্চর্য ব্যাপার! এমন ভালোবাসার গান মানুষ কি কবর খুঁড়তে খুঁড়তে
গাইতে পারে।’
হোরেশিও উত্তর দিলেন, ‘বন্ধু! এ খুবই
স্বাভাবিক ব্যাপার। ওদের জীবনের বেশির ভাগ কেটে গেছে কবর খুঁড়তে খুঁড়তে। তাই ওরা ভুলে
গেছে মৃত্যুশোক বা কবরের অন্ধকারে থাকা বিভীষিকাকে। সাধারণ মানুষের মতো মৃত্যুর ব্যাপারে
যদি তাদের কোনও অনুভূতি থাকত, তাহলে এ কাজ তারা কখনই করতে পারত
না। হ্যামলেট এগিয়ে এসে
মাটি-কাটা মজুরদের একজনকে জিজ্ঞেস করলেন, যে কবরটা খুঁড়ছ তা কি কোনও পুরুষের জন্য?
এক ঝলক হ্যামলেটের দিকে তাকিয়ে জবাব দিল
লোকটি,
‘আজ্ঞে হুজুর, তা
নয়।’
‘তা হলে কি কোনও
নারীর জন্য?’ জানতে চাইলেন হ্যামলেট।
লোকটি উত্তর দিল, না,
তাও নয়। অবাক হয়ে বললেন
হ্যামলেট,
তাহলে কার জন্য খুঁড়ছ কবরটা?
দার্শনিকের মতো জবাব দেয় লোকটি, যার
জন্য কবর খুঁড়ছি তার এখন শুধু একটাই পরিচয় মৃতদেহ! তবে একদিন
সে ছিল অপরূপ সুন্দরী কমবয়সি এক নারী। তার কথা শেষ হতে হতেই ওফেলিয়ার মৃতদেহ নিয়ে সেখানে
হাজির হলেন তার বড়ো ভাই লিয়ার্টিস, সাথে রাজা ক্লডিয়াস আর রানি
গারট্রুড। দূর থেকে তাদের দেখতে পেয়ে হ্যামলেট আর হোরেশিও পড়লেন কিছুটা দূরে এক সমাধিস্তম্ভে
লুকিয়ে।
ওফেলিয়াকে কবরে শোয়ানোর পর উপস্থিত সবাই
নিয়মানুযায়ী তার কবরের উপরে ছড়িয়ে দিল তিন মুঠো মাটি। প্রিয় ছোটো বোনটিকে শেষ বিদায়
জানাবার সময় নিজেকে আর স্থির রাখতে পারল না লিয়ার্টিস, কান্নায়
ভেঙে পড়ল সে। তার সেই বুকফাটা কান্না শুনে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারলেন না হ্যামলেট।
ছুটে এসে দাঁড়ালেন লিয়ার্টিসের সামনে। হাত-পা নেড়ে পাগলের মতো
অঙ্গভঙ্গি করে লিয়ার্টিসকে বললেন হ্যামলেট, বৃথাই তুমি কান্নাকাটি
করছ তোমার বোনের জন্য। তার প্রতি আমার যে ভালোবাসা, তোমার ঐ ভালোবাসা
তার কাছে কিছুই নয়। ওফেলিয়ার জন্য
তুমি কি একটা গোটা কুমির খেতে পার? না, তুমি
পার না, কিন্তু আমি পারি। তুমি কি কবরের ভেতর তার পাশে শুয়ে থাকতে
পারবে? না, তুমি পারবে না, কিন্তু আমি পারি।
চরম শোকের সেই চরম মুহূর্তে হ্যামলেটের
এরূপ ব্যবহারে প্রচণ্ড উত্তেজিত হল লিয়ার্টিস। খাপ থেকে তলোয়ার বের করে সে ছুটে গেল
