Volpone (The Fox) - Ben Jonson - Translation in Bangla - Act - 2 - Scene -3-4-5-6-7 |
Volpone (The Fox) - Ben Jonson - Translation in Bangla - Act - 2 - Scene -3-4-5-6-7
দ্বিতীয়
অঙ্ক তৃতীয় দৃশ্য
(করভিনোর প্রবেশ)
করভিনোঃ
(বক্তা হাতুড়ে চিকিৎসককে) আপনি, যার শয়তানের মতো বিদ্বেষ রয়েছে এবং যে আমার অসম্মানের কারণ
হয়ে দাঁড়িয়েছেন, নেমে আসুন। এখানে নেমে আসুন। আপনি কি ভিড় জড়ো করার জন্য আমার বাড়ি ছাড়া
অন্য কোনো বাড়ি খুঁজে পাননি? আপনি যিনি নিজেকে আরেকজন সিনর ফ্ল্যামিনিও বলে ভাবেন, নেমে আসুন, স্যার, আপনার মঞ্চ থেকে
নেমে আসুন। কি, আপনি কি ভাবেন আমার স্ত্রী আপনার দাসী, স্যার?
আপনার নাটক মঞ্চায়নের জন্য এই পাবলিক
স্কোয়ারে আমারটি ছাড়া অন্য কোনো জানালাই কি আপনি খুঁজে পেলেন না? আমারটি ছাড়া আর
কোনো জানালাই কি নেই? (ভলপোনি এবং তাঁর সঙ্গীদের তিনি ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলেন এবং
চাপড়ও মারলেন)। আমার জীবনের শপথ, আগামীকালের আগেই আমাকে নতুন নাম দেয়া হবে, তখন আমাকে সমস্ত
শহরব্যাপী বৃদ্ধ অসতী স্ত্রীর স্বামী প্যান্টালোন ডি বেসোগনিওসি নামে ডাকা হবে।
ভ্রমণকারীঃ
এসব কিছুর মানে কি, স্যার পল?
স্যার
পলিটিকঃ বিশ্বাস করুন, ক’জন সরকারী কর্মকর্তা বক্তা হাতুড়ে চিকিৎসকের ওপর কৌশল
খাটাচ্ছে।
ভ্রমণকারীঃ
এটা আপনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হতে পারে।
স্যার
পলিটিকঃ আমি জানি না, কিন্তু আমাকে সতর্ক প্রহরায় থাকতে হবে।
ভ্রমণকারীঃ
স্যার, সেটাই সবচেয়ে ভালো উপায়।
স্যার
পলিটিকঃ গত তিন সপ্তাহ ধরে, আমার সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং আমার
চিঠিগুলো আমার কাছে পৌছার আগেই সেগুলো বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে।
ভ্রমণকারীঃ
সে কী স্যার? সতর্ক হবার জন্যে এটাই আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো উপায়।
স্যার
পলিটিকঃ হ্যা, আমি নিশ্চয়ই তা-ই করবো।
ভ্রমণকারী
(স্বগতঃ) রাত পর্যন্ত এই নাইটকে হারাতে চাই না আমি, তাহলে আমি নিজেকে আনন্দে রাখতে পারবো।
দ্বিতীয়
অঙ্ক চতুর্থ দৃশ্য
(ভলপোনির বাড়িতে)
(ভলপোনির এবং মসকার প্রবেশ)
ভলপোনিঃ
ওহ! আমি আহত হলাম।
মসকাঃ
শরীরের কোন অংশে স্যার?
