Jane Eyre - Charlotte Brontë - Summary in Bengali |
উপন্যাসের (Jane Eyre: An
Autobiography) শুরুতে আমরা দেখতে পাই, জেন আয়ার, একজন ১০ বছর বয়সী অনাথ শিশু, যে গেটসহেড (Gateshead) এ তার মামী মিসেস সারাহ রীডের (Sarah Reed) বাসায় থাকতো। তার মামী ছিল অত্যন্ত নিষ্ঠুর একজন মহিলা আর জেন আয়ার ছিল তার দু’চোখের বিষ। মিসেস রীডের দুই মেয়ে জর্জিয়ানা (Georgiana Reed) ও এলিজা (Eliza Reed) আর এক ছেলে জন (John Reed)। মায়ের মত তারাও জেনকে ঘৃণা করত। এক্ষেত্রে জন যেন সবাইকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। সে সারাদিন সুযোগ খুজতো কিভাবে জেনকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য ও আঘাত করে তার জীবনটা বিষিয়ে তোলা যায়। এই বাড়িতে দয়া যদি কারো কাছ থেকে পেয়ে থাকে সে হল তাদের বাড়ির পরিচারিকা মিস বেসি (Bessie Lee)।
এমনি একদিন জেনকে পর্দার আড়ালে লুকিয়ে বই পড়তে দেখে জন তাকে এতিম বলে খোটা দেয়। এটাও বলে যে তাঁরা বাবা তার জন্যে ফুটো পয়সাও রেখে যায়নি। যদি তাদের বাসায় না থাকতো তাহলে জেনকে রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করে খেতে হত। শেষে তার হাত থেকে বইটা নিয়ে তার মাথায় ছুঁড়ে মারে। ফলে কপাল কেটে রক্ত বের হয়ে যায়। রাগের মাথায় জেন তাকে আচড়ে দেয়। মিস রীড তাকে শাস্তি হিসেবে উপর তলার লাল ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখে, যেখানে তার মামা মি. রীড (Mr. Reed) মারা গিয়েছিলেন। জেন এর মনে এই বিশ্বাস ছিল যে, তাঁর মামার আত্মা এই ঘরে ঘুরে বেড়ায়। রাতে সে প্রচণ্ড ভয় পায় ও অজ্ঞান হয়ে যায়। যখন জ্ঞান ফিরে আসে তখন সে তার পাশে দয়ালু ডাক্তার জনাব লয়েড (Mr. Lloyd) ও মিস বেসি বসে আছেন। জেন এর মামী ও তার ছেলে মেয়েকে নিয়ে বেড়াতে যাওয়ায় জনাব লয়েড, জেন এর সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলার সুযোগ পান। জেন এর মুখে সব কিছু শুনে তিনি মিসেস রীডকে পরামর্শ দেন জেন এর আসলে গেটশেড ভালো লাগছে না। তাকে দূরের কোন স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলে ভালো হয়।
জেনকে লোউড স্কুলে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এই স্কুলের পরিচালক ও প্রধান শিক্ষক ছিলেন জনাব ব্রকলহার্স্ট (Mr. Brocklehurst) একজন নিষ্ঠুর, অভদ্রভাষী ও দ্বিমুখী চরিত্রের অধিকারী ব্যাক্তি। সে স্কুলের শিক্ষকদের বলতেন মেয়েদেরকে খাবার কম দিতে যাতে তাঁরা পূর্বের ঈশ্বরভক্ত শহীদ ব্যাক্তিদের মত কষ্টসহিঞ্চু হতে পারে। কিন্তু অনুদানের টাকায় তিনি ও তার পরিবার নিয়ে সমৃদ্ধ জীবনযাপন করতেন। লোউড স্কুলে জেন দুইজন