The Rape of the lock
Alexander Pope
Canto 5 Bangla Translation
দ্যা রেপ অফ দ্যা লক বাংলা অনুবাদ - ৫ম পর্ব
বেলিন্দা জানাল হৃদয়ের ব্যথা অশ্রজলে ভেসে,
ব্যথাভারাতুর শ্রোতাকুলও ভাসে অশ্রুজলে।
কিন্তু নিয়তির বিধানে ব্যারনের কানে পৌছে না কিছুই,
খাণ্ডার নারী থেলেস্ট্রিসের গালিও ঢুকল না তার কানে
রূপসী বেলিন্দা ব্যর্থ যেখানে সেখানে কী আর থাকে?
এতটা প্রতাপ ছিল ট্রয়ের বীরের মাঝে
অ্যানার অনুরোধে যখন ডিডো ছিল স্থির।
নীরব ক্লারিসা যখন নাড়ল তার হাতের পাখা
নেমে এল নীরবতা বেলিন্দার কণ্ঠে জোগাল কথা ।
বলো দেখি, রূপসী নারীদের কেন এত রূপবন্দনা, এতটা সম্মান
উৎসুক সুধীজনের অহেতুক মানুষের কল্যাণ কামনা
কেন যে তারা জলেস্থলে করে তাদের রূপের অর্চনা
কেন যে কীর্তিত হয় রূপসীরা দেবীরূপে, ভিড় করে সুসজ্জিত ভদ্রজনেরা
কেন পাশে বসে থাকা যুবা ঘাড় কাত করে তাকায় মোদের পানে?
ব্যর্থ হয়ে যায় মোদের সকল সাজসজ্জার বাহার
যদি না সংযম এসে রূপকে না দেয় বাধা।
যদি না প্রথম সারির দর্শকেরা মোদের দেখে না বলে
ওই দেখো, ওই সুন্দরী রূপে গুণে কত না সংহত।
আহা, যদি কোনো রূপসী মোহনীয় পোশাকে নেচে গেয়ে
হঠাতে পারত বসস্ত রোগ আর বার্ধক্যের কাল,
তাহলে গৃহবধূদের অস্থিরতায় কতজনাই
কে শিখে নেবে জরুরি সব বিষয়ের কথা?
কেন যে এতটা সাজগোজ, নিজেকে সজ্জিত করা
এটা তো নিশ্চিত নয় যে রূপ টিকে রবে চিরকাল
কিন্তু বড়োই দুঃখ, রূপরাশি ধীরে ধীরে হয়ে যায় ক্ষয়
কুঞ্চিত আর অকুঞ্চিত সব কালো কেশ একদিন হবে সাদা
সজ্জিত কিংবা এলোমেলো সবই হয়ে যাবে ম্লান
রূপসীর বিলোল কটাক্ষে হয়ত কোনো পুরুষ হবে ঘায়েল
তাহলে মোদের থাকে না কিছুই রূপের বিলুপ্তিতে,
তবুও হতে হবে সুস্থির হারালেও সবকিছু?
রাখো ভরসা মোর ‘পরে তুমি সজীব রবে চিরকাল
যখন ক্রোধ, অস্থিরতা, হুল্লোর, চিৎকার লাগবে না কোনো কাজে।
রূপসীর বিলোল কটাক্ষ ব্যর্থতায় ঢেকে যেতে পারে,
দৃষ্টিতে ঘটাতে পারে বিভ্রম, কিন্তু যোগ্যতাই শুধু টিকে থাকে।
ক্লারিসার বাণীতে রমণীকুল দিল না হাততালি।
ঠোট ওল্টাল বেলিন্দা। থেলেস্ট্রিস দুষ্টা নারী বলে তাকে দিল গালি।
ভয়াল চিৎকারে বলল রমণী, যুদ্ধ, এবার যুদ্ধ,
বলেই বিদ্যুৎ বেগে ধাবিত হল সে যুদ্ধের ময়দানে।
সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ল এবার যুদ্ধের ডামাডোলে
হাতপাখা, রেশমি, পশমি, তিমির হাতের পেটিকোট বন্ধনী হল সরব
জাগল হট্টগোল নায়ক আর নায়িকার চিৎকারে
নারীর কোমল আর পুরুষের উষ্ণ চিৎকার উঠল উর্ধ্বাকাশপানে।
সামান্যতম অস্ত্রও নেই তাদের দু’হাতে
দেব-দেবীদের মতোই যুদ্ধে সাহসী তারা, আঘাতের করে না পরোয়া।
এ যেন হোমারের ইলিয়াড খ্যাত দেব-দেবীর ভয়াল সমর
মানবের জিঘাংসা আর হিংসায় উত্থিত হয় দেব-দেবীকুল,
