The Duchess of Malfi - John Webster - Bangla Translation - Act - 2 - Scene -3,4,5 |
Bengali Translation of Previous Part
The Duchess of Malfi - John Webster - Bangla Translation - Act - 2 - Scene -3,4,5
দি ডাচেস অভ মালফি
দ্বিতীয় অঙ্ক - তৃতীয় দৃশ্য - দৃশ্যপটঃ ডাচেসের
প্রাসাদের আদালত কক্ষ
কালো লণ্ঠন হাতে
বসোলার প্রবেশ
বসোলাঃ আমি নিশ্চিত
যে মেয়েলি কণ্ঠের চীৎকার শুনলাম। ঐ, আঃ ঐ শুনুন।
আমার অনুমান সঠিক হয়ে থাকলে ডাচেসের নিবাস থেকেই আওয়াজটি এসেছে। আমাদের অমাত্যদের
নিজ নিজ ওয়ার্ডে আবদ্ধ রাখার পেছনে কোন কৌশলগত কারণ আছে। এ ধরনের কিছু কিছু কৌশল আমারও
শিখতে হবে নইলে আমার তথ্য সংগ্রহের কাজ স্থবির হয়ে যাবে। শব্দটা আবারও শুনুন। হয়তো
এই ডাক - পেঁচা নামের সেই বিষন্ন পাখীর যে নিস্তব্ধতা ও নির্জনতাই সবচেয়ে বেশী পছন্দ
করে। হায়! ঐ অ্যান্টনিও আসছেন।
[অ্যান্টনিওর প্রবেশ]
অ্যান্টনিওঃ আমি
যেন কিসের শব্দ শুনলাম? কে, কে ওখানে? কে তুমি? কথা বল।
বসোলাঃ অ্যান্টনিও, জোর করে নিজের চোখে-মুখে এমন ভয়ের অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তুলবেন
না। আমি বসোলা, আপনার মিত্র।
অ্যান্টনিওঃ বসোলা, তুমি!
[জনান্তিকে - এই ছুঁচোটা আমাকে ডুবাবে-] তুমি কি এই মুহূর্তেও কোন
শব্দ শুনতে পাচ্ছ না?
বসোলাঃ শব্দটা কোথা
থেকে আসছে?
অ্যান্টনিওঃ ডাচেসের
মহল থেকে।
বসোলাঃ আমি তো কিছু
শুনতে পাচ্ছি না, আপনি?
আন্টনিওঃ যদি আমি
স্বপ্ন দেখে না থাকি তবে আমি শুনতে পাচ্ছি।
বসোলাঃ চলুন, আমরা শব্দের উৎসের দিকে অগ্রসর হই।
অ্যান্টনিওঃ না, না, হয়তো ওটা বাতাসের শব্দ।
বসোলাঃ খুব সম্ভবত
তাই। আমার তো মনে হচ্ছে বেশ ঠাণ্ডা পড়েছে। অথচ আপনি ঘামছেন। আপনি উদভ্রান্তের মত তাকাচ্ছেন।
অ্যান্টনিওঃ ডাচেসের
রত্নরাজি উদ্ধারের জন্য আমি গ্রহ নক্ষত্রের অবস্থান গণনা করছি।
বসোলাঃ ও, তাই!
গণনার ফল কি দাঁড়াল? আপনি কি বিষয়টার মূলে যেতে
পেরেছেন?
অ্যান্টনিওঃ এই
ব্যাপারে তোমার এত মাথাব্যথা কেন? বরং এ প্রশ্নই উঠা
উচিত যে যখন সবাইকে ঘরে থাকতে আদেশ দেওয়া হয়েছে সে সময় তুমি কেন নিশাচরের মতো ঘুরে
বেড়াচ্ছ?।
বসোলাঃ আমি আপনাকে
বাস্তব কথাই বলছি। এখন প্রাসাদের সবাই ঘুমিয়ে থাকায় আমি মনে করেছি শয়তানের এখানে
বিশেষ কিছু করার নেই। তাই আমি প্রার্থনা করার জন্য বেরিয়েছি। যদি আমি তা করায় আপনি
বিরক্ত হয়ে থাকেন তাহলে বলতেই হয় যে আপনি একজন যথার্থ সভাসদ।
অ্যান্টনিওঃ (জনান্তিকে)
এই লোকটা আমাকে শেষ করবে। তুমি আজ ডাচেসকে এপ্রিকট খেতে দিয়েছিলে। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা
কর সেগুলো যেন বিষমিশ্রিত না হয়।
বসোলাঃ বিষমিশ্রিত!
