The Rape of the lock - Alexander Pope - Canto 3 Bangla Translation |
The Rape of the lock
Alexander Pope
Canto 3 Bangla Translation
দ্যা রেপ অফ দ্যা লক বাংলা অনুবাদ - তৃতীয় পর্ব
তৃণাচ্ছাদিত প্রান্তরে মুকুটশীর্ষের মতো ফুটে থাকে পুষ্পরাজি
টেমস নদী হতে দূরে দৃশ্যমান বৃহৎ গম্বুজশীর্ষ
সেথায় দাঁড়িয়ে
এক
বিশাল
রাজকীয়
প্রাসাদ
নিকটেই হ্যাম্পটন, হ্যাম্পটন কোর্ট নামে যার পরিচিতি
হেথা হতে বিটিশ নীতিনির্ধারণকারীগণ আভাস দিতেন রাজকীয় পতনের
আর এ দেশের রমণীদের চরিত্র স্থলনের।
আর হেথা হতে তিনটি রাজ্যের অধিপতি মহীয়সী রানী অ্যানি
নিতেন নানা পরামর্শ, আর করতেন চা পান।
এই সেই স্থান যেখানে কাটাতেন অবসর বীর আর বীরাঙ্গনাগণ
আসতেন হেথা ক্ষণিক বিনোদন আশা করে;
নানা খোশগল্প, শলাপরামর্শে কাটাতেন অলস সময়,
আর হেথা বল নাচে যোগ দিত যারা
তাদের কেউ করতেন মহীয়সী রানীর মহিমা কীর্তন
আবার কেউবা বলতেন ভারতীয় পর্দাপ্রথার কথা
কেউবা আবার অঙ্গভঙ্গি করে বিলোল কটাক্ষে ব্যাখ্যা দিতেন তার
যার প্রতিটি উচ্চারণে ঘটত যশের অপমৃত্যু ।
হাতপাখার ঘূর্ণন, নস্যির টিপ নিতে ছেদ পড়ে মাঝেমধ্যে খোশগল্পে
হাসিগান, বিলোল কটাক্ষ আর চলে কত হৈ হল্লা!
এরই মাঝে ক্রমে গড়িয়ে যায় দিন
বিকেলের সূর্য ছুড়ে উজ্জ্বল তীব্র কিরণ
ক্ষুধাশ্রান্ত বিচারকগণ শেষ রায়ে দেন সহি,
অপেক্ষা করে আসামিরা, জুরিদের খেতে দেয় অবসর
বেচাকেনা শেষে বাজার হতে ব্যবসায়ী ফেরে খুশি মনে।
প্রসাধনকর্মের সকল প্রস্তুতি হয় সমাপন,
রূপসী বেলিন্দার কাছে এলো এবার পান করার আমন্ত্রণ
বেলিন্দা এবার মুখোমুখি হতে চায় সাহসী দুই নাইটের
তুরুপের তাসে হারাতে তাদের
গর্বিত বুকে বেলিন্দা থাকে অপেক্ষায়।
তিন পক্ষ এবার অস্ত্র হাতে রীতিমতো প্রস্তুত,
প্রত্যেকের হাতে ধরা নয়টি করে তাস,
বেলিন্দা তার হাত খুলতেই নেমে আসে অদৃশ্য প্রহরীদল
আর বসে থাকে ওরা চিহ্নিত তাসের ওপর
তুরুপের তাস হাতে শুরুতেই নামল অ্যারিয়েল
আর অন্যেরা সবে বসেছে নির্ধারিত তাস হাতে করে
পরীদল হল সচেতন তাদের অতীত মনে করে
রমণীকুলের মতোই তারা আবাস বিষয়ে সচেতন ।
বিনম্র শ্রদ্ধা
জাগায়
মনে
চার
রাজা
তাদের সফেদ গোফ আর দীর্ঘ লম্বিত দাড়ির জন্যে,
আর চার রানী হাতে ধরে আছে চারটি পুষ্প
পুষ্প গুলো
তাদের
কমনীয়তা
আর
সম্মানের
প্রতীক,
সুসজ্জিত তাসের গোলামেরা, সজ্জিত কত অনুচর
