Macbeth - William Shakespeare - Summary in Bangla |
Macbeth - William Shakespeare - Summary in Bangla
চরিত্র তালিকাঃ
ম্যাকবেথঃ স্কটল্যান্ডের রাজা ডানকানের সেনাবাহিনীর একজন জেনারেল এবং
গ্লামিসের অমাত্য (Thane of Glamis)।
ডানকানঃ স্কটল্যান্ডের সম্মানিত বয়োবৃদ্ধ রাজা।
ম্যালডোনাল্ডঃ কডরের অমাত্য (Thane of Cawdor)।
ব্যাঙ্কোঃ রাজা ডানকানের আরেকজন জেনারেল ।
ফ্লিয়ান্সঃ ব্যাঙ্কোর ছেলে ।
ম্যালকমঃ রাজা ডানকানের ছেলে।
ম্যাকডাফঃ একজন স্কটিশ সম্ভ্রান্ত লোক ।
লেনক্সঃ আর একজন স্কটিশ সম্ভ্রান্ত লোক।
ম্যালকমঃ রাজা ডানকানের ছেলে ।
লেডি ম্যাকবেথঃ ম্যাকবেথের স্ত্রী ।
তিন ডাইনী ও হিকেট।
কয়েকজন হত্যাকারীঃ ব্যাঙ্কোকে হত্যার জন্যে
ম্যাকবেথ কয়েকজন গুণ্ডাকে নিয়োগ দিয়েছিলেন।
পোর্টারঃ রাজা ডানকানের দ্বাররক্ষী।
লেডি ম্যাকডাফঃ ম্যাকডাফের স্ত্রী।
ডোনালবেইনঃ রাজা ডানকানের সন্তান ও ম্যালকমের
ছোট ভাই।
থেন অভ কডর - ম্যাকডোনাল্ড, স্কটল্যান্ডের রাজা
ডানকানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করল। একই সময়ে বিদ্রোহের সুযোগ নিয়ে নরওয়ের সেনাবাহিনীও তাদের
উপর আক্রমন করে বসল। ম্যাকবেথ সহ বেশ কয়েকজন সেনাপতি এই দুঃসময়ে রাজার পাশে দাড়াল । ম্যাকবেথ থেন অভ
গ্ল্যামিস, দক্ষ সাহসী যোদ্ধা হিসেবে
স্বীকৃত । স্কটল্যান্ডের রাজা, অভিজাতশ্রেণীর লোকজন এবং
সাধারণ মানুষের অতি প্রিয়পাত্র সে। ম্যাকডোনাল্ড (থেন অফ কডর) বিদ্রোহ ঘোষনা করলে, রাজা ডেকে পাঠালেন
ম্যাকবেথকে, নির্দেশ দিলেন যে-কোন উপায়ে
কডরকে দমন করতে । স্বভাবগত নৈপুণ্যে বিদ্রোহী যুদ্ধক্ষেত্র থেকে যুদ্ধসঙ্গী ব্যাঙ্কোকে নিয়ে
যখন ফিরে আসছেন ম্যাকবেথ তখন ঘটল এক অদ্ভুত ঘটনা । ওরা তখন নির্জন এক
প্রান্তর পেরোচ্ছে, ঠিক এ সময় ওদের সামনে
মাটি ফুড়ে বেরিয়ে এলো ভয়ঙ্করদর্শন তিন ডাইনী । ভয় পায়নি ম্যাকবেথ।
‘তোমরা কারা?’ দৃঢ় কণ্ঠে প্রশ্ন করল সে । ‘দেখতে মেয়েমানুষের মত, অথচ দাড়ি রয়েছে । কারা তোমরা? কি চাও?’ চেঁচিয়ে উঠল প্রথম জনঃ ‘ম্যাকবেথ, লর্ড অভ গ্ল্যামিসকে সবার অভিনন্দন।’
দ্বিতীয় ডাইনী বলে উঠল তার পরপরইঃ ‘ম্যাকবেথ, - লর্ড অভ কডরকে সবার অভিনন্দন’
অবাক হয়ে গেল দুই জেনারেল । আসল থেন অভ কডর মারা
গিয়েছে। তার উপাধি এখনো কাউকে দেয়া হয়নি। ফলে বেশ আশ্চর্য হল তারা দুইজন।
আরো বিস্ময় তাদের জন্যে অপেক্ষা করছিল। তৃতিয়
ডাইনি তাদেরকে বলল, ‘স্কটল্যাণ্ডের নতুন রাজাকে সবার অভিনন্দন।’ তিন ডাইনি ম্যাকবেথ