এহেন অপবাদের আমি থোড়াই কেয়ার করি।
অ্যান্টনিওঃ বিশ্বাসঘাতকরা
তাদের স্বরূপ আবিষ্কৃত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সবসময়ই আত্মবিশ্বাসী থাকে। রত্ন রাজি
চুরি হয়েছে। আমার বিচারে অন্য যে কারো চেয়ে তোমাকেই বেশী সন্দেহ করা উচিত।
বসোলাঃ আপনি একজন
প্রতারক গৃহ তত্ত্বাবধায়ক।
অ্যান্টনিওঃ বেয়াদব
ক্রীতদাস, আমি তোর মূলোচ্ছেদ করে ছাড়ব।
বসোলাঃ আমার পতন
হয়তো আপনার মসনদকেও ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে ফেলবে।
অ্যান্টনিওঃ জনাব, তুমি আসলেই এক উদ্ধত সর্প। গরম হয়ে উঠতে না উঠতেই তুমি বিষদাত
দেখানো শুরু করেছ। আচ্ছা, তুমি কি এটা ভাল করে নকল করতে পারবে?
বসোলাঃ না জনাব, আপনিই একটা প্রতিলিপি তৈরী করুন, আমি তাতে
আমার স্বাক্ষর করে দেব।
অ্যান্টনিওঃ (জনান্তিকে)
আমার নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে। এমন ধরনের ঘটনা যখন দৈবক্রমেই ঘটে তখন কুসংস্কারাচ্ছন্ন
ব্যক্তি একে কুলক্ষণ বলেই বিবেচনা করবে। এই রুমালে আমার নামের দুটো আদ্যক্ষর উত্তীর্ণ
আছে। অক্ষর দুটো রক্তে রঞ্জিত হয়ে গিয়েছে। এ নিছক দুর্ঘটনা বই আর কি ? এই যে জনাব, আমি তোমার ব্যাপারে আদেশ সংগ্রহ
করব; সকালেই তোমাকে আটক করা হবে।
(জনান্তিকে) এর
মাধ্যমেই ডাচেসের গর্ভাবস্থার ঘটনাকে অন্য রঙ দেওয়া যাবে। এই যে জনাব, তোমাকে এই দরজা অতিক্রম করতে দেওয়া হবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত না
তুমি নিজের নির্দোষিতা প্রমাণ করতে না পাচ্ছ ততক্ষণ ডাচেসের মহলের কাছাকাছি তোমার আসাটা
শোভন নয় বলে আমি মনে করি।
(জনান্তিকে) যখন
ধিক্কার এড়ানোর জন্য প্রতাপশালী ব্যক্তিদের লজ্জাজনক পন্থা অবলম্বন করতে হয়, তখন তাদের সাথে নীচু শ্রেণীর লোকের আর কোন তফাৎ থাকে না।
[প্রস্থান]
বসোলাঃ ধারে কাছেই
কোথাও অ্যান্টনিও একটা কাগজ ফেলে গিয়েছে। এই যে মেকী বন্ধু, এখন তোমার একটু সহায়তা প্রয়োজন। আরে এই তো সেই কাগজ? কি লিখা আছে এতে। এতো দেখি শিশুর ভাগ্যলিপি সম্বলিত কাগজ। (সে পড়তে লাগল)
- “১৫০৪ খ্রীষ্টাব্দে”-অর্থাৎ এই বৎসর-রাত বারোটা থেকে একটার মধ্যে ডাচেস একটি পুত্রসন্তান
প্রসব করেছেন। প্রসবের তারিখ “দশই ডিসেম্বর রাত্রি”-অর্থাৎ আজকের রাত। মালফি নগরীর মধ্যরেখা অনুযায়ী এ বিবরণী প্রণীত-তাহলে
বোঝা গেল ইনি আমাদেরই ডাচেস। সুখকর আবিষ্কারই বটে। “শনিগ্রহ দিগন্ত রেখার উপর উদীয়মান
থাকার এবং সূর্য থেকে পনের ডিগ্রীর মাঝে অবস্থান করার অর্থ এই শিশু দীর্ঘজীবি হবে না।
