Of Great Place - Sir Francis Bacon - Translation in Bangla |
Of Great Place - Sir Francis Bacon - Translation in Bangla
উচ্চপদ বিষয়ে
প্রবন্ধ –(১ম প্রকাশ ১৬২৫ সাল)
গুরুত্বপূর্ণ
পদে আসীন লোকেরা তিনটি জিনিসের দাস। যথাঃ শাসক বা রাষ্ট্রের দাসত্ব, সুনাম ও সুখ্যাতির দাসত্ব ও তার নিজের কাজের দাসত্ব। না থাকে
তাদের ব্যাক্তিত্বের স্বাধীনতা, না থাকে কাজের স্বাধীনতা, এমনকি সময়েরও স্বাধীনতা
থাকে না। ক্ষমতার বিনিময়ে স্বাধীনতা হারানো কিংবা অন্যের ওপর ক্ষমতা ফলানোর জন্য
নিজের সকল কর্তৃত্ব হারানো। মানুষের এক অদ্ভুত আকাঙ্ক্ষা। উচ্চপদে আসীন হতে
প্রচুর শ্রম স্বীকার করতে হয়, আর এই কষ্ট
স্বীকারের মধ্য দিয়ে মানুষ আরো বড় কষ্ট লাভ করে থাকে। আর তার জন্য কখনো কখনো নিচু
কাজও করতে হয়। অসম্মান সহ্য করেও মানুষ সম্মানের আসনে আসীন হতে চায়। আর আসীন হলেও যেমন টিকে থাকা কঠিন পিছিয়ে গেলেও তা
একধরনের পতন, কিংবা গ্রহণ লাগার সাথে তুলনীয়,
যা সব সময়ই বেদনার। সিসেরো বলেছেন: “তুমি যা ছিলে তা যদি আর না থাক, তাহলে বাঁচার আকাঙ্ক্ষাও মরে যায়। শুধু তাই নয়,
উচ্চপদে আসীন ব্যক্তিরা চাইলেই অবসরে যেতে পারেন না, আবার
যখন যাওয়া দরকার তখন যেতে চান না। পদমর্যাদা ছাড়া তাদের ব্যক্তিজীবন অসহনীয় হয়ে
ওঠে। এমনকি বার্ধক্য ও অসুস্থতায়ও তারা উচ্চপদের গৌরব উপভোগ করতে চান নগরের বৃদ্ধ
পাহারাদারের মতো, যারা বয়স হওয়ার পরও রাস্তার মোড়ে বসে থাকে
এবং পথচারীদের বিরক্তি কুড়ায়। অবশ্য উচ্চমর্যাদাশীল ব্যক্তিদের মানসিক প্রশান্তির জন্য অন্যদের মতামত নেওয়ার
প্রয়োজন পড়ে। কারণ স্বীয় অনুভূতির মাঝে যদি তারা তা অনুসন্ধান করেন, খুঁজে পাবেন না; অন্যেরা তাদের সম্পর্কে
কী ভাবেন তার সাথে যদি তাদের নিজস্ব ভাবনার মিল খুঁজে পান এবং তাঁরা নিজেরা যতখানি
পরিতুষ্ট অনন্যরাও ঠিক ততটাই সন্তুষ্ট বুঝতে পারেন, তারা
সুখী হন; কিন্তু সম্ভবত তাদের মনে উল্টো ধারণা জন্মে থাকে।
কারণ তারা তাঁদের বেদনাটা প্রথমে উপলদ্ধি করতে পারলেও ত্রুটিটা ঠিক চিনতে পারেন না,
আর নিজেদের কর্মব্যস্ততার মাঝে শারীরিক-মানসিক সুস্থতার দিকে নজর
দিতে পারেন না। মৃত্যু তাদের ওপর খুব ভারী হয়ে পড়ে যারা অন্যের কাছে সুপরিচিত হলেও
নিজের কাছে থাকেন সম্পূর্ণ অচেনা।
উচ্চপদাসীন
ব্যক্তির ভালো-মন্দ দুইই করার স্বাধীনতা থাকে। তবে পরেরটা অপরাধ; কারণ অন্যায় না করার ক্ষেত্রে প্রথমত দরকার ইচ্ছাশক্তি,
