The Faerie Queene - Edmund Spenser - Bangla Translation - Part - 2 |
The Faerie Queene - Edmund Spenser - Bangla Translation - Part - 2
The Faerie Queene: Book I Canto I
১২
ভদ্রমহিলা বলল নাইটকে, খুবই সাবধান,
কোনো ভুলের বশবর্তী হয়ে নিজের বিপদ ডেকে এনো
না,
অরন্য ভীতিকর সন্দেহ নেই, বিপদ প্রায়ই ওত পেতে থাকে গোপন স্থানে
কোথাও ধোঁয়ার চিহ্ন নেই, ধারে কাছে মানুষ আছে বোধ হয় নাকো
ভীতিকর কিছু কোথাও লুকিয়ে আছে কিনা জানার
উপায় নেই,
অতএব, মাননীয় নাইট কোনো উদ্যোগ গ্রহণের আগে সতর্ক হউন,
জানাল নাইট, আহ্ রমণী, ভয় দেখে ফিরে আসা আমার
জন্য লজ্জাকর
একজন পবিত্র মানব সর্বদা যেতে পারে আঁধার
পেরিয়ে
আর আলোকবর্তিকা পথ দেখায় সে মহতী জনকে।
১৩
বলল রমণী তা ঠিক, এখানকার ভয়ভীতি বিষয়ে আপনি বেশি অবগত
আপনাকে ফিরে যাওয়ার কথা বলতে দেরি হয়ে গেছে
মোর,
আর ফিরে যাওয়ার দিকটিও এখানে কাপুরুষতার
পরিচয়,
জ্ঞানের কথা হলো কেউ একজন দরোজায় উপস্থিত হয়ে,
তাকে অন্তত একবার চারপাশ ভালো করে দেখে নেয়া
উচিত,
এ অরণ্য পরিচিত গোলকধাঁধার অরণ্য নামে, ভয়ভীতি ভরা,
এ অরণ্য দানবীয় অরণ্য, এ অরণ্য ঘৃণা করার মতো অরণ্য,
এ অরণ্য ঈশ্বর এবং মানুষ উভয়েরই না পছন্দ, অতএব সাবধান
বামুন জানাল পালাও এখান থেকে, মানুষের বাস করার জো নেই এখানে।
১৪
কিন্তু প্রাণ শক্তি আর সাহসে পরিপূর্ণ যুবক
নাইট,
কোনো রকম বাধা বিপত্তিই তাকে ঠেকাতে পারবে না,
অতঃপর সে এগুলো সামনে আর তাকাল গুহার ভেতরে,
নাইটের অস্ত্রের ঝিলিক কিছুটা দূর করেছে গুহার
অন্ধকার,
সে আলোতে নাইট দেখলেন গুহাতে বসে থাকা জঘন্য এক
দানবীকে
অর্ধেক শরীর তার সাপের আর অর্ধেকটা তার নারীর,
লেজের অংশ তার বার বার আছড়াচ্ছিল মাটিতে,
দেখতে জঘন্যরূপী সে অর্ধ সর্প অর্ধ মানবী দানব,
দৃষ্টিপথে সে দানবীর ছবি বড়োই জঘন্য আর ভীতিকর।
১৫
আর দানবী শায়িত ছিল নোংরা ময়লা মাটিতে,
বিশাল লেজটা ছড়িয়ে ছিল পুরো গুহাটা জুড়ে,
আর লেজের গিটে তার অসংখ্য ক্ষতের চিহ্ন,
হাজারটি বাচ্চা জন্ম দিয়েছে এই জঘন্য দানবী,
প্রতিদিন তার বিষাক্ত স্তন্য পান করায় হাজার
ছানাদের,
একটির সাথে অন্যটির মিল নেই, সবগুলো জঘন্য আকৃতির,
অকস্মাৎ অস্ত্রের ঝিলিক গিয়ে পড়লে দানবীর এক
ছানার উপরে।
দানবীর মুখ হতে ছানাগুলো বের হচ্ছে,
ফের ঢুকে যাচ্ছে দানবীর মুখ গহবরে।
১৬
ভয় পেয়ে ওদের দানবী মাতা বেরিয়ে এল গুহা হতে,
লেজটা দানবী চারপাশে চক্রাকারে ঘোরালো মাথার
উপর দিয়ে,
ছড়িয়ে দিয়েছে তার দীর্ঘতর লেজ, যা প্রায়ই গোটানো থাকে,
চোখ তুলে তাকিয়ে দেখল দানবী, অস্ত্র হাতে এক মানব সন্তানকে,
দানবী দ্রুত নিজেকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাইল
গুহার ভেতরে
কারণ আকস্মিক আলোর ঝলকানি তাকে ভয় পাইয়ে
দিয়েছিল,
