Hamlet – William Shakespeare – Summary in Bengali (Part 1 of 2) |
Hamlet – William Shakespeare – Summary in Bengali (Part 1 of 2)
ট্রাজেডি অফ হ্যামলেট, প্রিন্স
অব ডেনমার্ক
এলসিনোর দুর্গ ডেনমার্কের রাজপ্রাসাদের
ঠিক লাগোয়া। রক্ষী ফ্রান্সিস
রাত্রিবেলায় পাহারা দিচ্ছিল সেখানে। শীতরাত্রির প্রচণ্ড ঠান্ডা পুরু চামড়ার পোশাক ভেদ
করে গায়ের চামড়া, মাংস, হাড় সব যেন দাঁত বসাতে
চাইছে, গায়ের রক্ত হিম হবার জোগাড়। রাত্রে পাহারা দেবার ব্যাপারটা খুবই আতঙ্কের হয়ে দাঁড়িয়েছে রক্ষীদের
কাছে। ভীতির কারণ অবশ্য একটাই। কয়েক রাত ধরেই দেখা যাচ্ছে একটা রহস্যময় প্রেতমূর্তি
দুর্গপ্রাচীরে এসে দাঁড়াচ্ছে। সেই মূর্তিটা চুপচাপ তাকিয়ে থাকে রক্ষীদের দিকে। পাহারাদারদের
মধ্যে যারা তাকে দেখেছে, তারা সবাই বলছে কী যেন বলতে চায় সেই রহস্যময় প্রেত
মূর্তিটা, অথচ পারে না। রক্ষীদের কথা অনুযায়ী সেই মূর্তি দেখতে
অবিকল প্রাক্তন রাজার মতো ----যিনি মারা গেছেন অল্প কিছুদিন আগে।
প্রতি রাতে ঐ প্রেত মূর্তির দেখা পেয়ে, রক্ষীরা ভয় পেয়ে ব্যাপারটা
কানে তুলেছে হোরেশিওর। হোরেশিও ছিল মৃত রাজার পুত্র হ্যামলেটের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এই আশ্চর্যজনক
খবর শুনে খুবই বিস্মিত হয়েছেন হোরেশিও। রক্ষীদের কথার সত্য-মিথ্যে
যাচাই করতে তিনি নিজেই আজ দুর্গে এসেছেন রাতের বেলায় পাহারা দিতে।
রাতের প্রহর নীরবে গড়িয়ে চলেছে দুর্গের
পেটা ঘড়িতে বেজে ওঠা ঘণ্টার আওয়াজের সাথে সাথে। হোরেশিওর উদ্দেশ্য কিন্তু ব্যর্থ হয়নি।
শেষ রাতে সেই প্রেতমূর্তি আবার এসে দাঁড়াল দুর্গপ্রাচীরে। হোরেশিও নিজেও অবাক হলেন
হ্যামলেটের পিতা মৃত রাজার আদলের সাথে প্রেতমূর্তির অবিকল মিল দেখে।
ঠিক তার পরদিনই তার বন্ধু হ্যামলেটকে
সেই রহস্যময় প্রেতমূর্তির আগমনের কথা জানালেন হোরেশিও। পিতার মৃত্যুকালে হ্যামলেট ছিলেন
রাজধানীর বাইরে। বাইরে থেকে ফিরে আসার পর তিনি মায়ের মুখে শুনেছেন যে একদিন দুপুরে
তার বাবা যখন বাগানে শুয়ে বিশ্রাম করছিলেন, এক বিষাক্ত সাপ সে সময় দংশন
করে তাকে, আর তার ফলেই মারা যান তিনি। বাবার এই অপঘাত মৃত্যুতে
হ্যামলেট খুব দুঃখ পেলেন ঠিকই, কিন্তু তার চেয়ে বেশি মানসিক আঘাত
পেলেন যখন তার বাবার মৃত্যুর পর কিছুদিন যেতে না যেতেই কাকা ক্লডিয়াস তার বিধবা মা
রানি গারট্রুডকে বিয়ে করে রাজা হয়ে বসলেন ডেনমার্কের সিংহাসনে। এ ব্যাপারটাকে দেশের
লোকেরা খুশি মনে মেনে নিতে না পারলেও ভয়ে তারা মুখ বন্ধ করে রইল। বাবার মৃত্যুর ঠিক
পরেই এই বিয়ে আর সিংহাসন অধিকারের ঘটনাকে কিছুতেই মনে-প্রাণে
