The Duchess of Malfi - John Webster - Bangla Translation - 1st act Second part |
প্রথম অংশের পর থেকে শুরু
দি ডাচেস অভ মালফি - The Duchess of Malfi - Bangla Translation 1st Act - Second part
[বসোলার পুনঃ প্রবেশ]
বসোলাঃ প্রলুব্ধ
হয়ে আপনার কাছে এলাম।
ফার্ডিনান্ডঃ আমার
ভাই কার্ডিনাল তোমাকে কখনই সহ্য করতে পারে না।
বসোলাঃ যখন থেকে
তিনি আমার কাছে কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ তখন থেকেই তিনি আর আমাকে দেখতে পারেন না।
ফার্ডিনান্ডঃ হয়তো
তোমার মুখে কোন কুটিলতার ছাপ আছে যে জন্য সে তোমাকে সন্দেহ করে।
বসোলাঃ উনি আমাকে
অন্যায়ভাবে সন্দেহ করেন।
ফার্ডিনান্ডঃ উচ্চপদাধিকারী
ব্যক্তিরা যাতে তোমাকে ভালভাবে পরখ করতে পারেন সে জন্য তাঁদের পর্যাপ্ত সময় দেওয়া
উচিত। অপরকে অবিশ্বাস করার প্রবণতা থাকায় আমরা কদাচিৎ প্রতারিত হই। তুমি কি দেখনি সীডার বৃক্ষগুলোকে
ঘন ঘন নাড়া দিলে তাদের শিকড় মাটিতে আরো দৃঢ়ভাবে প্রোথিত হয়?
বসোলাঃ তবু, সাবধান হন; কারণ আপনি যদি বন্ধুকে অযাচিত
ভাবে সন্দেহ করেন তবে সেও আপনাকে সন্দেহ করতে শিখবে এবং আপনাকে প্রতারণা করতে প্ররোচিত
হবে।
ফার্ডিনান্ডঃ এখানে
তোমার জন্য কিছু স্বর্ণমুদ্রা রয়েছে।
বসোলাঃ বটে, এর পরে কি ঘটতে যাচ্ছে? এহেন বর্ষণের শেষে
বজ্রপাত না হয়েই পারে না। বলুন, কার গলা
কাটতে হবে?
ফার্ডিনান্ডঃ আমি
তোমাকে সে ধরনের কোন কাজে নিয়োগের অবকাশ পাওয়ার আগেই দেখি রক্তপাতের নেশা তোমার মাঝে
মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এখানের দরবারে তোমায় অবস্থান করতে হবে এবং ডাচেসের দিকে
নজর রাখতে হবে। তুমি তার সকল আচরণ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখবে। লক্ষ্য করবে কোন কোন ব্যক্তি
তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় এবং কাকেই বা সে বেশী পছন্দ করে। এই কাজের জন্য ঐ স্বর্ণমুদ্রা
তোমায় দিলাম। সে অল্প বয়সে বিধবা হয়েছে। আমি চাই না তার পুনরায়
বিয়ে হোক।
বসোলাঃ কেন, জনাব?
ফার্ডিনান্ডঃ এটুকু
জেনেই সন্তুষ্ট থাক যে আমি তা চাই না। কারণটা জিজ্ঞাসা করো না।
বসোলাঃ মনে হচ্ছে
আপনি আমাকে আপনার সহযোগী এক অশুভ আত্মা বানাতে চলেছেন।
ফার্ডিনান্ডঃ অশুভ
আত্মা বলতে তুমি কি বুঝাতে চাচ্ছ?
বসোলাঃ কেন, রক্ত মাংসে গড়া এক অতি খেয়ালি অদৃশ্য শয়তান অর্থাৎ একজন গুপ্তচর।
ফার্ডিনান্ডঃ হ্যা, আমি চাই তুমি ঐ ধরনের কাজেই সাফল্য লাভ কর। এর দ্বারা হয়তো তুমি অচিরেই
উচ্চতর পদে আসীন হতে পারবে।
বসোলাঃ নরকে অর্থকেই
ফেরেশতা বলা হয়ে থাকে। আপনি ঐ অশুভ উপহার ফিরিয়ে নিন। এই ঘৃণ্য উপহার আমাকে নির্লজ্জ
বিশ্বাসঘাতকে পরিণত করবে এবং আপনাকে করে তুলবে অপরকে দুর্নীতিপরায়ণ বানানোর কারিগর। আমি যদি এই স্বর্ণমুদ্রাগুলো
গ্রহণ করি, এগুলো আমাকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে।
ফার্ডিনান্ডঃ জনাব, শোন তোমাকে যা দিলাম তার কিছুই আমি আর ফেরত নিব না। আজ সকালে আমি তোমার জন্য
অশ্বশালার তত্ত্বাবধায়কের একটা চাকুরী যোগাড় করেছি। তুমি কি এ সম্বন্ধে কিছু
শুনেছ?
