Robinson Crusoe - Daniel Defoe - Summary in Bengali |
রবিনসন ক্রুসো (Robinson Crusoe) সতেরো শতকে ইয়র্কে বসবাসরত একজন ইংরেজ। তার পিতা ছিলেন জার্মান বংশোদ্ভূত একজন ব্যবসায়ী। তিনি ছিলেন তার পিতার সর্বকনিষ্ঠ সন্তান। তার বাবার ইচ্ছে ছিল সে আইন বিষয়ে পড়াশুনা করবে কিন্তু তার আগ্রহ ছিল সমুদ্রে যাওয়ার। তার সম্পূর্ণ পরিবার সমুদ্র-যাত্রার বিরুদ্ধে ছিল এমনকি তার বাবা তাকে বোঝানো শুরু করে যে তার উচিত একটি সুশীল ও নিরাপদ জীবন বেছে নেয়া। প্রাথমিকভাবে সে তার বাবার কথা মেনে নেয়। তবে একসময় সে সমুদ্রযাত্রার প্রলোভনে পড়ে যায় এবং তার এক বন্ধুর সাথে লন্ডনগামী একটি জাহাজে চাকরি নেয়। সমুদ্র ঝড়ের কবলে পড়ে ক্রুসো এবং তার বন্ধু প্রায় মরতে বসেছিল। লন্ডন ফেরার পর তার বন্ধু সমুদ্রযাত্রা থেকে নিবৃত্ত হলেও ক্রুসো একটি জাহাজে করে আবার একজন বনিক হিসেবে লন্ডন ত্যাগ করে এবং এ যাত্রায় সে অনেক লাভ করতে পারে। ক্রুসো এবার তার ব্যবসায়ের লাভ তার বন্ধুত্বভাবাপন্ন এক বিধবা নারীর কাছে গচ্ছিত রেখে আগের চালান নিয়ে আবার সমুদ্রযাত্রা করে। এই যাত্রাটিতে ক্রুসোর ভাগ্য খারাপই ছিল বলা যায় কারন পথে তাদের জাহাজ মুর জলদস্যুরা আটক করে। তাকে দাস হিসেবে বন্দি করে সাউথ আফ্রিকার স্যালি [Sallee] শহরে একজন ধনী ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে। একটি মাছ ধরার অভিযানের সময় সে এবং একজন দাস-বালক পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় এবং আফ্রিকার দিকে কোন এক তীরে যাত্রা করে। একজন পর্তুগীজ ক্যাপ্টেন (জাহাজের) তাদেরকে জাহাজে তুলে নেয় এবং দাস বালকটিকে তার কাছ থেকে কিনে নিয়ে তাকে ব্রাজিলের সমুদ্রের তীরে পৌঁছে দেয়। সেখানে সে একজন উপনিবেশ স্থাপনকারী হিসেবে সফলতা লাভ করে। সে সময় সে দাস-শ্রম ও তাদের অর্থনৈতিক সুবিধার ব্যাপারে ক্রুসো আগ্রহী হয়ে ওঠে। সে চিন্তা থেকেই সে দাস সংগ্রহের জন্যে পশ্চিম আফ্রিকার দিকে যাত্রা করে। ত্রিনিদাদ দ্বীপের তীরের কাছে এসে তার জাহাজডুবি হয়। শীঘ্রই সে জানতে পারে সে ছাড়া আর কেউ বেচে নেই। ভাঙ্গা জাহাজটি থেকে সে কিছু বন্দুকের গুলি, গান পাউডার, বন্দুক, খাবার ইত্যাদি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। সাগর তীরে চরে বেড়ানো ছাগলের মাংশ দিয়েই সে আহার সারে এবং নিজেই একটি বাসা তৈরী করে। মাটিতে সে একটি ক্রস বসায় এবং সেখানে সে তার দ্বীপে আগমনের সময় অর্থাৎ এক সেপ্টেম্বর ১৬৫৯ খোদাই করে রাখে। তার পর প্রতিদিন সেখানে সে একটি খাজ কেটে রাখে যাতে করে সে সময়ের সঠিক হিসাব রাখতে পারে। তার প্রতিদিনের গৃহস্থালি কাজের সব কিছুই সে লিখে রাখত যেমন কিভাবে সে প্রথম মোম তৈরী করেছিল, কিভাবে সে সৌভাগ্যক্রমে শস্যবীজের অঙ্কুরিত হওয়া আবিষ্কার করে, তার মাটির নিচের ভাড়ার (cellar) তৈরী এবং অন্যান্য সকল কাজ। ১৬৬০ সালে সে একবার অসুস্থ হয়ে যায় এবং তার মনের অলিক কল্পনায় দেখতে পায় একজন ফেরেশতা তার কাছে এসেছে এবং তার অতীতের পাপ কাজের জন্যে তওবা করতে আদেশ করে। এসময় সে অন্তরে ধর্মীয় আলো উপলব্ধি করে এবং সর্বশক্তিমান ঈশ্বর যেন তাকে তার পূর্বের পাপের ব্যাপারে ক্ষমা করেছেন এমন অনুভূতি তৈরী হয় তার অন্তরে।