ভলপোনিঃ
আমার শরীরের বহির্ভাগে আমি কোনো আঘাত পাইনি। শারীরিক যে আঘাত আমি পেয়েছি, তা কিছুই নয়, সেটা আমি সহ্য
করতে পারি। কিন্তু এক ক্রোধোন্মত্ত মুহূর্তে কিউপিড সিলিয়ার চোখ থেকে একটি তীর
ছুঁড়ে মেরেছেন। একটি শিখার মতো সেই তীর আমার হৃদয় এফোঁড় ওফোঁড় করে দিয়েছে। শিখাটি
এখন বিস্তৃত হচ্ছে এবং তাপ সহকারে পুড়িয়ে ফেলছে। এটি চুল্লীর আগুনের শিখার মতই যার
সমস্ত নির্গমণ পথ রুদ্ধ, যার ফলে আগুন নিয়ন্ত্রণের অবাধ্য হয়ে উঠেছে। আমার ভেতরে সেই
আগুন ক্রুদ্ধ হয়ে উঠেছে। আমি বাঁচতে পারছি না, মসকা,
যদি না এই পরিস্থিতিতে তুমি আমাকে সাহায্য
করো। মনে হচ্ছে, আমার যকৃত যেন তাপে গলে যাচ্ছে আর আমি যেন সিলিয়ার শান্ত নিঃশ্বাস থেকে
উদ্ভূত শান্ত বাতাসের আশা ছাড়া কেবল ছাইয়ে পরিণত হচ্ছি ।
মসকাঃ হায়, প্রিয় স্যার, আপনি তাকে না
দেখলেই ভাল হতো।
ভলপোনিঃ
না, তুমি আমাকে তার অস্তিত্ব সম্পর্কে কোনো কথা না বললেই ভাল করতে।
মসকাঃ
স্যার, আপনি ঠিক বলেছেন। আমি স্বীকার করছি যে তার সম্পর্কে আপনাকে জানিয়ে এবং
এভাবে আপনাকে অসুখী করে, আমি নিজেকে দুর্ভাগা বলে মনে করছি। কিন্তু এখন আপনাকে
যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেবার জন্য যথাসাধ্য করতে আমি বাধ্য, আমার
কর্তব্যবোধের চেয়ে কোনো অংশে কম বাধ্য নই,
আর আমি যথাসাধ্য করবো স্যার।
ভলপোনিঃ
প্রিয় মসকা, আমি কি সাফল্যের আশা করতে পারি?
মসকাঃ
স্যার, আমি আপনার কাছে যতোটা প্রিয়, আপনি আমার কাছে তার চেয়েও প্রিয়তর। মানুষের প্রচেষ্টার সীমার
মধ্যে কোনো কিছুর আশা ত্যাগ করার কথা আপনাকে আমি বলব না।
ভলপোনিঃ ও, এসব আমার আশার
দূতের কথা। মসকা, আমার চাবি নাও। স্বর্ণ, তৈজস, রত্ম-আমি পুরোপুরি তোমার ওপর সব ছেড়ে দিচ্ছি। তোমার ইচ্ছেমত
তুমি আমার সম্পদ ব্যবহার করতে পারো। মসকা,
সিলিয়ার জন্যে আমার আবেগকে বাস্তবায়িত করতে
গিয়ে যদি আমাকে মুদ্রায় দ্রবীভূত করতে হয়,
তবে তাই করো।
মসকাঃ আমি
কেবল এটুকুই চাইছি যে আপনি ধৈর্যের অনুশীলন করুন।
ভলপোনিঃ
আমি নিশ্চয়ই সহিষ্ণু।
মসকাঃ
আমার কোনো সন্দেহ নেই যে আমি আপনার আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করতে পারবো।
ভলপোনিঃ
তাহলে, আমি যে ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলাম সেজন্য আমি মনস্তাপ করবো না।
মসকাঃ
আপনার মনস্তাপ করার কোন প্রয়োজন নেই, স্যার, যদি আপনি সিলিয়ার জন্য আপনার আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারেন এবং
এভাবে তার স্বামীকে অসতী পত্মীর স্বামী বানাতে পারেন।
ভলপোনিঃ
তা ঠিক। তার ওপর কখনোই আমি তাকে আমার উত্তরাধিকারী করতে চাইনি। আমার দাড়ি আর আমার
ভ্রুর রং কি আমার সত্যিকারের পরিচয়ের সূত্র প্রকাশ করেনি?
মসকাঃ ও
একটুও না।
ভলপোনিঃ
আমি বক্তা হাতুড়ে চিকিৎসকের ভুমিকায় ভালোভাবেই অভিনয় করেছি।
মসকাঃ
আপনি এতো ভালোভাবেই তা করেছেন যে আমি আশা করি আমি আমার পরিকল্পনা সম্পাদন করতে
পারবো, আমার মনে হয়, যার অর্ধেক সাফল্য আপনি অর্জন করেছেন। আর এখনো, আপনি যা করেছেন
তার পরিণতি থেকে বাঁচতে পারবেন।
ভলপোনিঃ
কিন্তু তারা কি আমাকে বক্তা হাতুড়ে চিকিৎসক স্কটো অভ মানটুয়া ভেবে বোকা বনেছিল?