হ্যামলেটের দিকে। সাথে সাথে তার হাত ধরে টেনে তাকে শান্ত করলেন রাজা ক্লডিয়াস। তিনি
লিয়ার্টিসের কানের কাছে মুখ নিয়ে বললেন, “আঃ লিয়ার্টিস! কী
করছ তুমি। জান তো ওর মাথার ঠিক নেই। হ্যামলেট আর সুস্থ নয়, পুরোপুরি
পাগল হয়ে গেছে ও। কী লাভ, পাগলের সাথে ঝগড়া করে? রাজার সম্মান রাখতে লিয়ার্টিস তার তলোয়ার ঢুকিয়ে দিল খাপে, এবার রাজা তাকে বললেন, আমার পরিকল্পনার কথা মনে করে মনকে
শান্ত রাখ লিয়ার্টিস। নিজেকে সংযমী রাখ চরম শোকের মুহূর্তেও।’
দেখতে দেখতে তলোয়ার প্রতিযোগিতার দিন
এগিয়ে এল। অবশ্য তার আগেই
হ্যামলেট সাক্ষাৎ করেছেন লিয়ার্টিসের সাথে। ওফেলিয়ার সমাধিস্থলে তার আচরণের জন্য তিনি
ক্ষমা চেয়েছেন লিয়ার্টিসের কাছে। হয়তো হ্যামলেট এ ব্যাপারে খুব বিলম্ব করায় তিনি আর
কিছুই বললেন না তাকে।
সারা রাজ্যের মানুষ এসে ভেঙে পড়েছে হ্যামলেট
আর লিয়ার্টিসের তলোয়ারবাজি দেখতে। তারই মাঝে সবার নজর এড়িয়ে তলোয়ারবাজির নিয়মভঙ্গ
করে দুই প্রতিযোগীর জন্য এমন তলোয়ার রেখেছেন যার দুদিক ক্ষুরের মতো ধারালো আর ফলাটাও
ছুঁচোলো!
রাজা ক্লডিয়াস তার পরিকল্পনাকে বাস্তব রূপ দিতে লিয়ার্টিয়াসের তলোয়ারের
দুধারে ও ফলায় তীব্র বিষ মাখিয়ে রেখেছেন তিনি। সে বিষ একবার রক্তে মিশলে মৃত্যু নিশ্চিত।
এর পাশাপাশি তিনি হ্যামলেটের জন্য তৈরি করে রেখেছেন বিষ মেশান শরবত। লড়াই করতে করতে
হ্যামলেট যখন ক্লান্ত হয়ে পড়বে তখন সেই বিষ মেশান শরবত যাতে তার হাতে তুলে দেওয়া যায়
সে ব্যবস্থাও করে রেখেছেন তিনি। রাজা ক্লডিয়াস মঞ্চের উপর বসেছেন তার নির্দিষ্ট আসনে, আর রানি গারট্রুড বসেছেন তার পাশে। পদমর্যাদা অনুসারে মন্ত্রী, পারিষদ আর সেনাপতিরা বসেছেন তাদের পাশে। রাজ্যের মানুষ ভিড় করে দাঁড়িয়েছে
মঞ্চের সামনের দিকে।
তলোয়ারবাজি শুরু হবার আগে ওফেলিয়ার জন্য
হামলেটের মনে জেগে উঠল গভীর অনুতাপ। তিনি লিয়ার্টিসের দু-হাত
ধরে বললেন, ‘বন্ধু লিয়ার্টিস, অতীতে
আমি যদি কোনও অন্যায় বা ভুল-ত্রুটি করে থাকি, তাহলে এ মুহূর্তে সেসব ভুলে যাও তুমি। মনে রেখ, সেদিনের
হ্যামলেট কিন্তু আজকের মতো স্বাভাবিক মানুষ ছিল না, তখন সে ছিল
পুরোপুরি উন্মাদ। পুরনো বন্ধুত্বের দোহাই দিয়ে তোমায় বলছি, তুমি
ভুলে যাও সে দিনের উন্মাদ হ্যামলেটকে।