সুস্থ হয়ে ক্রুসো পুরো দ্বীপে একটি জরিপ চালায় এবং আবিষ্কার করে সে আসলে একটি দ্বীপে অবস্থান করছে। সে একটি আঙ্গুর গাছে পূর্ণ উপত্যকা আবিষ্কার করে এবং সেখানে একটি ছায়াময় ঘর তৈরী করে। ক্রুসো আরো বেশি আশাবাদী হয়ে ওঠে এবং নিজের এই দ্বীপের মালিক বা রাজা মনে করতে থাকে। সে একটি টিয়া পাখি ও ছাগলকে পোষ মানায় এবং তাদের প্রশিক্ষন দেয়। ঝুড়ি বোনা, রুটি তৈরীর পদ্ধতি শিখে নেয়, সাথে সাথে আয়ত্ত করে মাটির জিনিসপত্র কিভাবে তৈরী করতে হয়।
মোটা সিডার গাছের গুঁড়ি দিয়ে একটি বড় ডিঙি নৌকা তৈরী করার পর সে আবিষ্কার করে যে তার পক্ষে এটাকে সাগরে ভাসানো সম্ভব না। পরে সে একটি ছোট নৌকা তৈরী করে দ্বীপের চারদিকে নৌকা দিয়ে ঘুরে দেখার চেষ্ঠা করে করে কিন্তু বিশাল বড় এক ঢেউয়ের আঘাতে সে প্রায় মরতে বসেছিল। আরো একবার প্রাণ ফিরে পাওয়ার জন্যে সে সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞ হয়। তীরে পৌঁছলে তার পোষা টিয়া পাখি তার নাম ধরে ডাকে। এভাবে শান্তিতেই আরো কয়েকটি বছর পার করে দেয়।
একদিন সে সৈকতে মানুষের পায়ের ছাপ দেখে একটা ধাক্কা খায়। প্রথমে সে ভাবে এগুলো হয়তো শয়তানের পায়ের ছাপ। পরে সে সিদ্ধান্তে আসে এগুলো আসলে নরখাদকদেরই পায়ের ছাপ, কারন অতীতে সে শুনেছিল এই এলাকায় নরখাদক আছে। অস্রে সজ্জিত হয়ে সে নরখাদকদের খুজতে থাকে। তার ছাগলগুলোকে মাটির নিচের ঘরেই পালন করতে থাকে এবং সেখানেই খাবার রান্না করার ব্যবস্থা করে। একদিন সকালে সে তীরে গুলিবর্ষণের শব্দ শুনতে পায়। ব্যাপার কি দেখতে সে তীরে যায় এবং আবিষ্কার করে ঢেউয়ের ধাক্কায় তীরে একটি জাহাজ ধ্বসে পড়েছে। কাছে গিয়ে দেখে জাহাজটি খালি। তাকে আবারো রক্ষার জন্য সে সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। খুব শীঘ্রই সে আবিষ্কার করে সমুদ্র তীরটি মানুষ হত্যার (নরবলির) একটি বদ্ধভূমিতে পরিণত হয়েছে। সে সতর্ক হয়ে যায় এবং সবসময় সজাগ দৃষ্টি রাখে। তারপরই দেখতে পায় ত্রিশ জন নরখাদক তাদের শিকারকে ধরে নিয়ে আসছে। একজন শিকারকে তারা হত্যা করেছে এবং আর একজন তাদের বলির অপেক্ষায় ছিল। হঠাৎ সে নিজেকে বাধনমুক্ত করে এবং বাচার জন্যে ক্রুসোর বাসস্থানের দিকে দৌড় দেয়। ক্রুসো তাকে নিরাপত্তা দেয়। ক্রুসো তার পশ্চাদ্ধাবনকারী একজনকে হত্যা করে এবং আর একজনকে আহত করে। বলির শিকার হতে যাওয়া লোকটি আহত পশ্চাদ্ধাবনকারী লোকটিকে হত্যা করে। অস্রে সজ্জিত হয়ে ক্রুসো তীরে ফিরে গিয়ে বেশিরভাগ নরখাদকদের হত্যা করে। বলির শিকার হতে যাওয়া লোকটি তার মুক্তির জন্যে ক্রুসোর প্রতি কৃতজ্ঞ হয় এবং নিজেকে তার প্রতি নিবেদন করে। সেই দিনটিকে স্মরণিয় করে রাখার জন্যে ক্রুসো তার নাম রাখে ফ্রাইডে।