মঙ্গল সৌরবন্ধনীর অন্যতম মানবিকচিহ্ন ধারী সৌরপথে অবস্থান করায় এবং তা অষ্টম ক্ষেত্রে
ড্রাগনের পুচ্ছের সাথে মিলিত হওয়ায় শিশুর অপঘাত জনিত মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে। অন্য
কিছু গণনা করা হয়নি।”
[বিঃ
দ্রঃ ইসলাম ধর্মে ভাগ্য গণনা সম্পূর্ণরূপে হারাম। যে এই কাজ করবে সে আসলে কুফরি
করল ]
যাক এখন ব্যাপারটা
পরিষ্কার হয়ে গেল। এই নিয়মনিষ্ঠ ব্যক্তিটিই ডাচেসের দুষ্কর্মের সহযোগী। আমি যেমনটি
চেয়েছিলাম তেমনভাবেই সব জানতে পেরেছি। ঐ খবর গোপন রাখতে গিয়েই আমাদের সকল সভাসদকে
কক্ষে অন্তরীণ রাখা হয়েছে। এরপর অবশ্যই তাকে বিষপ্রয়োগে হত্যার চেষ্টার অপবাদে আমায়
অভিযুক্ত করা হবে। ঐ অপবাদ আমি সহ্য করব এবং হেসে উড়িয়ে দিব। আঃ! এখন কেউ যদি সন্তানের
পিতার পরিচয় উদঘাটন করতে পারত। কিন্তু কালক্রমে তা উদঘাটিত হবেই। বুড়ো ক্যাস্ট্রুসিও
আজ সকালে দ্রুত রোম যাত্রা করবেন। তাঁর মারফত আমি এমন একটি পত্র প্রেরণ করব যা পড়ে
ডাচেসের ভাইদের রাগ চড়ে যাবে। এটিই সবচেয়ে উপযোগী পন্থা। জৈবিক কামনা অদ্ভুত সব ছদ্মবেশে
নিজেকে আড়াল করে রাখে। এর মাঝে কুশলতা থাকতে পারে কিন্তু বিচক্ষণতা কখনই থাকে না।
[ প্রস্থান ]
দি ডাচেস অভ মালফি
দ্বিতীয় অঙ্ক
চতুর্থ দৃশ্য।
স্থানঃ রোম। কার্ডিনালের
প্রাসাদের একটি কক্ষ।
কার্ডিনালঃ জুলিয়ার
প্রবেশ
কার্ডিনালঃ বসো, বসো। তুমি হলে আমার পরম কামনার ধন। দোহাই তোমার আমায় বলো, স্বামীকে সঙ্গে না নিয়ে রোমে চলে আসার ব্যাপারে তুমি কি কৌশল উদ্ভাবন করেছিলে?
জুলিয়াঃ প্রভু, আমি তাকে বলেছি যে আমি এক বুড়ো সন্ন্যাসীর আরাধনাকল্পে এখানে এসেছি।
কার্ডিনালঃ তুমি
একজন চতুর প্রতারক অর্থাৎ তুমি তোমার স্বামীর প্রতি বিশ্বস্ত নও।
জুলিয়াঃ আপনি আমার
হৃদয় এমনভাবে জয় করেছেন যা আমি কখনও চিন্তাই করতে পারিনি। আশা করি আপনি কখনও নিষ্ঠাহীনতা
দেখাবেন না।
কার্ডিনালঃ স্বেচ্ছায়
আপন মনের উপর এ ধরনের দুশ্চিন্তার ভার চাপিয়ে নিওনা। তোমার অপরাধবোধ থেকেই এর উৎপত্তি
হচ্ছে।
জুলিয়াঃ প্রভু, কিভাবে তা ঘটছে?
কার্ডিনালঃ তুমি
নিজেই ইন্দ্রিয়বিলাসী ও চপলমতি, তাই তুমি আমার একনিষ্ঠতা
সম্বন্ধে শঙ্কিত হচ্ছ।
জুলিয়াঃ আপনি কি
কখনও আমার মধ্যে ঐ দোষসমূহ লক্ষ্য করেছেন?
কার্ডিনালঃ সত্যি
কথা বলতে কি কোন নারীর চপলমতি ভাব দূর করার চেয়ে চাপ প্রয়োগ করে কাঁচের আকৃতি পরিবর্তন
করাও পুরুষ মানুষের পক্ষে সোজা।
জুলিয়াঃ প্রভু, আপনি কি তাই মনে করেন?
