As you like it - William Shakespeare - Bangla Translation - Part 2 |
As you like it - William Shakespeare - Bangla Translation - Part 2 - অ্যাজ ইউ লাইক ইট - বাংলা - পর্ব ২
২
দু-ভাইয়ের মাঝে মারামারি বেধে যাবার
আগেই অরল্যান্ডোকে টেনে বাইরে নিয়ে এল অ্যাডাম। ঠিক এমন সময় সেখানে এসে হাজির হল কুস্তিগীর চার্লস। সে অলিভারকে বলল, কী ব্যাপার স্যার
অলিভার! শুনলাম আপনার ছোটো ভাই নাকি আজ আমার সাথে কুস্তি লড়তে আসবেন? শুনেই তো ভয়ে আমার বুক কাপছে। তাই তো ছুটে এলাম আপনার কাছে।
আপনি তো জানেন কেউ আমার সাথে
কুস্তি লড়তে এলে আমি মেরে তার হাড়গোড় ভেঙে দিই। আপনার ভাই এলেও আমি কিন্তু তাকে ছেড়ে কথা কইব না।
কারণ কুস্তিই আমার পেশা! এ পেশায় জয়ী হওয়াটাই
বড়ো কথা। এ পেশায় টিকে থাকতে হলে লড়াইয়ে আমায় জিততেই হবে, নইলে না খেতে
পেয়ে মারা যাব। এসব কথা ভেবেই আমি ছুটে এসেছি আপনার কাছে। আপনার ভাইকে যদি বাচাতে
চান, তাহলে আমার সাথে লড়াই থেকে বিরত করুন তাকে। নইলে উনি প্রাণে বাচবেন না একথা আগেই বলে দিলাম আপনাকে।
অলিভার বললেন, তুমি এসে ভালোই করেছ চার্লস, নইলে খবরটা পেতাম
না আমি। আমার ভাইয়ের কথা আর বলো না তুমি। ও যেমন আমার অবাধ্য, তেমনি বজ্জাত আর একগুঁয়ে। ওর জন্যে কোনও মায়া-দয়া নেই আমার। ইচ্ছে করলে কুস্তির সময় তুমি ওর হাত-পা
ভেঙে পঙ্গু বানিয়ে দিতে পার ওকে, এমনকি মেরেও ফেলতে পার। তুমি কিছু মনে করো না, আমি ঠান্ডা
মাথায় এ কথা বলছি। বেশ,
এই কথা রইল, তুমি কুস্তির প্যাচে ওকে মেরে ফেলবে আর আমিও দু-হাত ভরে বকশিশ দেব তোমাকে। হারামজাদা অরল্যান্ডোর সাহস
দেখ! ও কিনা লড়তে চায় তোমার মতো
কুস্তিগীরের সাথে? তুমি জন্মের মতো ওর লড়াইয়ের সাধটা
মিটিয়ে দাও। তুমি আমায় দেখলে
আমিও দেখব তোমাকে।
চার্লস রাজি হয়ে গেল অলিভারের
প্রস্তাবে। স্থির হল, কুস্তির প্যাচে
চার্লস মেরে ফেলবে অরল্যান্ডোকে, তারপর দু-হাত ভরে বকশিশ নেবে অলিভারের কাছ থেকে।
চার্লস চলে যাবার পর নিজের মনে
আক্ষেপ করে বলে উঠল অলিভার, আমার কাছে অরল্যান্ডো একটা জানোয়ার বই আর কিছু নয়। ওকে ঘেন্না করি আমি। অথচ অন্য সবাই ওকে ভীষণ ভালোবাসে। ওর মার্জিত কথা-বার্তা আর বিনয়ী
আচরণ দেখে সবাই ভাবে ও খুব শিক্ষিত। এর ফলে
দিন দিন সবার চোখে ছোটো হয়ে যাচ্ছি আমি। কিন্তু অরল্যান্ডোর চালাকি আর বেশিদিন চলবে না। এবার হতভাগা শেষ হয়ে যাবে চার্লসের হাতে।
নিদিষ্ট সময়ে শুরু হয়ে গেল কুস্তি।
চার্লসের সাথে কুস্তি লড়তে একে একে মঞ্চে উঠে এল বুড়ো চাষির তিন জোয়ান ছেলে। দৈহিক শক্তি তাদের যথেষ্ট থাকলেও পেশাদার
কুস্তিগীরের সাথে লড়তে গেলে যে কৌশলের দরকার তা তাদের কারও ছিল না। ফলে
তারা তিনজনই হেরে গেল চার্লসের কাছে।
কুস্তিতে হারিয়ে দেবার পর অন্য সবার যা ব্যবস্থা করে চালস, এবারও তাই করল।
ওদের পাঁজরের দু-তিনটি করে হাড় সে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিল। অসহায় বুড়ো আর কী করে!