মসকাঃ
স্যার, স্কটো স্বয়ং তার এবং আপনার মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করতে পার । আপনার
কুশলতার প্রশংসা করার মতো সময় এখন আমার হাতে নেই। আমরা এখন আলাদা হবো এবং আমি যে
প্রচেষ্টার দ্বারা সাফল্য অর্জন করবো সেজন্য আপনি আমার উদ্ভাবনী শক্তির প্রশংসা
করতে পারেন।
দ্বিতীয়
অঙ্ক পঞ্চম দৃশ্য।
(করভিনোর বাসগৃহ)
(করভিনো এবং সিলিয়ার প্রবেশ)
করভিনোঃ
ভেনিসের কুখ্যাত ভাড় বক্তা হাতুড়ে চিকিৎসক,
যে কিনা ভোজবাজি দেখায়, লোকজনের দাঁত
তোলে আর আজে-বাজে কথা বলে তার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে তুমি আমার সম্মানের জন্য
মৃত্যু ডেকে এনেছে। তুমি জানালায় লোকজনের চোখের সামনে দাঁড়িয়েছিলে, যেখানে বৃদ্ধ, অবিবাহিত লোকের ভিড়
ছিল, যারা তাদের লালসার জন্য পরিচিত, কামুক আবেগ নিয়ে যারা তোমার দিকে তাকিয়েছিল, যখন বক্তা হাতুড়ে
চিকিৎসক তার জোরপূর্বক প্রদর্শনী এবং পেশাগত কথার ফুলঝুরি ছড়িয়ে, তার ঔষধ সম্পর্কে
বক্তৃতা করে তোমার মনোযোগ আকর্ষণ করেছিলো এবং তুমি উদারভাবে হাসছিলে, আর যখন তোমার
রুমালটি জানালা দিয়ে নীচে পড়ছিলো, তখন যেসব প্রেমসকাতর লোকজন তোমার দিকে তাকিয়েছিল, সেটি পাখার মতো
তাদেরকে প্রশান্তি দিচ্ছিলো। কি, বক্তা হাতুড়ে চিকিৎসক কি তোমাকে ডাক দিয়ে বা সঙ্কেত দিয়ে ওইসব
লোকদের ডাকার মাধ্যম হিসেবে কাজ করেছে অথবা তুমি কি তার তামার রিং এর প্রেমে পড়েছ, নাকি তার জাফরান
রঙের রত্ন যা মূল্যবান পাথর দ্বারা সজ্জিত সেটার প্রেমে পড়েছ যা তার নকশাখচিত
পোশাকের মতো করে সেলাই করা হয়েছে। নাকি, তুমি তার পুরনো পশমী টুপি দেখে আকৃষ্ট হয়েছে যাতে একটি পালক
গোঁজা ছিলো, নাকি তার দাড়ি দেখে আকৃষ্ট হয়েছে যা মোম দ্বারা দৃঢ় করা হয়েছে? বেশ এই বক্তা
হাতুড়ে চিকিৎসককে তুমি পেতে পারো। হ্যা, তিনি তোমার বাড়িতে আসতে পারেন এবং তোমার মৃগীরোগ সারাবার
জন্যে তোমার ওপর মলম প্রয়োগ করা যেতে পারে। অথবা, এটাও হতে পারে, আমার মনে হয় তুমি
হয়তো তার ওপর আরোহন করতে পছন্দ করবে। তুমি কি তার ওপর আরোহন করতে পছন্দ করবে না? কেন, যদি তুমি তার ওপর
আরোহন করতে চাও, তুমি তা করতে পারো। হ্যা, নিশ্চয়ই, তুমি তা করতে পারে। এবং এভাবে তোমার পা পর্যন্ত নিজেকে
নগ্নভাবে দেখানো সম্ভব হবে। লেডি ভ্যানিটি,
নিজেকে একটি বাদ্যযন্ত্র বানিয়ে তোলো, আর সেই পবিত্র
মানুষটির সঙ্গে ব্যবসা শুরু করো। তার সঙ্গে যোগদান করো এবং এক হও। আমি শুধু ঘোষণা
করবো যে তুমি আমার প্রতি অবিশ্বস্ত হয়েছে এবং এর ফলে আমার মৃত্যুতে আমার সমস্ত
সম্পত্তি তোমার হস্তগত হওয়া থেকে রক্ষা পাবে। তুমি আমাকে একজন অলস ডাচ হিসেবে ভেবে
নিয়েছ, কারণ, যদি তুমি আমাকে একজন গরম রক্তের ইতালীয় বলে মনে করো, তাহলে এ ধরনের
দুঃসাহসী কিছু করার আগে তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে,
বীরাঙ্গনা। তুমি কল্পনা করে কাঁপতে থাকবে যে, তোমার অন্যায়ের
শাস্তিস্বরূপ, আমি তোমার বাবা-মা-ভাই-আত্মীয়-স্বজন সবাইকে হত্যা করবো।
