Of Love - Sir Francis Bacon - Translation in Bangla
প্রেম (অফ লাভ - বাংলা অনুবাদ)[১৬১২ সালে প্রথম প্রকাশিত]
মঞ্চ মানুষের
জীবন এর থেকে ভালোবাসাকেই বেশি (গুরুত্বপূর্নভাবে) দেখায়। মঞ্চের (নাটকের)
ক্ষেত্রে, মিলনাত্বক ও বিয়োগাত্বক নাটক উভয় ক্ষেত্রেই ভালোবাসা একটি নিত্য (চিরকালীন)
ব্যাপার, কিন্তু বাস্তব জীবনে প্রেম যথেষ্ট অনিষ্টের কারণ হয়ে থাকে। সেখানে সে অবির্ভূত
হয় কখনো কুহকিনী (মোহিনী নারী), কখনো ক্রোধোন্মত্তবেশে।
খেয়াল করলে দেখা যাবে যে, মহান ও গুণী ব্যক্তিদের মাঝে
(প্রাচীন ও সাম্প্রতিক কালের, যাদের এখনো স্মরণ করা হয়) কেউ
প্রেমের নামে উন্মাদ হননি। যার, অর্থ, বিশাল
ও মহৎ কর্মে ব্যাপৃত মানুষেরা এই দুর্বলতা থেকে যথাসম্ভব নিজেদের দূরে রাখতে সক্ষম
হয়েছেন। তবে মার্ক এন্টোনিকে (Marcus Antonius) ব্যতিক্রম মানতে হবে যিনি রোমক সাম্রাজ্যের অর্ধেকের অধিপতি
ছিলেন, তারপর অ্যাপিয়াস ক্লডিয়াস (AppiusClaudius), যিনি রোমক
সাম্রাজ্যের দশ সদস্যবিশিষ্ট শাসন পর্ষদের সদস্য ও আইনপ্রণেতা ছিলেন। দুইজনের
মধ্যে প্রথমজন অত্যধিক ইন্দ্রিয়পরায়ণ ও অসংযত স্বভাবের ছিলেন; কিন্তু দ্বিতীয়জন কঠিন নিয়মনিষ্ঠ ও জ্ঞানী বলে খ্যাত ছিলেন; আর তাই (যদিও কদাচিৎ) ভালোবাসা শুধু উন্মুক্ত হৃদয়ে জায়গা করে নেয় তা নয়,
অসতর্ক হলে অনেক সুরক্ষিত হৃদয়েও তার অনুপ্রবেশ ঘটে থাকে। ‘আমরা দুজনই বিশাল এক রঙ্গমঞ্চের জন্য যথেষ্ট’ (Satis magnum alter alteri
theatrum sumus)—এটা এপিকিউরিয়াস(Epicurus – Greek philosopher – 342 -273 BC) -এর একটি অর্থহীন মন্তব্য। ভাবখানা এমন যে, ঈশ্বর ও সমস্ত মহৎ বস্তুনিচয়ের প্রতি মনোযোগ প্রদানের জন্য সৃষ্ট যে মানুষ,
তার কাজ হল শুধু আপন প্রেমমূর্তির আরতি করা আর নিজেকে পশুর মতো মুখটার
না হলেও মহৎ উদ্দেশ্যে প্রদানকৃত চোখ দুটোকে ভূত্যে পরিণত করা। প্রেমিকার প্রতি
প্রেমিক যে অতিরঞ্জিত প্রশংসা বর্ষণ করে এবং আমাদের প্রকৃতি ও প্রকৃত
মূল্যবোধকে বিকৃত করে তোলে তা বিস্ময়কর। এ ধরনের ধারাবাহিক অতিশয়োক্তি প্রেম ছাড়া
আর কোনো কিছুতেই মানানসই নয়। আর তা শুধু কথার মধ্যেই সীমিত থাকে না, চিন্তার
মাঝেও থাকে। এ সম্পর্কে চমৎকার মন্তব্য পাওয়া যায় যে, মানুষ
নিজেই নিজের চরম তোষামোদকারী, আর তা সমস্ত তোষামোদকারীর মাঝে
শ্রেষ্ঠ, কিন্তু তার মধ্যেও প্রেমিক এগিয়ে। কারণ আত্মগর্বী মানুষও কখনো নিজের সম্পর্কে এতটা