বুদ্ধিমান ও উৎফুল্লস্বভাবের ফ্রাইডেকে ক্রুসো কিছু ইংরেজি শব্দ এবং ধর্মীয় জ্ঞান শেখায়। ফ্রাইডে তাকে জানায় নরখাদকরা কয়েকটি জাতীতে বিভক্ত এবং তারা তাদের শত্রুদের মাংস খায়। ফ্রাইডে আরো জানায় নরখাদকরা তাকে ভাঙ্গা জাহাজ থেকে উদ্ধার করেছে। জাহাজটি ছিল স্প্যানিশদের (Spaniard) যারা কাছে কোন দ্বীপে বাস করে।
ফ্রাইডে তার নিজের দেশের মানুষদের কাছে ফিরার ইচ্ছা প্রকাশ করে। ফ্রাইডেকে হারাতে হবে শুনে ক্রুসো কিছুটা বিমর্ষ হয়। ক্রুসোর মাথায় তখন স্প্যানিশদের দেখার বুদ্ধি চাপে। এটা শুনে ফ্রাইডে তাকে বলে ক্রুসোকে হারানোর চেয়ে তার কাছে বরং মৃত্যুও ভালো। কাছের নরখাদকদের দেশ দেখার জন্যে তারা দুজনে মিলে একটি নৌকা তৈরী করে। রওনা দেয়ার আগে তারা দেখতে পায় প্রায় ২১ জন নরখাদক তিনজনকে বলি দেয়ার জন্যে নিয়ে আসছে। এই তিনজনের একজনের গায়ে ইউরোপিয়ান পোষাক মানে স্পেনিশ এবং আর একজনকে দেখে ফ্রাইডে আনন্দে চিৎকার দিয়ে ওঠে। কারন সে ছিল ফ্রাইডের বাবা। তারা গুলি করে বেশিরভাগ নরখাদককে হত্যা করে এবং দুজনকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। ক্রুসো তার বাড়িতে তাদের স্বাগতম জানায় এবং স্পেনিশ ব্যক্তি ও ফ্রাইডের বাবাকে নৌকায় করে আশে পাশের দ্বীপ ঘুরে দেখতে পাঠায়।
আট দিন পরে দ্বীপের দিকে এগিয়ে আসতে থাকা একটি ইংরেজ জাহাজ ফ্রাইডেকে সজাগ করে তোলে। ক্রুসোও সন্দিহান হয়ে ওঠে। তারা দেখতে পায় উপকুল ধরে ১১ জন লোক তিনজন বন্দিকে ধরে নিয়ে আসছিল। ১১ জনের মাঝে দুই জনকে বন্দি পাহারায় রেখে বাকিরা দ্বীপ দেখার জন্যে বের হয়। দুই বিদ্রোহীকে আটক করে ফ্রাইডে এবং ক্রুসো তাদের তিনজনকে মুক্ত করে। জানতে পারে তাদের একজন হল জাহাজের ক্যাপটেন। আর বাকি দুইজনের একজন হল জাহাজের ফার্স্ট মেট ও একজন সাধারন যাত্রী ও ক্যাপ্টেনের অনুগত। জাহাজের সবাইকে হত্যা করে বিদ্রোহীরা তাদেরকে ধরে নিয়ে এসেছে। তারা আসলে বিদ্রোহী। জাহাজের ক্যাপ্টেনের সাথে ক্রুসোর একটি চুক্তি হয়, তারা তাকে দ্বীপের শাসনকর্তা হিসেবে মেনে নিবে এবং তাদের দুই জনকে (ক্রুসো ও ফ্রাইডে) ইংল্যান্ডে ফিরে যেতে সাহায্য করলে, ক্রুসো তাদেরকে বিদ্রোহীদের হাত থেকে উদ্ধার করবে। ক্যাপ্টেন তাদেরকে বাচানোর জন্যে ক্রুসোকে ঈশ্বরের প্রেরিত ফেরেশতা/দূত হিসেবে আখ্যায়িত করে।
