Crossing Brooklyn Ferry - Walt Whitman -
Simple Meaning in Bangla
সরলার্থ
প্রথম স্তবকঃ ব্রুকলীন নদীর খেয়া পার হবার সময় কবি প্রকৃতি, নদীটি ও খেয়া নৌকায় আরোহী যাত্রীদের বর্ণনা দিচ্ছেন, বুঝাচ্ছেন জীবনের মতো নদীটির বয়ে যাবার বৃত্তান্ত। নদী জীবনের মতোই অনন্ত ধারায় বয়ে চলবে, এ কূল ভেঙে ও কূল গড়বে। জীবন যদি খেলাঘর হয় নদীর ভাঙা গড়ার খেলাও চলবে সর্বকালে। দৃশ্যমান সব কিছু থেকে কবির অন্তরের ভাবনা তাই। খেয়া নৌকার রং বেরংয়ের পোশাক পরা মানুষেরা কবিকে দেখে যা ভাবছে, কবি তারও বেশি কিছু ভাবছেন।
দ্বিতীয় স্তবকঃ সারা দিনভর কবির ভাবনার কেন্দ্র--জীবন। কবি জীবনের কথাই ভাবেন, মনে হবে কোনো বিচ্ছিন্ন অস্তিত্ব, কার্যত কবি সামগ্রিক জীবনেরই অংশ। প্রত্যেক মানুষই দৃশ্যত বিচ্ছিন্ন কার্যত তারা সকলে একই বৃত্তে বাঁধা, মহাজীবনের প্রবাহ মাত্র। অতীত ও ভবিষ্যৎকে বর্তমান সংযুক্ত করে দেয় একই প্রবাহে, একই জীবন ধারায়
তৃতীয় স্তবকঃ সব জীবন একই সুতায় গাঁথা, জীবনের সব কোলাহল, সব চলাচল, সব। তার কিছু কবির দেখা বাকি সব না দেখা। জীবন স্রোতকে সময় বয়ে নিয়ে যায় সবেগে। আগত যারা, তারা অনাগতদের সঙ্গে একই ধারায় চলমান, তারা সবাই একই ধারার অংশবিশেষ। তাদের জীবনের প্রেম, দৃষ্টি, শ্রুতি সব কিছুর সাথে কবি জড়িত, এমনই কবির বিশ্বাস।
চতুর্থ স্তবক; আজকের মানুষেরা যা দেখছে, ব্রুকলীন নদীর খেয়ার এপার ওপার বয়ে চলা, ম্যানহাটনের জাহাজ, উত্তরে, পশ্চিমে; দক্ষিণে ও পশ্চিমে ব্রুকলীনের পাহাড়, ছোটো বড়ো দ্বীপ সব দূরে, আগামী দিনের মানুষেরাও তাই দেখবে।
পঞ্চম স্তবকঃ পঞ্চাশ বছর পরও এসব অবিকল দেখবে
তারা, গোধূলি লগ্নে ব্রুকলীন নদীর খেয়া পার হতে হতে। একশ বছর পরও দেখবে। দেখবে, একই সূর্যাস্ত, একই জোয়ার ভাটার টান, উজান।
ষষ্ঠ স্তবকঃ স্থান, কাল, পাত্র, নিকট, সুদূর মানুষকে মহামানবীয়
জীবনধারা বিচ্যুত করতে পারে না। কবি বলছেন, তিনি অনাগত কালের
মানুষেরই পূর্বসূরি এবং তাদের হয়েই থাকবেন। প্রকৃতি (আকাশ, নদী) বর্তমান জনকে যেমন বিস্মিত করে অতীত জনকেও তেমনি বিস্মিত করেছিল, এর মাধ্যমে কবি জীবনের অনন্ত ধারাকেই বুঝাতে চেয়েছেন। বিশেষায়িত করে কবি বলছেন, তোমরা (আগামী জনেরা) যেমন আছো আমিও তেমনি ছিলাম, অনেকের মাঝে একজনের মতো, ভিড়ের মাঝে একজনের মতো।
