পোপের ব্যঙ্গকাব্যে নারী এবং তার
শক্তি
পোপের(Alexander Pope) কাব্যে নারীশক্তির প্রকাশ
ঘটেছে নানা ক্ষেত্র থেকে। দি রেপ অব দি লক কাব্যের নায়িকা বেলিন্দা(Belinda) নিজে আত্মমগ্ন
একজন রমণী হিসেবে চিত্রিত হলেও তার শক্তিকে নানা রূপকের মধ্য দিয়ে প্রকাশ করতে
প্রয়াস পেয়েছেন তিনি। প্রথমেই তিনি বেলিন্দার রূপের প্রকাশ ঘটান। বেলিন্দার
রূপের এই যে জ্যোতি, এটা যেন সূর্যকেও ম্লান করে
দেয়। সূর্য তার সকল আলোকধারা নিয়ে
হার মানে তার কাছে। আর তার পৃষ্ঠদেশের লম্বা দুটো বেণী যেন কবির বর্ণনায় শক্তির বিশাল আধার। সে মোহনীয়
কালো চুলের বেণী দুটো সারা পৃথিবীকে
যেন সর্বদা চুম্বকের মতো আকর্ষণ করছে। বেলিন্দার রূপে মুগ্ধ ব্যারন, সে সর্বদা দগ্ধ হতে থাকে, বেলিন্দার
রূপ যেন তার বক্ষে তীরের মতো
বিদ্ধ হয়। বেলিন্দা কিন্তু এসবের কোনো খবর রাখে না, তোয়াক্কা করে না সে কোনো কিছুর। সে সর্বদা হাস্যে লাস্যে সময় অতিবাহিত করে, কিন্তু তার এই ভুবনমোহিনী রূপের ছটায় অ্যারিয়েলের মনে ভীতির সঞ্চার হয়।
সে আসন্ন
বিপদাশঙ্কায় শঙ্কিত হতে থাকে এবং বেলিন্দাকে ভয়াবহ বিপদ থেকে কীভাবে রক্ষা করা যায় এ জন্য তৎপর হয়ে ওঠে।
তাসের আসরে বেলিন্দা তাস খেলায় মত্ত
আর তার চারপাশে ভিড় করে থাকে ধনীকশ্রেণীর
অন্তঃসারশূন্য চিন্তার অধিকারী রূপমুগ্ধ তরুণেরা, যারা কেউ বেলিন্দার
হৃদয়ের ধারেকাছেও পৌছাতে পারে না।
ব্যারন তাসের আসরে বেলিন্দার প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে লড়তে থাকে। কিন্তু বারবার বেলিন্দার চালের মুখে সে
ধরাশায়ী হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত বিজয় ছিনিয়ে
নেয় বেলিন্দা। আর বেলিন্দার শক্তির কাছে পরাজিত ত্যারন যেন প্রতিহিংসায়
জ্বলে ওঠে। বেলিন্দার এই শক্তিকে আরো জোরদার করে তার চারপাশ ঘিরে থাকা অলৌকিক অশরীরী জীবেরা। পরাজিত ব্যারন শেষে কেটে ফেলে বেলিন্দার বেণী। এটা নিয়ে আবার শুরু হয় বাকবিতণ্ডা আর - সংঘাত । মোট কথা, এশ্বর্যশালী, রূপসী এই
রমণী তার নিজের রূপের মধ্যেই যেন তার
সমস্ত শক্তিকে আবদ্ধ করে রেখেছে। সে কারো কাছে ধরা দেয় না। রূপমুগ্ধ এই সমস্ত মূর্খ তরুণেরা, প্রেমিকেরা তার এই ভুবনমোহিনী শক্তির কাছে যেন বারবার পরাজয় বরণ করেছে।
দুষ্টা পরী ক্লারিসা, যে সর্বদা
ব্যারনকে সহযোগিতা করছে বেলিন্দাকে পরাজিত করার জন্য। এই ক্লারিসার তুলে দেয়া কাঁচি দ্বারাই ব্যারন বেলিন্দার চুলের বেণী কর্তন করতে সমর্থ হয়। এখানে ক্লারিসাকে দ্বৈত ভূমিকায়
অবতীর্ণ হতে দেখা যায়। বেণী
কর্তনের পর বেলিন্দা যখন রীতিমতো হাহাকার করছে তখন ক্লারিসা এগিয়ে আসে সান্ত্বনার বাক্য নিয়ে। নীতিগর্ভ
বক্তৃতার মধ্য দিয়ে সে বেলিন্দাকে
সান্ত্বনা দেয়। আবার বেলিন্দাকে জানায়,
যেসব রমণী অত্যধিক অহঙ্কারী এবং রূপের গর্বে যাদের মাটিতে পড়ে না তাদের এমনই দশা
হয়।
পোপ নায়িকা বেলিন্দাকে হাস্যরসের তুরীয়
পর্যায়ে নিয়ে আসেন। পোপ দেখান,
বেলিন্দার বেণী যখন ব্যারন কর্তৃক কাটা হয় তখন সে বেণী বহু চেষ্টাতদ্বির করেও বেলিন্দা ফেরত পায় না।
অবশেষে কাতর কন্ঠে প্রার্থনা জানায়
বেলিন্দা। পোপ দেখান, বেলিন্দার বেণী এমন স্থানে আসীন, যেখানে প্রেমিকদের হৃদয় বাধা আছে নরম ফিতায়।
মক্ষীকা বাঁধা আছে শেকলে, আরো
সেখানে আছে মৃত সব প্রজাপতি আর
বস্তা পচা সব আলাপ, বিতর্ক।
এসব বিষয়ই নির্মল হাস্যরসের জোগান
দেয়। অবশেষে নায়িকা বেলিন্দাকে এই বলে
আশ্বাস প্রদান করা হয় যে উর্ধ্বলোকে দৃষ্টিপাত করো।
তার বেণী চিরকাল জাগরূক
থাকবে নক্ষত্রলোকে, পৃথিবীতে যে উল্কাপিণ্ড ছিটকে পড়বে সেই উল্কার লেজের পেছনে পেছনে উজ্জ্বল বর্ণবিভাসহকারে দেখা যাবে বেলিন্দার চুলের বেণী। প্রেমিকেরা চিরকাল স্মরণ করবে বেলিন্দার বেণীর কথা,
জ্যোতিষিরা আকাশে উজ্জ্বল আলোক প্রভা রূপে দেখতে পাবে বেলিন্দার বেণী। নক্ষত্রলোকে অপরূপ মহিমায় স্থাপিত,
হবে তার বেণী। পৃথিবীর কবিকুল
অমর সব কাব্যগাথা রচনা করবে তার বেণী নিয়ে। মহাকাব্যের সমাপ্তি পর্বে যেমন পাত্র-পাত্রীদের স্থান হয় সত্যলোকে যেমন কীর্তিত হয় তাদের কীর্তিগাথা, বেলিন্দার
বেণীকে ঠিক তেমনি মহাকাব্যিক
গাম্ভীর্যতায় সম্মানে স্থান করে দিয়েছেন কবি
উর্ধ্বলোকে।
No comments:
Post a Comment