MICHAEL - |
মিখাএল - উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ - বাংলা অনুবাদ
যদি পায়ে চলা সড়ক থেকে তোমার পদক্ষেপ
গ্রীন-হেড-গিলের অশান্ত নদীটির দিকে ঘুরিয়ে দাও,
মনে হবে যেনো একটা সোজা ও উর্ধগামী পথ আপনি পেয়ে গেছেন,
এমন উর্ধারোহনে আপনার পদযুগল হবে ক্লান্ত।
আপনার সম্মুখে একটি গ্রাম্য পর্বত, একেবারে মুখোমুখি।
কিন্তু, কি সাহস! অশান্ত নদীটির পাশে
পর্বতমালা তাঁর সবই যেন প্রকাশ করে দিয়েছে,
আর নিজেদের একটি লুকানো উপত্যকাও তৈরী করে নিয়েছে।
যায় না দেখা কোনো বসতি আবাস; পর্যবেক্ষকের
চোখে পড়বে কেবল কিছু মেষ, পাথরের স্তুপ
এবং আকাশে ডানা মেলা উড়ন্ত ঘুড়ি।
সে এক নিরেট নীরবতা; উপত্যকার কথা নয়,
কিন্তু একটি বস্তু দেখে এগিয়ে যাবেন এবং মনোযোগী হবেন।
লেকের পাশে গড়াগড়ি খাচ্ছে কিছু অমার্জিত পাথর!
এখানে সংযুক্ত আছে ভিন্ন এক গল্প
অগ্নি উত্তাপ কিংবা গ্রীষ্মের ছায়ার মতো সাযুজ্যময়।
মেষপালকের জীবন নিয়ে শোনা আমার প্রথম গল্প
এই উপত্যকায় করতেন বাস সেই মেষপালক
তাদের থেকেও আকর্ষণীয় ছিল আমার কাছে
তাদের কর্মস্থল, আবাস, সবুজ মাঠ আর উঁচু পবর্তমালা।
গল্পটি আমার কৈশোরের যখন ছুটে যেতাম প্রকৃতির কাছে।
বই ফেলে করতাম উপভোগ প্রকৃতির শান্ত বিচরণ
এবং ছিল নিরন্তন অগোছালো ভাবনা।
বস্তুত মানুষ, মানবহৃদয় এবং মানবজীবন।
এ-কাহিনী অমার্জিত হলেও সাবলীল।
আমার অনুভব সহজ মনের উদ্দীপনা
এই ভালোবাসা তরুণ কবিদের জন্য
যারা একই উপলব্ধিতে ঘুচাবে আমার অনুপস্থিতি।
বনের পাশে গ্রাসমেয়ার উপত্যকায়
বাস করতেন এক মেষপালক, মাইকেল তার নাম।
বলিষ্ঠ হৃদয়ের একজন শক্ত-সামর্থ্য বৃদ্ধ।
যৌবন থেকেই ছিল বেশ ভরাট গড়নের দেহ।
তীব্র হিসেবী এবং সর্বত্র তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন;
অন্যরা মনে করতো সাধারণ নন,
তিনি বেশ ক্ষিপ্র ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন মানুষ।
তিনি বুঝতেন বাতাসের শব্দের অর্থ।
প্রায়ই যখন অন্যরা থাকত অমনোযোগী
শুনতেন দক্ষিণে বাজছে উন্মত্ত সংগীত
যেন দূর হাইল্যান্ড পাহাড়ে বাজছে ব্যাগপাইপ।
এই সংকেতে মেষপাল নিয়ে পড়তেন দুশ্চিন্তায়
ভাবতেন, এই বায়ু কত না অনিষ্টকারী।
সত্যিই ঝড় আসত এবং তিনি মেষদের সাথে
উঁচু শৃঙ্গে ঝড়োহাওয়া মেখে থাকতেন পড়ে,
পর্যটকেরা আশ্রয় খুঁজতে এসে দেখত তাকে;
এভাবেই আঠারো বছর বয়স থেকে ছিলেন সেখানে।
অনেকেই ভুল করে ভেবে বসত
এই নদী, পাহাড়, সবুজ উপত্যকা
মেষপালকের কাছে ভিন্ন অর্থবহ।
যে মাঠে তিনি নিঃশ্বাস নিতেন আনন্দে
তা অন্য সবার মতোই সাধারণ হওয়া,
অনেক ঘটনার সাক্ষী যে পর্বত, তাতে করতেন আরোহণ
তা উদ্যম ও আনন্দে হলেও ছিল বেশ দুর্ভোগের এবং ভয়াবহ।
স্মৃতির পাতায় গেঁথে রাখা নানান মুহূর্ত—কোনো পশুকে
রক্ষা করা, খাদ্য ও আশ্রয় দেয়ার মতো অসংখ্য ঘটনা,
যা তাকে দিয়েছিল মহত্ত্বের সম্মান। এই পরিবেশ
মাঠ-পাহাড় রক্তের চেয়েও ছিলো আপন।
তারাও কি পোষণ করত নিবিড় মমতা?