সম্পর্কে কথা বলেছে। এবার ব্যাঙ্কোও তার সম্পর্কে জানতে চাইল। প্রথম জন বলল, ‘ব্যাঙ্কোকে অভিনন্দন, সে ম্যাকবেথের চেয়ে নিচু হয়েও উচু।’
২য় জন ওদের চমকে দিল আরও, ‘তুমি ম্যাকবেথের মত এতো
সুখি নও, তবে তাকে ছাড়িয়ে যাবে।’
তৃতীয়জন বলল, “তুমি রাজা হতে না পারলেও তোমার বংশধরেরা স্কটল্যাণ্ডের রাজা
হবে।’
কৌতূহলী ম্যাকবেথ আরও কিছু জানতে চাইছিল, কিন্তু তিন ডাইনী যেমন হঠাৎ হাজির হয়েছিল তেমনি আবার হঠাৎ
মিলিয়ে গেল!
দুই জেনারেল বিস্ময়ে হতবাক। আজব এই অভিজ্ঞতার
কথা যখন আলাপ করতে শুরু করেছে; ঠিক তখনি রাজার কজন কর্মচারীকে
দেখা গেল ঘোড়ায় চেপে ওদের দিকে আসতে ।
রাজা তোমাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন, ‘বলল তারা’। আর সেজন্যে ‘থেন অভ কডর’ উপাধিতে ভূষিত করেছেন তোমাকে।’
চমকিত হল ম্যাকবেথ আর ব্যাঙ্কো । দ্বিতীয় ডাইনীর ভবিষ্যদ্বাণী
সত্যিই ফলে গেছে। ম্যাকবেথকে দ্বিতীয় ডাইনী ‘লর্ড অভ কডর’ নামে সম্বোধন করেছিল । আর এখন সে তাই হয়ে বসে আছে। দ্রুত
খেলে চলেছে ম্যাকবেথের মাথা । তবে কি তৃতীয় ডাইনীর কথাও ফলবে? সত্যিই কি সে কখনও স্কটল্যাণ্ডের রাজা হতে পারবে?
ম্যাকবেথ এবার চাইল ব্যাঙ্কোর দিকে ।
‘তোমার বংশধরেরা রাজা হবে’ বলল সে। সান্ত্বনা দিতে চাইল ব্যাঙ্কোকে । ব্যাঙ্কো অবশ্য পাত্তা
দিল না তার কথা । ‘আমি এ জীবগুলোর কথা বিশ্বাস করি না। ওরা শয়তান, আমাদেরকেও শয়তান বানাতে চায়। খারাপ কাজ করাতে চায়। ওদের কথা বিশ্বাস করলে
বিপদ পড়বে।’
কিন্তু ব্যাঙ্কোর কথায় কর্ণপাত করল না
ম্যাকবেথ। ইতোমধ্যেই সে নিজেকে রাজা ভাবতে শুরু করেছে। ভাববে না-ই বা কেন? রাজা ডানকানের নিকটাত্মীয় সে। রাজার দরবারের অন্যতম
জনপ্রিয় সভাসদও বটে । তার বয়স কম। ওদিকে রাজা বুড়িয়ে গেছেন। স্কটল্যাও শাসন করার
জন্যে যোগ্য একজন রাজা দরকার । ম্যাকবেথ বুঝল না যে ডাইনীরা সুচারুভাবে তাদের কাজ সম্পন্ন
করেছে। আর তাদের ফাদে পড়ে গেছে সে।
রাজা বিদ্রোহ দমনের পুরস্কার হিসেবে ম্যাকবেথকে
বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করতে চাইলেন । সে সময়কার প্রথা অনুযায়ী তিনি ম্যাকবেথের
দুর্গে বেড়াতে আসবেন ঘোষণা করলেন। রাজার সিদ্ধান্তের কথা শুনে তক্ষুণি রওয়ানা করল
ম্যাকবেথ, তার স্ত্রীকে রাজার আগমন বার্তা জানানর জন্যে । বাড়ির পথে
রওনা দেয়ার আগে ম্যাকবেথ একটা চিঠিও লিখল স্ত্রীর উদ্দেশে । তারপর সেটা পাঠিয়ে দিল
দূত মারফত । চিঠিতে সে ডাইনীদের ভবিষ্যদ্বাণীর কথা উল্লেখ করল। জানাল প্রথমটা ফলে গেছে, দ্বিতীয়টাও কি ফলবে?