বসোলাঃ না।
ফার্ডিনান্ডঃ তুমি
এখন উক্ত পদের অধিকারী হলে। এজন্য আমাকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত নয় কি?
বসোলাঃ আমি মনে
করি আপনার এখন নিজেকে অভিশাপ দেওয়া উচিত। কারণ আপনার দানশীলতা (যা মানুষকে সত্যিকার মহৎ করে তোলে) আমাকে দুর্জনে পরিণত
করবে। আপনি আমার জন্য একটি ভাল কাজ করেছেন। ফলে অকৃতজ্ঞ হিসাবে আখ্যায়িত
না হওয়ার জন্য আমাকে অবশ্যই মানুষের পক্ষে যত ধরনের কুকর্ম উদ্ভাবন সম্ভব তার সবগুলোই
করতে হবে। এইভাবেই শয়তান সর্বপ্রকার পাপের উপর একটা সুমিষ্ট আস্তরণ
দিয়ে দেয়। মহান ঈশ্বর যে কাজকে বীভৎস মনে করেন শয়তানের দৃষ্টিতে
সেটাই প্রশংসনীয় দায়িত্ব।
ফার্ডিনান্ডঃ তুমি
স্বাভাবিক আচরণই করো; বিষন্নতার ছদ্মাবরণে নিজেকে
আগের মতই আবৃত রেখো। এতে প্রতীয়মান হবে যে তুমি উচ্চপদস্থদের প্রতি ঈর্ষাকাতর। তথাপি তুমি তাদের নাগাল
পাবার চেষ্টা করো না। এ পন্থা অবলম্বন করলে তুমি তাদের ব্যক্তিগত কক্ষে প্রবেশাধিকার
পাবে। সেখানে তুমি চতুর ডোমাউসের মতো...............
বসোলাঃ বুঝেছি আমাকে
সেই ব্যক্তিদের মতো আচরণ করতে হবে যাদেরকে আমি প্রতিপালকের অন্ন ধ্বংস করতে দেখেছি। দেখলে মনে হয় তারা অর্ধনিদ্রিত
এবং কোন কথাবার্তাই শুনছে না। অথচ এই দুবৃত্তগুলো তাদের প্রভুকে জবাই করার স্বপ্ন দেখে। আমার পদমর্যাদা কি? অশ্বশালার তত্ত্বাবধায়ক? তাহলে আপনি বলছেন
অশ্বের মলের মধ্যে থেকেই আমার দুর্নীতির সূচনা হোক। আমি এখন আপনারই গোলাম।
ফার্ডিনান্ডঃ আপাতত, চলে যাও।
বসোলাঃ সুজনরা তাদের
ভাল কাজের জন্য সুখ্যাতির প্রত্যাশা করুক। কারণ প্রায়ই লজ্জাজনক কাজ করানোর জন্য ধন সম্পদ ও উচ্চপদ
প্রদান করা হয়। মাঝে মাঝে শয়তানও হিতোপদেশ দিয়ে থাকে।
[প্রস্থান]
[ডাচেস, কার্ডিনালঃ
ক্যারিওলার পুনঃ প্রবেশ]
কার্ডিনালঃ আমাদের
এখন বিদায় নিতে হবে, এখন থেকে নিজস্ব বিচার বিবেচনা
অনুযায়ীই তোমার পথ চলতে হবে।
ফার্ডিনান্ডঃ তুমি
বিধবা। ইতোমধ্যেই তুমি পুরুষচরিত্র সম্বন্ধে জেনেছ। আর তাই কারো যৌবনের ছটায়, পদমর্যাদার দ্যুতিতে ও বাককুশলতায় তুমি ভুলো না।
কার্ডিনালঃ শুধু
তাই নয় সুনাম অর্জনের চিন্তা ব্যতীত অন্য কিছু যেন তোমার নীল রক্তকে তাড়িত করতে না
পারে।
ফার্ডিনান্ডঃ বিয়ের
কথা ভাবছ? যারা বেশী কামুক কেবল তারাই দ্বিতীয় বার বিবাহ
করে।
কার্ডিনান্ডঃ ঐ
ধরনের ব্যক্তিদের কলিজা ল্যাবানের ভেড়াগুলোর১৩ দেহের তুলনায় অধিকতর দাগযুক্ত।
ডাচেসঃ আমার কথাটা
শুনবেন তো? আমি আর কখনই বিয়ে করব না।
কার্ডিনালঃ অধিকাংশ
বিধবাই এ কথা বলে থাকে। তবে, এহেন মনোভাব
সাধারণত এক ঘণ্টার অধিক স্থায়ী হয় না। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অভিভাষণ
সমাপ্তির সাথে সাথে সিদ্ধান্তের পরিবর্তন হয়।
ফার্ডিনান্ডঃ এবারে
আমার কথা শোন। যে রাজপ্রাসাদে তুমি বাস করছ সেটা একটা আগাছায় পরিপূর্ণ
চারণক্ষেত্রের মতো। এখানের বৃক্ষরাজি থেকে এক ধরনের সুমিষ্ট রস নিঃসৃত হয়
যা অতি মারাত্মক এবং তা তোমার সুখ্যাতি নষ্ট করতে পারে। সেদিকে লক্ষ্য রেখো। কোন চালাকি করবে না। যাদের মুখ দেখে অন্তর সম্বন্ধে