কার্ডিনালঃ একজন
একনিষ্ঠ নারী খুঁজে বের করতে হলে আমাদের চাঁদের দেশের বিস্তীর্ণ এলাকা অবলোকন করতে
হবে। আর সেজন্য ফ্লোরেন্স নিবাসী জ্যোর্তিবিদ গ্যালিলিওর আবিষ্কৃত সেই অদ্ভুত দর্পণটি
ধার নিতে হবে।
জুলিয়াঃ প্রভু, আপনার মনোভাব আপনি চমৎকার ভাবেই ব্যক্ত করেছেন।
[সে কাঁদতে লাগল]
কার্ডিনালঃ কাঁদছ
কেন? অশ্রু বিসর্জন করে তোমার একনিষ্ঠতার সপক্ষে
সাফাই গাইতে চাও। ভদ্রে, তুমি এই একই অশ্রুধারা তোমার স্বামীর
বক্ষদেশে বর্ষণ করবে এবং মুক্তকণ্ঠে ঘোষণা করবে যে তাকে তুমি সারা পৃথিবীর চেয়েও বেশী
ভালবাসো। এখন এসো, আমি তোমাকে বুঝে শুনেই ভালবাসব। অর্থাৎ তুমি
যদি আর কাউকে তোমার প্রেম বিতরণ করতে যাও তবে আমি ঈর্ষান্বিত বোধ করব।
জুলিয়াঃ আমি স্বামীর
বাড়ীতেই ফিরে যাব।
কার্ডিনালঃ ভদ্রে, তুমি আমাকে ধন্যবাদ দিতে পার। আমি তোমাকে তোমার নিরানন্দ আবাস
থেকে বের করে এনেছি। তোমাকে আমার হাতে ধারণ করেছি, দেখিয়েছি
কিভাবে আনন্দ উপভোগ করতে হয় এবং তোমাকে সেই আনন্দের দিকে ছুটে যেতে দিয়েছি। দয়া
করে আমায় চুম্বন কর। স্বামী-সান্নিধ্যে থাকার সময় তোমাকে পোষ মানা হাতির মতো দেখায়;
তবুও আমাকে ধন্যবাদ দেওয়া তোমার উচিত। সে তোমাকে ভাল ভাল খাবার দেয়
এবং কেবল চুম্বন করে কিন্তু তাতে কোন আনন্দ পাও কি? সে হল ঐ শ্রেণীর
লোকের মতো যারা বীণার তারে শুধুই আঙ্গুল চালনা করে কিন্তু সুর তুলতে পারে না। এ জন্যও
আমাকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত।
জুলিয়াঃ যখন আপনি
আমাকে প্রথম প্রেম নিবেদন করেন, তখন বলেছিলেন,
আমার জন্য আপনার অন্তরে এক শোচনীয় ক্ষত রয়েছে এবং আপনার কলিজাও রোগাক্রান্ত
হয়ে পড়েছে। আপনি এমন ভঙ্গীতে কথা বলেছিলেন যে মনে হয়েছিল আপনি চিকিৎসাধীন আছেন।
কার্ডিনালঃ কে ওখানে?
[এক ভৃত্যের প্রবেশ]
তোমার প্রতি আমার
প্রেম সম্বন্ধে নিশ্চিন্ত থাক। এর গতি বিদ্যুতের গতিকেও হার মানায়।
ভৃত্যঃ ম্যাডাম, মালফি থেকে এক ভদ্রলোক অশ্বপৃষ্ঠে এখানে এসেছেন। তিনি আপনার সাথে
দেখা করতে চাইছেন।
কার্ডিনালঃ উনাকে
ভিতরে আসতে দাও। আমি সরে পড়ছি।
[প্রস্থান]
ভৃত্যঃ তিনি বলেন
যে আপনার স্বামী ক্যাস্ট্রুসিও (যিনি বৃদ্ধ) রোমে এসেছেন। দ্রুত ঘোড়া ছুটিয়ে আসায়
তিনি বড়ই ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন।
(নির্গমন)
[ডেলিওর প্রবেশ]
জুলিয়াঃ (জনান্তিকে)
আরে, ইনিতো সিনীও ডেলিও। আমার প্রাক্তন পাণি প্রার্থীদের