বিশ্বাস করতে পারছেন না হ্যামলেট। আবার হদিসও করতে পারছেন না সত্যিই কী ঘটেছিল।
একটা সন্দেহের দোল! তার
বন্ধু হোরেশিও ঠিক এ সময় তাকে শোনালেন সেই প্রেতমূর্তির নিয়মিত আগমনের কথা। সেই মূর্তিটা
নাকি দেখতে ঠিক তার বাবার মতো কথাটা শুনে হ্যামলেট স্থির করলেন তিনি নিজে দাঁড়াবেন
সেই মূর্তির সামনে।
সেদিন রাত প্রায় শেষের পথে, বন্ধু
হোরেশিওর সাথে হ্যামলেট এলেন এলসিনোর দুর্গে পাহারা দিতে। সেই একই জায়গায় অন্যান্য
দিনের মতো দেখা দিল প্রেতমুর্তিটা। সেটা চোখে পড়ামাত্রই হ্যামলেট চেঁচিয়ে উঠে বললেন,
‘বাবা! ডেনমার্কের রাজা। তিনি চেঁচিয়ে ওঠার সাথে সাথে
সেই প্রেতমূর্তিটা হাত নেড়ে ডাকল তাকে কিছু বুঝতে না পেরে তিনি তাকালেন হোরেশিওর দিকে।
তুমি নির্ভয়ে এগিয়ে যাও, হ্যামলেট’, তাকে
আশ্বস্ত করে বললেন হোরেশিও, উনি হাত নেড়ে তোমাকে ডাকছেন। মনে
হয় উনি তোমাকে কিছু বলতে চান।
মোহাচ্ছন্নের মতো পা ফেলে সামনের দিকে
এগিয়ে গেলেন হ্যামলেট। তাকে অনুসরণ করে কিছুদূর যাবার পর তিনি নিশ্চিত হলেন যে এই প্রেতমূর্তিটা
তার বাবারই। তিনি লক্ষ করলেন যে এই মূর্তিটার পরনে সেই একই পোশাক যা জীবিত অবস্থায়
রাজা পরতেন।
‘শুভ বা অশুভ, যেরূপ
প্রেতাত্মাই আপনি হন না কেন, চিৎকার করে বলল হ্যামলেট,
যে রূপেই আপনি আমার কাছে এসে থাকুন, আমি কথা বলতে
চাই আপনার সাথে। আমাকে কিছু বলার থাকলে আপনি স্বচ্ছন্দে তা বলুন, রোজ রাত্রে আপনি কেন এভাবে এখানে আসেন?
চাপা স্বরে জবাব দিল সেই প্রেতমূর্তি, হ্যামলেট!
আমি তোমার নিহত বাবার আত্মা।
চিৎকার করে বলে উঠল হ্যামলেট, নিহত
? কী বলছেন আপনি?
উত্তর দিল প্রেতমূর্তি, আমার
সব কথা আগে শোন! তোমার কাকা ক্লডিয়াসই হত্যা করেছে আমায়। একদিন আমি যখন বাগানে শুয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছিলাম, সে
সময় সবার নজর এড়িয়ে হেবোনা গাছের বিষাক্ত রস আমার কানে ঢেলে দেয় ক্লডিয়াস। আর ক্লডিয়াসের
ঐ চক্রান্তে তাকে সাহায্য করেছে আমার স্ত্রী, তোমারই গর্ভধারিণী
গারট্রুড। এ সব কারণে
আমি খুব অশান্তিতে আছি। হ্যামলেট, তুমি আমার একমাত্র সন্তান। সবকিছু বললাম
তোমাকে। এ অন্যায়ের প্রতিবিধান তুমি করো, বিদায়!’ বলেই
অদৃশ্য হয়ে গেল সেই প্রেতমূর্তি, আর বিস্ময়ে হতবাক হ্যামলেট তখন
অজ্ঞান হয়ে লুটিয়ে পড়ল দুর্গের ছাদের ওপরে।
জ্ঞান ফিরে এলে তিনি বিশ্বাস করে প্রেতাত্মার
মুখে শোনা সব কথা জানালেন বন্ধু হোরেশিও আর মার্সেল্লাস নামে এক রক্ষীকে। সেইসাথে এই
প্রতিশ্রুতিও তিনি তাদের কাছ থেকে আদায় করলেন যে তারা কাউকে কিছু বলবে না।
যা দেখলাম আর তোমার কাছে শুনলাম, তা
সবই অদ্ভুত, মন্তব্য করলেন হোরেশিও, মৃত আত্মা কি কথা বলতে পারে?