সিলিয়াঃ ও
মহান স্যার, শান্ত হোন।
করভিনোঃ
কি, তুমি এ জন্য কম শাস্তি দাবী করছো,
যখন আমি ক্রোধে উন্মত্ত এবং অপমানে ক্ষুব্ধ, আমার উচিত তোমার
দেহে ততোবার এই ড্যাগারটি প্রবিষ্ট করানো বা বিদ্ধ করা যতোবার সেইসব দর্শকরা তোমার
দিকে কামার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলো।
সিলিয়াঃ
হায়, স্যার, নিজেকে শান্ত করুন। আমি ভাবতে পারছিনা যে, আমার জানালায় দাঁড়ানোর ব্যাপারটি আপনাকে
আঘাত করেছে এবং অন্য সময়ের চেয়ে আপনাকে বেশী ক্রুদ্ধ করে তুলেছে।
করভিনোঃ
তুমি কি এটা ভাবতে পারোনি যে একজন কুখ্যাত বাজে লোকের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করার
পর আমি ক্রুদ্ধ হবো? একটি বিশাল ভিড়ের মধ্যে তুমি, তোমার রুমাল ছুঁড়ে মেরে একজন অভিনেত্রীর মতো
আচরণ করেছো, যা পেয়ে সে সেটাকে মিষ্টি করে চুমু খেয়েছে, এবং নিঃসন্দেহে সে চিঠিসহ সেটাকে ফেরত
পাঠিয়েছে যেটাতে সে তোমার সঙ্গে দেখা করার স্থানের কথা লিখেছে। হয়তো তোমার বোনের, তোমার মায়ের বা
তোমার খালার বাড়িতে সেই মিলন হবে।
সিলিয়াঃ
কেন, প্রিয় স্যার? আমি কি কখনো এমন ওজর দেখিয়েছি, অথবা কখনো কি গীর্জা ছাড়া ঘনঘন বাড়ির বাইরে
কোথাও গিয়েছি?
করভিনোঃ
বেশ, এখন বাইরে বেরুনোর সুযোগ আগের চেয়ে আরো কম পাবে। তোমার ওপর যে শর্ত আমি
আরোপ করতে যাচ্ছি, তার তুলনায় তোমার এখনকার চলাফেরার ওপর যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে
সেটাকে। স্বাধীন বলে মনে হবে, আর তাই এখন আমার কথা শোনো। প্রথমেই, এই জানালায় আমি
দেয়াল তুলে দেবো, কারণ এর আলো কোটনার মতো লোকচক্ষুর সামনে তোমার শরীর প্রকাশিত করে দেয় বা
বিক্রি করে দেয়। যতোক্ষণ তা না করা হচ্ছে,
ততোক্ষণ জানালা থেকে দুই বা তিন গজ দূরে চক
দিয়ে আমি একটি রেখা এঁকে রাখবো আর, যদি তুমি কোনো হতাশ মুহুর্তে সেই রেখা মাড়িয়ে যাও, তখন তুমি আরো
নারকীয় ক্রোধের শিকার হবে, আরো ভয়াবহ, আরো বর্বর এবং আরো নির্মম ক্রোধ যা কিনা একজন যাদুকরের ওপর
নেমে আসে যিনি অতিপ্রাকৃতিক অশুভ প্রেতকে ডাকার পর সেই অশুভ শক্তিকে অতিপ্রাকৃতিক
পৃথিবীতে না পাঠিয়ে অসাবধানে যাদুর বৃত্তের বাইরে চলে আসেন। আরেকটা ব্যাপার, এখানে একটি
সতীত্ব বেড়ি রয়েছে যেটা পরার জন্য তোমাকে আমি জোর করবো। এবং এ বিষয়ে আরো চিন্তা
করে, জানালার দিকে পেছনে ফিরে সব কাজ করতে তোমাকে আমি বাধ্য করবো। বাড়ির পেছন
দিককার কক্ষগুলোতে তুমি থাকবে, তুমি পেছনে হাঁটবে, তুমি কেবল পেছনের দৃশ্য দেখবে, জানালা থেকে সরে এসে তুমি কোনো বিনোদন বা
আমোদ-প্রমোদ উপভোগ করতে পারবে না। শুধু তাই নয়, তোমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার জন্য তুমি
আমার খোলামেলা স্বভাবকে বাধ্য করছো, তোমার বোঝা উচিত যে এটা হলো পুরুষদের কাছে তোমার সহজলভ্যতা, তোমার সঙ্গে এমন
ব্যবহার করতে বাধ্য করছো আমাকে। এর কারণ হলো তুমি নিজেকে তোমার সুন্দর কক্ষে আবদ্ধ
করে রাখতে পারোনি আর তোমার বিশ্বাসঘাতক, চমৎকার, নাসিকা-রন্ধ্রকে সন্তুষ্ট করেছো, আর এর কারণ হলো