সঠিক ধারণা পাওয়া যায় না তারা কুড়ি পেরোনোর আগেই ডাইনীতে পরিণত হয়। উপরন্তু তারা শয়তানকে
স্তন্যদান করে।
ডাচেসঃ আপনার উপদেশটি
চমৎকার কিন্তু ভয়ঙ্কর।
ফার্ডিনান্ডঃ ভণ্ডামি
নামক দোষটি অতি সূক্ষ্ম সুতায় তৈরী, ভালকানের১৪
বোনা জালের চেয়েও সূক্ষ্ণ। তথাপি বলি, তোমার
অতি গোপনীয় কার্যকলাপ, অধিকন্তু তোমার ব্যক্তিগত চিন্তাভাবনা
এক সময় প্রকাশ হয়ে পড়বেই। কথাটা অবিশ্বাস করো না।
কার্ডিনালঃ তুমি
হয়তো আত্মতুষ্টিতে ভুগতে পার এবং আপন পছন্দের মানুষকে রাতের আঁধারে বিয়ে করতে পার—
ফার্ডিনান্ডঃ হয়তো
ভাবতে পার তুমি যা করেছ সেটাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা যেমন কিছু অদ্ভুত ধরনের কাঁকড়া পিছন
দিকে চলতে থাকলেও ভেবে নেয় যেহেতু সে স্বপথে চলছে, সেটাই তার জন্য সঠিক পন্থা। কিন্তু মনে রেখ, ঐ ধরনের
বিয়ে নন্দিত নয় বরং নিন্দিত কাজ।
কার্ডিনালঃ বিবাহরজনী
যাপন অর্থ এক ধরনের বন্দীশালায় প্রবেশ।
ফার্ডিনান্ডঃ এবং
ঐ ধরনের বিয়ে থেকে যে আনন্দ পাওয়া যায় তা লালসায় পরিপূর্ণ। ঐ আনন্দ অপরিমিত ঘুমের
মতন যা মানুষের পতনের পূর্বলক্ষণ।
কার্ডিনালঃ বিদায়। মনে রেখ জ্ঞানচক্ষুর উদয়
হয় একেবারে শেষ মুহূর্তে।
ডাচেসঃ মনে হচ্ছে, পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে পূর্বেই
আপনারা এই কথামালা তৈরী করেছেন। এই জন্যই এ বক্তব্য এত জড়তামুক্ত মনে হচ্ছে ।
ফার্ডিনান্ডঃ শোন, তুমি আমারই বোন। বাবার এই ছোরাখানি দেখতে পাচ্ছ কি? যেহেতু এটা বাবার ছোরা, আমি দেখতে চাই না
যে এটায় মরিচা পড়েছে। আমি চাই তুমি এসব ব্যয়বহুল আনুষ্ঠানিকতা এড়িয়ে চলবে। মুখাবরণ ও মুখোশ পরে যে
অনুষ্ঠান হয় সেগুলো অপপ্রচারের আখড়া। এগুলো দ্বারা কখনই কোন মহৎ উদ্দেশ্য সাধিত হতে পারে না। বিদায়! একজন ফিটফাট বদমাশ সাজানো গল্প বলে কোন মহিলাকে যে কোন কিছুই বিশ্বাস
করাতে পারে। চলি, স্বাস্থ্যবতী
বিধবা।
[প্রস্থান]
ডাচেসঃ এসব কথায়
আমার মন টলবে না। রাজবংশজাত আমার যে আত্মীয়রা আছে তারা সবাই যদি আমার
বিবাহের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তবুও আমি তাদের পদানত করবই। মহাযুদ্ধের ময়দানে মানুষ
যেমন বিপদের আঁচ করেও প্রায় অসাধ্য সাধন করে ফেলে (শুনেছি সৈন্যরা এই কথাই বলে), তেমনি এহেন বিপদসঙ্কুল
মুহূর্তে যাবতীয় ভয়-ভীতি ও হুমকির মুখেও আমি আমার এই বিপজ্জনক
কাজ থেকে পিছিয়ে আসব না। বৃদ্ধ মহিলারা বললে বলুকগে যে আমি দোষ-ত্রুটির কথা আমলে এনেই একজনকে স্বামী হিসেবে বেছে নিয়েছি। শোন ক্যারিওলা তোমার বিশ্বস্ততা
সুবিদিত হওয়াতেই তোমার কাছে আমার গোপন কথা গচ্ছিত রাখছি। এর উপরই নির্ভরশীল আমার
ইজ্জত যা আমার প্রাণের চেয়েও দামী।
ক্যারিওলাঃ আপনার
গোপন কথা ও ইজ্জত উভয়টিই সুরক্ষিত থাকবে। বিষবিক্রেতারা যেমন করে বিষ তাদের সন্তানের নাগালের বাইরে
রাখে ঠিক তেমন সতর্ক ভাবেই আমিও সব কিছু পৃথিবীর সবার কাছে গোপন রাখব।
ডাচেসঃ তোমার এই
দৃঢ়ভাষণ অকপট ও আন্তরিক। আমি তা বিশ্বাস করলাম। আচ্ছা, অ্যান্টনিও এসেছে কি?
