Role of gods and goddesses in Homer's Iliad - discussion in Bengali |
বর্তমানের ইসলামীক ও খ্রিষ্টীয় বিশ্বাস
দ্বারা পর্যবেক্ষণ করলে গ্রিকদের দেবদেবীর সম্পর্কে বিশ্বাস ও কার্যক্রম কিছুতেই গ্রহণযোগ্য
নয়। কারণ তাদের তৈরী করা দেবদেবীরা সর্বদাই পৃথিবীর মানুষের কার্যক্রমে সরাসরি অংশগ্রহণ
করেছেন কিন্তু ইসলামীক ও খ্রিষ্ট ধর্মে ঈশ্বর কখনোই মত্যমানবের কার্যক্রমে সরাসরি হস্তক্ষেপ
করেন না। অন্যদিকে গ্রিকরা
তাদের দৈনন্দিন সকল কর্মেই তাদের কল্পিত দেবদেবীর প্রত্যক্ষ সহায়তা এবং পরামর্শ গ্রহণ
করেছে কিন্তু ইসলামীক ও খ্রিষ্টীয় ধর্মবিশ্বাসীদের মাঝে এ রকম কোনো সম্ভাবনা নেই। গ্রিকদের দেবদেবীদের মাঝে একমাত্র জিউস ছাড়া সকল দেবদেবীই সরাসরি
মর্তের মাটিতে নেমে পক্ষাবলম্বন করেছেন। হোমারের ইলিয়াড
মহাকাব্যে আমরা এর প্রতিফলন লক্ষ করি। রাজা প্রায়ামের
পুত্র প্যারিসকে আমরা বিচারক হিসেবে দেখি আইডা পর্বতের পাদদেশে। সে স্বর্গের তিন দেবী হেরা, আফ্রোদিতি আর অ্যাথিনির
মাঝে কে বেশি সুন্দরী সেটা বিচার করেছিল আর সে বিচারটাও ছিল সুন্দরী নারীর লোভে এক
নিকৃষ্ট বিচার। এই বিচারের পরে তাদের কল্পিত তিন দেবীর দুইজন অসন্তুষ্ট হয় এবং
পুরো ট্রোজান জাতীর জন্যে ধ্বংস ডেকে আনে। এই সমস্ত ঘটনাই বলে দেয় গ্রীকরা হয়তো সভ্যতা ও প্রযুক্তির দিক থেকে উন্নত
ছিল বটে কিন্তু চিন্তা চেতনার দিক থেকে খুবই নিকৃষ্ট পর্যায়ের ছিল। যাই হোক,
আমাদের আলোচনার বিষয় হল ইলিয়াডে এই সকল কল্পিত দেব দেবীর ভূমিকা।
সমুদ্র দেবতা পসেডনকে ট্রয়যুদ্ধে গ্রিকপক্ষ
অবলম্বন করতে দেখা যায়। দেবতা অ্যাপোলো
আর দেবী আর্টেমিসকে ট্রয়যুদ্ধে ট্রয়পক্ষ অবলম্বন করতে দেখা যায়। গ্রিক দেবদেবীদের মাঝে প্রথমেই মতমানবের কাছাকাছি আসতে দেখা
যায় অ্যাপোলো আর দেবী আর্টেমিসকে ট্রয়যুদ্ধের সূচনাপর্বে। এমনকি তাদের মাতা
লেটোকেও ট্রয়পক্ষ অবলম্বন করতে দেখা যায়। দেবী আফ্রোদিতি
এবং তার প্রেমিক যুদ্ধদেবতা অ্যারেসকেও ট্রয়পক্ষ অবলম্বন করতে দেখি আমরা। একিলিস
যখন হেক্টরকে হত্যা করে তার মরদেহের উপর অমানুষিক অত্যাচার চালাতে থাকেন তখন
দেবরাজ জিউস একিলিসের মাতা থেটিসকে একিলিসের কাছে পাঠান, যাতে
একিলিসকে বুঝিয়ে শান্ত করে হেক্টরের শবদেহটা ট্রয়বাসীর কাছে ফিরিয়ে দেয়ার পথ সুগম
করেন। দেবতারা একিলিসের সাথে নানা চালাকি আর প্রতারণার আশ্রয় নিলেও একিলিস কিন্তু মানবিক
আচরণ করেন। জিউসের নির্দেশ তিনি অমান্য করেন না, হেক্টরের লাশ
ফিরিয়ে দিতে সম্মত হন জিউসের নির্দেশমতো। ইলিয়াড মহাকাব্যে দেখা যায়, অনেক ক্ষেত্রে স্বর্গের দেবদেবীরাও মর্তমানবের কর্মকাণ্ডকে প্রতিহত করতে
সমর্থ হন না। তারা তখন বাধ্য হয়ে দেবরাজ জিউসের শরণাপন্ন হন এবং দেবরাজ জিউস সে
সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসেন। একিলিস যখন যুদ্ধময়দানে নেমে ট্রয়বাহিনীকে পর্যুদস্ত করতে
বদ্ধপরিকর হয়ে এগোতে থাকেন তখন জিউস দেবদেবীদের যুদ্ধক্ষেত্রে যোগ দিয়ে যার যেরূপ
ইচ্ছে সেভাবেই যেকোনো পক্ষ বেছে নিয়ে দুপক্ষকেই সহায়তা প্রদান করতে বলেন, “আমি এখন
থেকে অলিম্পাস পর্বতে বসে শুধু দুই পক্ষের যুদ্ধ নিরীক্ষণ করব। তোমরা সবাই যুদ্ধে
যোগ দিয়ে দুই পক্ষকেই সহায়তা দেবে। তোমরা নিজেদের পছন্দমতো যার যেমন খুশি পক্ষ
বাছাই করতে পার।” [ইলিয়াড-২০]
দেবরাজ জিউসকে ট্রয়যুদ্ধে সর্বদা
দ্বৈতচিন্তাচেতনার দ্বারা চালিত হতে দেখা যায়। তিনি ট্রয়পক্ষের বীর হেক্টরের
মৃতদেহ একিলিসের কবজা হতে সরিয়ে ফিরিয়ে দিতে চান তার পিতা-মাতার কাছে, আবার
একিলিসের মাতা থেটিসকে এই বলে আশ্বাস প্রদান করেন যে, তার
পুত্র একিলিস অবশ্যই ট্রয়যুদ্ধে বিজয়গৌরবের ভাগিদার হবে। হেক্টর তাঁর ইলিয়াডে বর্ণিত
ট্রয়যুদ্ধে সরাসরি দেবদেবীদের যুক্ত করেছেন। স্বর্গীয় দেবদেবীরা যুদ্ধে দু’পক্ষ
অবলম্বন করতে গিয়ে যে প্রতারণা এবং চালাকির আশ্রয় গ্রহণ করেন, এতে
তাদের দেবত্ব ম্লান হয়ে যায়। সাধারণ মর্তমানবও কোনো কোনো কর্মে অনীহা প্রকাশ করে—এমন অনেক
নিকৃষ্ট কর্মেও দেবদেবীদের লিপ্ত হতে দেখা যায়।
এই বিষয়ে আরো পড়ুনঃ ধর্ম ও নৈতিকতাএবং হোমারের ইলিয়াড।
No comments:
Post a Comment