Themes, Motifs and Symbols of Homer's Iliad - Discussion in Bengali |
প্রতীক, বিষয়বস্তু ও
উপাদান
প্রতীক – প্রতীক হল বিভিন্ন বস্তু, চরিত্র, নকশা, কাঠামো, রঙ ও চিত্র যেগুলো কোন
সাহিত্যকর্মের মূল সারাংশ ও ভাব প্রকাশ করে। যেমন গ্রীক জাহাজ, অ্যাকিলিসের ঢাল, কবির
ভাষা ইত্যাদি। যেমন আমরা ইলিয়াডে দেখতে পাই।
গ্রিক জাহাজঃ অ্যাকিয়ান জাহাজগুলোই গ্রীকজাতীর
ভবিষ্যতেরই প্রতীক। যুদ্ধক্ষেত্রে সেনারা যখন বিপন্ন বোধ করতে থাকে কিন্তু বড়ো
ধরনের বিপদের মুখোমুখি হয় তখন তারা পিছিয়ে এসে জাহাজে আশ্রয় গ্রহণ করে। জাহাজগুলো
যেন তাদের কাছে দুর্গস্বরূপ। ট্রয় সেনারা যেমন বিপদ দেখলে ইলিয়াম নগরীর ভেতরে
আশ্রয় গ্রহণ করে তেমনি বিদেশে গ্রিক সেনাদের আশ্রয়স্থল দুর্গসদৃশ এই জাহাজগুলো।
অ্যাকিলিসের
ঢালঃ ইলিয়াড মহাকাব্যে একজন সৈনিক কিংবা সেনানায়কের ঢাল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা পালন করেছে। শত্রুসেনার অস্ত্রাঘাতকে প্রতিহত করার একমাত্র উপায় এই ঢাল। এটা
যেন যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আড়াল করে রাখে একজন সেনাকে। ঢালের এপাশে পৃথিবী ও শান্তি আর
ওপাশেই ভয়াল রণক্ষেত্র-এমনতরো প্রতীক হিসেবেও উপস্থাপিত হয়েছে ঢালের বিষয়টি। হোমার
তার মহাকাব্যে দেব কারিগর ও অগ্নি দেবতা হেফেস্টাস কর্তৃক একিলিসের জন্য নির্মিত
স্বর্গীয় ঢালটি দ্বারা এর চমকপ্রদ অলৌকিকত্ত্ব জাহির করেছেন।
হোমারের ভাষা: গ্রিক ভাষায় রচিত
ইলিয়াড মহাকাব্যে হোমার বহু প্রতীক ও নানা বিশেষণ ব্যবহার করেছেন। হোমার গ্রিক বীর
একিলিসকে নানা বিশেষণে বিশেষিত করেছেন; দ্রুতগামী একিলিস,
পেলেউস পুত্র একিলিস ইত্যাদি।
এ ছাড়া একাব্যের ভাষা নানাবিধ
উপমা-প্রতীক দ্বারা অলংকৃত। কালো মদের মতো সমুদ্র, গোলাপি সন্ধ্যা,
শব্দের ধাবমান হওয়া, অগ্নিশিখার মতো জ্বলে
ওঠা, অস্ত্রের ঝিলিক-এ ধরনের বহু প্রতীক ও অলংকার ব্যবহৃত
হয়েছে এ কাব্যে।
বিষয়বস্তুঃ
একটি সাহিত্যকর্ম অনুসন্ধান করে যেসকল মৌলিক ও সার্বজনীন ধারনাগুলো পাওয়া যায়
সেগুলোই হল সেই সাহিত্যকর্মের বিষবস্তু। যেমনঃ ইলিয়াডের মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে যুদ্ধের
গৌরব গাথা।
যুদ্ধের গৌরব গাথা।
ইলিয়াড মহাকাব্য জুড়ে আছে যুদ্ধের দামামা গৌরবগাথা।
এ মহাকাব্যের চরিত্রগুলো তাদের বীরত্ব ও সাহসিকতার মাধ্যমে
যুদ্ধক্ষেত্রে পরাক্রম প্রদর্শন করে উজ্জ্বল হয়ে আছেন। যাকে নিয়ে যুদ্ধ, সেই প্যারিস
যুদ্ধ করতে মোটেই আগ্রহী নন। তিনি একজন অপদার্থ প্রেমিক হিসেবে চিত্রিত। ট্রয়যুদ্ধে
দেবদেবীদের অংশগ্রহণ একটি উল্লেখযোগ্য ব্যাপার। এখানে যুদ্ধ দেবতা অ্যারিস, দেবী অ্যাথিনি,
