Crossing Brooklyn Ferry - Walt Whitman - Bangla Summary and Analysis |
১৪৭ লাইনের মুক্তছন্দে লিখিত কবিতাটি সর্বমোট ৯টি
অংশে বিভক্ত। লাইন ও শব্দের সংখ্যার হিসাবে ৯টি অংশের সব গুলো অংশ সমান আকৃতির নয়।
কবি ব্রুকলিন ফেরির আশেপাশের দৃশ্যের শক্তিশালী ও বিস্তারিত দৃশ্যকল্প ব্যাবহার
করেছেন যাতে করে পাঠকেরা কল্পনার বাহনে করে ব্রুকলিন ফেরি ভ্রমন করতে পারে।
কবিতাটিতে কবি তার ব্রুকলিন থেকে ম্যানহাটনে
ফেরির মাধ্যমে যাতায়াতের বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি ফেরির আশেপাশের দৃশ্য যেমন আকাশের
মেঘ, সূর্যোদয় ইত্যাদির বর্ণনা দিয়ে শুরু করেছেন। যদিও ফেরির যাত্রীরা তাদের
দৈনন্দিন কাজের অংশ হিসেবেই ফেরিতে যাতায়াত করত, তবে কবির কাছে এটা খুব অদ্ভুত মনে
হত। কবি তখন আগে যারা ফেরিতে যাতায়াত করত আর ভবিষ্যতে যারা যাতায়াত করবে তাদের
নিয়ে ভাবতে শুরু করেন। এই ভাবনা কবিকে এক রকম ধ্যানমগ্নতার মাঝে নিয়ে যায়। তিনি
তখন এই ফেরিকে অতীত ও বর্তমানের সংযোগ হিসেবে ভাবতে শুরু করেন। তিনি ভেবে অবাক হন কিভাবে
এই ফেরিটি অতীত ও ভবিষ্যতের যাত্রীদেরকে এক সমীকরণে আবদ্ধ করেছে।
Walt Whitman তাঁর ‘Crossing Brooklyn Ferry' কবিতাটিতে পানি ও স্থলভাগের প্রতীকী উপস্থাপনা দ্বারা এই
বিশ্বজগতের দ্বিতত্ত্ববাদ (Dualism) ফুটিয়ে তুলেছেন। এই
কবিতাটির মূল চিত্রকল্প হচ্ছে ফেরি যা স্থান ও সময়ের সার্বজনীন গতির প্রতীক এবং যা
অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের আরোহণকারী সকল নারি-পুরুষের আত্মিক একতার প্রতীক। কবিতার
প্রথমেই কবি জোয়ার, মেঘ, সূর্য ইত্যাদি প্রাকৃতিক উপাদানগুলোর কথা উল্লেখ করেছেন এবং তাদেরকে কবি
মুখোমুখি প্রত্যক্ষ করছেন। সাধারণ পোশাকের নারী-পুরুষের ভিড় এবং নদী পারাপারের
দৃশ্যগুলোর সাথে প্রাকৃতিক উপাদানগুলো মিশে কবির মনে এক আধ্যাত্মিক ভাবের সৃষ্টি হয়েছে।
দ্বিতীয় অংশে কবি এই বিশ্বজগৎকে সুবিন্যস্ত, সুগঠিত ও সুসংযুক্ত মহাপরিকল্পনা বলে উল্লেখ করেছেন যেখানে সবাই বিচ্ছিন্ন হয়েও
সংযুক্ত। কবি নিজেকে জন্ম-জীবন-মৃত্যুর চিরন্তন প্রক্রিয়া ও বিপুল জনগোষ্ঠীর অংশ
মনে করেন। হাজার বছর পরেও যারা নদীটি পার হবে তাদের সাথে নিজেকে অভিন্ন ভাবতে চান
এবং ব্রুকলিন ফেরির মাধ্যমেই এই সম্পর্ক স্থাপন করতে চান।
তৃতীয় অংশে কবি সময়, স্থান ও দূরত্বকে অতিক্রম করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিকট পৌঁছেছেন। নদীর উচ্ছল