‘আমার মনে আর কোনও ক্ষোভ
নেই তোমার প্রতি’, বলল লিয়ার্টিস, আজ
থেকে তুমি আর আমি দুজনে আগের মতোই বন্ধু।।
সুরাভর্তি পানপাত্রে রাজা ক্লডিয়াস চুমুক
দেবার সাথে সাথে দামামা আর ভেরি বেজে উঠল চারদিক থেকে। তার সাথে তাল দিয়ে শুরু হল দুই
পুরনো বন্ধুর তলোয়ারবাজি। এ প্রতিযোগিতার চলিত নিয়ম ছিল, এই
প্রতিযোগীরা কেউ কাকে আঘাত করবে না। হ্যামলেট খেলতে লাগলেন সে নিয়ম মেনে। কিন্তু লিয়ার্টিসের
উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন। হ্যামলেটকে জোরদার আঘাত করার জন্য মঞ্চ থেকে বারবার তাকে ইশারা
করছেন রাজা ক্লডিয়াস। লিয়ার্টিস ভেবে পাচ্ছে না যেখানে নিয়ম মেনে খেলছেন হ্যামলেট,
সেখানে সে কী করে নিয়ম ভাঙবে। আর সে ভাবে হ্যামলেটকে আঘাত করতে বিবেকে
লাগছে তার। খেলার মাঝে এক সময় লিয়ার্টিসকে কোণঠাসা করে ফেললেন হ্যামলেট, ফলে বিবেকের বাধা ভুলে গিয়ে ক্রমশ উত্তেজিত হতে লাগল লিয়ার্টিস।
খেলার প্রথম রাউন্ড শেষ হবার পর মার কাছে
এসে দাঁড়ালেন ক্লান্ত হ্যামলেট। ক্লডিয়াসের দিকে তাকিয়ে বললেন রানি, হ্যামলেট
তৃষ্ণার্ত, ওকে শরবত দাও। ঠিক এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন ক্লডিয়াস।
সাথে সাথেই তিনি বিষ মেশান শরবতের গ্লাস রানির হাতে তুলে দিলেন। কিন্তু রানি সে গ্লাস
হ্যামলেটের হাতে দেবার পূর্বেই বেজে উঠল দ্বিতীয় রাউন্ড শুরুর বাজনা। সাথে সাথেই মার
কাছ থেকে ছিটকে এসে হ্যামলেট দাঁড়ালেন খেলার জায়গায়। সেখান থেকে চেঁচিয়ে মাকে বললেন খেলার শেষে তিনি শরবত খাবেন। শুরু
থেকে একইভাবে খেলা দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়েছেন রানি। তাই শরবতের গ্লাসটা রাজাকে ফিরিয়ে
না দিয়ে তিনি নিজেই কয়েক চুমুকে খেয়ে ফেললেন শরবতটুকু। ক্লডিয়াস স্বপ্নেও ভাবেননি যে
এরূপ ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু তখন আর কিছু করার নেই। ক্লডিয়াস একমনে খেলা দেখতে লাগলেন
বুকে একরাশ উত্তেজনা নিয়ে।
দ্বিতীয় রাউন্ড চলার সময় হ্যামলেটকে তাতিয়ে
তুলতে ইশারা করলেন ক্লডিয়াস। সাথে সাথেই তলোয়ার দিয়ে হ্যামলেটকে জোর আঘাত করল লিয়ার্টিস।
বন্ধুকে লক্ষ করে হ্যামলেট বললেন, ‘এ কি করছ? তুমি
কি খেলার নিয়ম ভুলে গেছ?’