আমাদের অজান্তে এই পৃথিবীতে এমন অনেক
কিছু ঘটছে যার কোনও উল্লেখ বা ব্যাখ্যা বইয়ে নেই। হোরেশিওকে জানালেন হ্যামলেট।
হ্যামলেটের মনে প্রচণ্ড প্রভাব ফেলেছে
সে রাতের ঘটনা। এক এক বার সে নিজমনে বলছে ‘বাবার প্রেতাত্মার মুখে
যা শুনলাম তা কি সত্য? সত্যি হলে অবশ্যই এর প্রতিবিধান আমায় করতে হবে,
আবার পরক্ষণেই তার মনে হল, ‘শুধু প্রেতাত্মার মুখের
কথায় বিশ্বাস করে প্রতিবিধান নেবার মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা কি ঠিক? এর
চেয়ে হাতে নাতে যুক্তিগ্রাহ্য কোনও প্রমাণ কি সংগ্রহ করা যায় না যাতে আমি নিশ্চিত হতে
পারি কাকার পাপ সম্পর্কে?’
হ্যামলেট পাগলের মতো হয়ে উঠলেন রাতদিন
এ সব কথা ভেবে ভেবে। রাজ্যের বৃদ্ধ মন্ত্রী পলোনিয়াসের একটি ছেলে ছিল, নাম
লিয়ার্টিস আর মেয়ের নাম ওফেলিয়া। দেখতে অপরূপ
সুন্দরী ছিল ওফেলিয়া। ওফেলিয়া যেমন
মনে-প্রাণে ভালোবাসত তরুণ হ্যামলেটকে, তেমনি হ্যামলেটও ভালোবাসতেন
তাকে। রাজ্যের সবাই মেনেই নিয়েছিল যে হ্যামলেটের সাথে ওফেলিয়ার বিয়ে হবে। হ্যামলেটের
হাব-ভাব, কথাবার্তায় স্বাভাবিকতার লক্ষণ
দেখা গেছে – সবার মুখে একথা শুনে খুবই চিন্তার মাঝে পড়ে
গেলেন পলোনিয়াস। হোক না হ্যামলেট রাজার ছেলে, কিন্তু বাবার মৃত্যুতে
যিনি পাগল হতে বসেছেন, সে কথা জেনে কি তার সাথে মেয়ের বিয়ে দেওয়া
যায় ? আর বিয়ে দিলেও কি তার পরিণতি সুখের হবে? স্বাভাবিক কারণেই এ সব চিন্তা এসে দেখা দিচ্ছে পলোনিয়াসের মনে।
হ্যামলেট পড়েছেন সমস্যায়। বাবার মৃত্যুর পরও মাকড়সার জালের মতো এক চক্রান্ত যে তাকে ঘিরে
ধরছে,
সে কথা ঠিকই বুঝতে পেরেছেন তিনি। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি কাউকে অপরাধী
বা ষড়যন্ত্রের সাথে সরাসরি জড়িত বলে ধরতে পারছেন না। শেষে অনেক ভেবে-চিন্তে এ সমস্যা সমাধানের হদিস পেলেন তিনি রাজা, রানি,
পলোনিয়াস, ওফেলিয়া, সবার
উপর আড়াল থেকে কড়া নজর রাখা দরকার। খুঁটিয়ে বিচার করা দরকার এদের সবার আচার-আচরণ, কথাবার্তা। আর সেকাজ সেই করতে পারে যাকে কেউ গ্রাহ্যের
মধ্যে আনবেন না অথচ সে সবার উপর নজর রাখতে পারবে। এই ভেবে হ্যামলেট এমন আচরণ করতে লাগলেন
যেন তিনি সত্যিই পাগল হয়ে গেছেন।
হ্যামলেটের অদ্ভুত আচরণ আর পাগলাটে কথাবার্তা
শুনে রাজপ্রাসাদের অধিবাসীরা সবাই খুব বিপন্ন হলেন। হ্যামলেটের পাগলামো কিন্তু নিছক
পাগলামো নয়, অসংলগ্ন কথার ফাকে ফাকে তিনি এমন সব সরস অথচ তীক্ষ্ণ মন্তব্য
ছেড়ে দেন যার খোঁচায় রাজা, রানি, পলোনিয়াস
সবাই তীব্র বেদনা পান মনে। আর ঠিক তখনই তাদের মনে প্রশ্ন জাগে হ্যামলেট কি সত্যিই পাগল
হয়ে গেছেন না এসব নিছক পাগলামির ভান। এটা যদি পাগলামির ভান হয়, তাহলে নিশ্চয়ই তার পেছনে কোনও বদ উদ্দেশ্য আছে! তাহলে