লেডি ম্যাকবেথও স্বামীর চেয়ে কম উচ্চাকাঙ্ক্ষী
নয়। ভবিষ্যদ্বাণীর সফলতার জন্যে সব কিছু করতে প্রস্তুত সে। মহিলা বুদ্ধিমতী। তার
বুঝতে অসুবিধা হল না ডানকান যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন ম্যাকবেথের রাজা হওয়ার কোন
সম্ভাবনা নেই। ছলে বলে কৌশলে সরিয়ে দিতে হবে পথের কাটা ডানকানকে। সে ঠিক করল এ
ব্যাপারে চাপ সৃষ্টি করবে স্বামীর ওপর । চিঠিটা পড়ে সন্দেহ হল লেডি ম্যাকবেথের । স্বামী তার কথায় রাজি
হবে তো? স্বামীকে সে ভাল করেই চেনে । মানুষটি যতই উচ্চাকাজ্ষী হোক
না কেন তার মনটা বড় নরম । যাহোক, স্বামীকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে
রাজি করিয়ে ফেলবে সে । সৌভাগ্যক্রমে রাজা আসছেন তাদের দুর্গে। মস্তবড় সুযোগ জুটে
গেছে ভাগ্যে । প্রথম রাতেই খুন করতে হবে রাজাকে । কেউই সন্দেহ করতে পারবে না
তার স্বামীকে, কারণ সাম্প্রতিক যুদ্ধে
রাজার প্রতি আনুগত্যের প্রমাণ রেখেছে ম্যাকবেথ ।
স্বামী পৌছামাত্রই লেডি ম্যাকবেথ তার
পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করল। যা ভেবেছিল তাই । বেঁকে বসল ম্যাকবেথ । সে অবশ্যই রাজা হতে চায়, কিন্তু ডানকানকে খুন করে নয়।
‘আজ রাতে রাজা আসছেন,’ বলল ম্যাকবেথ ।
‘যাবেন কখন?’ জানতে চাইল তার স্ত্রী
‘আগামীকাল।’
‘সে সুযোগ তিনি আর পাচ্ছেন
না,’ বলল লেডি ম্যাকবেথ ।
লেডি ম্যাকবেথ স্বামীকে শিখিয়ে পড়িয়ে দিল
কিভাবে সাদর আমন্ত্রণ জানাতে হবে রাজাকে । আর ‘রাতের কাজ’ এর ভার ছেড়ে দিতে বলল
তার ওপর । সব পরিকল্পনা সম্পন্ন । আজ রাতেই হত্যা করা হবে রাজা ডানকানকে।
রাজা তার দু ছেলে এবং অন্যান্য লোকদের নিয়ে
দুর্গে পৌছলে লেডি ম্যাকবেথ সকলকে আন্তরিক অভ্যর্থনা জানাল । তার আতিথেয়তায় মুগ্ধ
হলেন রাজা । ক্লান্ত রাজা তখুনি বিশ্রামের জন্যে বিছানায় যেতে মনস্থ করলেন। তবে
তার আগে বিশাল এক হীরকখণ্ড উপহার দিলেন লেডি ম্যাকবেথকে, তার আন্তরিকতা ও সুন্দর আতিথেয়তার জন্যে ।
সন্ধে গড়িয়ে রাত নামল । বেড়ে চলল ম্যাকবেথের অস্বস্তি