অন্যতম।
ডেলিওঃ সাহস সঞ্চয়
করে তোমাকে দেখতে এলাম।
জুলিয়াঃ জনাব, আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি।
ডেলিওঃ তুমি কি
এখানেই ঘুমাও।
জুলিয়াঃ আপনার অভিজ্ঞতা
থেকে নিশ্চয়ই আপনি বুঝবেন যে তা সম্ভব নয়। রোমান ধর্মযাজকদের নিবাসে মহিলাদের থাকার
জায়গা নেই।
ডেলিওঃ খুব ভাল
কথা। তোমার স্বামীর তরফ থেকে তোমার জন্য কোন প্রশংসাবাণী বয়ে আনতে পারিনি কারণ আমি
তার নিকট থেকে কোন বার্তা পাইনি।
জুলিয়াঃ শুনেছি
তিনিও রোমে এসেছেন।
ডেলিওঃ জীবনে কখনও
শুনিনি একজন মানুষ ও পশু বা একজন নাইট এবং তার ঘোড়া পরস্পরের প্রতি এত ত্যক্তবিরক্ত
হতে পারে। যদি তার একটা শক্ত পোক্ত পিঠ থাকত তাহলে উনি হয়তো ঘোড়াটাকে বয়ে আনার দায়িত্ব
গ্রহণ করতেন। তাঁর পাজামার অবস্থা বড়ই শোচনীয়।
জুলিয়াঃ যে ঘটনা
আপনার হাসির খোরাক তা আমার মনে করুণা জাগাচ্ছে।
ডেলিওঃ ভদ্রে, আমি জানিনা তোমার অর্থের প্রয়োজন আছে কি না তবুও আমি তোমার জন্য
কিছু টাকা এনেছি।
জুলিয়াঃ টাকাটা
কি আমার স্বামীর নিকট থেকে এনেছেন?
ডেলিওঃ না, এ আমার স্বোপার্জিত অর্থের অংশ।
জুলিয়াঃ টাকাটা
নিয়ে দায়বদ্ধ হবার পূর্বে আমাকে অবশ্যই আপনার শর্তটা শুনতে হবে।
ডেলিওঃ এগুলোর দিকে
তাকাও। এগুলো স্বর্ণ, এদের রঙটা চমৎকার নয় কি?
জুলিয়াঃ আমার কাছে
এর চেয়ে সুন্দর বর্ণের পাখী আছে।
ডেলিওঃ মুদ্রার
শব্দটা শুনে দেখ।
জুলিয়াঃ ঐ শব্দের
চেয়ে বীণার ঝংকার অনেক মধুর। স্বর্ণ ক্যাসিয়া বা সিভেটের ন্যায় সুগন্ধী নয়। এর
কোন নিরাময় গুণ নেই। অবশ্য কিছু কিছু চিকিৎসক বোকার মতো আমাদের বোঝান যে মাংসের ঝোলে
স্বর্ণ সিদ্ধ করলে ভাল ফল পাওয়া যায়। আমি বলতে চাই স্বর্ণ এমন জিনিস যা উদ্ভূত হয়েছে----
[ভৃত্যের পুনঃ প্রবেশ]
ভৃত্যঃ আপনার স্বামী
এসেছেন। তিনি ডিউক অব ক্যালাব্রিয়ার নিকট একটি পত্র হস্তান্তর করেছেন। আমার মনে হল, চিঠিটি পড়ে ডিউক মহোদয় হিতাহিত জ্ঞান হারিয়েছেন।
[নির্গমন]
জুলিয়াঃ জনাব, ওর কথা শুনলেন তো? দোহাই আপনার, যথাসম্ভব সংক্ষেপে আমায় জানান, আপনি কি কাজে এসেছেন
এবং কি আপনার আবদার।
ডেলিওঃ আমি তা অতি
সত্বর বলছি। আমার ইচ্ছা, যখন তুমি স্বামী গৃহে অবস্থান
করবে না তখন তুমি আমার রক্ষিতা হয়ে থাকবে।
জুলিয়াঃ দেখুন, জনাব, আমি আমার স্বামীর কাছে যাব এবং তার
মত জানতে চাইব এবং তারপর সরাসরি আপনার প্রশ্নের জবাব দিব।
[প্রস্থান]
ডেলিওঃ চমৎকার!
