The Faerie Queene - Edmund Spenser - Bangla Translation - Part - 3 |
The Faerie Queene: Book I Canto I
২৭
রমণী দূরে অবস্থান করে সব দেখে শুনে বলল নাইটকে,
ওহে মহান নাইট, শুভ সময়ে জন্ম হয়েছিল আপনার,
দেখুন আপনার শত্রু দানবী মরে পড়ে আছে সম্মুখে
আপনার,
আপনি অস্ত্রধারী একজন সুদক্ষ যোদ্ধা, আজকের এইক্ষণে
আপনি প্রদর্শন করেছেন শত্রুর বিরুদ্ধে আপনার
বীরত্ব প্রতিভা,
এটাই ছিল আপনার জীবনের প্রথম রোমাঞ্চকর অভিযান,
আমি প্রার্থনা করি আপনার জীবনে আসবে এমন অনেক
অভিযান,
আমি সর্বদা মনে মনে আশা রাখি, প্রার্থনা করি,
আপনি যেন প্রথম অভিযানে সর্বদা জয়ী হন।
২৮
অতঃপর নাইট অশ্বে আরোহণ করে শুরু করলেন যাত্রা,
তার সঙ্গিনী রমণীও তাঁর অশ্বের পিছে পিছে এগুলো,
এবারে নাইট বেছে নিলেন সহজ সরল পথ,
যে পথে চলা ফেরা করছে তিন অশ্বচালিত বহু গাড়ি,
অন্য আর কোনো পথ না বেছে চলল একই পথে,
অবশেষে এই পথই তাদেরকে নিয়ে এল অরণ্যের বাইরে,
ঈশ্বরের আশীর্বাদ সাথে নিয়ে নাইট এগুলেন
সম্মুখে,
অশ্বে বসে বসে তিনি উপভোগ করছিলেন এই অভিযান,
হয়তো বহু অতীতে তারই মতো কেউ এসেছিল এ পথে।
২৯
অবশেষে রমণী ও নাইট দেখা পেলেন এক বৃদ্ধ লোকের,
বয়সের ভারে জীর্ণ, বৃদ্ধ পরে আছে কালো পোশাক, পা দুটো খালি,
চুল দাড়িগুলো তার পুরোপুরি সাদা,
কোমরে গোজা তাঁর একখানি পুস্তক,
ধীরস্থির স্বভাবের এই বৃদ্ধ লোকটি খুবই মনোযোগ,
সহকারে পাঠ করছে গ্রন্থখানি, আগ্রহের দৃষ্টিতে,
তার চোখ দুটো সদা নিবদ্ধ নিম্ন দিকে, তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টে,
সে খুবই সাধারণ সহজ সরল, সকল জটিলতা মুক্ত,
সে যেন নিজের পাপমুক্তি কামনা করছে সর্বদা।।
৩০
বৃদ্ধ মাথা নীচু করে নাইটকে জানাল সম্মান,
নাইটও তেমনি করে দিলেন তাঁর অভিবাদনের উত্তর,
এবার নাইট জানতে চাইলেন বৃদ্ধ মানুষটির কাছে,
তিনি দূরের কোনো অঞ্চলের কোনো রহস্যময়
অভিযানের কথা জানেন কিনা,
আহা, পুত্র আমার, আমি এসব খবর কী করে জানব,
সাধারণ মানুষ আমি থাকি নিভৃত এক গোপন ডেরায়,
সর্বদা মহান ঈশ্বরের নিকট পাপ মোচনের প্রার্থনা
করি,
কী করে জানব জগতের সমস্যা আর যুদ্ধ বিগ্রহের
কথা?