নিশ্চয়ই তুমি দুর্গন্ধময় এবং ঘর্মাক্ত পথিকদের গন্ধ শুকে থাকো। (করাঘাতের শব্দ
শোনা গেলো।) কেউ কড়া নাড়ছে। সরে যাও, আর কোনো দর্শনপ্রার্থীর সামনে তুমি আসবে না, তা না হলে তোমাকে
আমি হত্যা করবো। তুমি কখনেই জানালা দিয়ে তাকাবে না। যদি তা করো- না, দাঁড়াও, যাবার আগে এ
কথাগুলো শুনে যাও-আমি তোমাকে সাবধান করে দিচ্ছি, বীরাঙ্গনা। আমি অভিশপ্ত হবো যদি আমি তোমার
দেহটিকে টুকরো টুকরো করে না কাটি, এবং যদি তুমি এইসব শর্ত লঙ্ঘন করো, তবে এটিকে আমার
নিজের হাত দিয়ে ব্যবচ্ছেদকরতে পারি। তারপর তোমার ব্যবচ্ছেদটিকে বহন করে শহরে
জনসমক্ষে তোমার অবিশ্বস্ততা সম্পর্কে আমি একটি নীতিবাদী বক্তৃতা দেবো। এখন যাও
(সিলিয়ার প্রস্থান)।
(চাকরের প্রবেশ)।
করভিনোঃ
কে এসেছে।
চাকরঃ
করভিনোঃ সিনর মসকা, স্যার।
দ্বিতীয়
অঙ্ক, ষষ্ঠ দৃশ্য
করভিনোঃ তাকে
আসতে বলো। (চাকরের প্রস্থান)। তার প্রভু,
ভলপোনি, নিশ্চিত মারা গিয়েছেন। সেক্ষেত্রে আমার
দুর্ভাগ্যকে দ্রবীভূত করতে পারে এমন কিছু শুভ সংবাদ এখনো আছে (মসকার প্রবেশ)
করভিনোঃ
আমার প্রিয় মসকা, এসো। কি খবর তুমি বয়ে এনেছে, তা বোধ হয় আমি অনুমান করতে পারি।
মসকাঃ
আমার ভয় হচ্ছে এই ভেবে যে আপনি তা অনুমান করতে পারছেন না,স্যার।
করভিনোঃ
ভলপোনির মৃত্যুসংবাদ কি আনোনি তুমি?
মসকাঃ
অন্যপক্ষে, ব্যাপারটি ঠিক তার উল্টো।
করভিনোঃ
তুমি কি বলতে চাইছে যে তিনি আরোগ্যলাভ করেছেন?
মসকাঃ
জ্বী, স্যার।
করভিনোঃ
অভিশাপ আমার ওপরে। আমি কিছু অশুভ যাদুর শিকার। আমার দুর্ভাগ্য আমাকে যন্ত্রণা
দেবার জন্য একাট্টা হয়েছে। কিভাবে? কিভাবে? কিভাবে? কিভাবে এটা ঘটলো?
মসকাঃ কেন, স্যার, স্কটোর মলম
দ্বারা তিনি আরোগ্যলাভ করেছেন। আমি যখন ভেতরের ঘরে ব্যস্ত ছিলাম, তখন করবাসসিও এবং
ভলটোর সেই মলমের কিছুটা নিয়ে গিয়েছিলেন-
করভিনোঃ
সেই হতচ্ছাড়া বক্তা হাতুড়েটার মরণ হোক। যদি আমি আইনের ব্যাপারে ভীত না হতাম, আমি ওই বদমাশটাকে
হত্যা করতাম। কিন্তু তার মলম এতোটা কার্যকর,
তা হতেই পারে না। সে একটি নগণ্য বদমাশ। আমি
তাকে আসতে দেখেছি, প্রতারণা করতে দেখেছি, পান্থশালায় একজন সাধারণ মহিলা দড়াবাজিকর এবং নৃত্যশিল্পীর
সঙ্গে দর্শকদের আনন্দ দিতে দেখেছি, এবং যখন সে তার সব চালাকি খাটালো, সে আনন্দিত বোধ
করলো, পুরস্কার হিসেবে সে শুধুমাত্র এক চামচ বাসি মদ পেয়েছিলো যাতে নাকি মাছি
ভাসছিলো। তার মলম এর কারণ হতে পারে না। সেই মলমের সব কটির পরিমাণই অল্প পরিমাণে
আমার জানা আছে। তার উপাদানগুলো হলো মেষের যকৃত থেকে নিঃসৃত রস, ভাজা শূকরীর হাড়
থেকে কিছুটা চর্বি, অল্প কিছু সেদ্ধ পোকা-মাকড়, পিষ্ট শুয়োপোকা, মুরগীছানার
কিছুটা চর্বি, এবং উপবাসী কারোর থুতু।
মসকাঃ এসব
আমি জানি না, স্যার। কিন্তু তারা ভলপোনির কানে সেই মলমের কিছুটা ঢেলে দিয়েছেন, কিছুটা তার নাকে, এবং শুধুমাত্র
মালিশ করে তাকে সুস্থ করে তুলেছেন।
করভিনোঃ
চুলেয় যাক মলম।
মসকাঃ এবং
তারপর তার স্বাস্থ্যের ব্যাপারে ব্যগ্রতা এবং তোষামোদ প্রকাশ করেছেন, তাকে কিভাবে