কোনও মতে তিন ছেলেকে কাধে বয়ে নিয়ে
কাদতে কাদতে বাড়ি ফিরে গেল। চার্লসের
সাথে বুড়ো চাষির তিন ছেলের একই জায়গায় পরপর লড়াই হবার পর মঞ্চের জায়গাটা খারাপ হয়ে গেছে। ডিউক অলিভার তাই
নির্দেশ দিলেন এবার লড়াইটা হবে তার প্রাসাদের
সামনের ময়দানে । পরবর্তী কুস্তির
লড়াই দেখতে এবার উৎসাহী দর্শকেরা একে একে এসে ডিউকের প্রাসাদের সামনে ভিড় জমাল। তখন রোজালিন্ড আর
সিলিয়া ঘুরে বেড়াচ্ছিল সে বনে।
রাজপ্রাসাদের আরাম-আয়াসের মাঝে কাটালেও এতটুকু শান্তি নেই রোজালিন্ডের মনে। তার মন তখনই বিষগ্ন হয়ে ওঠে যখন সে ভাবে কত
কষ্টের মাঝে আর্ডেনের বনে দিন কাটাচ্ছেন তার
বাবা। সবসময় রোজালিন্ডের এই
বিষণ্ণ কালো মুখ দেখে একটুও ভালো লাগে না সিলিয়ার। তার বাবা ফ্রেডারিক যে অন্যায়ভাবে রোজালিন্ডের বাবার রাজ্য
কেড়ে নিয়েছে, সে কথা সে জানে। আর এও জানে তারই বাবার জন্য আজ আর্ডেনের বনে নির্বাসিত
জীবনযাপন করছেন রোজালিন্ডের বাবা। রোভালিন্ডকে সব সময় আনন্দ এবং খুশির মধ্যে
রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে
সে, তবুও কেন যেন হাসি নেই রোজালিন্ডের মুখে। ভেবে ভেবেও এর কারণ খুঁজে পায় না সিলিয়া।
একদিন সে মুখ ফুটে বলেই ফেলল, তুমি আমায় মোটেও ভালোবাস না রোজালিন্ড। তোমার জায়গায় আমি হলে কিন্তু
এভাবে মুখ কালো করে বসে থাকতাম না। তোমার বাবা যদি আমার বাবাকে রাজ্যছাড়াও করতেন,
তবু আমি নিজের বাবার মতো মনে করতাম তোমার বাবাকে।
জোর করে মুখে হাসি এনে রোজালিন্ড বলল, বেশ তো, এই কথা! এবার থেকে বাবার কথা ভুলে
গিয়ে দিনরাত তোমার সাথে হেসে হেসে কথা বলব, তাহলে হবে তো?
নিজেকে সামলে নিয়ে আস্তে আস্তে বলল
সিলিয়া,
“তুমি আমার ভূল বুঝো না রোজালিন্ড। তুমি তো
জান আমি বাবার একমাত্র সস্তান। তার অবর্তমানে সব সম্পত্তির মালিক হব অমি। আমি কথা
দিচ্ছি তোমার বাবার কাছ থেকে অন্যায়ভাবে কেড়ে নেওয়া সম্পত্তি তখন আমি ফেরত দেব।
দোহাই তোমার! একটু হাসো। এভাবে মুখ কালো করে বসে থেক না।”
হেসে বলল রোজালিন্ড,
“দেখো সিলিয়া! ভালোবাসার খেলা খেলে একটু মজা
করে দেখলে হয় না?”
কপট শাসনের ভান করে চোখ পাকিয়ে বলল
সিলিয়া,
“তবে রে মেয়ে! মনে মনে এসব ফন্দি আঁটা হচ্ছে? চারপাশটা একবার দেখে নিয়ে চুপি চুপি বলল, “মজা করলে তো ভালোই হয়! দেখো, প্রেমের খেলা খেলতে সেটা যেন শেষে আবার সত্যি হয়ে না দাড়ায়।
সায় দিয়ে রোজালিন্ড বলল, হ্যা, সেটা তো একটা ভাববার বিষয়।
এমন সময় সেখানে এসে হাজির হলেন লাবো
নামে ডিউক ফ্রেডারিকের এক পারিষদ। তিনি সরাসরি
রোজালিন্ড আর সিলিয়াকে উদ্দেশ্য করে
বললেন,
“তোমরা এখানে বসে আছ? খানিক আগে
একটা সুন্দর কুস্তির লড়াই হয়ে গেল তা দেখলে না তোমরা? আমাদের কুস্তিগীর
চার্লসের সাথে লড়তে এসেছিল
এক ব্যাটা বুড়োর তিন জোয়ান ছেলে।
চার্লসের কুস্তির প্যাঁচে ওদের তিনজনেরই বুকের হাড় ভেঙে গেছে। ওদের কাধে নিয়ে বুড়ো বাপটা কাদতে কাদতে বাড়ি ফিরে গেছে। এখন এই ময়দানে শুরু হবে কুস্তির আসল খেলা।”
ধীরে ধীরে এগিয়ে এল দ্বিতীয়
লড়াইয়ের সময়। সপারিষদ ডিউক ফ্রেডারিকও হাজির হয়েছেন সেখানে। সিলিয়াকে দেখে তিনি বললেন, “এবার
চার্লসের সাথে যার লড়াই হবে সে একটা কমবয়সি
ছেলে। সবাই তাকে নিষেধ করেছে চার্লসের সাথে লড়তে। কিন্তু সে কারও কথা শুনছে না- বলতে বলতে অন্যদিকে চলে গেলেন ডিউক। এবার সিলিয়ার অনুরোধে লাবো গিয়ে নিয়ে
এলেন চার্লস-এর তরুণ প্রতিদ্বন্দ্বীকে। রোজালিন্ড তাকে জিজ্ঞেস করল, “তাহলে তুমিই লড়তে চাও চার্লসের সাথে?”