শুভাকাঙ্ক্ষী লাভ করে। একজন হল তার বন্ধু মিস হেলেন বার্নস (Helen Burns) ও আর একজন তাদের শিক্ষিকা মিস মারিয়া টেম্পল (Maria Temple)। লোউড স্কুলে ক্ষুধা, অনাহার, তীব্র শীতের কষ্ট থাকলেও মিসেস রীডে ও তার ছেলের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে জেন এর জীবনে একটা স্বাভাবিকতা ফিরে আসে। কিন্তু একসময় শীতের প্রকোপ আঘাত হানে লোউড স্কুলে। টাইফাস (typhus) এর আক্রমনে তার প্রাণের বান্ধবী হেলেনসহ স্কুলের প্রায় জনা ত্রিশেক ছাত্রী মারা যায়। এতে এলাকার মানুষের টনক নড়ে। ধনী ব্যাক্তিরা বড় অঙ্কের অনুদান সংগ্রহ করে স্কুলের ব্যাবস্থাপনা ঢেলে সাজায়। জেন এখানে প্রায় ৬ বছর শিক্ষার্থী হিসেবে থাকে। পরে আর দুই বছর এখানেই শিক্ষকতা করে। মিস টেম্পলের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় জেন এর এখানে আর মন বসে না। সে পত্রিকায় শিক্ষকতার চাকরির বিজ্ঞাপন দেয়। প্রায় সপ্তাহ দুয়েক পরে থর্নফিল্ড (Thornfield) থেকে একটি চিঠি আসে। অ্যাডেল নামে একটি ফরাসী বাচ্চা মেয়েকে লেখাপড়া শেখাতে হবে। অ্যাডেলের প্রাথমিক পরিচয় হল বাড়ির মালিক জনাব রচেস্টার তাকে দত্তক নিয়েছেন। তবে আরেকটি কথা শোনা যায় যে তার মা সেলিনের (Celine Varens) সাথে জনাব রচেস্টারের প্রেম ছিল। যখন রচেস্টার খেয়াল করে সেলিন এর তার টাকার প্রতি লোভ এবং অবিশ্বস্থ একজন মহিলা, তখন সে অ্যাডেলকে নিয়ে চলে আসে। জেন থর্নফিল্ড গেলে সে স্থানটি তার মনে ধরে যায়। তার ছাত্রী অ্যাডেল (Adèle Varens) এবং বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক মিস ফেয়ারফ্যাক্স (Alice Fairfax) দুজনকেই তার খুব ভালো লাগে।
মাস তিনেক পরে জেন একদিন নদীর ধারে ঘুরতে গেলে তার সাথে জনাব রচেস্টারের (Edward Rochester) দেখা হয়ে যায়। জেন মনে মনে তাকে ভালোবেসে ফেলে। কিন্তু বলতে সাহস পায় না।
একদিন রাতে জেন একটা চিৎকার শুনে বাহিরে বের হয়ে প্রথমে কিছু দেখতে পায় না। জনাব রচেস্টারের ঘরের পাশে গেলে দেখে তার ঘরের ভিতরে আগুন লেগে রয়েছে। মরার মত গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন জনাব রচেস্টারকে তিনি ডেকে তুলে আগুনের হাত থেকে রক্ষা করেন। রচেস্টার তাকে জানায় আগুনটা সম্ভবত গ্রেস পুল (Grace Poole) নামে একজন কাজের লোক লাগিয়েছে। কিন্তু গ্রেস পুল বাড়িতে তার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে দেখে জেন বুঝতে পারল, সেদিন রাতে জনাব রচেস্টার ভিতরের পুরো কাহিনী তাকে জানায়নি। এরপর যখন জনাব রচেস্টার বাড়িতে ব্লানশে ইনগ্রাম (Blanche Ingram) নামে একজন অর্থলোভী মহিলাকে নিয়ে এলেন, জেন হতাশায় ডুবে গেল ।