সম্পূর্ণ আরোগ্য করে তোলা যায় সে ব্যাপারে আলোচনা করার জন্য সর্বোচ্চ খরচে তারা
একটি সম্মেলন ডেকেছেন। আলোচনার পর একজন চিকিৎসক সুগন্ধির পুলটিস দেবার কথা বলেছেন, আরেকজন একটি
উল্লুকের চামড়া ছাড়িয়ে নিয়ে রোগীর বুকে বেঁধে দেবার কথা বলেছেন। তৃতীয়জন একাজে
উল্লুকের পরিবর্তে কুকুরকে ব্যবহার করতে বলেছেন, চতুর্থজন বন্য বেড়ালের চামড়া দিয়ে একটি মলম
ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন। শেষে তারা সবাই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে তার জীবন
রক্ষা করার একটিই মাত্র উপায় আছে, সেটি হলো এই যে কয়েকজন তরুণীকে খুঁজে বের করতে হবে, যাদের শরীর
শক্তিশালী এবং প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর এবং যারা তার সঙ্গে শয্যায় যেতে পারবে। আর এই
কাজ করতে নিযুক্ত করা হয়েছে আমাকে, যদিও একাজ করতে আমি দুঃখিত হচ্ছি এবং অনিচ্ছুকও বটে। আমি
এখানে এসেছি, তার কারণ হলো এই যে, আমি ভেবেছি যে সংবাদটি আপনাকে আগেভাগেই জানাই, তাহলে এ ব্যাপারে
আপনার উপদেশ পাব, কারণ এর সঙ্গে আপনার সম্পর্কই সবচেয়ে বেশী এবং আমি আপনার স্বার্থের
পরিপন্থী কোনো কাজই করতে পারি না, যখন আমার ভবিষ্যত উন্নতির জন্য আমি কেবল আপনার ওপরেই নির্ভর
করে আছি, স্যার। একই সময়ে যদি আমি কোনো রমণীকে খুঁজে না পাই, তারা হয়তো আমার
অবহেলার কথা আমার প্রভুকে জানাবেন এবং আমার বিরুদ্ধে দৃঢ়তার সঙ্গে কথা বলবেন যে
আমি তার অনুগ্রহ হারাব, এবং বাকী সবকিছু যা আপনি এর জন্য করেছেন সবকিছু ব্যর্থতায়
পর্যবসিত হবে। আমি আপনার কাছে কেবল ঘটনাগুলো বর্ণনা করলাম, স্যার। এখন, তারা সবাই একজন
অন্যজনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমেছেন যে কে প্রথম তাকে একজন রমণী এনে দিতে পারবেন।
তাই আমি আপনাকে দ্রুত সিদ্ধান্তে আসার জন্য অনুরোধ করছি। তারা কিছু করার আগেই আপনি
কিছু করুন, এবং যদি আপনি পারেন, তাহলে তাদেরকে থামিয়ে দিন।
করভিনোঃ
আমার আশা পুরোপুরি ভেস্তে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। আমার এমন দুর্ভাগ্য। সবচেয়ে ভালো
উপায় হল কিছু সাধারণ বারবণিতাদের ভাড়া করা।
মসকাঃ
জ্বী, আমি তাই ভেবেছিলাম, স্যার। কিন্তু এইসব বারবণিতারা খুবই ধূর্ত এবং কৌশল খাটাতে
ওস্তাদ-আর আমার প্রভু একজন বৃদ্ধ লোক, তার ওপর অতিমাত্রায় স্নেহপ্রবণ এবং তাদেরকে সহজেই প্রতারিত
করা যায়। আমি বলতে পারিনা, যদি আমরা একজন বারবণিতাকে নিয়ে যাই তাহলে সে হয়তো আমাদের
সঙ্গে প্রতারণা করবে এবং কৌশলে তার নিজের নামে সমস্ত উত্তরাধিকার লিখিয়ে নেবে।
করভিনোঃ
তা ঠিক।
মসকাঃ না, না। তাকে এমন হতে
হবে যে কোনো কৌশল জানে না, স্যার, কোনো সরল তরুণী, এমন, একজন যাকে কাজটি করাবার জন্য পরিচালিত করা যায়, এমন রমণী যে আমাদের
নির্দেশ পালন করবে। আপনার কি কোনো আত্মীয় নেই? ঈশ্বরের দোহাই, ভাবুন, ভাবুন, ভাবুন। স্যার।
একজন চিকিৎসক তার নিজের মেয়ের কথা বলেছিলেন।
করভিনোঃ এ
কি সম্ভব?