নিজ সত্যনিষ্ঠার কারণে না প্রজ্ঞার কারণে ও এই ধরনের কথা বলল? আমি একজনকে বলতে শুনলাম যে মালফি থেকে একটা চিঠি পেয়ে ডিউক মহোদয়
অত্যন্ত বিচলিত হয়েছেন। আমার ভয় হচ্ছে অ্যান্টনিওর সাথে কেউ প্রতারণামূলক আচরণ করেছে।
তার উচ্চাশার এখন কি ভয়াবহ পরিণতি হবে? তার সৌভাগ্য দুর্ভাগ্যে
রূপ নিয়েছে। যে সব ব্যক্তি পদক্ষেপ গ্রহণ করার আগেই ঘটনার গুরুত্ব আঁচ করতে পারে,
তারা জীবনের ঘূর্ণিস্রোত পাড়ি দিতে পারে এবং দুঃখ দুর্বিপাক এড়াতে
পারে।
[প্রস্থান]
দি ডাচেস অভ মালফি
দ্বিতীয় অঙ্ক
পঞ্চম দৃশ্য
কার্ডিনালের প্রাসাদের
অপর একটি কক্ষ
একটি চিঠিসহ কার্ডিনাল
এবং ফার্ডিনান্ডের প্রবেশ
ফার্ডিনান্ডঃ আজ
রাতে আমি মাটি খুঁড়ে একটা ম্যানড্রেক১ বৃক্ষ বের করেছি।
কার্ডিনালঃ এ তুমি
কি বলছ?
ফার্ডিনালঃ এবং
গাছটি দেখে আমি পাগল হয়ে গিয়েছি।
কার্ডিনালঃ এই বিস্ময়কর
ঘটনাটি কি?
ফার্ডিনান্ডঃ এই
চিঠিটা পড়ে দেখ-আমাদের বোন জাহান্নামে গিয়েছে; সে অসংযমী হয়ে উঠেছে; সে এক কুখ্যাত বেশ্যায় পরিণত
হয়েছে।
কার্ডিনালঃ আস্তে
কথা বল।
ফার্ডিনালঃ আস্তে
বলব! দুবৃত্তরা এখন আর এ খবর নিয়ে ফিসফাস করছে না তারা চাইছে এটা জোরে সোরে প্রচার
করতে যেমন করে চাকররা তাদের প্রভুর বদান্যতার কথা জাহির করে। কারা তাদের কথা শুনছে
লোভাতুর ও সন্ধানী দৃষ্টিতে তা তারা লক্ষ্য করছে। উঃ বিভ্রান্তি তাকে গ্রাস করুক। নিজের
উদ্দেশ্য চরিতার্থের জন্য সে অতি চতুর কতগুলো বদমাশকে রেখেছে। ছাউনিতে বসবাসরত সৈনিকদের
চেয়েও নিরাপদ ব্যবস্থার মাধ্যমে সে তার জৈবিক কামনা মিটাচ্ছে।
কার্ডিনালঃ এও কি
সম্ভব? এই খবর কি সত্য হতে পারে?
ফার্ডিনান্ডঃ রুবার্ব২
আমার এই ক্রোধ মোক্ষণের জন্য রুবার্ব প্রয়োজন। এই পত্রে উল্লিখিত অভিশপ্ত দিনটির কথা
আমার স্মৃতিকে সবসময় পীড়া দিবে। যতক্ষণ পর্যন্ত না তার হৃদয় নিংড়ানো রক্ত দিয়ে
তা মুছে ফেলতে না পারি ততক্ষণ এটা আমার অন্তরেই আটকে থাকবে।
কার্ডিনালঃ কেন
তোমার মেজাজকে এহেন ঝঞঝাবিক্ষুব্ধ করে তুলছ?
ফার্ডিনান্ডঃ আমার
যদি তেমন শক্তি থাকত তাহলে আমি তার কানের ধারে কাছেই তার প্রাসাদটি উপরের দিকে নিক্ষেপ
করতাম, তার বিশাল উদ্যানগুলোর বৃক্ষরাজি উপড়ে ফেলতাম, তৃণভূমিগুলো নিঃশেষ করে দিতাম এবং যেভাবে সে নিজের ইজ্জত বিনষ্ট করেছে। সেভাবেই
তার সমগ্র ভূখণ্ডকে বিধ্বস্ত করে দিতাম।
কার্ডিনালঃ আমাদের
ধমনীতে ক্যাস্টিলঃ অ্যারাগন রাজবংশের রক্ত প্রবাহমান। এই রক্ত কি এভাবে কলুষিত হয়ে
যাবে?