সপ্তম
স্তবকঃ নদীর চকচকে স্বচ্ছ জল প্রবাহ দেখে তোমরা যেমন আনন্দিত হও আমিও তেমনি হতাম।
রেলিংয়ে হেলান দিয়ে তোমরা যেমন স্থির থেকেও এগিয়ে চলো স্রোতের সাথে আমিও তেমনি
হতাম। ভবিষ্যৎ জনের উদ্দেশ্যে কবি বলেন জাহাজের অসংখ্য মাস্তুল আর ধোঁয়া উঠা পাইপ
তোমরা যেমন দেখো আমিও তেমনি দেখতাম।
অষ্টম স্তবকঃ আগামী দিনের মানুষদের উদ্দেশ্য
করে কবি বলছেন, তিনি অসংখ্যবার ব্রুকলিন নদী পার হয়েছেন। গাংচিলদের স্থির
ডানায় আকাশে বৃত্তাকারে উড়তে দেখেছেন
অবশেষে দক্ষিণে অদৃশ্য হতে দেখেছেন।
নবম স্তবকঃ গ্রীষ্মের আকাশের প্রতিফলন দেখেছেন
ব্রুকলিনের স্থির জলে। প্রতিফলিত সূর্যের রশ্মি তাঁর চোখ ধাঁধিয়ে দিয়েছে। সূর্যের
আলোয় নদীর জলে নিজের প্রতিবিম্ব দেখেছেন। দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিম কোণের পাহাড়ের
দিকে একমনে তাকিয়ে থেকেছেন।
দশম স্তবকঃ কবি আরও দেখেছেন, ভেড়ার পশম থেকে ঊর্ধ্বগামী বাষ্পরাশি, নিকটবর্তী উপসাগরের অগভীর
জল, সে জলের উপর ভাসমান সব জাহাজের আসা-যাওয়া আর নোঙর করা জাহাজগুলো। এসব দেখা যেন
কবির অস্তিত্বের অংশ।
একাদশ স্তবকঃ তিনি দেখেছেন নাবিকদের কর্ম
ব্যস্ততা, বাতাসে কম্পমান জাহাজের পতাকা, পেছনে ফেনা তুলে চলে
যাওয়া, জলের পাক—এসব।
দ্বাদশ স্তবকঃ বিভিন্ন দেশের পতাকা সন্ধ্যায়
নামিয়ে ফেলার দৃশ্য কবি দেখেছেন, দেখেছেন জীবনের কত
কোলাহল, কত উৎসব, সুদূরকে অদূর হতে দেখেছেন, জীবনে দেখা সব দৃশ্যকে কবি তার
স্মৃতিতে বিন্যস্ত করে রেখেছেন।
ত্রয়োদশ স্তবকঃ কবি বন্দরের কর্মব্যবস্ততা
দেখেছেন, কর্মচাঞ্চল্য উপভোগ করেছেন, কারখানার চিমনির ধোয়া
দেখেছেন, জীবনকে জেনেছেন, বুঝেছেন সচেতনতায়।
চতুর্দশ স্তবকঃ আজকের মানুষেরাও এসব দৃশ্য যেমন
তাদের চেতনায় ধারণ করছে কবিও একইভাবে ধারণ করেছিলেন। সৃষ্টির অনন্ত ধারায় তিনিও
একজন সাধারণ মানুষই ছিলেন। সব নারী পুরুষই তাঁর প্রিয় ছিল। তিনি যেমন আগামীজনের
দিকে তাকান, আগামীজনও তাঁর দিকে ফিরে তাকাবে বলে কবির বিশ্বাস। কবি না
চাইলেও তারা পিছন ফিরে তাকাবেই, কারণ সব মানুষ একই মিছিলে
চলমান।
পঞ্চদশ স্তবকঃ বিগত ও আগত সব মানুষেরা সবাই একই