ক্যারিওলাঃ তিনি
আপনার অপেক্ষায় আছেন।
ডাচেসঃ সুপ্রিয়
সহচরী, এখান থেকে সরে গিয়ে পর্দার পিছনে লুকাও। তাহলে হয়তো আড়ি পেতে
আমাদের কথাবার্তা শুনতে পাবে। আমি এক ঊষর জনহীন প্রান্তরে যাত্রা শুরু করেছি। সেই প্রান্তরে দিশারী হিসাবে
আমি বন্ধুসুলভ পরামর্শ অথবা পথের নির্দেশনা কিছুই পাব না। তাই ঈশ্বরের নিকট আমার
জন্য দোয়া করো।।
[ ক্যারিওলা পর্দার পিছনে চলে গেল ]
[অ্যান্টনিওর প্রবেশ]
আমি তোমাকে ডেকে
পাঠিয়েছিলাম। বসো, কালি-কলম নিয়ে লিখা শুরু করো। তুমি কি প্রস্তুত?
অ্যান্টনিওঃ হ্যা।
ডাচেসঃ আমি যেন
কি বললাম?
অ্যান্টনিওঃ আমাকে
বললেন যে কিছু একটা লিখতে হবে।।
ডাচেসঃ ও, মনে পড়েছে; বিজয়োৎসব উপলক্ষ্যে এই বিপুল
অর্থব্যয়ের পর ভবিষ্যতে খরচের জন্য কি রইল তা মিতব্যয়ী গৃহস্বামীর মত অনুসন্ধান করাটাই
যুক্তিযুক্ত।
অ্যান্টনিওঃ আপনার
যা অভিরুচি তাই করব মহামান্য সুন্দরী।
ডাচেসঃ আমি সুন্দরী! সত্য সত্যই আমি তোমায় ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তোমারই কারণে আমায় সতেজ
দেখায়। আমার দুশ্চিন্তার ভার তো তুমি আপন কাঁধে তুলে নিয়েছ।
অ্যান্টনিওঃ আমি
রাজস্ব আয় ও ব্যয় সংক্রান্ত খুঁটিনাটি তথ্য আপনার সমীপে নিয়ে আসব।
ডাচেসঃ হ্যা, দেখতে পাচ্ছি তুমি একজন সৎ কোষাধ্যক্ষ। কিন্তু তুমি আমার কথার
সঠিক অর্থ বুঝতে পারনি। ভবিষ্যতে আমার জন্য কি রয়ে গেল বলতে আমি বুঝিয়েছি সেখানে
আমার ভাগ্যে কি ঘটবে।
অ্যান্টনিওঃ কোথায়?
ডাচেসঃ পরলোকে। আমি আমার উইল প্রস্তুত
করতে চলেছি (রাজন্যদের স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ার
আগেই তা প্রণয়ন করা যুক্তিযুক্ত)। যন্ত্রণায় তীব্র আর্তনাদ করতে করতে ও বিবর্ণ দৃষ্টিতে
চাইতে চাইতে উইল করলে মনে হয় যেন ফেলে যাওয়া সম্পত্তির শোকেই আমরা ঐ মরণ যন্ত্রণায়
আক্রান্ত হয়েছি। এর চেয়ে হাসি-খুশী মন
নিয়ে উইল করাটাই ভাল নয় কি? দয়া করে, এ প্রশ্নের জবাব দিবে কি?