ফার্ডিনান্ডঃ অতএব
কোন বিপজ্জনক ঔষধ প্রয়োগ কর। এখন অবশ্যই রোগ নিরাময়কারী ঔষধ নয় বরং আগুন ব্যবহার
করা দরকার অথবা তীব্র ব্যথাদানকারী কাপিং গ্লাস৩ ব্যবহার করতে হবে কারণ
এটিই তার দেহের রক্তের মত দূষিত রক্ত বের করে দেওয়ার উপায়। আমার চোখ থেকে এক ধরনের
করুণাধারা বর্ষিত হচ্ছে কিন্তু আমি তা আমার রুমালে বিসর্জন দিব। এই মুহূর্তে অশ্রুধারা
রুমালেই ঠাই পেয়েছে। এটা আমি তার জারজ সন্তানকে উইলের মারফত দিয়ে যাব।
কার্ডিনালঃ তা দিয়ে
সে করবেটা কি?
ফার্ডিনান্ডঃ যখন
আমি তার মাকে কেটে টুকরো টুকরো করব তখন সে ওটা তার ক্ষতস্থান আবৃত করার নরম কাপড় হিসাবে
ব্যবহার করতে পারবে।
কার্ডিনালঃ সে
(ডাচেস) এক অভিশপ্ত জীব। প্রকৃতি এযাবতকাল মহিলাদের হৃদয় বাম দিকে স্থাপন করে একটা
অবিচার করেছে।
ফার্ডিনান্ডঃ যে
সব লোক ভাবে মহিলাদের জিম্মায় তার ইজ্জত নিরাপদ থাকবে তারা বোকা। মহিলারা হল বুলরাশের৪
তৈরী নৌকার মতো হাল্কা যা প্রতি মুহূর্তেই ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
কার্ডিনালঃ অতএব
অজ্ঞ ব্যক্তিরা সম্মান ক্রয় করতে পারলেও তা ধরে রাখতে পারে না।
ফার্ডিনান্ডঃ মনে
হচ্ছে যেন তাকে হায়নার ভঙ্গীতে হাসতে দেখছি। তাড়াতাড়ি আমার সাথে কোন একটা বিষয়ে
কথা বল নতুবা কল্পনার পাখা আমাকে তার লজ্জাজনক পাপাচার দেখার জন্য নিয়ে যাবে।
কার্ডিনালঃ এই পাপাচারের
সঙ্গী কে?
ফার্ডিনান্ডঃ সম্ভবত
ও সুদৃঢ় ঊরুবিশিষ্ট কোন মাল্লা অথবা বৃক্ষবাগানে কর্মরত কোন ভৃত্য যে হাতুড়ি বা প্রস্তরখণ্ড
নিক্ষেপ করে কিংবা কোন সুদর্শন ভূস্বামী যে তার গোপন কক্ষে কয়লা দিয়ে আসে।
কার্ডিনালঃ এইভাবে
রাগ দেখিয়ে কোন লাভ নেই। ডাইনীরা যেমন ঘূর্ণিবায়ুর সাহায্যে মানুষকে উড়িয়ে নিয়ে
যায় ক্রোধও তোমাকে সেভাবেই পরিচালিত করছে। তোমার এই অপরিমিত চেঁচামেচির সাথে বধির
ব্যক্তিদের তীক্ষ্ণস্বরে কথোপকথনের ভঙ্গীর যথার্থ তুলনা করা যায়। বধির ব্যক্তিরা জোরে জোরে
কথা বলে কারণ তারা ভেবে নেয় যে অন্যান্য সবাই তাদের মত বধিরতায় আক্রান্ত।
ফার্ডিনান্ডঃ তুমি
কি আমার মত ক্রোধান্বিত হচ্ছ না?
কার্ডিনালঃ হ্যাঁ, কিন্তু আমি রাগলেও এমন আবেগ প্রবণ হব না। অপরিমিত ক্রোধ এমন একটা
বস্তু যা মানুষকে অতি কদাকার জানোয়ারের পর্যায়ে নিয়ে যায়। তাই নিজেকে তিরস্কার
কর। তুমি অনেক ধরনের লোক দেখতে পাবে যারা কখনোই উত্তেজিত না হয়ে অথবা অশান্ত না হয়ে,
বিশ্রাম লাভের তীব্র প্রয়োজন ব্যক্ত করেনি। এসো, নিজেকে সংযত কর।।
ফার্ডিনান্ডঃ অতএব
আমি কেবল আমার স্বরূপ গোপন রাখতে চেষ্টা করব। নিজেকে কিংবা তোমাকে হত্যার মাধ্যমে আমি
এখন তাকে হত্যা করতে পারতাম; কারণ আমি মনে করি আমাদের
কৃত কোন পাপের জন্যই তাকে ব্যাভিচারী বানিয়ে ঈশ্বর আমাদের শাস্তি দিচ্ছেন।
কার্ডিনালঃ তুমি
কি বদ্ধ উন্মাদ হয়ে গেলে?