সে উদ্দেশ্যটা কী ধরনের, সে চিন্তাও জেগে ওঠে তাদের মনে।
হ্যামলেটের এই ধরনের আচরণে সবচেয়ে বেশি
ব্যথা পেল তার ওফেলিয়া। যেমন দেখতে
সুন্দর ওফেলিয়া তেমনি সরল তার খোলামেলা মন। কোনও কুটিলতার ছায়া এখনও পর্যন্ত পড়েনি
সেখানে। তাই হ্যামলেটের এই অস্বাভাবিক আচরণে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেল ওফেলিয়া তার মনে।
এভাবেই কেটে যাচ্ছে দিনগুলি। রাজার প্রেতাত্মার
আর আবির্ভাব হয়নি এলসিনোর দুর্গ প্রাচীরে। হামলেট কিন্তু কিছুতেই ভুলতে পারছেনা বাবার
মুখ থেকে শোনা সে রাতের হতাশাজনক কথাবার্তাগুলি। তাকে অন্যায়ের প্রতিবিধান করতে বলেছেন
বাবার সেই প্রেতমূর্তি। হ্যামলেট ঠিকই
বুঝতে পেরেছেন কাদের অন্যায়ের কথা বলেছেন তার বাবা। কিন্তু তিনি ভেবে পাচ্ছেন না, একা
তিনি কী ভাবে সে অন্যায়ের প্রতিবিধান করবেন। অনেক ভেবে শেষমেশ তিনি এক বুদ্ধি বের করলেন।
রাজপ্রাসাদে নাটকের অভিনয় করতে সেসময় শহরে এসে জুটেছে একদল অভিনেতা অভিনেত্রী। তিনি
স্থির করলেন তাদেরই কাজে লাগাবেন রাজা-রানির মনোভাব যাচাই করতে।
তাদের সাথে দেখা করে হ্যামলেট বললেন, তিনি একটা নাটক লিখেছেন
যা তাদের দিয়ে তিনি অভিনয় করাতে চান রাজপ্রাসাদে। অভিনেতারা সবাই খুশি হল তার কথা শুনে।
এতে তাদের কাছে আনন্দের কথা যে যুবরাজের লেখা নাটকে তারা অভিনয় করবেন। অভিনেতারা যে
তার লেখা নাটকে অভিনয় করতে রাজি, সে কথা জেনে প্রাসাদে ফিরে এসে
হ্যামলেট শুরু করলেন নাটক লিখতে। বিষয়বস্তু যদি জানা থাকে তাহলে কুশীলবদের মুখে সংলাপ
বসাতে দেরি লাগে না।
আর এক্ষেত্রে বিষয়বস্তু তো আগে থেকেই
স্থির হয়ে আছে। বাবার প্রেতাত্মার মুখে যে কাহিনি শুনেছিলেন হ্যামলেট, হুবহু
তারই আদলে লিখতে হবে নাটক— কীভাবে রাজাকে সরিয়ে সিংহাসন
দখল করতে রাজার ছোটো ভাইয়ের সাথে রানির চক্রান্ত, ঘুমন্ত রাজার
কানে বিষ ঢেলে তাকে হত্যা করে শূন্য সিংহাসন দখল করা—এ সবই থাকবে
নাটকে।
নাটক লেখা শেষ হলে হ্যামলেট তা পড়ে শোনালেন
অভিনেতাদের। নাটকের কাহিনীটা তাদের খুবই পছন্দ হল। তারা চুটিয়ে মহড়া দিতে লাগলেন। মহলা
চলতে চলতে নাটকের দিন ক্ষণও স্থির হয়ে গেল।
নাটক অভিনয়ের দিন হ্যামলেট শুরুতেই রাজা
রানির খুব কাছে এসে বসলেন। সেখান থেকে পাদপ্রদীপের আলোয় তিনি খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে
লাগলেন তাদের হাব-ভাব। নাটক এগিয়ে যাবার সাথে সাথে হ্যামলেট স্পষ্ট
বুঝতে পারলেন নতুন রাজা ক্লডিয়াসের মুখখানা কেমন যেন বিবর্ণ হয়ে পড়ছে। এর কিছুক্ষণ
বাদে বাগানে ঘুমন্ত রাজার কানে বিষ ঢেলে দেবার দৃশ্যটা যখন সামনে এল, তখন আর সহ্য করতে পারলেন না ক্লডিয়াস। আসন ছেড়ে উঠে তিনি চলে গেলেন প্রাসাদের
