Michael - William Wordsworth - Translation in Bangla- Part - 3 |
Michael - William Wordsworth - Translation in Bangla- Part - 3 of 3
মিখাএল - উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ - বাংলা অনুবাদ
২য় পর্বের পর থেকেঃ
জীবনের দুটো বাস্তব ঘটনায় জড়ালাম তোমাকে
যদিও তুমি জানো না কিছুই, শুধু বাবাকে ভালোবেসে
কাজগুলো তুমি করবে সম্পন্ন ভালোভাবে;
এটা ঠিক, জন্মের পর থেকে আজ পর্যন্ত
দুদিনের জন্যও থাকোনি দূরে কোনোদিন,
ছিলে পিতার স্নেহমায়ায় বন্দি; অনেক দিন চলে গেছে,
এখনো তোমাকে আমি তেমন ভাবেই ভালোবাসি।
এর আগে শুনিনি কখনো এত মিষ্টি ধ্বনি
যখন আগুনের পাশে বসে শুনেছিলাম এক স্বর
প্রাকৃতিক সুর ও শব্দে তোমার প্রথম উচ্চারণ;
তোমার মায়ের কোলে বসে দুধ পান করতে
আর গাইতে শিশু কণ্ঠে মিষ্টি সুরেলা গান।
মাসের পর মাস এই সবুজ ক্ষেত-পাহাড়ে
অতিবাহিত হলো সময়; ভাবতাম,
তুমি বেড়ে উঠবে কেবল তোমার পিতার ছায়ায়।
কিন্তু আমরা সহযোদ্ধা লুক; এ-পাহাড়ি অঞ্চল
তোমার জানা, এখানে বৃদ্ধ-যুবক চলে পাশাপাশি,
তোমার নিশ্চয়ই এখানে নেই কোনো চাহিদা অপূর্ণ।
পৌরুষ হৃদয় সত্ত্বেও লুক সশব্দে উঠেছিল কেঁদে
বৃদ্ধ তার হাত চেপে ধরে বলেছিল, ‘দুঃখ পেও না,
আমি জানি এ-কথা তোমাকে বলতে হবে না পুনরায়,
শেষ পর্যন্ত তোমার কাছে একজন আদর্শ পিতা হতে চাই।
এটা একধরনের দান যা পেয়েছিলাম অন্যের কাছ থেকে
জীবনের এই শেষ লগ্নে এসেও স্মরণ করি তাদের।
যারা দিয়েছিল যৌবনে অনেক ভালোবাসা।
সে-রাতে পিতা-পুত্র এক বিছানায় ঘুমিয়েছিলো:
পূর্বপুরুষদের মতোই তাদের জীবন যাপন,
কারো মৃত্যু হলে পারিবারিক কবরস্থানে
দেহ সমাহিত করতে কেউ হয় না দ্বিমত।
‘আশা করি তুমি এই রীতি করবে বহন।
কিন্তু পুত্র, অনেকটা পেছনে তাকালে দেখবে।
গত ষাট বছরের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অর্জন।
তারা যখন এসেছিল এ-জমি ছিল অধিকৃত;
বর্তমানের অর্ধেকও ছিল না যখন আমার বয়স চল্লিশ।
করেছি কঠোর পরিশ্রম; ঈশ্বর দিয়েছেন আশীর্বাদ।
এবং আর তিন সপ্তাহ পরে ভূমি হবে পুরোপুরি মুক্ত;
এর মানে কেউ আর পারবে না নিতে ভূমির মালিকানা।
লুক,
তোমার প্রতি অবিচার হলে ঈশ্বর ক্ষমা করুন,
তারপরও তোমার উচিত হবে একবার যাওয়া।
এখানে বৃদ্ধ থামলেন এবং দেখালেন পাথরের স্তুপ,
কিছুক্ষণ নীরব থেকে পুনরায় বলেছিলেন,
‘পুত্র, এটা ছিল আমাদের দুজনার কাজ
কিন্তু এখন তা কেবল আমার একার অধিকারে।
লুক,
নিজ হাতে এখানে রাখো একখণ্ড পাথর,
এর জন্যই তোমাকে এখানে এসেছি নিয়ে।
আশা রাখ, আমাদেরও আসবে ভালো সময়।
দেখছ তো চুরাশিতেও আমি ভেঙে পড়ি না;
তুমিও আমার মতো হও মজবুত।
শুধু তোমার জন্য সব আবার করব শুরু।
পাহাড়ে ঝড়ের মধ্যে একাই শেষ করব সব কাজ
তোমার জন্মের পূর্বে করতাম যেমন করে;
ঈশ্বর তোমার সহায় হোন!
গত দুই সপ্তাহ ধরে আলোড়িত তোমার হৃদয়
অনেক প্রত্যাশায়, হ্যা-হ্যা হওয়া উচিত।
জানি আমাদের ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না।
ভালোবাসায় একে অপরে ছিলাম আষ্টেপৃষ্ঠে,
তুমি ছাড়া আমাদের কী বাকি থাকে আর!