মসকাঃ
জ্বী, চিকিৎসক সিনর লুপো।
করভিনোঃ
তিনি কি তার মেয়ের কথা বলেছিলেন?
মসকাঃ এবং
সেই মেয়ে কুমারীও, স্যার। কেন, হায় চিকিৎসক তো জানেন ভলপোনির শরীরের প্রকৃত অবস্থাটা কি, তিনি জানেন যে
জ্বর ছাড়া আর কোনো কিছুই ভলপোনির রক্ত গরম করতে পারবে না, স্যার, কোনো যাদুময়
ধ্বনিও তার মধ্যে যৌন আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তুলতে পারবে না। তার যৌনশক্তি অনেকদিন ধরে
নির্জীব। তার ওপর, স্যার, ব্যাপারটা কে-ই-বা জানতে পারবে একজন দু’জন ছাড়া-
করভিনোঃ
দয়া করে আমাকে এক মুহূর্ত একা থাকতে দাও। (জনান্তিকে) যদি অন্য কেউ উত্তরাধিকার
পেতে চায়, সে কি করবে যে কাজটা করা প্রয়োজন,
সেটা এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নয়, আমি জানি। তাহলে, কেন আমি আমার
নিজের আত্মীয়কে এবং আমার ভালোবাসার পাত্রীকে এই কাজ করতে বাধ্য করবো না, যেমনটা এই
মাথামোটা চিকিৎসক বলেছেন। সম্মানের প্রশ্নে,
কন্যার ক্ষেত্র এবং স্ত্রীর ক্ষেত্র একই।
মসকাঃ
(জনান্তিকে) তার প্রত্যাবর্তনের শব্দ শুনতে পাচ্ছি।
করভিনোঃ
(জনান্তিকে) আমার স্ত্রীকেই তা করতে হবে। এটা ধরে নেয়া যেতে পারে যে কাজটি হয়ে
গিয়েছে। ঈশ্বর, আলো দেখাও। এই চিকিৎসক যার কিনা চিকিৎসা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হওয়া ছাড়া
ব্যাপারটি সম্পর্কে কোনোই মাথা ব্যথা নেই এবং এটা একটা সামান্য ব্যাপার, সে যদি তার
মেয়েকে দেবার জন্য প্রস্তুত থাকে, তাহলে আমি যখন এমন গভীরভাবে জড়িত, তখন আমার কি করা
উচিত? আমি ওই হতভাগাকে পথ করে নিতে দেবো না। তিনি একজন লোভী, দুর্ভাগা। মসকা, আমি মন ঠিক করে
ফেলেছি।
মসকাঃ কি
স্যার?