আর অস্থিরতা । রাজার হত্যাকাণ্ডে সায় নেই তার। ‘উনি আমার আত্মীয়, মনিবও,’ বলল সে । ‘তাছাড়া আমাদের এখানে উনি
অতিথি । ওঁর ভাল-মন্দের ভার এখন আমাদের ওপর । ওঁকে খুনের পরিকল্পনা বাদ দেয়া উচিত।’
কিন্তু তার কথা শোনার পাত্রী নয় লেডি ম্যাকবেথ।
তার বিশ্বাস, খুব সহজেই ডানকানকে খুন
করে তার দায়ভার চাপিয়ে দেয়া যাবে অন্যদের ওপর । “সঙ্কল্পে স্থির থাকতে হবে,” বলল সে । ‘একটি রাতের কাজই তোমাকে স্কটল্যাণ্ডের রাজা আর আমাকে রানী
করে দেবে। কাজেই মনে কোন দ্বিধা রেখো না।’স্ত্রীর কথায় প্রভাবিত হল
ম্যাকবেথ । দুজনে মিলে আরেকবার যাচাই করে নিল হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাটা। রাজার ঘরের
গার্ড দুজনের ওয়াইনে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেবে ওরা । সবাই ঘুমিয়ে পড়লে রাজাকে
খুন করবে ম্যাকবেথ । তারপর রাজার রক্ত মাখিয়ে দেবে গার্ডদের পোশাকে । কাল সকালে মাতাল, রক্তাক্ত পোশাক পরা গার্ডদের খুনী সাব্যস্ত করবে।
সে রাতে সবাই তখন ঘুমে অচেতন । রাজার ঘরে পা টিপে টিপে প্রবেশ করল লেডি ম্যাকবেথ। গার্ডদেরও ঘুমাতে দেখে
সাহস বেড়ে গেল তার। নিজেই খুনটা করতে মনস্থ করল সে । কিন্তু ছুরি হাতে ঘুমন্ত
ডানকানেরত দিকে এগোতেই নিজের মৃত বাবার কথা মনে পড়ে গেল তার। ফলে পিছিয়ে এল সে । চুপিসারে বেরিয়ে গেল ঘর ছেড়ে
। ছুরিটা ধরিয়ে দিল
অপেক্ষমাণ স্বামীর হাতে । ‘যাও,’ বলল লেডি ম্যাকবেথ, ‘রাজাকে খুন করে এসো।’
অন্ধকার রাতে ছুরি হাতে ডানকানের ঘরের দিকে
এগোল ম্যাকবেথ। দুরুদুরু কাপছে বুকটা । খানিক দূর এগোতেই ভয়ে হাত-পা অসাড় হয়ে এল
তার । দেখতে পেল শূন্য থেকে একটা ছুরি ঝুলছে । টপটপ করে রক্ত পড়ছে ওটা থেকে । ঠিক
তার হৃৎপিণ্ডের দিকে তাক করে রয়েছে ওটার তীক্ষ্ণ ফলা। হাত বাড়িয়ে ছুরিটা ধরতে চাইল
ম্যাকবেথ। কিন্তু কোথায় ছুরি! মুহূর্তে উধাও হয়ে গেল ওটা । দৃষ্টিভ্রম! -
সমস্ত আশঙ্কা ঝেড়ে ফেলল ম্যাকবেথ। দ্রুত ডানকানের