অ্যান্টনিওঃ হ্যা, অনেক ভাল।
ডাচেসঃ আজ যদি আমার
স্বামী থাকতেন, তবে এই চিন্তা দূর হয়ে যেত। কিন্তু আমি ঠিক করেছি তোমাকেই
তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব দেওয়া হবে। বলতো, সর্বপ্রথমে
কোন ভাল কাজটির কথা আমাদের স্মরণ করা উচিত।
অ্যান্টনিওঃ মানুষ
সৃষ্টি হওয়ার পর এই দুনিয়ায় প্রথম যে শুভ কাজটি সম্পন্ন হয়েছিল তা হলো বিবাহোৎসব। অতএব, সে কথা ভেবেই কাজ শুরু করা যাক। আমার ইচ্ছা, আপনি আগে স্বামী হিসাবে উপযুক্ত কাউকে নির্বাচিত করুন। তারপর তাকেই সবকিছু দান
করুন।
ডাচেসঃ বল কি? সব কিছু!
অ্যান্টনিওঃ হা, নিজেকে সহ।
ডাচেসঃ আমার দেহ
কাফনের কাপড়ে মোড়াবার পর?
অ্যান্টনিওঃ না, বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে।
ডাচেসঃ সেইন্ট উইনফ্রেডের
কসম, এটা হবে এক আশ্চর্য উইল।
অ্যান্টনিওঃ আপনার
যদি পুর্নবিবাহের কোন ইচ্ছা না থাকে তাহলে সেটা হবে অধিকতর বিস্ময়কর ব্যাপার।
ডাচেসঃ বিবাহবন্ধন
সম্বন্ধে তোমার ধারণাটা কি?
অ্যান্টনিওঃ অনেকে
শোধনাগারের১৫ অস্তিত্বে বিশ্বাসী নয়। তাদের মতো আমারও ধারণা
বিবাহ হয় স্বর্গসুখ নয় নরকযন্ত্রণা। তৃতীয় কোনভাবে একে ব্যাখ্যা করা যাবে না ।
ডাচেসঃ তুমি কিভাবে
এ ধারণায় উপনীত হলে?
অ্যান্টনিওঃ বিদেশে
থাকাকালীন আমি যখন বিষণ মনে থাকতাম, তখন বার
বার চিন্তা করে আমার এ ধারণাটাই জন্মেছে।।
ডাচেসঃ দোহাই তোমার, আমি সব শুনতে চাই।
অ্যান্টনিওঃ ধরুন
কোন ব্যক্তি জীবনে বিয়েই করল না বা সন্তান-সন্ততি
লাভ করল না। সেক্ষেত্রে সে সামান্যই হারাবে। কেবল পিতা ডাক শোনার সৌভাগ্য
তার হবে না। ক্ষুদে দস্যিকে রঙ্গিন ছড়িতে চড়ে ঘোড়া ঘোড়া খেলা
খেলতে দেখার দৃশ্য থেকে সে বঞ্চিত হবে। বাচ্চাটি প্রশিক্ষিত স্টার্লিং পাখীর মতো কেমন বুলি কপচায়
তা সে শুনতে পাবে না।
ডাচেসঃ ছি ছি, কি আবোল তাবোল বকছ? তোমার এক চোখ লাল হয়ে
উঠেছে। নাও এ চোখের উপর আমার আংটির পরশ বুলাও। লোকে বলে এটা নাকি বড়ই
কার্যকর চিকিৎসা। ওটা আমার বিয়ের আংটি। আমি শপথ করেছিলাম যে আমার
দ্বিতীয় স্বামী ব্যতীত আর কারো কাছে এই আংটি হস্তান্তর করব না।
অ্যান্টনিওঃ কিন্তু
এখনতো আপনি আংটিটা হাতছাড়া করলেন।
ডাচেসঃ হ্যা, তোমার চোখ খুলে দেবার জন্যই এমনটি করলাম।
অ্যান্টনিওঃ আপনি
তো আমাকে পুরোপুরি দৃষ্টিহীন করে দিলেন।
ডাচেসঃ কিভাবে করলাম?
আর্কিনিওঃ এই আংটির
মধ্যে একটা রসিক অথচ উচ্চাকাঙখী শয়তান নৃত্য করছে।
ডাচেসঃ তাকে হটিয়ে
দাও।
অ্যান্টনিওঃ কিন্তু
কোন উপায়ে?
ডাচেসঃ তোমার আঙ্গুলের
দ্বারাই এটা করা সম্ভব তাই যাদুবিদ্যার তেমন প্রয়োজন এ ক্ষেত্রে নাই। এটা কি তোমার আঙ্গুলে ফিট
করছে।
[ডাচেস অ্যান্টনিওর
আঙ্গুলে আংটি পরিয়ে দিলেন। সে হাঁটু গেড়ে বসল]
অ্যান্টনিওঃ এ আপনি
কি বলছেন?