মস্তকে শোভে তাদের বিচিত্র উষ্ণীষ, আর হস্তে কুঠার
সারি সারি দণ্ডায়মান কত না সেনাদল,
সমতল এই গালিচা পরে নিল যুদ্ধের প্রস্তুতি।
সুচতুর পরী রানী গোপনে খবর নিল তার বাহিনীর অবস্থানের
হোক তাস ইস্কাবনের কিংবা এবার হোক তুরুপ, হল তাই।
এবার দাড়াল ফিরে কালো যোদ্ধারা যুদ্ধের তরে
দেখতে তারা ঠিক যেন মুর সেনানায়কের মতো।
প্রথমে এগোল স্পাডিলিও, তাসের অজেয় সম্রাট।
দুটো তুরুপে কুপোকাত করে জয় করল নিশ্চিত
আর ম্যানিলিও করল পরাস্ত প্রতিপক্ষের কত না যোদ্ধা,
বীরদর্পে সম্মুখে আগুয়ান তারা যুদ্ধের ময়দানে
চলতে চলতে বেস্টো পড়ল মহা সংকটে
তুরুপের তাস আর ছোট্ট একটি তাসের কবল থেকে নিজেকে বাচাল কোনোমতে।
এবার এল সবার সেরা তাস তরবারি হাতে করে
শ্বেত বসনার রূপ নিয়ে ময়দানে এল ইস্কাবন।
দেখা যায়, গৌরবাদ্বিত পদভারে সে আসছে এগিয়ে
কত না বিচিত্র আবরণে ঢেকেছে নিজের শরীর
বিদ্রোহী প্রতারক অস্ত্রধারণ করে রাজার বিরুদ্ধে
শেষে রাজ রোষে হয় তার চূড়ান্ত পতন।
রাজা রানীর ঘটিয়েছে পতন যে শক্তিধর পাম
আর ছত্রভঙ্গ করেছে লুতাসের সেনাদল
যুদ্ধের এই ভয়াল অঘটনে বিনা সহযোগিতায়
রণজয়ী ইস্কাবনের হাতে চুড়ান্ত পরাজয় ঘটেছে তার
এবার দু’পক্ষের সেনাদল বেলিন্দার হাতে পরাজিত,
এরপর ঘুরে গেল বেলিন্দার ভাগ্যের চাকা।
বেলিন্দার রমণী অনুচরদের পরে করে আক্রমণ,
ইস্কাবনের সেই রানী মহারানী।
চিরিতনের সেই অত্যাচারীর হল প্রথমেই পতন
চূর্ণ হল তার যুদ্ধের সকল গর্ব আর অহঙ্কার
মুকুটে শোভিত তার রাজকীয় চিহ্ন লাগল না কোনো কাজে
বিশাল শরীর তার গড়ায় মৃত্তিকা ‘পরে।
ব্যারন এবার নামায় মাঠে তার রুইতন সেনাদল
বিচিত্র ভূষণে সজ্জিত রাজার আংশিক দেখা যায়
অর্ধেক নজরে আসে তার রূপসী রানী আর সজ্জিত সেনাদল
শক্তি সঞ্চয় করে আবার ফিরিয়ে আনে চূড়ান্ত বিজয়।
হরতন, রুইতন, চিরিতন সব ঘোরে এলোমেলো,
প্রেমিক প্রবর দল লুটায় সবুজ জমিনে।
অবশেষে পরাজিত যোদ্ধারা দিতে থাকে পিঠটান,
এশিয়া কিংবা আফ্রিকার কালো সেনাদের মতো
দিশেহারা হয়ে বহুজাতিক যোদ্ধারা যেমন পালায়
নানা দেশের নানা বর্ণের যোদ্ধাদল যেমন।
আহত, আক্রান্ত সেনা দল ছত্রভঙ্গ হয়ে দেয় রণভঙ্গ
নিয়তির অমোঘ বিধানে
গাদাগাদি করে তাঁরা লুটায় জমিনে।
রুইতনের গোলাম এবার খেলে তার চালাকির খেল
আহা, বড়োই লজ্জার কথা, বগলদাবা করল হরতনের রানী।
এ দেখে যুবতীর ফ্যাকাশে হল মুখ