যা হোক, আমি ভুলে থাকব আমার ক্ষত।
ওই কোণায় পাথরটি রাখ এবং পরে
লুক,
যখন থাকবে দূরে মিশতে হবে ,
অনেক বদ লোকজনের সঙ্গে, রেখ মনে,
এই মেষের খোয়াড়ই তোমার শেষ রক্ষক;
সমস্ত লোভ আর ভয়ের মাঝে তোমার কাছে এটা
থাকব প্রতীক হয়ে পূর্বপুরুষের জীবন।
যারা ছিল কর্মঠ, নিস্পাপ, ভালো মানুষ।
এখন নিতে পারো বিদায় ফিরে আসবে যখন
দেখবে,
একটি সম্পূর্ণ খোয়াড় যা ছিল না এখানে;
ভাগ্যে যা-ই থাক, বিরাজমান থাকল এই চুক্তিপত্র
শেষ পর্যন্ত তোমাকে বাসব ভালো এবং
তোমার স্মৃতি নিয়েই যাব কবরে।
বৃদ্ধ থামলে লুক নিচু হয়ে বসল এবং
বাবার ইচ্ছানুযায়ী খোয়াড়ের জন্য রাখল প্রথম পাথর।
দৃশ্যটি দেখে ঘুচে গেল বৃদ্ধের সব কষ্ট
পুত্রকে জড়িয়ে চুমু খেলেন এবং কেঁদে ফেললেন;
দুজন খুব ঘনিষ্ঠ অবস্থায় ফিরে এল বাড়ি।
পরিকল্পনা মতো পরের সকালে পুত্র হয়েছিল রওনা;
রাস্তায় নামার পরে তাকে বেশ সপ্রতিভ দেখাচ্ছিল;
সব প্রতিবেশীরা এসে দরজার বাইরে।
অনেক শুভকামনায় করেছিল বিদায়ী প্রার্থনা;
যতক্ষণ লুককে দেখা গেল সবাই ছিল তাকিয়ে।
লুক ও তার কর্ম সম্পর্কে তুষ্টিকর মন্তব্য এল আত্মীয়ের
এবং পুত্র লিখল ভালোবাসার চিঠিতে ঘটনার বিবরণী;
গৃহকত্রীর ভাষায় এটা ছিল এ-যাবৎ কালের
সবচেয়ে সুন্দর ও মনোরম চিঠি;
আনন্দিত মনে
পড়ে নিল দুজনেই, পিতা ও মাতা।
কয়েক মাস অতিবাহিত হলো; প্রফুল্লতা ও আত্মবিশ্বাসে
মেষপালক করে যাচ্ছিল তার নিত্যকর্ম পালন;
প্রায়ই অবসরে যেতেন হেঁটে উপত্যকা অবধি
এবং সেই মেষ খোয়াড়ে গিয়ে হতেন আবেগাপ্লুত।
কিন্তু লুক তত দিনে হয়ে পড়েছিল কর্তব্যে অমনোযোগী
তাকে কুপথে করল ধাবিত সেই চরিত্রহীন শহর;
কলঙ্ক মেখে নিজেকে অপরাধী ভেবে
সমুদ্রের ওপারে হারিয়ে গেল সে চিরতরে।
সহজাত ভালোবাসায় আছে একধরনের শক্তি
হৃদয় বিদীর্ণ হলেও তা সহনীয় করে তোলে বিষয়-
বৃদ্ধ মাইকেলের শেষ পর্যন্ত তা-ই হয়েছিল।
অনেক বছর পর এই বেদনাদায়ক খবর শুনে
বৃদ্ধ কী করলেন এবং কেমন অনুভূতি হলো
তাকে জানে এমন কারো চেয়ে বললাম একটু বেশিই।
তার দেহে নেমে এসেছিল ভাঙাচোরা বার্ধক্য—
তখনো পাহাড়ে হাঁটতে হাঁটতে সূর্য দেখতেন
মেষচরানো ও ক্ষেতের কাজ শেষে
কান পেতে শুনতেন বাতাসের গহীন শব্দ;
মেষের খোয়াড় নির্মাণের জন্য সময়ে সময়ে
উপত্যকায় করতেন জায়গা নির্ধারণ।
মাইকেলের হৃদয়ের তীব্র ব্যথা কেউ ভোলেনি,
সবাই বিশ্বাস করে অনেক অনেক দিন ধরে
ইতস্তত হাঁটতেন এবং আঁকড়ে ছিলেন একখণ্ড পাথর।
মেষের খোয়াড়ের পাশে তাকে যেতে দেখা
একলা আছে বসে, পাশে বিশ্বস্ত কুকুর
তারই মতো বৃদ্ধ, পায়ের কাছে আছে শুয়ে।
পুরো সাত বছর ধরে গড়তেছিলো সেই খোয়াড়
কিন্তু অসমাপ্ত রেখেই মৃত্যু হয়েছিল তার;
স্বামীর মৃত্যুর তিন বছর কি কিছু বেশি বেঁচেছিল ইসাবেল,
এবং তার মৃত্যুতে অন্যের হাতে চলে গেল সম্পত্তি।
“The Evening Star” নামের সেই বাড়িটি
গেলো শেষ হয়ে – সেই মাটিতেও লাঙ্গলের ফাল চলে
যেখানে ছিল
দাঁড়িয়ে (বাড়িটি)। বিশাল এক পরিবর্তন এসেছে –
সমস্ত পাড়ায় – তবুও ওক গাছটি এখনো রয়ে গেছে –
যেটি তাদের দরজাও
পাশে বেড়েছিল। আর সেই অবশেষ-
অসমাপ্ত ভেড়ার
খোয়াড়ের – সেটারও দেখা মিলতে পারে
গ্রীন হেড
গীলের অশান্ত ছোট নদীটির পাশে।
No comments:
Post a Comment