আমার মতো একজন সাধুর এসব চিন্তা না করাই উত্তম।
৩১
পুনর্বার বলল বৃদ্ধ, যদি শুনতে চাও ভয়াল কিছু যা গেঁথে বসেছে হেথায়,
প্রতিদিন এখানে শয়তানের অত্যাচারে অত্যাচারিত
হচ্ছে মানুষেরা,
আমি জানাব তোমাকে এমন এক ব্যক্তির কথা,
যে কাছে এবং দূরের সব লোকালয় ধ্বংস করেছে,
এগুতে এগুতে সে জানাল, আমি তার কিছুটা সন্ধান দেব,
দেখাব তোমাকে সেই জায়গা দূরে থেকে
যেখানে সেই অত্যাচারী দানবরূপী মানব বাস করে,
যে অমানুষ সর্বদা দুর্নামের বাক্য উচ্চারণ করে
সব নাইটদের উদ্দেশ্যে
সে মানব সকল প্রাণিজগতের তরে এক অভিশাপস্বরূপ।
৩২
বৃদ্ধ জানাল, এ মানুষ বাস করে এ স্থান হতে দূরে, রুক্ষ এক স্থানে।
যদি পথে যেতে এ জগতের মানুষের সাথে তার সাক্ষাৎ
ঘটে তাহলেই বিপদ,
অতঃপর রমণী জানাল, এখন রাত্রি ঘনিয়ে আসছে,
আমি জানি একটু আগের যুদ্ধে আপনি এখন অবসন্ন,
একজন শক্তিমান মানুষের কাছে এটা কোনো বিষয় নয়,
সে যদি কখনো দুর্বল বোধ করে তাহলেই বিশ্রাম
চায়,
সূর্যের যে রথ সারাটি দিন আকাশ পরিভ্রমণ শেষে।
ডুবে যায় পশ্চিম সাগরের অতলে,
সেও তো সন্ধ্যেবেলায় চলে যায় বিশ্রামে।
৩৩
বৃদ্ধ জানাল, জনাব আপনাকে বিশ্রামে যেতে হবে সূর্যের সাথে,
প্রতিদিনের নতুন সূর্যালোক আপনাকে জোগাবে নতুন
কর্ম প্রেরণা,
রাত হলো সকল উদ্ধেগ আর ব্যথা-বেদনার উপশমকারী,
এটা আগামী দিনের সফল কর্ম প্রেরণা জোগায়,
রমণী আপনাকে সঠিক উপদেশ দিয়েছেন মহান নাইট,
যে কোনো বিষয়ে সুচিন্তিত সিদ্ধান্তই হচ্ছে
সার্থকতা লাভের পথ
এখন রাত্রি আসছে নেমে, তুমি এখন আমার আবাসে মেহমান,
নাইট খুবই খুশি হলেন তার এমন কথাবার্তা শুনে,
রমণী আর নাইট দুজনেই প্রবেশ করলেন সাধু
মানুষটির গৃহে।
৩৪
বৃদ্ধ সাধকের আস্তানাটি খুবই ছোটো,
এটি নীচু একটি উপত্যকায় অরণ্যের কোল ঘেঁষে,
সারাক্ষণ তার এই ক্ষুদ্র কুটিরের পাশ দিয়ে।
পথিকদের সারাদিন আনাগোনা, যাওয়া-আসা,
কিছুটা দূরে দেখা যায় এক পবিত্র গির্জা,
এই পবিত্র গির্জাতে বৃদ্ধ এই সাধুজন তাঁর।
প্রতিদিনের সকাল ও সন্ধ্যার প্রার্থনা সারে,
এরই পাশ দিয়ে বয়ে গেছে স্বচ্ছ জলের ঝরনাধারা,
এই স্বচ্ছ ঝরনাধারা পবিত্র স্রোতোধারা হিসেবে
পরিচিত।
৩৫
নাইট আর রমণী বাড়িতে ঢুকে বুঝল এটা খুবই ছোট্ট
স্থান,
কিন্তু এমন চমৎকার আরামের স্থান কখনো তারা
দেখেনি কোথাও,
এখানে কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর খাবার দেয়া হয়
পথিকদের,
এ ক্ষুদ্র আবাস পথিকদের মনের মতো জিনিস প্রদানে
চেষ্টা করে,
মহতীজনেরা এই স্থানে এসে নিজেদেরকে ধন্য মনে
করে,
প্রতি সন্ধ্যায় তারা এখানে করে ধর্মীয় আলোচনা,
মহান এ সাধুর কাছে জমানো উপদেশ বাণী ঝরে সুধার
মতো,
বৃদ্ধ অতিথিদের বলে পোপ আর মাতা মেরীর কথা,
আর প্রতিটি কাহিনি শেষ হওয়ার সাথে সাথে শুরু
করে নতুন কাহিনি।
৩৬
দেখতে দেখতে ক্রমে নেমে এল রাত,
গভীর ঘুমের অঞ্জন এঁকে দিল তাদের চোখে,
যেন মহান ঈশ্বরের পাঠানো আশীর্বাদের ফোটার
মতো তাদের দু’চোখে নেমে এল মোহনীয় নিদ্রা,
অতঃপর বৃদ্ধ সাধু তার মেহমানদের যথাস্থানে রেখে,