রূপসীর সুন্দর মুখ ভয়ে হল নীল,
সমুখে বিপদ বুঝে গায়ে কম্প দেয় তার
শিহরিত হয় ভেবে তার অনিবার্য পতন
ফের মরিয়া হয়ে গোছায় নিজেকে,
ছিন্নবিচ্ছিন্ন রাজ্যপাটে যেমন নানা কৌশলে
মুক্তিবারতা নিয়ে আসে প্রজাদের দ্বারে।
এবার এগিয়ে এল হরতনের টেক্কা, পিছে তার
আসে গোপনে এক রাজা, বন্দী রানীর তরে করে হাহাকার
প্রতিশোধ নিতে দর্প ভরে দিলেন শূন্যে লাফ
বজ্রের মতো পতিত হলেন টেক্কার পরে।
এ দৃশ্য দেখে কুমারীদের উল্লাসে ভরে পুরোটা আকাশ
শব্দের প্রতিধ্বনি জাগে দেয়াল, বনানী, আর যত ঝর্ণার জলে ।
হায় রে অনিত্য মানবকুল ভাবে না নিয়তির কথা
আকস্মিক হতাশা, কিছুটা আশার উচ্ছ্বাস;
লুষ্ঠিত হয় নিমেষে সকল সম্মান
বিজয়ের দিনগুলো অভিশাপে যায় ভরে।
তাকিয়ে দেখো, পেয়ালা চামচ রাখা আছে সারি সারি
শোনা যায় বেরি আর কফিবীজ পেষণের যাস্ত্রিক আওয়াজ
জাপানি ঝকমকে ট্রের ‘পরে
তারা
প্রদীপ
জ্বালায়
রুপালি সে প্রদীপের বিভায় ঝলসে ওঠে অগ্নিদেবী
রৌপ্য নির্মিত পানীয় পাত্রের নল থেকে নির্গত হয় সুপেয় পানীয়
অতঃপর ধূমায়িত পাত্র তারা করে গ্রহণ।
সুগন্ধে আর স্বাদে মন ভরে পানকারীর
ঘন ঘন চুমুকে তারা পানপাত্র করে নিঃশেষ,
দীর্ঘতর হয় পানকারীর বিলাসী ভোজন
বেলিন্দাকে সঙ্গ দিয়ে চারপাশে ওড়ে অলৌকিক অনুচর
কেউ তার গরম পানীয়ে দেয় ঠাণ্ডা হাওয়া
কেউবা ক্রোড়ে তার বিছায় পালকের আচ্ছাদন
সদা সচেতন আর ভীত তারা বেলিন্দার ব্রোকেটের
তরে।
কফিপানে রাজনীতিবিদগণের খুলে যায় বুদ্ধির দুয়ার
ঢুলু ঢুলু চোখে তারা সব করে অবলোকন
জলীয় বাষ্প গিয়ে স্থান নেয় ব্যারনের মস্তিষ্কে
বেলিন্দার মোহনীয় সেই কেশগুচ্ছ, পেতে নতুন পরিকল্পনা করে উদ্ভাবন।
আহ, থামো দুরস্ত যুবা, সাবধান হও অঘটনের আগে
মহান ঈশ্বরে করো ভয়, ভাবো একবার সিল্লার পরিণাম
পাখিরূপ ধরে তাকে দিতে হল বাতাসে উড়াল
সে চেয়েছিল নিসাসের কেশগুচ্ছ ভোগান্তি হল তার শেষে।
নশ্বর মানবকুল যখন ঘটাতে চায় কোনো অঘটন,
তখনি সে বলীয়ান হয় অশুভ অস্ত্রবলে।
আর তখনি হঠাৎ লোভে মত্ত ক্লারিসা
খাপ হতে দু’ধারী কাঁচিখানা করল বাহির
আর এভাবেই প্রেরণা জোগায় রঙ্গিনী রমণীরা তাদের প্রিয় নাইটদের
হাতে তুলে দেয় বল্লম, সাজায় তাদের যুদ্ধসাজে।
মাথা নত করে ব্যারন হাতে তুলে এই ক্ষুদ্র অস্ত্র, আঙুল ঢোকায় তাতে,
কাঁচিটা বেলিন্দার ঘাড়ের পেছনে রাখল গোপনে