ফার্ডিনান্ডঃ যদি
তাদের দেহ দুটো কয়লা খনির মধ্যে পুড়িয়ে বাতাস বের হবার পথ বন্ধ করে দিতে পারতাম
যাতে ঐ অভিশপ্ত ধোঁয়া আকাশ পানে উঠতে না পারত! অথবা যে সব চাদরের উপর তারা শোয় সেগুলোকে
পিচ বা গন্ধকের মাঝে চুবিয়ে এনে ওদের শরীর দুটো মুড়িয়ে তাতে দেশলাই কাঠির মতো আগুন
ধরাতে পারতাম!
কার্ডিনালঃ তুমি
থাক; আমি চললাম।
ফার্ডিনান্ডঃ যেও
না। আমার বক্তব্য শেষ হয়েছে। আমি নিশ্চিত যে নরকে পচে মরার সময় যদি এহেন সংবাদ শুনতাম
তবুও আমার শরীর বেয়ে ঠাণ্ডা ঘাম ঝরে পড়ত। চল, ভিতরে
যাই। যতক্ষণ আমি জানতে পারব না কে আমার বোনের সাথে মিলিত হয় ততক্ষণ আমার এ চিন্তা
সুপ্ত থাকবে এবং আমি নিষ্ক্রিয় থাকব। তবে তথ্যটি জানার পর আমি বিছা খুঁজে খুঁজে আমার
চাবুকের রশি তৈরী করব এবং তার জীবনসূর্য অস্তমিত করে দিব।
(নির্গমন)
নাটকের উপরের অংশের টিকাসমূহ
দ্বিতীয় অঙ্ক ও তৃতীয় দৃশ্য
১. ড্রাগন একটি নক্ষত্রপুঞ্জের নাম
যা ড্রাকো নামেই অধিক পরিচিত। তবে এই ক্ষেত্রে ড্রাগনের পুচ্ছ বলতে সেই বিন্দু
দুটোর একটিকে বুঝানো হয়েছে যেখানে চন্দ্রের কক্ষপথ পৃথিবীর কক্ষপথকে ছেদ করে। অপর
বিন্দুটিকে ‘ড্রাগনের মস্তক’ বলা
হয়ে থাকে।
দ্বিতীয় অঙ্কঃ চতুর্থ দৃশ্য
১. গ্যালিলিও ও বিখ্যাত ইতালীয়ান
জ্যোতির্বিজ্ঞানী । তিনি ১৫৬৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ১৬৪২ সালে তাঁর মৃত্যু হয়।
তিনি দূরবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কার করেন এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অনেক নতুন
তত্ত্বের প্রবর্তন করেন। কার্ডিনাল এখানে দূরবীক্ষণ যন্ত্রকেই “অদ্ভুত দর্পণ” অভিধায়
আখ্যায়িত করেছেন।
দ্বিতীয় অঙ্কঃ পঞ্চম দৃশ্য
১. ম্যানড্রেকঃ এক ধরনের বিষাক্ত
গাছি যার অপর নাম ম্যানড্রাগোরা। এই গাছ সম্বন্ধে নানা গাল-গল্প চালু ছিল। অনেকে
বিশ্বাস করত যে ফাঁসিকাষ্ঠ অথবা বধ্যভূমির নীচে এই গাছ জন্মায় এবং যে সব অপরাধীকে
হত্যা করা হয় তাদের রক্তে এই গাছ স্নাত হয়। কথিত আছে যে ম্যানড্রেক গাছকে
শিকড়সহ উৎপাটন করলে গাছটি চীৎকার দিয়ে উঠে। যে ব্যক্তি ঐ চীৎকার শুনতে পায় সে
নাকি পাগল হয়ে যায়।
২. রুবার্বঃ রুবার্ব নামক ভেষজ থেকে
তৈরী এক প্রকার রেচক ওষুধ।
৩। কাপিং গ্লাসঃ এক প্রকার কাচের
কাপ। এই কাপের সাহায্যে বিশেষ পদ্ধতিতে দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্ত বের করে
নেওয়া হতো।
৪. বুলরাশ ও এক প্রকার জলজ বৃক্ষ। এই
বৃক্ষের কাঠ নৌকা তৈরীর উপযোগী নয়।।
No comments:
Post a Comment