Character Analysis - hector - Contrast between Hector and Achilles in Iliad - Bangla |
Contrast between Hector and Achilles in Iliad - Bangla
Character Analysis - Hector
ট্রোজান বীর হেক্টর ট্রয়ের রাজা
প্রায়াম (Priam) ও রানী হেকুবার (Hecuba)
পুত্র। ট্রয়বাহিনীর প্রধান সেনানায়ক। বীরত্বের দিক থেকে তিনি গ্রিক বীর একিলিসের
(Achilles)
সমতুল্য কিন্তু জন্মগত দিক থেকে একিলিস দেবতার সন্তান। যুদ্ধে তাঁর নেতৃত্বে প্রায়
৩১ হাজার গ্রীক যোদ্ধা নিহত হয়। তিনি তাঁর স্ত্রী অ্যান্ড্রোমাকি (Andromache) আর
পুত্র অ্যাসথাইন্যাক্সের (Astyanax)
খুবই অনুরক্ত। তাঁর কনিষ্ঠ ভ্রাতা প্যারিসের (Paris)
কারণেই ট্রয়নগরীতে নেমে আসে দুর্ভোগ। ট্রয়বাহিনীর এই যোদ্ধা গ্রিক বীর একিলিসের
অনুপস্থিতিতে একাই যুদ্ধক্ষেত্রে ত্রাস সঞ্চার করেন। হেক্টরের প্রচণ্ড দাপটে গ্রিক
বাহিনী সর্বদা তটস্থ থাকতে বাধ্য হয়। ট্রয় সেনাপ্রধানদের মাঝে তিনিই প্রথম গ্রিক
জাহাজে অগ্নিসংযোগ করতে সক্ষম হন। হেক্টরের প্রচণ্ড দাপট সহ্য করতে না পেরে গ্রিক
মন্ত্রণাদাতাগণ একিলিসকে যুদ্ধে নামতে অনুরোধ করে উপহারসামগ্রীসহ দূত প্রেরণ করেন।
একিলিস তাঁর বন্ধু সহযোদ্ধা প্যাট্রোক্লাসকে তাঁর নিজের বর্ম পরিধান করিয়ে যুদ্ধে
পাঠান। প্যাট্রোক্লাস যুদ্ধক্ষেত্রে পরাক্রমের সাথে যুদ্ধ করেও হেক্টরের হাতে নিহত
হন। প্যাট্রোক্লাসের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের
ক্রোধ ভয়াল আকার ধারণ করে। একিলিসের কানে তাঁর প্রিয় যোদ্ধার মৃত্যুসংবাদ পৌছাতেই
তিনি প্যাট্রোক্লাসের হত্যাকারী হেক্টরের খোঁজে যুদ্ধক্ষেত্র তচনচ করতে থাকেন।
অবশেষে মুখোমুখি হন দুই বীর। হেক্টর মূলত যুদ্ধ করেছেন তাঁর মাতৃভূমির সম্মান
রক্ষা করার জন্য। স্ত্রী-পুত্রের প্রতি মমত্বশীল এই বীর যোদ্ধা ট্রয়বাসীর কাছে
সম্মানের পাত্র। একিলিসের হাতে হেক্টর নিহত হলে একিলিস তার মৃতদেহটা রথের সাথে
বেঁধে সারা যুদ্ধক্ষেত্র প্রদক্ষিণ করতে থাকেন। অমিত শক্তি আর ধীশক্তির অধিকারী এই
বীর তাঁর নগরীর সম্মান রক্ষার্থে বীরের মতো জীবন দান করেন। ইলিয়াড মহাকাব্যে
হেক্টর একজন ট্র্যাজিক বীর হিসেবে চিত্রিত।
প্রতিটি পাঠকের কাছেই ইলিয়াড
মহাকাব্য পাঠ করার পর স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন জাগ্রত হয়, সেটা
হল এই মহাকাব্যের প্রধান বীর কে? এ মহাকাব্যের অনেক বীর
যোদ্ধাই কোনো না কোনো একটি কারণে ক্রুটিযুক্ত। এটা নিঃসন্দেহে বলা চলে যে, ইলিয়াড কাব্যে হেক্টরই মুল বীর যোদ্ধা। ব্যক্তি হিসেবে হেক্টর সাহসী,