অতিরঞ্জিত কল্পনা করে না, যতটা প্রেমিকা সম্পর্কে
প্রেমিক করে থাকে। আর তাই একটি চমৎকার কথা প্রচলিত আছে, একই
সাথে প্রেমিক এবং জ্ঞানী হওয়া অসম্ভব। আর এই দুর্বলতা শুধু অন্যের কাছে নয়,
প্রেমিকার কাছেও ধরা পড়ে, এবং প্রেমিকার কাছে
সবচেয়ে বেশি করে ধরা পড়ে যদি না প্রতিদানে তার কাছ থেকে প্রেম আসে। প্রেমের সত্যিকার
রীতি হল, প্রেমের প্রতিদান প্রেম অথবা প্রেমিকার নিভৃত ও গোপন
ঘৃণা। সেই জন্য মানুষকে বেশি করে সতর্ক হতে হয় যাতে করে প্রেমিকার অনুরাগ হারিয়ে
না যায়। এই সম্পর্কে জনৈক কবি চমৎকার মন্তব্য করেছেন, প্যারিস (ট্রয়ের রাজকুমার, প্রিয়াম ও হেকুবার পুত্র)
হেলেনকে (গ্রিক পুরাণ অনুযায়ী জিউস ও লিডার কন্যা।) পেতে গিয়ে জুনো(গ্রিক পুরাণ
অনুযায়ী শক্তির দেবী।) ও পালাসের (গ্রিক পুরাণ অনুযায়ী জ্ঞানের দেবী) অনুগ্রহ
হারাল। আর যে ব্যক্তি বেশিমাত্রায় প্রেমকে গুরুত্ব দেয় সে একই সাথে জ্ঞান ও সম্পদ হারায়। দুর্বল মুহূর্তে প্রেমের বেগ বেড়ে যায়; যেমন
পরম সৌভাগ্য ও চরম দুর্ভাগ্যের সময়, যদিও দুর্ভাগ্যের সময়
প্রেমকাতরতা কম দেখা যায়, তবে উভয় ক্ষেত্রেই প্রেমের আগুন
প্রচণ্ড তীব্রতা নিয়ে হাজির হয় আর তার সাথে মনের উত্তাপ যুক্ত হয়; আর তাই প্রমাণিত হয়, প্রেম হল নির্বুদ্ধিতার ফসল।
তারাই উত্তম যারা প্রেমকে এড়াতে না পারলেও তাকে সঠিক সীমার (বিয়ে) মধ্যেই রাখতে
সক্ষম হন, এবং জীবনে গুরুত্বপূর্ণ কাজকর্ম থেকে একে আলাদা
করে রাখতে পারেন; কারণ এটা যদি আর সব কাজকর্মের মধ্যে ঢুকে পড়ে,
তাহলে সৌভাগ্য বিপন্ন হয় এবং মানুষকে এমন করে ফেলে যে, সে আর তার কাজকর্মের প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পারে কীভাবে বলতে পারব না, কিন্তু যুদ্ধে ব্যাপৃত মানুষরাও প্রেমে লিপ্ত থাকেন। আমার ধারণা, তাদের জন্য এটা পানাসক্তির মতোই ব্যাপার, কারণ বিপদ
ভুলে থাকতে গেলে আনন্দে ডুবে থাকতে হয়। মানুষের স্বভাবে অন্যকে ভালোবাসার একটি সহজাত
প্রবণতা রয়েছে; আর তা যদি এক-আধজনের পেছনে অপব্যয়
করা না হয় তাহলে তা অনেকের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে মানুষকে উদার ও মানবিক করে তোলে,
যেমন সাধুসন্তদের বেলায় দেখা যায় ।
বিবাহিত জীবনের
ভালোবাসা বংশবৃদ্ধিতে সহায়ক, বন্ধুত্বপূর্ণ ভালোবাসা
মানুষকে সত্যিকার মানুষরূপে গড়ে তোলে, কিন্তু কামসর্বস্ব ভালোবাসা
মানুষকে বিকৃত ও অধঃপতিত করে।।
No comments:
Post a Comment