প্যালাসের বিরুদ্ধে নামে যুদ্ধে মার্স,
জুপিটার প্রেমিকা লেটোনাকে করতে ঘায়েল প্রস্তুত হার্মিস
অলিম্পাস পর্বতমাঝে ধ্বনিত হয় যুদ্ধের প্রতিধ্বনি
আকাশ বাতাস কাপায় জিউসের বজ্রের ধ্বনি
সমুদ্র উত্তাল ঢেউয়ের দোলায় নেণচুন ফোসে ক্রোধে
মৃত্তিকা ফেটে যায়, থর থর কাপে প্রাসাদের গম্বুজ
দিনের আলোয় চমকে জাগে পাতালের প্রেতকুল।
আম্ব্রিয়েল বিজয় আনন্দে বসে বাতিদানে
দেখে যুদ্ধের ডামাডোল, আর উল্লাসে পাখা ঝাপটায়,
চুলের কাঁটার পরে বসে অদৃশ্য জীবেরা যুদ্ধ দেখে
আর ভয়াল সমরে তারা সাহস জোগায়।
রেগে ধায় থেলেস্ট্রিস, যোদ্ধাদের পানে,
চারপাশে মৃত্যুরা করে সদা ভ্রুকুটি রক্ত নয়নে
ফিটফাট পুরুষ আর এক যুবা চলে গেল মরণের পারে
মরল একজন রূপের ঝলকে অন্যজন সংগীত সুধায়।
শোনো বেদরদী রূপসী শেষ হলাম আমি
বলেই সে ঢলে পড়ল চেয়ারের হাতলে।
স্যার ফপলিং তাকালেন উর্ধ্বে ব্যথিত নয়নে
ওই নির্মম আখি, বলেই ঢলে পড়লেন মৃত্যুর কোলে।
পুষ্পদলে ছাওয়া মিয়ান্ডার নদীর কূল ঘেঁষে
রাজহংস তার মরণগীতি গেয়ে গেয়ে চলে গেল পরপারে।
ক্লারিসাকে টেনে নামাল নিচে স্যার প্লিউম
এগোতেই ক্লো, ঘায়েল হল সে আঁখির বাণে,
বীর নায়কের মৃত্যুতে ক্লারিসা হাসল বিজয়ের হাসি
আর সে হাসিতেই নায়ক জীবিত হল ফের।
জিউস এবার আকাশে মেলেন মানদণ্ড তার
এক পাল্লায় রাখেন জ্ঞান অন্য পাল্লায় নারীর কেশগুচ্ছভার।
নড়ে ওঠে দাঁড়িপাল্লা, কখনো এপাশে কখনো ওপাশে হয় ভারী
শেষে বুদ্ধির পাল্লা উঁচু হতেই কেশের পাল্লা নামল নিচে।
প্রচণ্ড ক্রোধে বেলিন্দা ব্যারনকে করে আক্রমণ
ক্রোধের অগ্নি ঝলকায় তার চোখে
বেমানান এই যুদ্ধে সে জড়াল না নিজেকে
সে চায় মরণ শুধু বেলিন্দার হাতে।
শক্তিমান সাহসী ব্যারন নীরবে সয় আক্রমণ
বেলিন্দা দু আঙুলে তুলে নিল নস্যির পাত্রখানি
ধরল ব্যারনের নাকে যেথা বয় সদা সঞ্জিবনীর নিঃশ্বাস
খানিকটা নস্যি ছুড়ে দিল সে নাস্যিপাত্র হতে
ব্যারনের সর্বাঙ্গে বালির মতো ছড়াল তা অদৃশ্য জীবেরা
অসহনীয় তীর্যক বালিকণা সব
হঠাৎ অশ্রুর বান ডাকল ব্যারনের দুচোখে
তার নাসিকার হাঁচি প্রতিধ্বনি তোলে প্রাসাদের গম্বুজে।
এবার সামলাও, ক্ষিপ্ত বেলিন্দা করল চিৎকার
খুলল সে কেশ হতে সুতীক্ষ্ণ পিন।
যে পিন দ্বারা তার পূর্বপুরুষ সজ্জিত করত গর্দান
গলিত ধাতুর তৈরি সেটা আর চক্রের চিহ্ন আঁকা তাতে
বেলিন্দা পরল এবার বিধবার গাউনের বন্ধনী
ওর দাদিমার বন্ধনীতে যেটা করত ঘণ্টাধ্বনি
ঘণ্টা বাজলেই এই বন্ধনীতে জাগত আওয়াজ
অতঃপর বেলিন্দার মাতা এটা বানায় চুলের পিন
বহুকাল পরে বেলিন্দা এটা করে ব্যবহার।
ক্রোধোন্মত্ত বলল ব্যারন, পরম শত্রু আমার
এতটা গর্ব কোরো না আমার পতনে
অন্য আরেকজন তোমার ঘটাবে পতন।
ভেবো না মৃত্যুভয় আর হতাশায় ডুবে গেছি আমি
তোমাকে ছেড়ে চলে যেতে হবে এই মোর সংশয়!
