পরের পর্বের লিঙ্ক নিচে।
২য় পর্ব শুরুঃ
সে সময় ভিড়ের মাঝ থেকে টেচিয়ে বলে
উঠল কেউ,“মহামান্য সিজার।
আইডস অব মার্চ (১৫ মার্চ) দিনটা আপনার পক্ষে
অশুভ। আগে থেকেই আপনি সে ব্যাপারে
সাবধান হবেন”।
“কে বলল কথাটা”? জানতে চাইলেন সিজার।
সিজার আদেশ দিলেন, “যাও, লোকটাকে ধরে নিয়ে এস
আমার সামনে। আমি দেখতে চাই তাকে। সিজারের কথা শেষ হতে না হতেই ভিড়ের মাঝ থেকে
লোকটাকে টানতে টানতে সিজারের সামনে
এনে হাজির করল কাসকা।
সিজার বললেন. “তুমি? আবার বল তো কিছুক্ষণ আগে
তুমি আমায় যা বলছিলে।
লোকটি বলল, “আইডস অব মার্চ দিনটি আপনার পক্ষে অশুভ। তাই সাবধান হতে বলেছি আপনাকে।”
ভালোভাবে লোকটির মুখখানা দেখে সিজার
বললেন,
“বেচারা বোধহয় স্বপ্ন দেখছে। যাই হোক আমি এখন যাচ্ছি। উৎসবের যেন কোনও ত্রুটি
না হয়।'
কথা শেষ হবার পর স্ত্রী কালপুর্ণিয়া আর মার্ক অ্যান্টনিকে সাথে নিয়ে অন্যদিকে চলে গেলেন সিজার। শুধু ব্রুটাস আর ক্যাসিয়াস সেখানে দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করত লাগল সিজারকে নিয়ে।
এবার ব্রুটাসের দিকে তাকিয়ে বললেন ক্যাসিয়াস, “যাও হে, উৎসবের বাকিটুকু দেখে এস নিষ্পৃহ গলায় উত্তর দিল ব্রুটাস, “না ভাই, ও সব হইচই খেলাধুলা, অ্যান্টনির
ভালো লাগতে পারে, ওতে আমার কোনও উৎসাহ নেই। তুমি যা বলতে চাও, এইবেলা
বলে ফেল। আমায় আর উৎকণ্ঠার মাঝে রেখ না। এখন আমায় বাড়ি যেতে হবে।
কাতর স্বরে বলল ক্যাসিয়াস, “আজ-কাল দেখছি তুমি আমায় দেখতে পেলেই বেশ
গম্ভীর হয়ে যাও। আরও লক্ষ
করেছি আমার প্রতি তোমার স্নেহ-ভালোবাসাও সেরূপ
নেই। দয়া করে এর কারণটা বলবে কি?
অবাক হয়ে বলল ব্রুটাস, “কী বলছ তুমি? তোমায় দেখলে আমি
গম্ভীর হয়ে যাই? নিশ্চয়ই তুমি আমায় ভুল বুঝেছ ক্যাসিয়াস।”
“তোমাকে দেখে গম্ভীর হবার কোনও কারণ এখনও ঘটেনি। আসলে
ব্যাপারটা হচ্ছে মনের ভেতর যে অন্তর্দ্বন্দ হচ্ছে তাতেই ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছি আমি। এসব নিয়ে এত বিব্রত
আমি যে কোনও বন্ধুর সাথে
দেখা হলেও বন্ধুসূলভ আচরণ করা হয়ে ওঠে না তার সাথে।
মানসিক অন্তর্দ্বন্দে ক্ষত-বিক্ষত ব্রুটাস? এতো সোনায় সোহাগা! যে বিষয়ে আলোচনা করতে চায় ক্যাসিয়াস, তার দরজা নিজেই খুলে দিল ব্রুটাস।
হঠাৎ বলে উঠলেন ক্যাসিয়াস, “আচ্ছা ব্রুটাস, তুমি কি নিজের মুখ নিজে
দেখতে পাও?
পালটা প্রশ্ন করলেন ব্রুটাস, “তা কী সম্ভব? আয়না ছাড়া কি নিজের মুখ দেখা যায়?”
সায় দিয়ে ক্যাসিয়াস বললেন, “এবার একটা খাঁটি কথা বলেছ তুমি। এমন কোনও আয়না নেই যার মধ্যে তুমি দেখতে পাবে তোমার ভেতরের যোগ্যতা আর
গুণাবলি। আমি নিজে দেখেছি এই শহরে সিজার ছাড়া বহু নামি লোক আছেন যাদের মুখে অহরহ
শোনা যায় ব্রুটাসের নাম। তারা
সবাই মানসিক-দ্বন্দের শিকার।” এতে
কোনও দ্বিরুক্তি নেই যে ব্রুটাসের
মন জয় করার উদ্দেশ্যেই এ সব
কথা বলছে ক্যাসিয়াস।
‘স্পষ্ট
করে বল তো ক্যাসিয়াস, কী বলতে চাও তুমি’, জানতে চাইল ব্রুটাস, “কেন তুমি বলছ আমার গুণাবলির দিকে নজর দিতে।
ক্যাসিয়াস বলল, ‘তাহলে শোন তুমি, এবার থেকে আমি হব সেই
আয়না যার মধ্যে ফুটে উঠবে তোমার গুণাবলি, যার সম্বন্ধে কোনও কিছুই জানা নেই তোমার’ তার কথা শেষ হতে হতেই
কানে এল বহু মানুষের কোলাহল, আনন্দ আর জয়ধ্বনি।
‘ক্যাসিয়াস!