দেবী আফ্রোদিতি, সমুদ্র দেবতা পজাইডন— সবাই তাদের নিজ নিজ পক্ষ সমর্থন করে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। দেবদেবীদের যোগদানের
কারণে ট্রয়যুদ্ধ ভিন্নতর এক রূপ লাভ করে। দেবতাদের সহায়তা আর আনুকূল্যে বীর সেনানায়কদের
মাঝে শক্তি সঞ্চারিত হয়। তারা উদ্বুদ্ধ হন নতুন করে। যুদ্ধ শুধু তার আপন মহিমা নিয়েই
এখানে উপস্থিত নয়, ধ্বংসযজ্ঞও ডেকে আনে। পরাজিত পক্ষের নারী ও শিশুরা বন্দী হয়, দাসে
পরিণত হয়, প্লেগ নেমে আসে গ্রিক বাহিনীর উপর। অজানা আশঙ্কায় গ্রিক সেনারা কেঁপে ওঠে।
একিলিস সেনাদের উৎসাহ প্রদান করেন: যুদ্ধক্ষেত্র হতে পালানো কাপুরুষতার লক্ষণ, বীরের
মতো প্রাণ ত্যাগ করাই শ্রেয়, তাতে আছে গৌরব আর সম্মান। যুদ্ধ যেমন একদিকে বয়ে এনেছে
ধ্বংসযজ্ঞ, পতন, মৃত্যু; অন্যদিকে আবার বয়ে এনেছে বিজয়-উল্লাস আর বিজয়ী বীরের গৌরবগাথা।
পারিবারিক দিক ও বীর যোদ্ধার গৌরব।
‘ইলিয়াড’ মহাকাব্যে বীর যোদ্ধা
যুদ্ধে অবতরণের সাথে সাথে তার পারিবারিক দিকটিও যেন আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যায়। হোমার ট্রয়যুদ্ধের
বিবরণ দিতে গিয়ে বীর যোদ্ধাদের পারিবারিক দিকটি বিশেষ করে আপনজনের মায়ামমতার দিকটিরও
উন্মোচন ঘটিয়েছেন। ট্রয়বীর হেকটর যুদ্ধযাত্রার প্রাক্কালে স্ত্রী-পুত্রের মুখোমুখি
হলে তার স্ত্রী অ্যান্ড্রোমাকি তাঁকে জানান, হেকটর যুদ্ধে যোগ দিলে গ্রিকরা তাঁকে হত্যা
করবে, তিনি বিধবা হবেন, তাঁর পুত্র হবে পিতৃহীন। আর তাকে ধরে নিয়ে যাবে বন্দিনী হিসেবে।
পারিবারিক এই মমতার বন্ধন অগ্রাহ্য করে ট্রয় রক্ষার স্বার্থে হেকটর যোগ দেন যুদ্ধে।
অন্যদিকে প্যারিস যুদ্ধক্ষেত্রের ডামাডোল হতে সরে এসে নিজের নিভৃত কক্ষে হেলেনের একান্ত
সান্নিধ্যে সময় কাটাতে চেয়েছেন।
যুদ্ধক্ষেত্রে অবস্থান করে একিলিস
তার বৃদ্ধ পিতার কথা স্মরণ করেছেন। তার পিতা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন তার পুত্র
ফিরে আসবেন বিজয়ীয় বেশে, কিন্তু একিলিস জানেন, এখানেই তার মৃত্যু। এটা ভেবে, পিতা আর
পরিজনদের কথা ভেবে তিনি আকুল হয়েছেন। প্যাট্রোক্লাসের মৃত্যুতে তার নিকট যোদ্ধারা,
বন্ধুরা তাকে যেমন যোগ্য যোগ্য মর্যাদায় সম্মানসহকারে সমাহিত
করেছে। যুদ্ধ একদিকে যেমন বীরের গৌরবগাথায় মহিমান্বিত, অন্যদিকে
তেমনি প্রিয়জনের বিয়োগব্যথায় বেদনাতুর রূপ নিয়ে উপস্থিত হয়েছে ইলিয়াড মহাকাব্যে।
বীর হেক্টর ও প্যাট্রোক্লাসের মৃত্যু দ্বারা হোমার প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে,
বীর যোদ্ধারা কখনোই যুদ্ধক্ষেত্র হতে পালিয়ে যান না।
যুদ্ধক্ষেত্রে জীবন দান করাটাই তারা গৌরবের বিষয় বলে মনে করেন।
উপাদান: উপাদান হল কোন সাহিত্যের বারবার উল্লেখিত মৌলিক কাঠামো, বৈপরিত্য ও সাহিত্যিক