যাত্রাপথে যখন, কবির জিজ্ঞাসা, সময়ের ব্যবধান আসলেই কি
কোনো ব্যবধান তখন? কবি নিজেই উত্তরে বলেন, এ ব্যবধান প্রকৃত কোনো ব্যবধানই নয়। যুগান্তরের, কালান্তরের মানুষেরা সব
ব্রুকলিনের। কবি ম্যানহাটনের দ্বীপের পথে পথে হেঁটেছেন, ব্রুকলিনের জলে গোছল করেছেন, মাঝে মাঝে প্রশ্নাক্রান্ত
হয়েছেন, আগামী দিনের মানুষেরা তাই হবে বলে কবির প্রত্যয়।
ষোড়শ স্তবকঃ ব্যস্ত মানুষের ভিড়ে কবি ছিলেন, গভীর রাতেও থেকেছেন। শয্যায়, ঘুম ঘুরেও তাদের উপস্থিতি
তিনি অনুভব করেছেন কিন্তু তিনি তার অস্তিত্বকে হারিয়ে ফেলেননি।
সপ্তদশ স্তবকঃ কবি বলেছেন, জীবনের সব কিছুই যে স্বচ্ছভাবে তাঁর কাছে ধরা দিয়েছিল তা নয়, আঁধারও তাকে ছুঁয়েছিল। কবি তাই সংশয়ে, আত্মজিজ্ঞাসায়, তাঁর মনে প্রশ্ন জাগছে, তিনি সবই কি সঠিক ভেবেছেন, তাঁর ভাবনাগুলো কি
পূর্বাপর সঙ্গতিপূর্ণ ছিল? মহৎ ছিল?
অষ্টাদশ স্তবকঃ কবি সারা জীবনে যে শুধু ইতিবাচক
বিষয়ের সম্মুখীন হয়েছেন তাই নয়, অনেক নেতিবাচকতারও
সম্মুখীন হয়েছেন। অর্থাৎ তাঁর জীবন অবিমিস্ত্র ছিল এমন নয়। তার জীবনও আলোয় আঁধারে
পাপে পুণ্যে পূর্ণ বিপরীতের সমাহার।
উনবিংশ স্তবকঃ কবি অকপটে স্বীকার করছেন তাঁর
জীবন ছিল ভালোয়-মন্দয় মেশানো অতি সাধারণ এক জীবন। অনেকের মাঝে একজন ছিলেন তিনি।
সাধারণ একজন।
বিংশ স্তবকঃ মানুষের সঙ্গে কবির ছিল অবাধ সখ্য, অবাধ মেলামেলা। কোনো অহংবোধ, স্বাতন্ত্র্যবোধ কবিকে
তাড়িত করেনি। সর্বত্র অবাধ যাতায়াত ছিল তার, সে কথাই বুঝাতে চাচ্ছেন
কবি।
একবিংশ স্তবকঃ কবি মানুষের কাছেই ছিলেন, আরো কাছে আসার, আরো ঘনিষ্ঠ হবার চেষ্টা
করেছেন। মানুষকে নিয়ে ভেবেছেন। নিজেকেই প্রশ্ন করেছেন, কী লাভ, এসব ভাবনায়? আবার নিজেই উত্তর দিয়েছেন, লাভালাভের চেয়ে মানুষকে নিয়ে ভাবনাই কবি বেশি উপভোগ করেছেন। মানুষকে তিনি
দেখেছেন কিন্তু মানুষ তাঁকে দেখেনি। দূর ও কাছের সব মানুষকেই তিনি দেখেছেন গভীর
করে। মানুষ কিন্তু কবিকে দেখেনি।
দ্বাবিংশ স্তবকঃ কবি এখানে বলছেন, সমগ্র বাহ্য সৌন্দর্য নিয়ে ম্যানহাটনের অস্তিত্ব তাঁর সত্তার গভীরে।
ম্যানহাটনের জাহাজ, নদী, গাংচিল, সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত কবিকে গভীর করে
বেঁধে রেখেছে। এসবই কবির জীবনের অংশ, অবিচ্ছেদ্য অংশ।