অভিজাত, দেশপ্রেমিক, অন্যতম
সুহৃদ ও জ্ঞানী ৷
রাজা প্রায়াম ও রানী হেকুবার এই
পুত্র সন্দেহাতীতভাবে সাহসী যোদ্ধা এরং ট্রয়বাহিনীর যোগ্য অধিনায়ক। তিনি সর্বদা
তার দায়িত্ব-কর্তব্য এবং দেশপ্রেমের দিক থেকে সদা সচেতন থেকেছেন। এ ছাড়া তিনি একজন
যোগ্য পিতা এবং দায়িত্বসম্পন্ন স্বামী। পুরো ট্রয়বাহিনীর মাঝে অবশ্যই তিনি একজন
যোগ্য সম্মানিতজন এবং ট্রয়নগরীর ভবিষ্যৎ কর্ণধার।
পরিস্থিতি যখন জটিল এবং ভয়াবহ আকার
ধারণ করে তখনো হেক্টর তার নিজ প্রজ্ঞা আর ধীশক্তিবলে নিজেকে সর্বদা স্থির রাখেন।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, তার ভ্রাতা প্যারিস যখন হেলেনকে অপহরণ করে
নিয়ে আসে তখন স্বাভাবিকভাবেই ট্রয়বাসীর মাঝে এটি বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
রাজা প্রায়াম ছাড়া রাজপ্রাসাদের সকলেই এটাকে ভিন্ন চোখে অবলোকন করতে থাকে। এটার
পরিণতি যে শুভ হবে না এটাও তারা বুঝতে পারে। কিন্তু হেক্টর এ ব্যাপারে সহনশীল ও
নমনীয় ভাব প্রদর্শন করেন। নারী ও শিশুর প্রতি তার গভীর মমত্ববোধের পরিচয় আমরা লাভ
করি তাঁর বিবাহিত জীবন, তার স্ত্রী ও পুত্রের ব্যাপারে। তিনি
একজন সংবেদনশীল স্বামী এবং স্ত্রীর যোগ্য সম্মান তিনি সংরক্ষণ করেন সর্বদা। আর
একারণেই হেলেনও তাঁর কাছে সম্মানের সাথেই গৃহীত হন। হেক্টর আর একিলিস যখন মুখোমুখি
হন তখন হেক্টর একিলিসকে বলেন, “...এসো, প্রতিজ্ঞা করি, যদি আমি তোমাকে হত্যা করতে পারি
তাহলে আমি তোমার শরীর হতে বর্ম না খুলে মৃতদেহের কোনো অসম্মান না করে, সম্মানের সাথে তা গ্রিকদের হাতে পৌঁছে দেব।” [ইলিয়াড-অধ্যায়
২২] হেক্টর এ প্রতিজ্ঞা করলেও একিলিস কিন্তু এটা করেননি। হেক্টরের শবদেহের উপর
চুড়ান্ত অত্যাচার করেছেন। এখানে আমরা হেক্টরের কণ্ঠ থেকে একজন যোগ্য বীরের বাণীই
লাভ করি।
সব দিক বিচার করে এ সিদ্ধান্তে উপনীত
হওয়া যায় যে, হেক্টর একজন সত্যিকারের বীর যোদ্ধা, একজন বীরের যতটা গুণ থাকা প্রয়োজন তার সবই আমরা লক্ষ করি হেক্টরের মাঝে।
হোমার তাঁর মহাকাব্যে হেক্টরকে একজন সুযোগ্য বীর এবং দেশপ্রেমিক হিসেবে চিত্রিত
করেছেন। হেক্টরের মৃত্যুর পর সারা ট্রয়নগরী শোক প্রকাশ করেছে এবং তাঁকে যথাযোগ্য
মর্যাদাসহকারে শোভাযাত্রাসহ রাজকীয় মর্যাদায় সমাহিত করেছে। ট্রয়বাসী তাদের এই মহান
বীর যোদ্ধা আর দেশপ্রেমিককে যোগ্য মর্যাদা প্রদান করেছে।
No comments:
Post a Comment