কৌশল যা ঐ সাহিত্যকর্মের বিকাশে সাহায্য করে এবং আমাদের এর মূলভাব সম্পর্কে জানায়।
অস্ত্র, শিরস্ত্রাণ ও বর্ম
সামরিক মহাকাব্য ইলিয়াড, যার মাঝে
সেনা এবং যুদ্ধাস্ত্র স্বাভাবিকভাবেই স্থান করে নেয়। এ কাব্যে সবচাইতে বেশি
গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে সৈনিকের দেহ আচ্ছাদনকারী বর্ম। বিশেষ করে এ কাব্যে মৃত
সেনার কিংবা বীর যোদ্ধার শরীর থেকে বর্ম খুলে নেয়াটাই যেন বিশেষ একটি কৃতিত্বপূর্ণ
ব্যাপার। আর এর ধাতব মূল্যটাও হয়ত এর মধ্যে বিবেচ্য। ট্রয়বীর হেক্টরের শিরস্ববাণে
ঘোড়ার কেশর সংযুক্ত। এটা দেখে তার শিশুপুত্র ভীত হয়েছে। প্যাট্রোক্লাস যখন
একিলিসের বর্ম পরে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন তখন ট্রয়পক্ষ রীতিমতো ভয় পেয়েছে।
একিলিসকে অগ্নি দেবতা ও দেব কারিগর হেফায়েস্টাস তৈরি করে দেন অসাধারণ এক বর্ম।
হোমার এ কাব্যে দেবদেবীর আশীর্বাদধন্য অলৌকিক ও স্বীয় নানা যুদ্ধাস্ত্রেরও বর্ণনা
প্রদান করেছেন।
মৃতদেহ সমাহিতকরণ
সামরিক মহাকাব্য ইলিয়ড-এ
মৃত বীর যোদ্ধাদের উপযুক্ত মর্যাদার সাথে সমাহিতকরণের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব বহন
করেছে। একিলিস হেক্টরকে হত্যার পর প্রতিজ্ঞা করেছেন হেক্টরের মরদেহ যেন ট্রয়বাসী
নিয়ে গিয়ে উপযুক্ত মর্যাদায় সমাহিত করতে না পারে। ট্রয় সেনারাও প্রচণ্ড বিক্রমে করতে।
থ্রিক যোদ্ধা প্যাট্রোক্লাসের মৃতদেহ উপযুক্ত মর্যাদায় শোভাযাত্রা করেছেন একিলিস।
হোমার তার কাব্যে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন প্রাচীন গ্রিসের
প্রথা অনুযায়ী। প্রাচীন গ্রিসে মৃতদেহ সৎকার করা হত শোভাযাত্রা সহকারে এবং এ
উপলক্ষে নানা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হত। স্বাভাবিকভাবেই প্রাচীন গ্রিসের
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার এই রীতিটির ইলিয়াড মহাকাব্যে ছায়াপাত ঘটেছে।
অগ্নি
ইলিয়াড মহাকাব্যে অগ্নি ক্রোধ ও
প্রতিহিংসার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে প্রায় ক্ষেত্রেই। কাব্যের শুরুতেই
একিলিসের অগ্নির মতো ক্রোধে জ্বলে ওঠার বিষয়টি প্রত্যক্ষ করা যায়। এ ছাড়া বীর
যোদ্ধার অস্ত্র সূর্যালোকে অগ্নিশিখার মতো ঝলসে ওঠা, কিংবা যুদ্ধের
ময়দানে বীর যোদ্ধার অগ্নিস্কুলিঙ্গের মতো ধাবিত হওয়া। অষ্টম পর্বে দেখা যায়,
ট্রয় সেনারা তাদের নগরপার্শ্বের প্রান্তরে বিশাল বিশাল
অগ্নিকৃণ্ড জ্বেলে সারা রাত সতর্ক প্রহরায় নিযুক্ত। তাদের সে অগ্নিকুণ্ড গ্রিক
সেনাদের শংকিত করেছে গভীর রাতে। এছাড়া অগ্নি এ কাব্যে শক্তিমত্তা ও ধ্বংসের প্রতীক
হিসেবেও এসেছে।
No comments:
Post a Comment