ভেতরে। হ্যামলেটের এও নজর এড়াল না যে তার মা রানি গারট্রুডও ভেতরে ভেতরে যথেষ্ট অস্থির
হয়ে উঠেছেন। এবার আর কোনও সন্দেহ রইল না হ্যামলেটের মনে যে তার বাবা তাকে যে সমস্ত
কথা বলেছেন তা সবই সত্যি। এবার নিশ্চিত হয়ে নাটক দেখতে দেখতে স্থির করলেন হ্যামলেট,
অন্যায়ের প্রতিবিধান করার যে প্রতিজ্ঞা তিনি বাবার কাছে করেছেন তা অবশ্যই
তাকে পালন করতে হবে। বাবার হত্যাকারীর সাথে তার যে সম্পর্কই থাকুক না কেন, তিনি নিজ হাতে শাস্তি দেবেন তাকে।
নাটক অভিনয়ের শেষে রাজা ডাকলেন অভিনেতাদের, প্রশংসা
করলেন তাদের দলগত অভিনয়ের সাথে সাথে পারিশ্রমিক ছাড়াও বকশিশ দিলেন তাদের। শেষে রাজা
জানতে চাইলেন এই নাটকের রচয়িতা কে। রাজা অবাক হয়ে ভ্রু কুঁচকোলেন যখন তিনি শুনলেন
তার ভাইপো হ্যামলেটই লিখেছেন এ নাটক। তিনি খুব ধাক্কা খেলেন ভেতরে ভেতরে।
এদিকে দিনে দিনে বেড়েই চলল হ্যামলেটের পাগলামি। রানি এবং মন্ত্রী পলোনিয়াসের
সাথে পরামর্শ করে রাজা ক্লডিয়াস স্থির করলেন যে হ্যামলেটকে এ রাজ্যে রাখা মোটেই নিরাপদ
নয়। যে করেই হোক, তাকে
অন্তত কিছুদিনের জন্য হলেও দেশের বাইরে পাঠাতে হবে। তার মা রানি গারট্রুড স্বয়ং দায়িত্ব
নিলেন এ কাজের। ক্লডিয়াসের দুর্ভাবনাও কম নয় হ্যামলেটকে নিয়ে। কারণ যে করেই হোক হ্যামলেট জানতে পেরেছেন যে তিনিই হত্যা করেছেন
তার বাবাকে। এ পরিস্থিতিতে যে কোনও সাংঘাতিক ঘটনা ঘটে যেতে পারে যদি হ্যামলেট দেশে
থাকেন।
মন্ত্রী পলোনিয়াসের লোক এসে হ্যামলেটকে
জানাল বিশেষ কারণে রানি গারট্রুড দেখা করতে চান তার সাথে। পলোনিয়াস ওদিকে আবার গারট্রুডকে
বললেন রানি মা! হ্যামলেটের সাথে দেখা করার সময় আপনি খুব স্বাভাবিক আচরণ করবেন।
তাকে বলবেন, আপনি আর সইতে পারছেন না তার দুঃখ। আপনার কোনও ভয়
নেই, আমি লুকিয়ে থাকব আপনার ঘরের পর্দার আড়ালে। আমার লোক গেছে
তাকে খবর দিতে। এখনই এসে যাবেন তিনি, বলেই ঘরের পর্দার আড়ালে
লুকোলেন পলোনিয়াস। কিছুক্ষণ বাদে ‘মা’ ‘মা’ বলতে
বলতে হাজির হলেন হ্যামলেট। মা’র কাছে জানতে চাইলেন
কেন তিনি ডেকে পাঠিয়েছেন তাকে।
‘আমি মনে খুব আঘাত পেয়েছি
তোমার আচরণে’, বললেন রানি, তুমি দুঃখ দিয়েছ বাবার মনেও।
‘তা হতে পারে মা’ বললেন
হ্যামলেট, ‘তবে শুধু আমি নই, তুমিও
দুঃখ দিয়েছ আমার বাবার মনে। হ্যা, তবে
তুমি খুশি করতে পেরেছ দেশের বর্তমান রাজাকে, যিনি আবার তোমার
বর্তমান স্বামী।’
‘তুমি কি আমায়
ভুলে গেছ হ্যামলেট?’ বললেন রানি।
‘না! আমি
তোমায় মোটেও ভুলিনি,’ উত্তর দিলেন হ্যামলেট, ‘মহান
ঈশ্বরের নামে শপথ করে বলছি তোমায় আমি ভুলিনি। তুমি আমার গর্ভধারিণী মা, ডেনমার্কের
রানি আর এখন আমার বাবার ভাইয়ের স্ত্রী।’
কাঁদো কাঁদো গলায় বলে উঠলেন রানি, ‘হ্যামলেট! কেন
তুমি এভাবে আমার সাথে কথা বলছ?’