বিনীতভাবে জবাব দিল অরল্যান্ডো, রাজকন্যা! আমি একজন প্রতিদ্বন্দ্বী। শুধু নিজের শক্তি পরীক্ষার আশায় আমি
সাড়া দিয়েছি ওর আহবানে।
সিলিয়া বলল, তুমি কি জানো, এটা তোমার নিছক হঠকারিতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
কারণ চার্লস-এর সাথে লড়াইয়ে আজ পর্যস্ত কেউ জেতেনি, প্রতিদ্বন্দ্বীকে
হারিয়ে ও তার হাড়-পাঁজরা ভেঙে দিয়েছে। তোমার অল্প বয়স, ওর
সাথে লড়তে গিয়ে যদি তোমার মৃত্যু হয় তাহলে সেটা খুব দুঃখের ব্যাপার হবে। এখনও
বলি, ওর সঙ্গে লড়াইয়ের আশা ত্যাগ কর।
অরল্যান্ডো বলল, আপনাদের ভয় যে নিছক অমূলক নয় তা আমি জানি রাজকন্যা। কিন্তু এখন
আর ফেরার রাস্তা নেই। আমি মারা গেলেও কোনও দুঃখ নেই, কারণ
আমার জন্য কাঁদবার কেউ নেই।
“হায়! আমার সবটুকু
শুভেচ্ছা দিয়ে যদি তোমায় আটকে রাখতে পারতাম!” বলল রোজালিন্ড।
“আমারও সেই মত”, সায় দিয়ে বলল সিলিয়া,
“ক্ষমতা থাকলে আমার সবটুকু শুভেচ্ছা দিয়ে বেঁধে রাখতাম তোমায়।”
লড়াইয়ের
ঘন্টা বেজে উঠতেই চার্লস মঞ্চে উঠে অভিবাদন জানাল ডিউককে।
ডিউক বললেন, “চার্লস, তুমি মাত্র এক রাউন্ড খেলবে। মনে রেখ, প্রতিদ্বন্দ্বী
মাটিতে পড়ে যাবার পর তুমি আর তাকে ছোবে
না।”
“আপনার আদেশ শিরোধার্য”, বলল চার্লস, “এক রাউন্ডই আমার পক্ষে যথেষ্ট। প্রতিদ্বন্দ্বী একবার আছাড় খেয়ে পড়ে গেলে সে
আর উঠে দাড়াতে পারবে না।”
এবার অন্যদিক
দিয়ে মঞ্চে এগিয়ে এল অরল্যান্ডো। ডিউককে অভিবাদন জানিয়ে এগিয়ে গেল চার্লসের দিকে। শুরু হয়ে গেল দুজনের
লড়াই। সবাই ধরেই নিয়েছিল সামান্য কিছুক্ষণের মধ্যেই চার্লস তার প্রতিদ্বন্দ্বীকে
মাটিতে আছড়ে ফেলে তার হাড়গোড় ভেঙে দেবে। খানিক বাদেই ডিউক চেঁচিয়ে বলে উঠলেন, “আর নয়, এবার লড়াই থামাও”।
এদিকে অরল্যান্ডোর
প্যাঁচে মাটিতে আছাড় খেয়ে চার্লসের অবস্থা তখন শোচনীয়। কয়েকজন লোক এসে ধরাধরি
করে নিয়ে গেল তাকে। অরল্যান্ডোর দিকে তাকিয়ে ডিউক বললেন, “কী নাম তোমার?”
অরল্যান্ডো
জবাব দিল, “স্যার রোল্যাল্ড ডি’বয়ের ছোটো ছেলে আমি-নাম অরল্যান্ডো।”
তার কথা শুনে
ভ্রু কুচকে গম্ভীর স্বরে ডিউক বললেন, তোমার বাবাকে সবাই খুব ভালোবাসত, শ্রদ্ধা ভক্তি করত-যদিও তিনি আজও আমার শক্র।
যাই হোক, তুমি ভালোই লড়াই করেছ। তুমি একজন বীর। ঈশ্বর
তোমার মঙ্গল করুন।”
Next Part
Next Part
No comments:
Post a Comment