প্রবাহ, স্টিমারের মোটা নল, পূর্ণ বয়স্ক গাংচিল, ফেনিল জলরাশি, অর্ধবৃত্তাকার তরঙ্গমালা, ছোটো বড়ো জাহাজ, চিমনির আগুন, নাবিকদের ব্যস্ততা, জাহাজের সাদা পাল ও নিশান, বজরা এই সবকিছু কবি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বলতে চান। এখানে প্রবল আকাঙক্ষার
মাধ্যমে নিজেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে উন্মোচিত করেছেন।
চতুর্থ ও পঞ্চম অংশে শহর, নদী ও মানুষের প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসার কথা বলেছেন। এখানে মন ও বস্তু দুটি
ব্যাপারে কবির দষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়েছে। যদি কবি ব্রুকলিনকে ভালোবেসেই থাকেন
তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সাথে তার পার্থক্য কোথায়? ম্যানহাটানের রাস্তায়
চলাচলের সময় অপ্রত্যাশিতভাবে এই প্রশ্নটি কবির মনে উদয় হয়। কারণ কবির মনোদৈহিক
অস্তিত্বে পরিণত হয়েছে ব্রুকলিন ফেরিটি। যা সমস্ত মানবকুলের সাথে সঙ্গতি স্থাপন
করেছে।
ষষ্ঠ অংশে কবি মানবজীবনকে ভালোমন্দের সেই
পুরাতন বন্ধন হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কারণ কবি যেমন মন্দের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন
তেমনি ভালোর দ্বারাও প্রভাবিত হয়েছেন। তাই কবি বলেছেন, কেউ যেন মনে না করে যে সে একাই দোষী বা সে একাই শুধু মন্দ কাজ করে। সবারই
মানতে হবে জীবন হচ্ছে বিশুদ্ধ ও দূষিত উপাদানের সমষ্টি।
সপ্তম অংশে কবি তাঁর পাঠককে আরো আপন হতে
বলেছেন। কবি তার বর্তমান পাঠকের কথা যেমন চিন্তা করেন তেমনি ভবিষ্যৎ পাঠকের কথাও
চিন্তা করেন। তাই কবি তার ভবিষ্যৎ পাঠকের উদ্দেশ্যে বলেছেন, যখনই তোমরা কবিতাটি পাঠ করবে তখনই আমি অদৃশ্য উপায়ে (চিন্তন প্রক্রিয়ার
মাধ্যমে) তোমাদের সামনে হাজির হব অর্থাৎ কবি চিন্তন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ
পাঠকের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করবেন।
অষ্টম অংশে কবি নদীর উপর সূর্যাস্ত, গাংচিল, গোধূলি ও ম্যানহাটানের সৌন্দর্য বর্ণনা করেছেন এবং অনুধাবন
করেছেন যে আগামী প্রজন্মের মানুষের সাথে তার সম্পর্ক সূক্ষ্ম কিন্তু স্থায়ী। আর
সম্পর্কটি হলো আধ্যাত্মিক যা কোনো সাধারণ ভাষায় বোঝানো যায় না কিংবা ধর্মোপদেশ দিয়ে
শেখানো যায় না।
নবম অংশে কবি নদীকে সনির্বন্ধ অনুরোধ করেছেন
তাঁকে জোয়ারের সাথে ভাসিয়ে নেয়ার জন্য, মেঘকে অনুরোধ করেছেন তাকে
ভিজিয়ে দেওয়ার জন্য এবং ম্যানহাটানকে বলেছেন দাঁড়িয়ে থাকতে। কবি সবকিছুকে
যথাযথভাবে তাদের কাজ করতে বলেছেন। কারণ তারা সুবিন্যস্ত ও সুসংযুক্ত