বেলিন্দা যখন উষ্ণ চা পানের তরে মাথা করে নত
দ্রুত ধেয়ে এল কেশগুচ্ছে তার হাজারো রক্ষীদল
হাজারো ডানার ঝাপটায় উড়ে বেলিন্দার কেশরাশি
পরপর তিনবার তারা মোচড় দিল বেলিন্দার হিরকের দুলে
পেছনে তাকাল বেলিন্দা তিনবার, তিনবারই ধেয়ে এল শত্রুদল।
আর সে ক্ষণেই অস্থির অ্যারিয়েল
বুঝে
নিল,
কুমারী বেলিন্দার চিন্তাচেতনা আর মনের খবর।
অ্যারিয়েল
তার
নাক
বেয়ে
বেলিন্দার বুকে
বুঝে নেয় কুমারী ভাবনার সকল বিষয়-আশয়
সব বুঝেশুনে সে করে প্রয়োগ বিচিত্র কৌশল
বেলিন্দার বুকে সদা জাগরূক এক মর্ত্যের প্রেমিক
অবাক বিস্ময়ে হতবাক অ্যারিয়েল
হারাল
তার
শক্তিরাশি
নিয়তির বিধান মেনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে দূরে গেল সরে।
ব্যারন এবার বাগিয়ে ধরল কাঁচি বেলিন্দার যুগল বেণীতে
বেণীযুগল দ্বিখণ্ডিত করার তরে কাঁচিতে দিল চাপ
বেণীগুচ্ছ কর্তন শেষ হয়নি তখনো,
বেণীগুচ্ছ রক্ষার তরে অভাগা এক রক্ষী এল এগিয়ে
আর কেশগুচ্ছের সাথে পড়ল কাটা সেই প্রহরীও
কিন্তু অশরীরী জীব আবার নিল অবয়ব আগের মতোই
কুমারী বেলিন্দার মাথা হতে বিচ্ছিন্ন হল
চিরদিনের তরে আহা, অপরূপ তার বেণীযুগল।
বেলিন্দার দুচোখে ঠিকরায় ক্রোধের ঝিলিক
আকাশ চিরে গেল তার ভয়াল আর্তনাদে।
স্বামী কিংবা মারা গেলে সঙ্গী বিছানার কুকুর
এমন চিৎকার যায় নাকো কোনো,
দুর্লভ সব চীনামাটির
বাসনকোসন
পড়ে
গিয়ে
ভেঙেচুরে চুরমার হলেও
এমন প্রচণ্ড শব্দ ওঠে না তাতে।
এবার আমাকে বিজয়ের মাল্য করো দান
ব্যারন বলে উচ্ছাসে, এই মূল্যবান রতন এখন একাস্ত আমার।
যতকাল নদীজলে সাতার কাটবে মাছেরা
আর পাখিরা হাওয়ায় পাখা মেলে করবে উল্লাস
যত দিন ব্রিটেনের
রমণীরা
বসবে
ঘোড়ার
গাড়িতে,
যত দিন আটলান্টিস উপাখ্যান হবে পাঠ,
যতকাল নারীর বিছানায় রবে কোমল বালিশ,
যেথায় আসবে অতিথি শুভদিন দেখে,
যখন সারি সারি আলো দেবে উজ্জ্বল মোম শিখা
যখন পরীদল ব্যস্ত রবে তাদের নানা কাজে
তত দিন মোর বিজয় গাথা
রবে
চির
জাগরূক,
মহাকাশ যার ঘটাতে পারে না বিপর্যয়, মোর কাঁচি তা করেছে লয়,
এই ইস্পাত দেবকুলের কীর্তিকে করে বিলোপ
ট্রয়ের রাজকীয় হর্ম্যরাজি আঘাতে আঘাতে হয় লয়,
ইস্পাতের কাঁচিতে লয় হল কুমারীর গরিমা
ধূলায় লুটিয়ে পড়ে সুবিশাল সব তোরণরাজি,
অবাক হওয়ার কী আছে এতে, ওগো রূপসী, তোমার বেণীযুগল
আজ বিজয়ী কাঁচির কাছে মেনে নিল পরাজয়।
No comments:
Post a Comment