একদিন রাতে জ্যামাইকা থেকে জনাব ম্যাসন (Richard Mason) নামে একজন লোক এলো। তার উপস্থিতিতে জনাব রচেস্টার বিরক্ত হলেন কিন্তু তার সাথে ঘরে দীর্ঘক্ষন আলাপের পরে একসময় খুশি মনেই তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। রাতের বেলা হঠাৎ চিৎকার শুনে বেরিয়ে এলো জেন। বাড়ির অন্যরা টের পায়নি। জনাব রচেস্টার জেনকে উপরের একটা ঘরে নিয়ে গেলে। যেখানে মি. ম্যাসন আহত অবস্থায় পড়েছিল। মি. রসচেস্টার তাকে বলল মি. ম্যাসন এর আঘাতপ্রাপ্ত শরীরে স্পঞ্জ ধরে রাখতে। তিনি দু ঘন্টার মাঝে ডাক্তার ডেকে নিয়ে আসলেন। রাত পোহাবার আগেই তিনি মি. ম্যাসনকে ডাক্তারের বাড়িতে পাঠিয়ে দিলেন। এখানেও জনাব রচেস্টার জেনকে খোলাসা করে কিছু বলেনি।
কয়েকদিন পরে তাদের বাসায় মীসেস রীডের পরিচারিকা বেসীর স্বামী লীভেন আসে ও তাকে জানায় মিসেস রিড (Mrs. Reed) তাকে দেখতে চেয়েছেন। তিনি এখন শয্যাশায়ী। জেন তখন এক সপ্তাহের ছুটি নিয়ে গেটশেডের দিকে যাত্রা করে। মিসেস রীডের কাছে গেলে সে জানায় সে এখনো জেনকে ঘৃণা করে। আরো জানতে পারে জন রীড মদ আর জুয়ার মাধ্যমে নিজেকে ধ্বংস করে ফেলেছে। শেষবার এসে তার মায়ের থেকে সমস্ত সম্পত্তি লিখিয়ে নিতে চেয়েছিল। এর কিছু দিন পরে লন্ডনে সে মারা গিয়েছে। ৫ম সপ্তাহে মিসেস রীড জেনকে ডাকলেন। তাকে জানালেন, তার এক চাচা আছে নাম জন আয়ার। তার একটা চিঠি তাকে দিলেন। যেটা তিন বছর আগে মিসেস রীড পেয়েছিলেন। তিনি আরো বলেন তার চাচাকে তিনি জানিয়েছেন, টাইফাস জ্বরে জেন এর মৃত্যু হয়েছে। সেদিনই তার মামী মৃত্যু বরন করে।
জেন থর্নফিল্ডে ফিরে আসে। জনাব রচেস্টার তাকে তার ভালোবাসার কথা জানায়। জেনের বিশ্বাস হয় না। তখন তিনি বলেন আসলে জেন এর ভিতরে ঈর্শা জাগানোর জন্যেই মূলত ব্লানশে ইনগ্রামকে এ বাড়িতে আনা হয়েছিল। যেদিন জেনকে প্রথম দেখেছিলেন, সেদিনই তিনি তাকে ভালোবেসে ফেলেছিলেন। জেনও তাকে তার ভালোবাসার কথা জানায়। ঠিক হয়ে পরের মাসেই তাদের বিয়ে।
বিয়ের আসরে তাঁরা যখন শপথ নিবে, এসময় মি. ম্যাসন ও আইনজীবী
মি. ব্রিগস (Mr. Briggs) এসে চিৎকার করে বলে যে, জনাব রচেস্টারের একজন বউ আছে যার নাম বার্থা ম্যাসন। মি. ম্যাসন দাবি করে যে, সে বার্থা ম্যাসনের (Bertha Mason) ভাই। শুনে মি. রচেস্টার তার দাবী অস্বীকার করে না। পরে তাদের সবাইকে তার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে দেখায় যে, বার্থা আসলে পাগল। যে ঘরের ভিতরে পাগলামী করছিল, এদিক সেদিক পাগলের মত ছোটা-ছুটি করছিল।