দ্বিতীয়ত সেই শক্তির জোরে অন্যায় না করা। কিন্তু মানুষের কল্যাণ
করার সামর্থ্য উচ্চপদের প্রকৃত ও আইনসম্মত উদ্দেশ্য। মানবকল্যাণের চিন্তা (যদিও
ঈশ্বর তা খুব পছন্দ করেন) সুন্দর স্বপ্নের চেয়ে বড় কিছু নয়, যদি
না তাকে বাস্তবায়িত করা যায়; আর তা উচ্চপদের ক্ষমতার
আনুকূল্য ব্যতিরেকে সম্ভব নয়। কারণ তা সুবিধা ও কর্তৃত্ব প্রদান করে থাকে। সদগুণ ও সৎকর্ম মানবজীবনের লক্ষ্য
হওয়া উচিত এবং তার জন্য সচেতনতা আত্মার চিরশান্তির জন্য অপরিহার্য। কারণ যদি একজন
মানুষ বিধাতার রঙ্গমঞ্চের অভিনয়ে অংশ নিতে পারে, সে তার বিশ্রামেও অংশ নিতে পারে। বাইবেল বলছে, “ঈশ্বর তাঁর হস্ত (ক্ষমতার হাত) দ্বারা সম্পাদিত কর্মকাণ্ডের দিকে চোখ ফিরিয়ে দেখে সন্তুষ্ট
হলেন যে, সবকিছু সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে।” নিজপদে পালনকৃত দায়িত্বই আমাদের সামনে
শ্রেষ্ঠ উদাহরণ; আর তা অনুসরণই আরো দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতে
পারে এবং কিছুকাল পরে আপনার সামনে আপনার কাজেরই দৃষ্টান্ত স্থাপিত হবে। তখন নিজেই
পরখ করে দেখতে পারবেন আপনি শ্রেষ্ঠ কাজটি করেছেন কি না। একই পদে যারা অতীতে ব্যর্থ
হয়েছে তাদের দৃষ্টান্তও অবহেলা করা ঠিক হবে না। আবার তাদের অভিযুক্ত করে নিজের
শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের প্রচেষ্টা চালানোও অনুচিত; সঠিক হল
তাদের ত্রুটিগুলো এড়িয়ে চলা। কোনো প্রকার আত্মশ্লাঘা না দেখিয়ে বা পূর্বসূরিদের
বদনাম না করেই সংস্কার করা উচিত; উচ্চপদে আসীন ব্যক্তিদের
উচিত পূর্বসূরিদের জন্য ভালো দৃষ্টান্ত স্থাপন করা। অতীতের কাজকর্ম ঘেঁটে দেখতে
হবে কোথায় ভুলত্রুটি ছিল; কালের শিক্ষাও গ্রহণ করতে হবে।
অতীতে কী শ্রেষ্ঠ ছিল এবং পরবর্তী সময়ে কী উপযোগী হয়েছে তা দেখতে হবে। উচ্চপদাসীন
ব্যক্তির আচরণ ও কর্মপদ্ধতি নিয়মনীতি ও আদর্শের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত। বেশিমাত্রায়
জেদি ও কর্তৃত্বপরায়ণ হওয়া অনুচিত এবং নিজের কর্মধারা থেকে সরে এলে তার যৌক্তিক
ব্যাখ্যা প্রদান করা উচিত। পদের মর্যাদা রক্ষা করা উচিত এবং ক্ষমতার এক্তিয়ার নিয়ে
প্রশ্ন তোলা অনুচিত; অধিকার প্রশ্নে কোনো প্রকার হইচই বা
শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় না গিয়ে বরং নিঃশব্দে এক্তিয়ারভুক্ত
ক্ষমতার অনুশীলন চালিয়ে যাওয়া উচিত। পাশাপাশি নিম্নপদে কর্মরত ব্যক্তিদের অধিকারও
