Religion and Ethics in Homer’s Iliad - Discussion in Bangla |
ধর্ম ও দর্শন এবং হোমারের ইলিয়াড
হোমার তাঁর ইলিয়াড কাব্যে অ্যাকিয়ান
যোদ্ধা (গ্রীক পক্ষ) ও ট্রোজান সমাজের ধর্ম ও নৈতিক দর্শনের চিত্র তুলে ধরেছেন। এর
শুরু থেকেই পাঠক গ্রিক ও ট্রোজান দুটো সমাজেরই ধর্ম, দর্শন, লোকাচার ও লোকবিশ্বাস ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে শুরু করে। বিশেষ করে
ট্রয়যুদ্ধ চলাকালে এই ধর্মীয় বিশ্বাস ও আচার-অনুষ্ঠান ব্যাপক ভূমিকা রাখে। তবে সে
সময়ের পৃথিবীতে উন্নত জাতী হিসেবে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস ছিল অত্যন্ত হাস্যকর।
এব্যপারে আমি তাদের দেবদেবীদের নিয়ে লেখা নিবন্ধে আলোচনা করেছি। যাই হোক দেবদেবীদের উদ্দেশে পশু উৎসর্গ, প্রার্থনা এবং নানা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করতে দেখা যায় দু’পক্ষকেই। দু’পক্ষই
তাদের আরাধ্য দেবদেবীদের খুশি করার জন্য তাঁদের কাছে বিভিন্ন সময়ে প্রার্থনা এবং
নানা দ্রব্য উৎসর্গ করতে থাকে। গ্রিক বীর আগামেমননকে দেবরাজ জিউসের উদ্দেশে
হৃষ্টপুষ্ট বলদ উৎসর্গ করতে দেখা যায়। এমনকি আগামেমনন যুদ্ধযাত্রার শুরুতে, যখন
সমুদ্রপথে যাত্রাকালে বায়ুর অভাবে গ্রীক যুদ্ধ জাহাজগুলো অচল হয়ে থাকে, তখন
সেগুলোকে সচল করার জন্যে নিজ কন্যা ইফিজিনিয়াকে দেবতাদের উদ্দেশ্যে বলি দেন (এস্কাইলাসের
‘আগামেমনন’ নাটক
দ্রষ্টব্য)। গ্রিকপক্ষের বীর প্যাট্রোক্লাসের মৃত্যুর পর তাঁর চিতায় বারোজন বন্দী
ট্রয়যুবাকে পোড়ানো হয়। এ উৎসর্গের উদ্দেশ্য দেবতাদের খুশি করা। গ্রিক এবং ট্রোজান
দুই পক্ষেরই বিশ্বাস ছিল যে, আত্মার কোনো মৃত্যু নেই। মানুষের দৈহিক
মৃত্যুর পর আত্মাগুলো হ্যাডিসে প্রবেশ করে। আর যদি ধর্মীয় বিষয়গুলো পালন না করা হয়
তবে তারা যত্রতত্র ঘোরাফেরা করতে পারে। আত্মার উদ্দেশে কোনো কিছু উৎসর্গ না করলে
সে আত্মা কখনোই শান্তি লাভ করে না। যুদ্ধে কোনো বীর নিহত হলে তার শেষকৃত্য সমাপন
করা হয় জাকজমক সহকারে শোভাযাত্রা করে। এর প্রমাণ পাই আমরা গ্রিক বীর
প্যাট্রোক্লাসের মৃত্যুতে, তাঁর মৃতদেহ শোভাযাত্রা সহকারে
নানাবিধ উপাচারে সাজিয়ে চিতায় তোলা হয়। ইলিয়াডের চরিত্রগুলো দেবতাদের প্রতি খুবই
শ্রদ্ধাশীল, কিন্তু যখনি কোনো দেবতা কারো বিপক্ষে চলে যান
তখনি সে দেবতা তার আস্থা হারান। দেবী আফ্রোদিতি আর যুদ্ধদেবতা অ্যারেস যখন
ডায়োমিডাসের বিপক্ষে সরাসরি যুদ্ধে নেমে ডায়োমিডাসকে আক্রমণ করেন তখন ডায়োমিডাস দুজনকেই
আঘাত করে বসেন। একিলিস যখন জ্যানথাস নদীতে নেমে ট্রয় সেনাদের হত্যা করছিলেন তখন
জ্যানথাস নদী আক্রমণ করে বসেন একিলিসকে, একিলিসও এই নদীর
সাথে মরণপণ লড়াইয়ে মেতে ওঠেন। পুরো ইলিয়াড মহাকাব্যে দেখা যায় দু’পক্ষের বীর
সেনানায়করা যখনি কোনো সমস্যায় পতিত হয়েছে তখনি তাদের নিজস্ব ইষ্ট দেবতাকে খুশি করার
জন্য নানা কিছু উৎসর্গ করেছে। দেবদেবীরাও প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে তাদের সে
পূজা-উপাচার গ্রহণ করে তাদেরকে সহায়তা প্রদান করার জন্য এগিয়ে এসেছেন। এ বিষয়টা
আমরা কাব্যের শুরুতেই দেখেছি। গ্রীক সেনাবাহিনী ট্রয় শহরের পাশেই অ্যাপোলো দেবতার
মন্দির দখল ও দুই সুন্দরী নারী ব্রিসেইস ও মন্দিরের পুরোহিত ক্রাইসেসের কন্যা ক্রাইসেইসকে
অপহরণ করে নিয়ে আসে। তখন আগামেমন তাকে নিজের রক্ষিতা হিসেবে গ্রহন করে। ক্রাইসেস
তখন নিজের কন্যাকে ফিরে পাওয়ার জন্যে তাকে অনেক উপঢৌকন সাধে। সে রাজী না হওয়ায় সে
দেবতা অ্যাপোলোর কাছে নালিশ দেয় ও উপঢৌকন দিয়ে খুশি করে। অ্যাপোলো তখন গ্রীক
শিবিরে মড়ক সৃষ্টি করে যাতে আগামেমনন তাকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়।
No comments:
Post a Comment