Michael - William Wordsworth - Translation in Bangla |
Michael - William Wordsworth - Translation in Bangla- Part - 2 of 3
মিখাএল - উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ - বাংলা অনুবাদ
প্রথম পর্বের পর থেকেঃ
সহজাত মমতায় অন্ধের অবলম্বন
অথবা ছিল সবকিছুর ঊর্ধ্বে এ-সন্তান;
তাকে ঘিরে সমস্ত আশা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
এবং নিজের মৃত্যুর পর তার অবস্থান নিয়ে উদ্বেগ।
বিভিন্ন কারণে বৃদ্ধের সমস্ত ভাবনার কেন্দ্র প্রিয় পুত্র।
এই নগ্ন ভালোবাসাই তার চূড়ান্ত উচ্ছাস!
শিশুটি নিয়ে কোলে প্রায়ই বৃদ্ধ মাইকেল
লেগে যেতেন মেয়েলি কাজকর্মে।
পিতৃচপলতা বা উচ্ছাসের চেয়ে বরং
শান্ত মমতায় কোমল করে দোলাতেন দোলনা।
পুত্র কৈশোরে হলে উত্তীর্ণ
ভালোবাসত তার পিতাকে; যখন করত কাজ
ঘরের বা বাইরের, বাড়ির কাছেই বিশাল ওকগাছ
(গ্রাম্য লোকেরা
যাকে বলত কর্তনের গাছ)
যার প্রশস্ত ছায়ায় করত মেষের লোম কর্তন।
সে ছিল অনমনীয় ও দৃঢ় সংকল্পের কিশোর ।
অতঃপর দুজন বসলে গাছের ছায়ায়।
প্রফুল্লতায় ঘিরে থাকত চারপাশ
লুক,
শিশুর খেয়ালে টানত মেষের পা ধরে
অথবা লোম কাটার জন্য শোয়ানো হলে
চিৎকার করে দেখাত ভয়;
মাইকেলের মন উঠত ভরে গভীর মমতায়।
স্বর্গের শুভ দৃষ্টিতে লুক উত্তীর্ণ হলো কৈশোরে ।
যদিও গোলাপের মতো গাল দেখে পাচ বছরের
শিশুই মনে হতো। মাইকেল শীতে ঝোপ থেকে
ডাল কেটে লোহার হাতল লাগিয়ে দিত তাকে
যা ছিল একজন মেষপালকের অবধারিত অস্ত্র;
দাঁড় করিয়ে রাখত বেড়ার ফাঁকে কিংবা
দরজার কাছে তাড়াতে পাখির ঝাক;
অদক্ষ পুত্র কিছুটা ঝামেলা পাকালেও
এতে মাইকেলের হতো অনেক সুবিধা
এবং আমার মনে হয় এর ফলে লুক
বাবার কাছে কুড়াতো ব্যাপক প্রশংসা।
নিত্য পরিক্রমায় ভালোই চলছিল সংসার
হঠাৎ মাইকেলের কানে এল এক দুঃসংবাদ।
যখন লিখছি এই গল্প তার বহু বছর পূর্বে
ভ্রাতুপুত্রের কাছ থেকে নিয়ে ছিল জামানত
যে ছিল একজন উচ্চবিত্ত শিল্পপতি,
দেনা পরিশোধ করতে ডেকে
পাঠালো;
আচমকা বৃদ্ধের ঘাড়ে এল নেমে নিষ্ঠুর দুর্ভাগ্য,
যে দণ্ড অর্ধেক সম্পদের সমান।
শুনে প্রথমে তিনি হয়ে গেলেন প্রায় বধির,
সম্বিৎ ফিরে পেয়ে দেখলেন হারিয়ে যাচ্ছে
বৃদ্ধ বয়সের সমস্ত জীবনের আশা।
নিজের মধ্যে সঞ্চয় করে শক্তি, ভাবলেন,
সমস্যা থেকে তিনি করবেন উত্তরণ;
বিক্রি করবেন উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া আশ্রয়স্থল।
এটা ছিল প্রথম সমাধান; তিনি ভাবলেন পুনর্বার
এবং হৃদয়ে অনুভব করলেন তীব্র ব্যথা।
প্রায় দুইদিন পর স্ত্রীকে জানালেন, ইসাবেল,
সত্তর বছরে কখনো লাগেনি এমন কষ্ট; . .
ঈশ্বরের দানে সূর্যের আলোতে আছি বেঁচে আমরা,
কিন্তু এই মাঠ যদি চলে যায় অন্যের হাতে
আমি জানি, কবরেও মিলবে না আমার শান্তি।
এগুলো আমাদের কত শ্রমে অর্জিত সম্পদ।
সূর্যও মনে হয় করে না এতটা পরিশ্রম।
ওই লোক সঠিক হোক কিংবা ভুল হোক
এ-কাজ কুৎসিত মানসিকতার শয়তানি ছাড়া কিছুই নয়।
আমি তাকে করেছি ক্ষমা তারপরও মনে হয়
কথা বলার থেকে বাকরুদ্ধ হওয়াই হতো ভালো;
আমি ভাবতে চাই আশাব্যঞ্জক প্রতিকারের কথা।
ইসাবেল,
এই সম্পত্তি যাবে না,
তা হবে মুক্ত
বাতাসে পাখিরা যেমন স্বাধীন থাকে
কিন্তু লুক ছেড়ে চলে যাবে আমাদের।
তুমি তো জানো আছেন আরেকজন আত্মীয়।
কজন আত্মীয়
এই দুর্দিনে তিনি করতে পারেন সহায়তা;
অঢেল সম্পদের মালিক, ব্যবসায়ে বিশাল প্রতিপত্তি
সাহায্যের আবেদন নিয়ে তার কাছে যাবে লুক;
সামলে এ-দুর্দিন আসবে ফিরে।
বসে থাকলে কী হবে? দরিদ্রতায় কী পাবো?