ক্রুসো এবং ফ্রাইডে বিদ্রোহীদের পিছন থেকে বিভিন্ন শব্দ করে তাদেরকে ভিত সন্ত্রস্ত করে তোলে, তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দিয়ে সবাইকেই আটক করে। এরপর ক্যাপ্টেন তাদের সাথে ভান করে যে এটা আসলে একটা টেরিটরি। এর শাসনকর্তা হল ক্রুসো। দ্বীপের মাঝে একটা দূর্গে তার অনুগত ৫০ জনের একটা বাহিনী রয়েছে। ক্যাপ্টেন জানায় যে তাদের জাহাজে বিদ্রোহীদের নেতাসহ আরো ২৬ জন রয়েছে।
যখন আগের নৌকা আর জাহাজে ফিরে গেলো না, তাদেরকে উদ্ধার করার জন্যে আরো আটজন নাবিক আরেকটি নৌকায় করে দ্বীপে আসল। দুইজনকে পাহাড়ায় রেখে বাকি ছয় জন গেলো খুজে দেখতে। সন্ধ্যায় বিনা রক্তপাতে তাদের দুইজনকে আটক করা হল। বাকি ছয়জনকে আত্মসমর্পনের আহবান করা হয়। একজন এর ব্যপারে ক্যাপ্টেন ক্রুসোকে সাবধান করে দিয়েছিল। সে আক্রমন করতে এলে তাকে গুলি করা হলে সে মারা যায়। তাদেরকে আটক করা হল। আটককৃতদের তিনজন ছিল ক্যাপ্টেনের অনুগত। বিপদে পড়ে তারা বিদ্রোহীদের দলে ভিড়েছিল। তাদের নিয়ে আটজনের দল গঠন হল।
কিন্তু মূল শয়তানটা (বিদ্রোহীদের নেতা) ছিল জাহাজে। তাকে কিভাবে গ্রেফতার করা যায় সেটা নিয়ে অনেক চিন্তা করার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হল আটককৃতদেরকে একটা প্রস্তাব দেয়া হবে। সেটা হল তারা জাহাজ উদ্ধারে তাদেরকে সাহায্য করবে। তাহলে ক্যাপ্টেন দেশে ফিরে তাদের মৃত্যুদন্ড (বিদ্রোহের শাস্তি) লাঘবের জন্যে সরকারের কাছে সুপারিশ করবে। প্রস্তাবে তারা রাজি হলে সবাই মিলে জাহাজ উদ্ধারে গেল। পরদিন রাতে তারা জাহাজে গিয়ে সবাইকে আস্তে আস্তে আটক করে কিন্তু সর্বশেষ যখন বিদ্রোহীদের নেতার রুমে যায় সে ক্যাপ্টেনের উপর হামলে পরে কিন্তু ক্যাপ্টেনের গুলি তার মাথা ছিদ্র করে বেরিয়ে যায়।
পরে সকালে জাহাজ থেকে খাবার এনে একটা ভোজসভা করা হয়। দীর্ঘ ২৮ বছর পর ক্রুসো দেশী পোষাক পরতে পারে। এতো বড় এক বিপদ থেকে উদ্ধার লাভের কারনে তারা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের নিকট বারবার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে থাকে।
১৬৮৬ সালের ১৯ ডিসেম্বর ক্রুসো দেশের জন্যে রওয়ানা হয়। তার দুই বোন ছাড়া পরিবারের সবাই মারা গিয়েছিল। তার সেই বিধবা বান্ধবিটি তার সম্পদ নিরাপদেই সংরক্ষন করেছিল। লিসবন ঘুরে সে তার পর্তুগিজ বন্ধুর কাছে যায়। যে তার উপনিবেশটিকে লাভজনক অবস্থায় নিয়ে এসেছিল। ক্রুসো তার সমস্ত জমি বিক্রি করে দেয়। সে তার বিধবা বান্ধবি ও দুই বোনকে সম্পদের একটা অংশ দান করে দেয়। আবার ব্রাজিল যাওয়ার ইচ্ছা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ক্যাথলিক হওয়ায় সে ইচ্ছা পরিত্যাগ করে। বিয়ে করে এবং এক সময় তার স্ত্রী মারা যায়। এবার ১৬৯৪ সালে আবার ইস্ট ইন্ডিজের দিকে ব্যবসায়ী হিসেবে যাত্রা করে। সে তার দ্বীপে আবার ভ্রমন করে। সেখানে গিয়ে দেখে সেই স্প্যানিশরা খুব সুন্দরভাবেই সেটা পরিচালনা করছে এবং এটি এখন উন্নয়নশীল একটা উপনিবেশে পরিণত হয়েছে।
No comments:
Post a Comment