করভিনোঃ
আমরা সব কিছু এখন ঠিক করবো। যার কথা আমি বলছি সে আমার স্ত্রী, মসকা।।
মসকাঃ
স্যার, এ ব্যাপারে আপনার উপদেশদাতার ভূমিকা নেয়ার কোনো ইচ্ছে নেই আমার, কিন্তু এই
বুদ্ধিটা প্রথমেই আপনাকে দেয়া উচিত ছিলো আমার। আর নিশ্চিত থাকুন, আপনি তাদের
সবাইকে পরাস্ত করবেন। এবং তাদের সুযোগকে পুরোপুরি নষ্ট করে দেবেন। আপনি যা করতে
যাচ্ছেন তার অর্থ হল এই আপনি ভলপোনির সম্পত্তি সরাসরি অধিকার করতে যাচ্ছেন। আর তার
পরবর্তী জ্বরের বিকারগ্রস্ত অবস্থায়, আমরা তাকে মৃত্যুবরণ করতে দিতে পারি । যা দরকার তা হলো তার
মাথার পেছন থেকে বালিশটি সরিয়ে নেয়া আর তাহলে তিনি শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যাবেন। আমি
আগেই তা করতে পারতাম, কিন্তু আপনার নৈতিক বিবেক এবং সংশয়ের কারণেই নিবৃত্ত
হয়েছিলাম।
করভিনোঃ
আমার বিবেক এবং সংশয়কে অভিশাপ। আমার বিবেক বুদ্ধিমত্তাকে ভুলপথে পরিচালিত করেছে।
বেশ, আমাকে তাড়াতাড়ি করতে হবে, আর তোমাকেও, আমাদের আগে যেন অন্যরা যেতে না পারে। বাড়ি যাও, তাকে তৈরী হতে
বলো, আর তাকে বলো যে কী উদ্দীপনা আর ব্যগ্রতা নিয়ে আমি তার জন্য এ কাজ করছি।
তুমি শপথ করে বলতে পারো যে আমি একাজ করতে সবচেয়ে প্রথমেই প্রস্তুত হয়েছি, আর এটি নিশ্চয়ই
এমন একটি ব্যাপার যে আমি আমার স্বাধীন ইচ্ছেমত মন তৈরী করেছি।
মসকাঃ
স্যার, আমি আপনাকে নিশ্চিত করছি যে, আমি তাকে এতোটাই প্রভাবিত করে ফেলবো এই ব্যাপারে তার বাকী
ক্ষুধার্ত প্রার্থীরা বাড়ি ফিরে যাবে আর শুধু আপনিই অভ্যর্থিত হবেন। কিন্তু স্যার, আপনাকে আমি সংবাদ
পাঠাবার আগেই আপনি আসবেন না, কারণ আমার আরো পরিকল্পনা আছে যা, আমি চাইছি, আপনার জন্য আরো
বেশী লাভজনক হবে। এখন আপনাকে আমি সেসব বলব না।
করভিনোঃ
কিন্তু আমাকে ডাকতে ভুলো না।
মসকাঃ ভয়
পাবেন না। (প্রস্থান)।
দ্বিতীয়
অংক সপ্তম দৃশ্য
(করভিনো এবং সিলিয়ার প্রবেশ)
করভিনোঃ
কোথায় তুমি পত্নী আমার সিলিয়া? কি ব্যাপার, তুমি ফোঁপাচ্ছে আর কাঁদছো? এসো,
কান্না মুছে ফেলো। আমি মনে করি না যে তুমি
বিশ্বাস করছো আমি সত্যিই তোমাকে বকেছি। হাঃ আমি এই আলোর দিব্যি দিয়ে বলছি যে আমি
শুধু তোমাকে পরীক্ষা করার জন্যই তোমার সঙ্গে কর্কশ স্বরে কথা বলেছি।। আমার মনে হয়
যে ব্যাপারটি তুচ্ছতা তুমি বুঝতে পারছো। এসো,
আমি ঈর্ষাকাতর নই।
সিলিয়াঃ
আপনি কি সত্যিই ঈর্ষাকাতর নন ।
করভিনোঃ
নিশ্চয়ই, আমি নই আর কখনোই তা ছিলাম না। ঈর্ষা হচ্ছে একটি নীচ, অসার মানসিক
অবস্থা। আমি কি জানি না যে, যদি রমণীরা চায় যে তারা তাদের স্বামীদের প্রতি অবিশ্বস্ত হবে
তবে অসংখ্য প্রহরী আর সবচেয়ে নিষ্ঠুর গুপ্তচররা ঘুষ পেয়ে চুপ হয়ে যাবে? বাদ দাও এসব।
তোমার ওপর আমার বিশ্বাস আছে, আর এটা তুমি দেখতে পাবে,
আর এটা মনে রেখো যে আমার কথা বিশ্বাস করার
মতো যথেষ্ট প্রমাণ আমি দিতে পারব। এসো, আমাকে চুম্বন করো। যাও,
এক্ষুণি তৈরী হও। তোমার সবচেয়ে ভালো পোশাক
পরো আর সবচেয়ে ভালো অলঙ্কার পরো, আর তোমার শ্রেষ্ঠ রূপে তুমি আবির্ভূত হও। বৃদ্ধ ভলপোনির
বাড়িতে আমরা এক পবিত্র ভোজনোৎসবে নিমন্ত্রিত হয়েছি-যেখানে আমার মন ঈর্ষা বা ভয়
থেকে কতোটা মুক্ত তা প্রমাণিত হবে। (প্রস্থান)
No comments:
Post a Comment