ঘরে ঢুকে পড়ল। তারপর বিন্দুমাত্র কালক্ষেপণ না করে ছুরিটা বসিয়ে দিল ঘুমন্ত রাজার
হৃদপিণ্ডে। এক আঘাতেই মারা পড়লেন ডানকান।
এবার হামাগুড়ি দিয়ে দরজার কাছে চলে এল ম্যাকবেথ
। বেরোতে যাবে যেই অমনি
ঘুমের মধ্যে চেঁচিয়ে উঠল একজন গার্ড, ‘খুন!’ আর হেসে উঠল অন্যজন । থমকে গেল ম্যাকবেথ । কিন্তু বিপদ ঘটল না কোন।
গার্ড দুজন ঘুমিয়ে পড়ল আবার । উদ্বিগ্ন লেডি ম্যাকবেথ। চারদিক অন্ধকার কান পেতে রয়েছে
সে । শুনতে চেষ্টা করছে প্রতিটি শব্দ । গার্ডদের একজনকে চেঁচিয়ে উঠতে শুনে ভেবেছে, ম্যাকবেথ ধরা পড়ে গেছে। কিন্তু ম্যাকবেথ ফিরে এসে সব জানাতে
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল তার স্ত্রী । কিন্তু এই অপকর্ম ঘটিয়ে মানসিকভাবে প্রায়
বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ম্যাকবেথ । পাগলের মত পায়চারি করতে লাগল সে । কানে আসছে কার যেন কণ্ঠঃ
“ঘুম হারাম! ম্যাকবেথ ঘুমকে খুন করেছে! তার ঘুম হারাম!”
লেডি ম্যাকবেথ তার এই করুণ অবস্থা দেখে ধমক দিল, ‘বুদ্ধিশুদ্ধি লোপ পেল
নাকি তোমার? ছুরিটা নিয়ে এসেছ কেন? ওটা গার্ডদের পাশে রেখে এসোগে যাও । ওদের কাপড়ে রক্ত মাখিয়ে
দিয়ে এসো।’ কিন্তু মৃত ডানকানের ঘরে ফিরে যেতে নারাজ ম্যাকবেথ । ফলে লেডি ম্যাকবেথকেই
স্বয়ং যেতে হল ও ঘরে। ঘুমন্ত গার্ডদের সারা শরীরে সে মেখে দিল ডানকানের রক্ত।
ছুরিটা ফেলে এল ওদের পাশে। সে যখন ফিরল তখন দেখতে পেল নিজের রক্তমাখা হাত দুটির দিকে
আতঙ্কিত চোখে চেয়ে রয়েছে ম্যাকবেথ।
‘সমুদ্রের সব পানি দিয়ে
ধুলেও কি এ দাগ যাবে?’ আপন মনেই প্রশ্ন করল সে । উহু, পুরো সমুদ্রটাই লাল হয়ে যাবে।’
এসময় হঠাৎই দুর্গের গেটে ধাক্কা দেয়ার শব্দ
শোনা গেল। চমকে উঠে কাপতে লাগল ম্যাকবেথ । পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করল লেডি ম্যাকবেথ । ফিসফিস করে স্বামীকে বলল, ‘জলদি গিয়ে হাত ধুয়ে নাও । নাইট গাউনটা পড়ে নেবে।
তাহলে সবাই ভাববে আমরা এতক্ষণ ঘুমাচ্ছিলাম । যাও!’