সমুন্নত রাখতে হবে, এবং মনে রাখতে হবে যে,
নিজে সব কাজে ব্যাপৃত না হয়ে প্রধানের ভূমিকায় থেকে কর্ম পরিচালনা
করাটা সম্মানের। নিজের কর্ম সম্পাদনে অন্যের সহযোগিতা ও পরামর্শ আহ্বান করা যেতে
পারে; যারা তথ্য নিয়ে আসে তাদের অনাহূত মনে করে তাড়িয়ে না দিয়ে
তাদের দেয়া তথ্যের প্রয়োজনীয় অংশ গ্রহণ করা সঙ্গত। উচ্চপদাসীনদের চারটি ক্রটি
উল্লেখযোগ্য: সময়ক্ষেপণ, দুর্নীতি, দুর্ব্যবহার
ও সুবিধাগ্রহণ। প্রথমটি এড়াতে সাক্ষাতের বিষয়টি সহজ করা দরকার, সময়সূচি ঠিক রাখা উচিত। হাতের কাজ সঠিক সময়ে সেরে ফেলা উচিত এবং এক কাজের
জন্য অন্য কাজকে বিলম্বিত করা ঠিক নয়। দুর্নীতির প্রশ্নে
নিজের ও নিজের অধস্তনদের হাতকে উৎকোচ গ্রহণে বিরত রাখাই যথেষ্ট নয়, আবেদনকারীদেরও নিরস্ত করতে হবে। চারিত্রিক সততা এক্ষেত্রে
কাজে লাগানো যেতে পারে, সততার প্রচারণা ও উৎকোচের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে
ঘৃণা প্রকাশ করলে আবেদনকারীরা উৎকোচ সাধতে সাহস পাবে না। এই অন্যায় থেকে দূরে সরে থাকাই যথেষ্ট নয়, বরং অন্যের সন্দেহ থেকেও মুক্ত থাকতে হবে। যার মাঝে ভিন্নতা
লক্ষ করা যায় এবং সুস্পষ্ট কারণ ছাড়াই পরিবর্তন নজরে পড়ে, সে
সন্দেহের জন্ম দেয়। তাই সব সময়ই মত বা পথ পাল্টাতে সোজাসুজি তা স্বীকার করা উচিত, পরিবর্তনের কারণ জানানো উচিত যা তাকে বদলাতে উৎসাহিত করেছে আর
তা মোটেও গোপন করা উচিত নয়। কোনো ভৃত্য বা অনুসারী যদি খুব কাছের হয় এবং তার ঘনিষ্ঠতার বাহ্যিক কোনো কারণ
খুঁজে পাওয়া না যায় তখন স্বাভাবিকভাবে ধরে নিতে হবে যে, সে-ই দুর্নীতির হাতিয়ার। দুর্ব্যবহার এড়াতে অকারণ বিরক্তি এড়িয়ে
চলতে হবে। কঠোরতা আতঙ্কের জন্ম দেয়; কিন্তু দুর্ব্যবহার জন্ম
দেয় ঘৃণার। এমনকি কর্তৃপক্ষের তিরস্কার বিদ্রুপাত্মক নয়, গাম্ভীর্যের
সাথে হওয়া উচিত। আর সুবিধাদানের বিষয়টি উৎকোচ গ্রহণের চেয়ে খারাপ। কারণ ঘুষ আসে
মাঝে মাঝে, সব সময় নয়, কিন্তু যদি
সুপারিশ বা তুচ্ছ বিবেচনা দ্বারা কেউ চালিত হন তাহলে কখনোই এর বাইরে তিনি
সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। রাজা সলোমন ( King Sololmon ) বলেছেন, কাউকে খাতির
করা ভালো নয়, এই ধরনের মানুষ এক টুকরো রুটির জন্য আইন ভাঙতে
পারেন (To respect persons is not good; for such a man
will transgress for a piece of bread)। প্রাচীন
একটি প্রবাদ আছে ‘উচ্চপদ মানুষের প্রকৃত রূপটি চেনায়’- একেবারেই সত্য (A