‘তুমি স্থির
হয়ে বসো, মা,’ বললেন হ্যামলেট, ‘আমি একটা দর্পণ
রাখছি তোমার সামনে। দর্পণ অর্থাৎ তোমার যাবতীয় অন্যায় ও দুষ্কর্মের কথা শোনাব তোমায়। সে সব শুনলেই তুমি বুঝতে পারবে আসল চরিত্রটা কী। সেই সাথে এও বুঝতে
পারবে কেন আমি তোমার সাথে এরূপ আচরণ করছি।’
ছেলের কথা শুনে ভয় পেয়ে বলে উঠলেন রানি, ‘তুই কি আমায়
হত্যা করতে চাস হ্যামলেট? ওরে কে কোথায় আছিস, আমায়
বাঁচা।’
রানির আর্তনাদ শুনে পর্দার আড়াল থেকেই
বললেন পলোনিয়াস, ভয় নেই রানিমা। পর্দার আড়াল থেকে পুরুষের গলা ভেসে আসছে দেখে
হ্যামলেট ধরেই নিলেন যে তার কাকা ক্লডিয়াস লুকিয়ে আছেন সেখানে। একথা মনে হতেই তিনি
খাপখোলা তলোয়ার হাতে ঝাপিয়ে পড়লেন পর্দার উপর, যার আড়ালে লুকিয়ে
ছিলেন পলোনিয়াস। সজোরে সেই তলোয়ার বসিয়ে দিলেন পলোনিয়াসের বুকে। পলোনিয়াস আর্তনাদ করে
লুটিয়ে পড়লেন মেঝেতে, চারিদিক ভেসে যেতে লাগল রক্তে।
‘হাঃ হাঃ এই ব্যাপার! আমি
তো ভেবেছি পর্দার আড়ালে লুকিয়ে চেঁচাচ্ছে একটা ইদুর; বলেই পাগলামির
ভান করে হাসতে লাগলেন হ্যামলেট। দেখতে দেখতে এ খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল যে, মায়ের সাথে
দেখা করতে এসে হ্যামলেট নিজ হাতে হত্যা করেছেন মন্ত্রীকে। এ খবর শুনে ভয়ে থর থর করে
কেঁপে উঠল প্রাসাদের সবাই। ভয়ের কারণ একটাই, পাগলামিতে পেয়েছে
হ্যামলেটকে। কে বলতে পারে পাগলামোর মুখে তিনি কখন কী করে বসবেন?
দেশের মানুষ ভালোবাসে হ্যামলেটকে। তাই
ইচ্ছে সত্ত্বেও রাজা ক্লডিয়াস এতদিন পর্যন্ত কোনও চেষ্টা করেননি তাকে মেরে ফেলার। তিনি
সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন যে কোনও ছুতোয় হ্যামলেটকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে তাকে হত্যা করার।
আচমকা সে সুযোগ এসে গেল ক্লডিয়াসের হাতে, যখন হ্যামলেটের হাতে মারা গেলেন
মন্ত্রী পলোনিয়াস। ভাইপোর জন্য যেন রাতে তার ঘুম হচ্ছে না এরূপ ভাব দেখিয়ে ক্লডিয়াস
পরামর্শ দিলেন তার ভাইপোকে --- অকারণে পলোনিয়াসকে হত্যা করে যে
অন্যায় তিনি করেছেন, দেশবাসীর মন থেকে মুছে ফেলতে গেলে বেশ কিছুদিন
তার বিদেশে গিয়ে কাটিয়ে আসা উচিত। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে ইংল্যান্ডই তার পক্ষে আদর্শ
জায়গা।
No comments:
Post a Comment