সে ভেবেছিল নিশ্চয়ই কোনো ভয়াল ব্যাপার ঘটে
যাচ্ছে,
সে ছিল গভীর আঁধারের জীব, কেউ তাকে ভালো করে দেখেনি,
আর দানবীও জগতের অন্য কিছু ভালো করে দেখেনি কোনোদিন।
১৭
সাহসী নাইট যখনি দেখল দানবীকে,
তৎক্ষণাৎ দানবী নাইট হিংস্র সিংহের মতো লাফিয়ে
পড়ল,
নিজেকে কোনো রকমে বাঁচাল হিংস্র দানবী হতে,
নিজ অবস্থানে থেকেই বিকট আওয়াজ তুলল দানবী,
আর চারপাশে আন্দোলিত করতে থাকল তার বিচিত্র লেজ,
আর ক্রুদ্ধ ভঙ্গিমায় লেজটা তার আছড়াচ্ছিল
মৃত্তিকায়,
মোটেই ভীত হলো না নাইট সে উঁচু করল তার
শক্তিশালী হাত,
দুটো হাত সে আন্দোলিত করল প্রবল শক্তিতে,
আর দানবী প্রচণ্ড শক্তি নিয়ে আঘাত করল তার
কাঁধে।
১৮
দানবী তার ক্ষত নিয়ে কিছুটা দমিত হলো, তার চেতনা লুপ্ত হওয়ার জোগাড়,
আকস্মিকভাবেই তার ক্রোধ জাগ্রত হলো, ঠেলে তুলল নিজেকে,
প্রচণ্ড দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে সে ফের উত্থিত হলো,
তার লেজ জড়ো করে ছুঁড়ে দিল নাইটোর বর্মের উপরে
আর মুহূর্তে সে তার লেজ গুটিয়ে নিল পুরো শরীরে,
বড়োই সমস্যায় পতিত হলো নাইট এমন মুহূর্তে
কিন্তু দমে যাওয়ার পাত্র নয় সে, দানবীর লেজ বাঁধল কঠিন বাঁধনে।
মহান ঈশ্বরই মানবকে বাঁচান কঠিন বিপদ হতে,
নাইট দানবীকে বাধল কঠিন রশিতে চিরদিনের তরে।
১৯
নাইটের সাথী সেই মহিলা দানবীর সাথে যুদ্ধের
ভয়াবহতায় ব্যথিত হলো,
চিৎকার করে সে বলল, স্যার নাইট, এবারে কী শক্তি দেখাবে তুমি,
তোমার শারীরিক শক্তির জন্য মহান ঈশ্বরের
প্রশংসা করো,
ভীত হয়ো না, দানবীকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা না করলে,
ঐ দানবীই তোমাকে হত্যা করত শ্বাসরুদ্ধ করে,
নাইট যখন শুনল ঐ মহিলার কথা তখন গলায় ঘড় ঘড়
শব্দ হচ্ছে দানবীর
অতঃপর সকল শক্তি সঞ্চয় করে সে তার হাতটা উঠাল
উপরে,
সে অনুভব করল দানবীর লেজের কুণ্ডলী হতে মুক্ত
সে,
দানবী যে লেজের কুণ্ডলী দ্বারা আটকে ধরেছিল
তাকে।
২০
শ্বাসরুদ্ধ হয়ে দানবী বাঁচার তরে নোংরা মুখ
গহবর হতে
ছুঁড়ে দিল প্রচুর পরিমাণে ভয়ঙ্কর কালো বিষ,
তারই সাথে ছুটে আসছিল ছেড়াখোড়া মাংসের টুকরো,
দানবীর মুখমণ্ডল হতে আসা পচা দুর্গন্ধে, নাইট
দানবীর ঠোট চেপে ধরা রশি ছেড়ে সরে এল দূরে,
দানবীর বমির সাথে বেরিয়ে এল, অনেক গ্রন্থ আর কাগজ,
বমির সাথে এল নোংরা সব ব্যাঙ, যেগুলো থাকে ঘাসে জঙ্গলে,
যেগুলো জীবন ধারণ করে ঘাস লতাপাতা, গাছের শেকড়ে
দানবীর বমি দুষিত করল পুরোটা এলাকা।
২১
প্রাচীন নীল নদ জলভারে স্ফীত হয় নির্দিষ্ট
ঋতুতে,
তীর ছাপিয়ে জলরাশি মিশরীয় উপত্যকাকে প্লাবিত
করে,
কর্দমাক্ত জল ছাপিয়ে যায় সমভূমি আর নিম্ন
উপত্যকা,
প্লাবন কমে গেলে জল ফিরে যায় বিপুল কর্দম বহন
করে,
আর সে কাদায় থাকে হাজারো রকমের ক্ষুদ্র
প্রাণীরা
এদের মাঝে কিছু প্রাণী স্ত্রীলিঙ্গ কিছু