ডাচেসঃ ওহে, ভদ্রমহোদয় তোমার বাড়ীর ছাদটি বড়ই সুন্দর অথচ নীচু। ছাদটাকে আরো উঁচু করা পর্যন্ত
এর তলায় আমি না পারি সোজা হয়ে দাঁড়াতে না পারি তোমার সাথে কিছু আলোচনা করতে। অতএব নিজের উন্নতি ঘটাও। যদি খুশী হও তবে আমি তোমার
প্রতি এভাবে সাহায্যের হাত প্রসারিত করব।
[তিনি হাত
ধরে অ্যান্টনিওকে উঠালেন]
অ্যান্টনিওঃ ম্যাডাম, উচ্চাকাঙ্খা জিনিসটা প্রতাপশালী ব্যক্তিদের পাগলামি। এটাকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা
হয় না অথবা কক্ষে বন্দী করা হয় না। আলোকে আলোকময় প্রাসাদমালায় এর অবস্থান। একে বেষ্টন করে থাকে বাচাল
দর্শনার্থীর দল যাদের প্রভাবে এর উন্মত্ততা বৃদ্ধি পেয়ে সর্ববিধ নিয়ন্ত্রণের বাইরে
চলে যায়। আমি এত বোকা নই যে আপনার এই অনুগ্রহের উদ্দেশ্য অনুধাবন
করতে পারব না। কিন্তু যে ব্যক্তি শীতের মাঝে হাত উষ্ণ করার জন্য আচমকা
আগুনে হাত ঢুকায় সে নেহায়েই বোকা।
ডাচেসঃ যাক এখন
তো অগ্রযাত্রার ক্ষেত্র প্রশস্ত হল। তুমি হয়তো বুঝতে পারবে যে আমি তোমাকে কি মহামূল্যবান
খনির অধীশ্বর করেছি।
অ্যান্টনিওঃ হায়, আমি তো এ উপহারের যোগ্য নই।
ডাচেসঃ নিজেকে কিভাবে
জাহির করতে হয় তা তোমার জানা নেই। তুমি নিজের অবমূল্যায়ন করছ আর এ আচরণ মোটেই ব্যবসায়ী
সুলভ নয়। শহরের বণিকরা নিম্নমানের পণ্য বেচার জন্য আলোর ধূম্রজাল
সৃষ্টি করে। তোমাকে আরো বলতেই হয় যে যদি তুমি একজন পরিপূর্ণ মানুষের
সন্ধান জানতে চাও তবে নিজের দিকে চোখ ফিরাওঃ আত্মবিশ্লেষণ কর। (আমি তোষামদি করছি না)।
অ্যান্টনিওঃ স্বর্গ
বা নরক যদি নাও থাকে তবু আমার সৎ থাকা উচিত। আমি দীর্ঘদিন যাবত সদগুণের চর্চা করেছি। সেজন্য কখনও পুরস্কারের
আশা করিনি।
ডাচেসঃ এখন তুমি
সৎকর্মের পুরস্কার পেতে যাচ্ছ। আমার মতো যারা অতি সম্ভ্রান্ত ঘরে জন্মেছে তারা কতই না
দুর্দশাগ্রস্ত! কেউই আমাদের প্রেম নিবেদন করতে সাহস
পায় না। ফলে আমরাই অপরকে প্রেম নিবেদনে বাধ্য হই। স্বৈরাচারীরা দ্ব্যর্থবোধক
কথাবার্তা বলে এবং ঐ ধরনের শব্দগুচ্ছ ব্যবহারের মাধ্যমে হুমকি প্রদান করে। তেমনি আমরাও ধাঁধা ও স্বপ্নের
মাধ্যমে আমাদের বাধভাঙ্গা আবেগগুলো প্রকাশ করতে বাধ্য হই। এটা করতে গিয়ে ধর্মের
সরল পথে আমরা অগ্রসর হতে পারি না। কারণ এক জিনিস অন্যরূপে উপস্থাপনের উপায় সে পথে নাই। যাও, এখন গর্ব করে বলে বেড়াও যে তুমি আমার হৃদয় হরণ করে নিয়েছ। আমার হৃদয় এখন তোমার অন্তরে
। আশা করি সে ওখানে আরো প্রেমাবেগ সঞ্চার করবে। তুমি দেখি কাঁপছ। তোমার অন্তরটা মাংসপিণ্ডের
মতো অনুভূতিহীন করে রেখোনা, তাহলে তুমি আমাকে ভয় পাবে