তার কাছে অন্ধ ছিলো এই ভালোবাসা
যে ভালোবাসায় থাকে এক অবাধ জীবন।
মাইকেল এখানে একাকী বাস করতেন না।
ছিলো তার স্ত্রী যিনি ছিলেন একজন গৃহিণী।
বয়স্ক হলেও মাইকেলের চেয়ে বিশ বছরের ছোটো ছিলো।
তিনি এক গতিময় নারী, ঘরই যার হৃদয়;
তাছাড়া ছিলো প্রাচীন কায়দার দুটো সুতো কাটার চাকা।
যার একটা বন্ধ হলে অন্যটা থাকত সক্রিয়।
এই যুগল ছাড়াও ঘরে আর একজন ছিল
একমাত্র সন্তান, বয়স মাইকেলকে বলতে শুরু করল
বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছ, গ্রাম্য ভাষায়—এক পা চলে গেছে কবরে,
তখন একমাত্র পুত্রের জন্ম হয়েছিলো এই আশায়
সমস্ত ঝড় সামলে সে মেষপাল নিয়ে থাকবে টিকে।
সংসারের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান দিক
সবাই মিলে সমাধা করতে গৃহকর্ম।
গ্রাম্য প্রবাদের মতো নিরন্তর সেই পরিশ্রম;
সন্ধ্যায় পিতা-পুত্র ঘরে ফিরে হতো না ক্ষান্ত
যতক্ষণ না প্রত্যেকে গোল হয়ে বসত
শোধিত দুধ, যবের পিঠা, ঘরে তৈরি পনির
নিয়ে রাতের খাবার টেবিলে। এ ছাড়াও,
আগুনের পাশে গুটিয়ে না রেখে হাত
খাবার শেষে লিউক (একমাত্র পুত্র)
বৃদ্ধ পিতার সাথে সুবিধাজনক কাজে লেগে যেত-
গৃহনারীদের বুননের জন্য তুলল উল
অথবা মেরামত করতো ঘর বা মাঠের কোনো যন্ত্র।
ঘরের চালার নিচে চিমনীর কিনারায়
গ্রাম্য নকশামতো প্রশস্ত কার্নিশ ছিল;
দিনের আলো ক্রমশ কমে এলে
গৃহকত্রী সেখানে জ্বালতো সন্ধ্যা প্রদীপ-
পুরোনো প্রদীপ ছড়াতো নিজের আলো।
সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত অবধি, ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
জ্বলে আসছে অনেক বছর ধরে;
এটা কোনো আনন্দে উচ্ছল পরিবার না হলেও
বস্ত ও স্বপ্নে যাপন করে এক পরিশ্রমী জীবন।
এই পুরোনো প্রদীপের নিচে জীবন চলমান।
লুকের বয়স যখন আঠারো, পিতা-পুত্র
বাইরের কাজ সেরে ফিরত রাত করে।
গৃহরমণী টুকটাক কাজে থাকত নিয়োজিত
গ্রীষ্মের মাছিদের মতো নিবিড় মূর্ছনায়
নীরবে করে যেতেন ঘরের সব কাজ।
কথার অপচয় নয়, কেবল আনন্দের অভিলাষে।
প্রদীপকে নিয়ে বলব কিছু কথা এবং আশা করি।
যারা এটা পড়বেন, স্পষ্ট হবেন প্রদীপের বিষয়টি।
প্রতিবেশীদের কাছে প্রিয় ছিল এই প্রদীপ
এবং ছিল এটা লোকালয়ের মিতব্যয়ী জীবনের প্রতীক।
যদি তা পরিবর্তত হয়ে যেত।
উত্তর থেকে দক্ষিণ, ইস্টডেল থেকে উঁচু ডানমেল
ওয়েস্টওয়ার্ড থেকে গ্রামের পার্শ্ববর্তী লেক পর্যন্ত
সে গৃহ হয়ে পড়ত ভীষণ নিঃসঙ্গ।।
দূর থেকে দেখা যেতো এই ধ্রুব প্রদীপ।
এবং উপত্যকার বাসিন্দারা অনুধাবন করত
পরিবারটির অস্তিত্ব, তরুণ বৃদ্ধ সবাই
প্রদীপের নাম দিয়েছিল সন্ধ্যা তারা। -
অনেক বছর একসাথে বসবাসের ফলে।
মানুষ সহচরদের ভালোবেসে থাকে কিন্তু পুত্রের প্রতি
বৃদ্ধ মাইকেলের ভালোবাসা ছিল একটু বেশিই
No comments:
Post a Comment