ত্রয়োবিংশ স্তবকঃ কবি বলেছেন, ম্যানহাটনের বাহ্য সৌন্দর্যের চেয়ে ম্যানহাটনের মানুষ পুরুষ নারী কবির কাছে
আরো প্রিয়, আরো ঘনিষ্ঠ। মানুষকে বুঝতে জানতে বোধই যথেষ্ট বলে কবি মনে
করেন। তিনি মনে করেন, এই মরমী বোধটি কোনো
প্রথাগত পাঠাভ্যাস দিয়ে অর্জন করা যায় না, ধর্মগ্রন্থ পাঠে জানা যায়
না।
চতুর্বিংশ স্তবকঃ অতএব, হে নদী বয়ে চলো নিরবধি, জোয়ারে ভাটায়, হরষে, বিষাদে বয়ে চলো। তোমার বাহ্য রূপে মুগ্ধ করো অনাগত জনে, অনাগত দিনে। তোমার বাহ্যরূপ অপরিবর্তিত থাক অনাগত কাল, চিরকাল। জাহাজ, পাহাড় সব থাক ব্রুকলিনে
চিরকাল।
পঞ্চবিংশ স্তবকঃ কী হবে আর কী হবে না তা নিয়ে
বিব্রত বোধ না করতে কবি নিজেকে এবং সকলকে আহবান করছেন। জটিল কোনো প্রশ্নাবর্তে
আবর্তিত হতে বারণ করছেন এবং চারপাশের জীবনকে দেখার আহ্বান জানাচ্ছেন আর বলছেন, জীবনের রঙ্গমঞ্চ যেমন চলছিল তেমনি চলুক।
ষষ্ঠবিংশ স্তবকঃ যেমন চলেছিল জীবন, তেমনি চলুক, জীবনের পরিকল্পনায়। চলার পথে স্থির থাকো সবে, সিদ্ধান্তে থাকো অটল
চলমান জীবনে, ততক্ষণ পর্যন্ত পৃথিবী থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিও না যতক্ষণ না
পথিবী তোমার থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়।
সপ্তবিংশ স্তবকঃ এখানে কবি জীবনের কর্মচঞ্চল
চলমান গতির অব্যাহত ধারার কথা উল্লেখ করে, জীবনের যান্ত্রিক
চলমানতার অব্যাহত গতির কথা বুঝাচ্ছেন। পরিবেশকে কবি জীবন সম্পৃক্ত দেখতে চান, জীবন বিযুক্ত সন্ন্যাসীর দৃষ্টিতে দেখতে চান না।
অষ্টবিংশ স্তবকঃ ব্রুকলিন নদীকে উদ্দেশ্য করে
কবি বলছেন, হে নদী তুমি আমার আত্মাকে যেমন ঢেকে রাখো তোমার উপস্থিতি
দিয়ে, তোমার সৌরভ দিয়ে তুমি নিজেকেও তেমনি করে সমৃদ্ধ করো শত জলযানের আসা-যাওয়া দিয়ে, কর্মচাঞ্চল্য দিয়ে।
উনত্রিংশ স্তবকঃ হে নদী, নির্বাক নদী, নীরবে বয়ে চলো নিরবধি
আমাদের অস্তিত্বের অংশ হয়ে। আমরা তোমাকে আরো চাই, অতৃপ্ত মনে। নিশ্চয়ই তুমি
আমাদের আশাহত করবে না। হে নদী, তোমায় আমরা ভালোবাসি
তোমার পূর্ণতাকে ভালোবাসি তোমার পূর্ণতায় আমরা যেমন তৃপ্ত, ঋণী, আগামী দিনের মানুষকেও তুমি একইভাবে তৃপ্ত করো, ঋণী করো তোমার অনন্ত
ধারায়। কবির এই প্রার্থনা।
অন্যান্য লিঙ্ক সমূহঃ
No comments:
Post a Comment