place showeth the man)। এই পদই কারো
সম্মানের চাকচিক্য বাড়ায়, আবার কারো মুখোশ উন্মোচন
করে। গ্যালবা (ServiusSulpicius Galba - রোমান সম্রাট) সম্পর্কে ট্যাসিটাস (Publius (or Gaius) Cornelius Tacitus – রোমান সিনেটর ও ইতিহাসবেত্তা)
বলেছিলেন: ‘তিনি যদি কখনো সম্রাট হতেন তাহলেও সবাই তাকে সাম্রাজ্য পরিচালনার যোগ্য বলে ঘোষণা
করত’ (Omnium consensu capax imperii, nisi imperasset [A man whom
every body would have thought fit for empire if he had not been emperor])। কিন্তু ভেসপাসিয়ান (Titus Flavius Vespasianus – একজন রোমান সম্রাট ) সম্পর্কে তিনি মন্তব্য করেছিলেন: ‘ভেসপাসিয়ান তেমন একজন সম্রাট, ক্ষমতা যাকে অধিক যোগ্য করেছিল’ (Solus
imperantium, Vespasianus mutatus in melius [He was the only emperor whom the possession of power
changed for the better];)। প্রথমজন সম্পর্কে
এই মন্তব্য করেছিলেন তার প্রাচুর্যের কারণে, আর
দ্বিতীয়জনের বেলায় তাঁর আচরণ ও নৈতিক চরিত্রের কারণে। উচ্চপদে আসীন হয়ে কেউ যদি
নিজের উন্নতি ঘটাতে সক্ষম হয়, তাহলে নিঃসন্দেহে তিনি যোগ্য ও
মহৎ মানুষ। কারণ নীতিবান মানুষেরই সম্মানজনক পদে অধিষ্ঠিত হওয়া উচিত; প্রকৃতিতে দেখা যায় যে, আপন আপন স্থানে পৌঁছাতে সবাই
তীব্রবেগে ধাবিত হয় এবং পৌছানোর পর স্থির হয়ে যায়। মানুষও উচ্চপদ লাভের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। কিন্তু পেয়ে
যাওয়ার পর স্থির হয়ে যায়। উচ্চপদাসীন হতে হলে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়, আর
যদি দলাদলি থাকে, তাহলে এক দলকে সাথে নিয়ে এগোতে হয়; কিন্তু পদে বসার পর নিরপেক্ষ আচরণ করতে হয়। পূর্বসূরিদের যথাযথ
সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শন করতে হয়, তা না
হলে যে ঋণ থেকে যাবে তা শোধ হবে এই আসন ছেড়ে যাওয়ার পর। সহকর্মীদের যথাযথ সম্মান
দেওয়া উচিত; তারা সাক্ষাৎ প্রার্থী হলে কোনো কারণে দেখা করা
সম্ভব না হলে অন্য সময় তাদের অপ্রত্যাশিতভাবে ডেকে বক্তব্য শোনা উচিত। একান্ত
ব্যক্তিগত আলাপচারিতা বা আবেদনকারীদের সাথে কথাবার্তায় নিজের পদমর্যাদার উল্লেখ না
করাটা যুক্তিসঙ্গত আচরণ। তবে লোকে যেন বলাবলি করে, দায়িত্ব
পালনের সময় যেনো তিনি অন্যরকম এক মানুষ (“When he sits in place he is another man.”)।
Very halpful.Thank you
ReplyDeleteIt's helpfull.
ReplyDelete