পুংলিঙ্গধারী।
উর্বর কর্দমে এদের জন্ম, এখানেই জীবনের বিকাশ,
কোনো মানুষ এসব দেখতে সমর্থ হয় না কোনোদিন
এই সব কর্দমে জন্ম নেয়া জঘন্য ক্ষুদ্রকায় প্রাণীদের
।
২২
নাইট বুঝলেন ঠিক তেমনি কদাকার জীবেরা ঘিরেছে
তাকে,
নোংরা দুর্গন্ধে দম বন্ধ হওয়ার জোগাড় হলো তার,
বুঝলেন এ দুর্গন্ধে চেতনাশক্তি কর্মশক্তি দুটোই
বিলীন হচ্ছে তাঁর,
ড্রাগনের সাথে যুদ্ধরত থেকে এটা বুঝতে পারেন
তিনি,
যখনি দানবী বুঝতে পারে নাইটের শক্তি নিঃশেষ
প্রায়,
তখনি সে তার বমনের মধ্য দিয়ে বের করে এই
কদাকার জীব,
কালো কালির মতোই দুর্গন্ধে ভরা এই কদাকার
প্রাণীগুলো,
জীবগুলো ক্রমে নাইটের পা বেয়ে উঠতে লাগল,
জ্বালাতন করলেও এগুলো ক্ষতি করছে না মোটেই।
২৩
সরল রাখাল যখন পাহাড় শীর্ষে উঠে শান্ত গোধূলিতে,
পশ্চিম আকাশে তাকিয়ে দেখে ডুবেছে লাল রঙা
সূর্য,
তাকিয়ে দেখে তার মেষগুলো চরছে নীচে, ঘাসে ঢাকা সমতলে,
মেষগুলো মহানন্দে সমতলভূমিতে খাচ্ছে আনন্দে ঘাস,
আকস্মিকভাবেই একদল ডাশমাছি ঘিরে ধরল রাখালকে,
হুল ফোটানোর চেষ্টা চালাতে থাকল তার শরীরে,
ঘিরে ধরল রাখালকে উড়ন্ত পতঙ্গেরা, পালানোর পথ পেল না সে,
দু’হাতে সে তাড়ানোর চেষ্টা চালাল পতঙ্গগুলোকে,
বার বার পতঙ্গগুলো বিকট গুঞ্জন করতে থাকল
চারপাশে।
২৪
একই রকম দুর্দশায় পতিত হয়েছে নাইট এটা বুঝতে
পারল সে,
এ জীবনে কখনো এমন বিপদে পতিত হয়নি সে,
রাগান্বিত নাইট সামনে এগুলো শত্রু পানে,
সিদ্ধান্ত নিল এই শক্রর সাথে যুদ্ধ করার,
প্রচণ্ড শক্তিতে আঘাত হানল শত্রুকে লক্ষ্য করে,
অতঃপর দানবীর ধড় হতে মাথাটা আলাদা করল এক কোপে,
জঘন্য তার সেই কর্তিত মস্তক বীভৎস রূপ নিল,
নাইটের রক্তপিপাসু তরবারির আঘাতে দানবীর
দেহ হতে কালো কয়লার মতো রক্ত স্রোত প্রবাহিত
হলো।
২৫
বিকট শব্দ করে দানবী ঢলে পড়ল জমিনে,
ছানাপোনাগুলো তার ছড়িয়ে পড়ল চারপাশে,
আতঙ্ক ছড়াল ওদের মাঝে ওদের মাতার দুর্দশা দেখে,
দানবীর গা বেয়ে উঠতে লাগল প্রাণীগুলো,
ইচ্ছে ওদের লুকোবে গিয়ে দানবীর মুখ গহবরে,
কিন্তু থামল তারা, চেটে খেতে থাকল মায়ের রক্ত,
ক্ষুদ্র জীবগুলো ওদের মায়ের রক্ত পান করে
তুষ্ট,
খুঁজে বের করল মাতার মূল ক্ষতস্থান,
এই রক্ত ধারা যেন তাদের বেঁচে থাকার জন্য
আশীর্বাদ।
২৬
নাইট রীতিমতো হতবাক হলো এমন জঘন্য দৃশ্য দেখে,
যেখানে মায়ের রক্ত চেটে খাচ্ছে তারই সন্তানেরা,
দেখে মনে হয় ওরা সব ঈশ্বরের অভিশপ্ত আত্মা,
রক্ত দ্বারা তৃষ্ণা নিবারণে তারা রীতিমতো
ব্যগ্র,
বেশি রক্ত পান করে ওদের পেটগুলো শেষে ফেটে হলো
চৌচির,
নাড়িভুঁড়িগুলো শেষে ছিড়েফেড়ে বেরুলো বাইরে,
নাইটের এই সব দেখে আর সময় পার করার সময় নেই,
তার শত্রুপক্ষের সাথেও আর নেই যুদ্ধের প্রয়োজন,
শত্রুদল নিজেরাই একে অপরের ধ্বংসযজ্ঞে মেতেছে।
No comments:
Post a Comment