বেশী, ভালবাসবে কম। ওহে জনাব, নিজের উপর আস্থা রাখ। কেন এত চিন্তা করছ? আমি রক্তমাংসের মানুষ, মৃত স্বামীর কবরে
নত হয়ে থাকা অ্যালাবাস্টারের (স্ফটিক) মূর্তি নই। নিজেকে জাগিয়ে তোল, জাগিয়ে তোল। এখানে আমি সব অসার আনুষ্ঠানিকতা বর্জন করে শুধুমাত্র
এক অল্পবয়সী বিধবারূপে তোমার সম্মুখে হাজির হয়েছি। আমি তোমাকে স্বামী হিসাবে
পেতে চাই। বিধবা বলেই আমি পুরোপুরি লাজনম্র ভাব দেখাতে পারিনি।
অ্যান্টনিওঃ সত্য
আমার পক্ষে থাকবে। আপনার সুনাম রক্ষার জন্য আমি সর্বদা বিশ্বস্ত প্রহরীর
ভূমিকা পালন করব।
ডাচেসঃ প্রিয়তম, ধন্যবাদ তোমায়। যাতে গৃহ-তত্ত্বাবধায়ক
হিসাবে অধমর্ণের মত তোমাকে আমার কাছে না আসতে হয় সেজন্য তোমার আমি তোমাকে দায়মুক্ত
করলাম। আসলে এই মুহূর্তে তোমারই এটা চেয়ে নেওয়া উচিত ছিল। আমি দেখেছি শিশুরা প্রায়ই
মিষ্টি শেষ হয়ে যাবে এই আশঙ্কায় সেগুলো তাড়াতাড়ি খেয়ে ফেলতে ভয় পায়। তোমার আচরণে সে কথাই মনে
পড়ল।
অ্যান্টনিওঃ কিন্তু
আপনার ভাইদের দৃষ্টিভঙ্গীটা কি?
ডাচেসঃ তাদের কথা
তোমার ভাবতে হবে না। আমাদের আপন ক্ষেত্রের বাইরের কোন বিবাদ-বিসম্বাদকে ভয় করার দরকার নেই। ঐ সব ব্যাপার করুণার চোখে
দেখলেই চলবে। তথাপি তারা যদি খবরটা জেনেও যায়, তবু কালক্রমে তাদের ক্রোধের তীব্রতা কমে আসবে।
অ্যান্টনিওঃ এই
কথাগুলো এবং এর পূর্বে আপনি যে সব কথা বলেছেন সেগুলো আমারই বলা উচিত ছিল। যদিও আপনারই বক্তব্যের
মাঝে এমন কিছু অংশ আছে যা আমি বললে তাতে চাটুকারিতার গন্ধ পাওয়া যেত।
ডাচেসঃ তুমি হাঁটু
গেড়ে বসো।
[ক্যারিওলা পর্দার পিছন থেকে বেরিয়ে এল]
অ্যান্টনিওঃ হায়, ঈশ্বর!
ডাচেসঃ বিস্মিত
হয়ো না। এই মহিলা আমার বিশ্বাসভাজন। শুনেছি উকিলরা বলেন কোন কক্ষে মৌখিক ভাবে বিবাহের চুক্তি
হলে তা আনুষ্ঠানিক (তারা উভয়ে হাঁটু গেড়ে
বসলেন) বিবাহের মতই বৈধ। হে ঈশ্বর কোন ধরনের শক্তি
যেন আমাদের এই পবিত্র ও সুকঠিন বন্ধনকে ছিন্ন করতে না পারে।
অ্যান্টনিওঃ আমাদের
সুধাময় ভালবাসা নক্ষত্ররাজির মতো চিরকাল চলমান থাকুক।
ডাচেসঃ আমাদের প্রেমে
গতি সঞ্চার হোক এবং তা মৃদু সঙ্গীতধ্বনির সৃষ্টি করুক।
অ্যান্টনিওঃ আমরা
যেন প্রেমময় পামবৃক্ষ যুগলকে অনুকরণ করতে পারি। তাদের মিলন শান্তিময় বিবাহের
শ্রেষ্ঠ প্রতীক। এই বৃক্ষযুগলকে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন করলে কখনই ফল জন্মে
না ।।
ডাচেসঃ উপাসনালয়ের
অনুষ্ঠানাদি কি আমাদের সম্পর্ককে এর চেয়ে সুদৃঢ় করতে পারবে? অ্যান্টনিও ভাগ্য যেন কোন সুখময় বা দুঃখময় ঘটনার মাধ্যমে আমাদের
মাঝে বিভেদ ডেকে আনতে না পারে।
ডাচেসঃ গীর্জার