এই বলে বৃদ্ধ থামল, ইসাবেল রইল বসে নীরবে
মনের আলোড়নে উঠে এল পুরোনো স্মৃতি।
ইসাবেল আপন মনে ভাবলো, রিচার্ড ব্যাটম্যান নামে
ছিল এক অনাথ লোক জড়ো হয়ে চার্চের দুয়ারে
যার জন্য করেছিল সংগ্রহ শিলিং, পেন্স, হাফ-পেনি
দিয়েছিল ঝুড়ি কিনে এক প্রতিবেশী।
পণ্য ভর্তি করে কাঁধে বয়ে করত সে ফেরি;
লন্ডনে গিয়ে পেয়েছিল এক মালিকের দেখা
সমুদ্র-বাণিজ্যের জন্য যিনি খুঁজছিলেন একজন লোক।
সেখানেই হয়েছিল অনেক সম্পদের মালিক,
দান করেছিল গরিবদের মধ্যে তার ভূ-সম্পত্তি,
জন্মস্থানে গড়েছিল বিদেশি মার্বেল পাথরের চ্যাপেল।
অন্যান্য চিন্তার মধ্যে এ-স্মৃতি মনে হতেই
ইসাবেলের মুখ হয়ে উঠেছিল একটু উজ্জ্বল।
বৃদ্ধের মুখেও নেমেছিল প্রসন্নতা, বলা শুরু করলেন,
ইসাবেল,
এবার মনে হলো গত দুদিনের
হারানো জীবন পেলাম ফিরে আবার।
নিঃস্ব হওয়ার থেকে রক্ষা পাওয়ার এখনো আছে উপায়;
আমি এখনো যৌবনোদীপ্ত আশা করি পোষণ,
এ-সুযোগ বাঁচিয়ে দেবে আমাদের।
লুককে দাও তার সবচেয়ে সুন্দর পোশাক।
কাল দিনে অথবা রাতেই পাঠাব।
যদি রাজি থাকে তো আজ রাতেই রওনা হোক।
মাইকেল থামল এবং প্রসন্ন মনে মাঠে গেল।
পরের পাঁচ দিন ও রাতের খাটুনিতে
গৃহকত্রী সন্তানের ভ্রমণের জন্য দরকারি
সব কিছু করে রাখলেন গোছগাছ।
রবিবার এলে ইসাবেল খুশি হলেন
পাশে শুয়ে মাইকেল বলেছিল গত দুই রাত
মেষ চড়াতে হচ্ছে অনেক সমস্যা;
কিন্তু সকালে জেগে দেখলেন সব আশা শেষ।
ওই দিন দুপুরে বসে দরজার পাশে লুককে বললেন,
‘তুমি যেও না,
হারানোর মতো দ্বিতীয়টি নেই আমাদের
মরে গেলে স্মরণ করারও কেউ থাকবে না, তুমি যেও না,
তোমাকে হারালে তোমার বাবা বাঁচবে না।'
মায়ের কথা শুনে পুত্র হাসিমুখে দিয়েছিল উত্তর
শুনে পূর্ণ হয়ে উঠেছিল ইসাবেলের হৃদয়।
ওই সন্ধ্যায় করেছিল পরিবেশন ভালো ভালো খাবার
এবং ক্রিসমাস ফায়ারের পাশে গোল হয়ে বসে
আনন্দ মনে সকলে করেছিল সময়টা উপভোগ।
পরদিন সকালে ইসাবেল শুরু করেছিল নৈমিত্তিক কাজ
এবং পুরো সপ্তাহজুড়ে এমন ঝলমল করল ঘর
যেন বসন্তে প্রাণপূর্ণ এক বনানী।
আত্মীয়ের কাছ থেকে এল এক আশান্বিত চিঠি
অনুরোধস্বরূপ করবে ছেলের জন্য তার যা সাধ্য।
দশবারেরও বেশি পাঠ হলো সেই চিঠি
প্রতিবেশীদের ঘুরে ঘুরে দেখাল ইসাবেল।
লুকের মতো গর্বিত কেউ তখন ছিল না ইংল্যান্ডে।
ইসাবেল বাড়িতে ফিরতেই বলল মেষপালক,
আগামী দিন সে দেবে রওনা। ইসাবেল বিস্মিত,
প্রতি উত্তরে এত অল্প সময়ে সবকিছু
ঠিকঠাক করে কেমনে সে দেবে বলে জানাল;
কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাজি হলে মাইকেল পেল স্বস্তি।
এই দুঃসংবাদ আসার কিছুদিন পূর্বে
গ্রিনহেডগিলের পাশে গহীন উপত্যকায়
মাইকেল রেখেছিল করে একটা খোয়াড়ের নকশা
একই কারণে রেখেছিল জড়ো করে কিছু পাথর।
কাজের উপযোগী পড়ে আছে লেকের পাড়ে।
সেই সন্ধ্যায় লুককে সাথে নিয়ে হাঁটতে ছিল ইতস্তত
এখানে এসে দাড়িয়ে সন্তানকে বৃদ্ধ বলেছিল,
‘পুত্র, আগামীকাল আমাদের ছেড়ে যাবে চলে;
জন্মাবধি তোমার প্রতি ভালোবাসা আজও অবিচল
No comments:
Post a Comment