অন্য একটি স্থানে মৃত্তিকায় শুয়ে পড়লেন,
যখন সাধু দেখলেন সবাই ঘুম অচেতন,
তখন তিনি তার যাদুবিদ্যা, চিত্রকলা, নানা গ্রন্থপাঠে মন দিলেন,
আর খুঁজতে লাগল এই ঘুমন্ত মানুষগুলোর ক্ষতির
কারন ।
৩৭
সেই গ্রন্থগুলো থেকে সাধু বেছে নিলেন কিছু ভয়াল
শব্দ
কেউ কখনো পারবে না সে শব্দের শ্লোক পাঠ করতে,
কবিতাগুলোতে একটি বিষয় বোঝালেও তা অর্থ করে
অন্য কিছুর,
যে কবিতাগুলো রচিত প্লুটো স্ত্রী কালো প্রোসারপিনার (Proserpine)
যে স্তোত্রগুলো মহান ঈশ্বরের দৃষ্টিকে ব্যঙ্গ
করে রচিত,
বৃদ্ধ সাধক এমন শ্লোকে খুবই মর্মাহত, কারণ এর চাইতে সে,
বেশি উৎসাহী ডেকে নিতে বিখ্যাত যাদুকর ডেমোগর্গণকে,
আঁধার রাত্রির রাজপুত্র গর্গনকে (Gorgon) ডাকলেন বৃদ্ধ সাধু,
যার নাম শুনে পাতালের স্টিক্স (Styx) নদী আর ককেটাসও (Cocytus) পালায়।
৩৮
অতঃপর সে ডাকতেই, অন্ধকার হতে মাথা বের করল এক প্রেতাত্মা
মাথাটা তার মাছির আকৃতি, আদেশের অপেক্ষায় রইল সে,
এই প্রেতাত্মাগুলো সবাই মুণ্ডুবিহীন, গজাবেনা মুণ্ড কোনোদিন,
প্রেতাত্মা সকল তাদের কাজের ব্যাপারে রইল তৎপর,
প্রেতাত্মা তার বন্ধুকে সহায়তা আর শত্রুকে ভয়
দেখাতে প্রস্তুত,
এদের মাঝ থেকে দুজন প্রেতাত্মাকে বাছাই করলেন
সাধু,
এ দু’প্রেতাত্মাই বিশ্বাসঘাতকতা আর মিথ্যে বলায় ওস্তাদ,
এদের এক প্রেতাত্মা ব্যস্ত রইল সংবাদ আদান
প্রদানের কাজে,
অন্য প্রেতাত্মা রইল সাধুর পাশে ঘরকন্নার কাজে।
৩৯
প্রেতাত্মা বাতাসে ভর করে যত্রতত্র চলে খবরের
খোঁজে,
আর ডুব দিতে পারে গভীর সমুদ্র জলে,
যেতে পারে অতলে মরফিউসের (Morpheus) আলয়ে,
যার বসত আঙিনা স্থাপিত পৃথিবীর নীচে
পাতালপুরীতে,
সেথা সাগরের জল মরফিউসের বিছানা ধুয়ে মুছে
পরিষ্কার করে
যে কারণে সদা মরফিউসের বিছানাটা ভেজা থাকে,
আর চাঁদ সদা রূপালি শিশির ফেলে মরফিউসের কপালে,
মরফিউসের মাথাটা সর্বদা থাকে নিম্নমুখী হয়ে,
যখন কালো রাত্রির অন্ধকার জড়ায় তার মাথাটাকে।
৪০
সংবাদবাহক এসে দেখল মরফিউসের গেটে পড়েছে তালা,
দুটো গেটই নির্মিত পালিশ করা হাতির দাঁতে,
আর অন্যান্য গেটগুলো নির্মিত রৌপ্য দ্বারা, যা খুবই মনোরম,
গেটগুলোর সামনে প্রহরী কুকুরেরা সর্বদা
প্রহরারত
তাদের বিকট হুংকার আর চিৎকারে নিদ্রাকাতর
জীবেরা ভোগে অস্বস্তিতে,
প্রেতাত্মা সংবাদ নিয়ে নীরবে পেরিয়ে গেল
প্রহরী কুকুরদের,
গিয়ে দেখল মরফিউস গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে পড়ে
আছে,
আসলেই মরফিউস ছিল গভীর নিদ্রায় মগ্ন,
এ কারণে সে তার আশেপাশের কাউকেই পেল না দেখতে ।
৪১
পুরো জগৎ ঢলে পড়েছে গভীর নিদ্রায়,
মধুর ঘুমপাড়ানীয়া গান বাজছে মরফিউসের কানে,
সেথায় আছে এক ঝরনাধারা যা হতে পাথরে পড়ছে
ফোটা,
যেন ছাদের উপর অবিরল ঝরছে বৃষ্টিধারা
যে শব্দধারা সৃষ্টি করেছে অবিরল মৌমাছির পাখার
আওয়াজ
সেখানে কান্না, ভীতি কিংবা অন্য কোনো আওয়াজ নেই,
সেখানে মানুষের বসতির কোনো শব্দের পরশ নেই,
এখানে সর্বদা বিরাজে চিরকালীন এক নিস্তব্ধতা,
এখানে সকল কিছুই মুক্ত স্বাধীন ও নীরবতা ভরা।
No comments:
Post a Comment