পরে রচেস্টার তাকে জানায়, তরুণ বয়সে তার বাবা তাকে ধনী বানানোর জন্যে তাকে এক ধনকুবেরের মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন যদিও তিনি জানতেন মেয়েটা (বার্থা ম্যাসন) আসলে একটা পাগল। থর্নফিল্ডের চতুর্থ তলায় (third story) রচেস্টার তাকে বন্দী করে রাখতেন এবং গ্রেস পুলকে তার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আসলে সেই রহস্যময় আগুন লাগার আসল কারন ছিল বার্থা। কিছুদিন পরে মনের কষ্ট নিয়ে জেন প্রায় খালি পকেটে থর্নফিল্ড ছেড়ে বেড়িয়ে যায়।
পকেটে মাত্র ২০ শিলিং । মার্শ এন্ড (Marsh
End) এ পৌছালে তার পয়সা শেষ হয়ে যায়। ক্যারিজ থেকে নেমে খাবার ভিক্ষা করে কিন্তু তাকে কেউ ভিক্ষাও দেয় না। অবশেষে মুর হাউজে তার আশ্রয় হয়। জেন আয়ার নিজের নাম জেন ইলিয়ট বলে তাদের কাছে পরিচয় দেয়। সেখানে সে বাড়িতে মেরি (Mary Rivers), ডায়ানা (Diana Rivers) ও সেইন্ট জন রিভার্স (St. John Rivers) এর সাথে তার ভালো খাতির হয়ে যায়। জন ছিল একজন পাদ্রী। সে জেনকে মরটনে (Morton) একটি অবৈতনিক বিদ্যালয়ে চাকরি খুজে দেন।
একদিন জন তাকে জিজ্ঞাসা করে লোউড স্কুলের জেন আয়ার নামে কাউকে সে চিনে কিনা। জেন আয়ারের চাচা জনাব জন আয়ার (John Eyre) মৃত্যুর আগে তার জন্যে ২০০০০ পাউন্ড রেখে গিয়েছে। জেন তখন নিজের আসল পরিচয় দেয়। তার জন্যে আরো বিস্ময় অপেক্ষা করছিল। জন রিভার্সরা হল তার ফুপাতো ভাই ও বোন। জেন তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্তে তার তিন আত্মীয়কে ১৫ হাজার পাউন্ড দিয়ে দেয়।
এই অর্থ লাভ করার পর জন রিভার্স ভারতে একজন মিশনারী হিসেবে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং জেনকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু জেন তার প্রস্তাবে রাজী হয় না কারন সে এখনো মি. রচেস্টারকে ভালোবাসে। সে আরো ভাবতে থাকে। এক রাতে তার কাছে মনে হল যেনো মি. রচেস্টার তাকে ডাকছেন। তড়িৎ সিদ্ধান্তে সে থর্নফিল্ডে যায় এবং সেখানে গিয়ে দেখে থর্নফিল্ড নামক বাড়িটি পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। মি. রচেস্টার এর পাগল স্ত্রী বার্থা ম্যাসন আগুন লাগিয়েছে এবং এর সাথে সে নিজেও পুড়ে মারা গেছে।
রচেস্টার তার পরিচারিকা ও কাজের লোকদের বাচাতে পেরেছেন কিন্তু এর সাথে নিজের দৃষ্টিশক্তি ও এক হাতের কর্মশক্তি হারিয়েছেন। রচেস্টার তখন ফার্নাডিনে (Ferndean) ছিলেন। জেন সেখানে যান এবং অন্ধ ও এক হাতের কর্মশক্তিহীন রচেস্টারকে বিয়ে করেন। জেন যখন এই অটোবায়োগ্রাফী লিখছিলেন, তখন তারা দুজনে একসাথে ১০ টি আনন্দময় বছর পার করেছেন। স্কুল থেকে এডেলকেও জেন বাসায় নিয়ে আসে। দুই বছরের মাথায় রচেস্টার তার এক চোখে কিছুটা আলো ফিরে পেয়েছেন ও তাদের সদ্যজাত সন্তানকে দেখার সৌভাগ্য অর্জন করেন।
No comments:
Post a Comment