কর্মপরিকল্পনার অংশ । ব্রুকলিন ফেরিও তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন নয় বা হতে পারবে না
কারণ সাধারণ মানুষ ব্রুকলিন ফেরিকে ভালোবেসে হৃদয়ে স্থায়ীভাবে গেঁথে রেখেছে। ছোটো
বড়ো যে বস্তু দিয়েই ব্রুকলিন নিজেকে সজ্জিত করুন না কেন, তা যেন অবিনশ্বর ও চিরন্তন।
ভাষার চমৎকারিত্ব দিয়ে কবি কবিতাটিতে সম্মোহন
সৃষ্টি করেছেন। কবির বর্ণনায় মানুষের দৈহিক অস্তিত্ব ব্রুকলিন ফেরির মতোই যা নশ্বর
পৃথিবী থেকে অবিনশ্বরের দিকে ছুটে চলেছে।
রোমান্টিক কবিদের হাত ধরে (ব্লেইক, ওয়ার্ডসওয়ার্থ) এসব
দার্শনিক ধারাগুলো ইংরেজি সাহিত্যে প্রতিষ্ঠিত হয়। ওয়াল্ট হুইটম্যান সে
ধারারই অনুসারী, ক্রসিং ব্রুকলিন ফেরি তারই সাক্ষ্যবহ। কাল ও স্থানকে অতিক্রম করে নিসর্গকে অন্তঃদর্শনের মাধ্যমে এমন
এক সমন্বিত পর্যায়ে নিয়ে যান, এমন ঐক্যে তাকে
প্রতিষ্ঠিত করেন যা সহজেই কালোত্তীর্ণ হয়ে ওঠে। প্রকৃতির প্রতিটি উপাদানকে গভীর ইন্দ্রিয়ানুভূতিতে
অনুভব করে, কবি প্রকৃতির মাঝে ঈশ্বরের চিহ্ন আবিষ্কার করেন।
ব্রুকলিন ও ম্যানহাটানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য
বর্ণনা বর্তমান কবিতাটির প্রধান বিষয়বস্তু, এরই মাঝে তিনি অসীম
অস্তিত্বের সন্ধান পান। অনন্যের সন্ধান পান। বিরাটের মাঝে বিলীন হন। প্রতীকের (symbol)মাধ্যমে সেই বিশালত্ব বর্ণনা করেন। জল (সাগর, নদী, হৃদ, জলাধার) ও স্থলকে পাশাপাশি দেখেন। জল (সাগর) আত্মার প্রতীক, আর স্থল দেহের প্রতীক। সৈকত; জল ও স্থলের মিলন মেলা। এ
দিয়ে কবি দেহ ও আত্মার মিলন বুঝাতে চেয়েছেন। এ দুয়ের মিলন ভাবনায়ই সিদ্ধি লাভ
সম্ভব বলে কবি মনে করেন। বর্ণনা শৈলি, শব্দ চয়ন, ছন্দ প্রকরণেও কবি বিশিষ্টতার দাবি রাখেন। প্রাত্যহিক জীবন থেকে সংগৃহীত
অভিজ্ঞতাই মানুষকে সমৃদ্ধ করে, পুস্তক নয়। কবির এই বিশ্বাস। তাঁর শব্দ-চয়ন
ও সাধারণ জীবন থেকে সঞ্চিত (ওয়ার্ডসওয়ার্থ স্মর্তব্য) সাধারণ্যে ব্যবহৃত শব্দ, অশালীন শব্দ, সাহিত্য-শব্দ সবই কবি
গ্রহণ করেছেন আমেরিকান সমাজের বহুত্বকে বুঝাতে।
ওয়াল্ট হুইটম্যান তার ক্রসিং ব্রুকলিন ফেরি
কবিতাটি ১৮৮৩ সালের আগে অর্থাৎ ব্রুকলিন ব্রীজ এর কাজ সম্পন্ন হওয়ার পূর্বেই
লিখেন। সেসময় ব্রুকলিন এবং ম্যানহাটানের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম ছিল ফেরি। এই
কবিতা যখন লিখেন সেস্ময় অ্যামেরিকায় গৃহযুদ্ধের অবস্থা ছিল তুঙ্গে। দেশের মানুষ
আত্মপরিচয়ের দিক দিয়ে ছিল দ্বিখণ্ডিত। হুইটম্যান এই কবিতার মাধ্যমে তাদেরকে একতার
বার্তা দেন।
অন্যান্য লিঙ্ক সমূহঃ
No comments:
Post a Comment