‘আমি খুব দুঃখিত’ --বলল
লিয়ার্টিস, উত্তেজিত ছিলাম বলে আমার খেয়াল ছিল না। কিন্তু কিছুক্ষণ
বাদেই বিষ মাখানো তলোয়ার দিয়ে হ্যামলেটের গায়ে আবার আঘাত করল লিয়ার্টিস। এবার আর ধৈর্য
রইল না হ্যামলেটের। তিনিও তার তলোয়ার দিয়ে জোর আঘাত করলেন লিয়ার্টিসকে।
হ্যামলেটের শরীর থেকে রক্ত ঝরছিল লিয়ার্টিসের
আঘাতের পর থেকেই। তার মতলব হাসিল হয়েছে দেখে চেঁচিয়ে বলে উঠলেন, লড়াই
থামাও এখনি। কিন্তু লড়াই বন্ধ করার বাজনা বেজে ওঠার আগেই হ্যামলেট তার তলোয়ারের আঘাতে
ফেলে দিলেন লিয়াট্রিসের হাতের তলোয়ার। লিয়ার্টিসের তলোয়ারটা মাটিতে পড়ে যেতেই সেই বিষমাখানো
তলোয়ার তুলে নিয়ে হ্যামলেট বসিয়ে দিলেন লিয়ার্টিসের বুকে।
রানিকে এলিয়ে পড়তে দেখে মঞ্চে উপস্থিত
সবাই চেঁচিয়ে ওঠে বললেন, ‘বেঁহুশ হয়ে পড়েছেন রানি। জ্ঞানলোপের ঠিক পূর্ব
মুহূর্তে রানি টের পেলেন যে শরবত তিনি খেয়েছেন, তাতে মেশানো ছিল বিষ। তিনি চেঁচিয়ে বললেন, “আমি মারা যাচ্ছি..... তোমার শরবতে বিষ মেশানো ছিল হ্যামলেট.... আমি চললাম।
হ্যামলেট অবাক হয়ে তাকালেন তার মা’র দিকে। ঠিক
সে সময় বলে উঠল লিয়ার্টিস, ‘শোন বন্ধু হ্যামলেট, আর
কিছুক্ষণ বাদে তুমি আর আমি, দুজনেই চিরকালের মতো ছেড়ে যাব এ পৃথিবী।
তোমাকে মেরে ফেলার জন্য রাজা নিজেই বিষ মাখিয়ে ছিলেন আমার তলোয়ারে। আমাদের দুজনের রক্তেই
মিশে গেছে সে বিষ। বন্ধু, বিদায়’ – বলতে
বলতে এলিয়ে পড়ল লিয়ার্টিস।
সীমাহীন ক্রোধে তখন সত্যিই উন্মাদ হয়ে
উঠেছেন হ্যামলেট। বিষমাখানো তলোয়ারটা তুলে নিয়ে তিনি এসে দাঁড়ালেন মঞ্চে। কেউ কিছু
বোঝার আগেই সে তলোয়ারটা তিনি জোরে বসিয়ে দিলেন ক্লডিয়াসের বুকের ভেতরে।
তুমিই ছড়িয়েছ এ বিষ! তাই
তোমাকে সেটা ফিরিয়ে দিলাম, চেঁচিয়ে বলে উঠলেন হ্যামলেট।
রাজা, রানি, ক্লডিয়াস-সবাই এখন মৃত। যে অন্যায়ের প্রতিবিধান চেয়েছিলেন
বাবার প্রেতমূর্তি, সেটাই করেছেন হ্যামলেট। কিন্তু এবার তার মাথা
ঘুরতে শুরু করেছে, টলছে তার পা। হ্যামলেট বুঝতে পারলেন তার মৃত্যু নিকটেই। কিছুক্ষণ বাদেই তিনি
মাটিতে ঢলে পড়লেন। সাথে সাথেই ছুটে এলেন তার পুরোনো বন্ধু হোরেশিও। হ্যামলেটের মাথাটা
তুলে নিলেন নিজের কোলে।।
শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করার আগে কোনও মতে
মুখ তুলে বললেন হ্যামলেট, সবাইকে ডেনমার্কের হতভাগ্য যুবরাজের কাহিনি শোনাবার
জন্য একমাত্র তুমিই বেঁচে রইলে হোরেশিও।
- - - - - - - - - - - - - শেষ - - - - - - - - - - - -
No comments:
Post a Comment