তা হবে না, বাঁচতে নাও মোরে এ জগতে
জীবিত থাকব আমি প্রেমের জ্বলন্ত অগ্নিতে।
ফেরত চাই মোর কাটা বেণী, বেলিন্দা জানায়
তার সে কথা প্রতিধ্বনি হয়ে ফেরে ছাদের কিনারায়।
এতটা বজ্রনির্ঘোষে ওথেলোও করেনি চিৎকার
হারিয়ে যাওয়া তার রুমালের তরে।
ভেবে দেখো কত না উচ্চাকাঙ্ক্ষার হয় যে লয়
সবকিছু হারিয়েও নেতৃসকল মেতে থাকে কলহে!
অন্যায় পথে অর্জিত বেণী তীব্র বেদনায় হচ্ছে রক্ষিত,
চারপাশে চলছে অনুসন্ধান, সব ঢেকে গেল ব্যর্থতায়।
এমন পুরস্কারের নেই কোনো নৈতিকতা
এই তো ঐশ্বরিক বিধান, স্রষ্টার সাথে হয় না যুদ্ধ কোনো।
কেউ কেউ ভাবে কাটা বেণী চলে গেছে চন্দ্রলোকে,
পৃথিবীতে যা কিছু হারায় তা জমা হয় চাদের আলয়ে।
যেথা নায়ককুলের জ্ঞান জমা হয় চাদের পাত্র ভরে,
আয়েশী জনদের বোকামি হয় জমা নস্যিপাত্র আর চুল ওঠানোর চিমটাতে।
যেথা মেলে মিথ্যে শপথ আর মৃত্যুশয্যায় দান করা সামগ্রী সকল
আর প্রেমিককুলের পরান বাধা থাকে কোমল রশিতে
আমলার দেয়া আশ্বাস, রুগ্ন রোগীর প্রার্থনা,
বারবণিতার হাসি, অংশীদারের অশ্রুজল,
ডাশপোকাদের পাত্র আর মাছি বাঁধার শেকল,
মৃত প্রজাপতি আর বস্তা পচা সব প্রলাপরাশি।
মিউজের সাথে রাখো সংযোগ, বেলিন্দার বেণী দেখলেন তিনি তাকিয়ে উর্ধ্বপানে,
না এলেও নজরে আর কারো তিনি দেখেন তা কাব্যিক চোখে.
ঠিক এভাবেই হয়েছিলেন উর্ধ্বগামী রোমের প্রথম রাজ রমুলাস
তবুও তিনি সভাসদ প্রকুলাসের দ্বারা পাঠালেন তার বাণী,
নবীন হাওয়ায় এল ধেয়ে এক উল্কাপাথর
উল্কার পেছনে ঝোলে সেই উজ্জ্বল বেণী
টলেমির পত্নী বেরিনেসেরও চুল ছিল না এতটা উজ্জ্বলতর
এলায়িত সে কেশে আকাশ করে ঝিকমিক
রূপসীরা উর্ধ্বে তাকিয়ে দেখে বেলিন্দার চুলের ঝলক
পরমানন্দে তারা দেখে উড়ে যাওয়া কুন্তল
এবার ঝিলিক দেয়া আলোকধারায় তাকাবে প্রেমিকদল
লন্ডনের বিলাসবহুল বাণিজ্যকেন্দ্র হতে
সুরে সুরে তারা করবে আবাহন এই উজ্জ্বল কিরণ।
প্রেমিকেরা ভাববে এটা সৌন্দর্য প্রেমের দেবতার
এটা দেখে মর্ম যাতনায় মরে যাবে প্রেমিকের দল
জেমস পার্কের জলা থেকে পাঠাবে বিশ্বাসী স্বীকারোক্তি
জ্যোতিষপ্রবর প্যাট্রিজ আকাশে দেখবে এ আলোকরাশি
যখন সে দূরবীণ হাতে তাকাবে সুদূর আকাশে
অতঃপর সেই যাদুকর জানাবে
চতুর্দশ লুই আর রোমের পতনবারতা।
এবার থামো হে রূপসী চুলের তরে কোরো না ক্রন্দন
আলোকিত আকাশসীমায় স্থাপিত তোমার চুল অপরূপ মহিমায়।
কোনো রূপসীর কেশগুচ্ছ কখনো পায়নি এমন সম্মান
কোনো চুল আর জাগাতে পারবে না এমন অহঙ্কার
তোমার কেশরাজি যতটা করেছে গৌরব অর্জন
তোমারি আঁখির কটাক্ষে নিহত কত না জন
হাজারো পুরুষ হত করে তোমারও হবে মরণ,
একদিন তোমারও দুচোখ যাবে নিশ্চয় অস্তাচলে
যখন তোমার অপরূপ কেশ ঢুকে যাবে মৃত্তিকাতলে
তোমার কাটা বেণীর গাথা জীবস্ত হবে কবির লেখনীতে অপরূপ মহিমায়
তারাদের ভিড়ে আঁকা হবে, বেলিন্দা, তোমারই নাম।
No comments:
Post a Comment