বাইরে তখন ঝড় বয়ে চলেছে। ম্যাকবেথের মনে হল, প্রকৃতি তার দুষ্কর্মের কথা সবাইকে জানিয়ে দিচ্ছে। ওদিকে বেড়ে চলেছে গেট ধাক্কানর শব্দ, ভেঙেই ফেলবে যেন। দারোয়ান ঘুম ভেঙে উঠে গেট খুলতে গেল। ডানকানের দুজন বিশ্বস্ত অমাত্য, ম্যাকডাফ এবং লেনক্স এসেছে রাজার খোজ নেয়ার জন্যে। ম্যাকডাফকে ডানকানের ঘর
দেখিয়ে দেয়। হল। ঘরে ঢুকেই আর্তচিৎকার করে উঠল সে, মুহূর্তে হট্টগোল বেধে গেল গোটা দুর্গ জুড়ে । ম্যাকডাফ স্পষ্ট বুঝল
হত্যা করা হয়েছে রাজা অর্থাৎ তার মনিবকে। সে এ হত্যাকাণ্ডের কথা জানাতেই প্রচণ্ড ক্রোধে কাপতে লাগল ম্যাকবেথ। তক্ষুণি নিরীহ গার্ড
দুজনকে খুন করল সে । তার ধারণা, এতে রাজার প্রতি তার বিশ্বস্ততার স্পষ্ট প্রমাণ পাবে ম্যাকডাফ এবং ডানকানের দু ছেলে। দু ভাই কিন্তু গার্ডদের হত্যাকাণ্ডকে ভিন্ন
দৃষ্টিতে দেখল । গার্ডদের মের ফেলার পর ডানকানের হত্যাকাণ্ডের আর কোন সাক্ষী রইল কই? রাজাকে মেরে গার্ডদের কি
লাভ?
দু’ভাই আলোচনা করল এসব
ব্যাপার নিয়ে । তারপর পালাতে মনস্থ করল। ম্যাকবেথ এ মুহূর্তে নির্মম, বেপরোয়া হয়ে গেছে। সে অনেক অঘটন ঘটিয়ে বসতে ডোনালবেইন আয়ারল্যাণ্ডের
পথে পাড়ি জমাল। ভেঙে পড়েছে ম্যাকডাফও । কিন্তু তখনকার মত রয়ে গেল সে, ভাবতে লাগল কি করা যায়।
ওদিকে লেডি ম্যাকবেথ ধরা পড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় অস্থির।
জ্ঞান হারাল সে। কিন্তু পরে জ্ঞান ফিরতে বুঝল ভয়ের কিছু নেই। এখন স্কটল্যাণ্ডের
সিংহাসন আর ম্যাকবেধের মধ্যখানে আর কেউ নেই ।
ডানকানের দু’ছেলের পলায়নের পর তার
নিকটাত্মীয় ম্যাকবেথের মাথায় রাজমুকুট উঠল। তৃতীয় ডাইনীর ভবিষ্যদ্বাণী অবশেষে ফলল।
ম্যাকবেথের মনের আশা পুরল । সে এখন স্কটল্যাণ্ডের রাজা। কিন্তু মনে শাস্তি নেই তার । সিংহাসনে নিরাপদ বোধ
করছে না সে । তীব্র অপরাধবোধে দগ্ধ হচ্ছে প্রতিনিয়ত, কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না। বিশেষত ব্যাঙ্কোকে তার সবচেয়ে
বেশি ভয় । ডাইনীর ভবিষ্যদ্বাণী সর্বক্ষণ খোঁচায় তাকে। ডাইনী ব্যাঙ্কোকে বলেছিলঃ ‘তুমি রাজা হতে না পারলেও
তোমার বংশধরেরা স্কটল্যান্ডের রাজা হবে।’
ব্যাঙ্কোর একটা ব্যাপার অস্বস্তিতে রেখেছে ম্যাকবেথকে।
রাজা ডানকানের প্রতি অসম্ভব অনুগত ছিল সে। শান্ত, গম্ভীর প্রকৃতির লোক ব্যাঙ্কো। কখন কি ভাবছে বোঝা বড় দায়
তাছাড়া ওর তরুণ ছেলে ফ্লিয়ান্স তো রয়েছেই। সন্দেহপ্রবণ ম্যাকবেথ প্রতিজ্ঞা করল তার
সম্ভাব্য সকল শত্রুকে হত্যা করবে। তালিকায় এ ক্ষেত্রে সবার আগে আসল ব্যাঙ্কো আর ফ্লিয়ান্স
এর নাম। ম্যাকবেথের মনে হল, যে মানসিক যন্ত্রণা সহ্য
করে সে রাজাকে খুন করেছে ব্যাঙ্কোর বংশধরেরা সিংহাসনে বসলে তা পানিতে যাবে।
Wonderful ,Thank you.
ReplyDelete