অনুষ্ঠানাদি কিভাবে অধিকতর কঠিন বন্ধনে আমাদের বাঁধতে পারবে? আমরা এখন স্বামী-স্ত্রী। গীর্জার অধিপতিরা তো অনুষ্ঠানের
মাধ্যমে কেবল এ কথারই প্রতিধ্বনি করবে। এই মেয়ে, তুমি সরে
দাঁড়াও। আমি এখন অন্ধ হয়ে গিয়েছি।
অ্যান্টনিওঃ এ কথার
মাধ্যমে আপনি কি বুঝাতে চাচ্ছেন।
ডাচেসঃ তোমার সৌভাগ্যের
দূতকে হাত ধরে বাসর-শয্যায় নিয়ে চল
(তুমিই আমার ভিতর থেকে এ কথা বলছ কারণ আমরা এখন একীভূত হয়েছি)। আমরা পাশাপাশি শুয়ে কথাবার্তা
বলব। আমার বদমেজাজী আত্মীয়দের শান্ত করার ফন্দি আঁটব। যদি চাও তাহলে আলেকজান্ডার
এবং লডোউইকের কাহিনীতে১৬ যেমন দেখা যায় সেভাবেই আমাদের মাঝে একটি খোলা
তরবারী রেখে দিও। তাহলে আমাদের সতীত্ব বজায় থাকবে। তোমার বুকেই যখন আমার যাবতীয়
গোপন কথা গচ্ছিত থাকবে, তখন সেখানেই আমার লাজে ভরা
মুখটি লুকাতে দাও।
ক্যারিওলাঃ জানিনা, তার মাঝে,
এখন কি অনুভূতি কাজ করছে মানসিক ঔদার্য না নারী সুলভ আবেগ। কিন্তু এ এক ধরনের ভয়াবহ
পাগলামি। ডাচেসের জন্য আমার খুব করুণা হচ্ছে।
এই অংশের টিকাসমূহ
১৩. ল্যাবানের ভেড়া ও বাইবেল থেকে
জানা যায় যে ল্যাবান ছিলেন রিয়া ও র্যাচেল নামক দুই কন্যার জনক। জ্যাকব এই দু’বোনকে
বিয়ে করে। জ্যাকব ল্যাবানের ভেড়াগুলোর দেখাশুনা করত। ল্যাবান চেয়েছিলেন জ্যাকব যেন বাদামী বর্ণের ভেড়া এবং বুটিদার ছাগলের
মালিক হতে না পারে। কিন্তু চতুর জ্যাকব ছাগল ও ভেড়া প্রজননের ক্ষেত্রে বিশেষ
পদ্ধতি অবলম্বন করে এবং কিছুদিনের মধ্যে বিপুলসংখ্যক বাদামী ভেড়া ও বুটিদার ছাগলের
মালিক হয়ে ল্যাবানকে বুদ্ধির দৌড়ে হারিয়ে দেয়।
১৪। ভলকানঃ রোমান দেবতার নাম। গ্রীক পুরাণে তিনি হেফাস্টাস নামে আখ্যায়িত হয়েছেন। তিনি এক সুদক্ষ
কারিগর । তিনি একবার নিজ স্ত্রী ভেনাস এবং তার প্রেমিক মার্শকে অদৃশ্য সুতা দিয়ে
অদ্ভুতভাবে তৈরী এক জালে আটক করেন।
১৫. শোধনাগারঃ এমন একটি স্থান যেখানে
ধর্মবিশ্বাসীদের আত্মাগুলো দুঃখভোগের মাধ্যমে যৌনাচার জনিত পাপের কলঙ্ক থেকে মুক্ত
হবে এবং পরিশোধিত হবে। প্রটেস্টান্টরা শোধনাগারের অস্তিত্বে বিশ্বাসী নয়।
১৬. প্রাচীন ব্যালাড ‘দি টু
ফেইথফুল ফ্রেন্ডস’ পড়লে জানা যায় যে আলেকজান্ডারের
বন্ধুর নাম ছিল লডোউইক। দুজনের চেহারায় এত বেশী মিল ছিল যে লোকে তাদের একজনের সাথে
অন্যজনের চেহারার কোন পার্থক্য খুঁজে পেত না। লডোউইক স্বীয় পরিচয় গোপন করে
আলেকজান্ডারের পক্ষ হয়ে হাঙ্গেরীর রাজকন্যাকে বিবাহ করেন। বন্ধুত্বের মর্যাদা রক্ষার
জন্য তিনি নিজের ও রাজকন্যার মাঝে একটি খোলা তরবারি রেখে শয়ন করতেন যাতে তারা
মিলিত হতে না পারেন।
Thanks . This is so helpful for me.
ReplyDelete