ও কীসের জয়ধবনি?’ জানতে
চাইল,
ব্রুটাস; “তাহলে কি সবাই মিলে রাজা বানিয়ে দিল সিজারকে?”
ব্রুটাসকে
একটু খোঁচা দেবার লোভ সামলাতে না পেরে ক্যাসিয়াস বললেন, “মনে হচ্ছে সিজার রাজা হোক এতে তোমার আপত্তি আছে।”
“আপত্তি আছেই
তো!” বললেন ব্রুটাস, “তা সত্ত্বেও সিজারকে আমি ভালোবাসি, সে কথা মনে রেখ তুমি। আমি আবারও বলছি সত্যি করে বল তো
আমার কাছে কী চাও তুমি! যদি জন-সাধারণের কল্যাণমূলক কিছু বলতে চাও, তাহলে নির্ভয়ে বলতে পার তুমি। যদি তার সাথে সম্মান এবং মৃত্যু-দুটোই জড়িত থাকে, তাহলেও তা নিয়ে
মাথা ঘামাব না আমি”।
“যাক, এতক্ষণে তুমি আচ করতে পেরেছ আমার
বক্তব্যের কিছুটা, বললেন ক্যাসিয়াস, তুমি ঠিকই বলেছ ব্রুটাস, আমি যা
বলতে যাচ্ছি তার সাথে জড়িয়ে আছে দেশের মানুষের মঙ্গল এবং মর্যাদার প্রশ্ন। তুমিই ভেবে দেখ না কেন
আমরা উভয়েই ছোটোবেলা থেকে যা খেয়ে বড়ো হয়েছি, সেই খাবার সিজারও খেয়েছে। সিজারের
চেয়ে বেশি ছাড়া কম শক্তিধর নই আমরা। এই সেদিনের কথাই ধর না কেন, বর্ষায় ফুলে ফেঁপে ওঠা টাইবার(Tiber)
নদীর সামনে গিয়ে সিজার আমাকে বলল, “এই নদীতে ঝাপ দিতে পারবে তুমি?” তার কথার উত্তর না দিয়ে নদীতে
ঝাপিয়ে পড়লাম আমি। সাথে সাথে সিজারও
নেমে পড়ল। অনেকক্ষণ ধরে বেশ ভালোভাবে সাতার কেটে চলেছি আমরা, এমন সময় কানে এল
সিজারের আর্ত কঠস্বর, “আমায় ওঠাও ক্যাসিয়াস! জলে ডুবে যাচ্ছি আমি।” জল
থেকে সেদিন তাকে না তুললে নদীর অতলে তলিয়ে যেত সিজার। পম্পিকে হত্যা করে রোমের মানুষের কাছে সেই সিজার আজ যেন ঈশ্বরের ছায়া। আর তাকে প্রাণে বাঁচিয়েও এই হতভাগা
ক্যাসিয়াস আজও সেই ক্যাসিয়াসই রয়ে গেল। সিজারের কথা রোমের মানুষের কাছে আজ ঈশ্বরের বাণী
স্বরূপ। তুমি কি জান, সিজার
একজন মৃগী রোগী প্রচণ্ড জ্বরের ঘোরে মৃগীরোগের তাড়নায় বেহুশ হয়ে থরথর করে কাপছে তার দেহ--- সিজারের এরূপ অবস্থা আমি নিজের চোখে দেখেছি। আমি আশ্চর্য হয়ে ভাবছি কীভাবে সেই লোকটা এত
ক্ষমতাবান হয়ে উঠল’।
ক্যাসিয়াসের কথা শেষ হতে না হতেই
পুনরায় শোনা গেল সিজারের নামে জনতার জয়ধ্বনি। ব্রুটাসের গলায় আশঙ্কার সুর ফুটে বলল। সে
বলল, “মনে হয় রোমের লোকেরা নতুন কোনও সম্মানে ভূষিত করছে সিজারকে। তাই বারবার জয়ধ্বনি দিচ্ছে তার
নামে”।
“সম্মানের কথা কী বলছ ব্রুটাস!” বললেন
ক্যাসিয়াস, “এই
মুহূর্তে রোমে সিজার ছাড়া অন্য কেউ নেই
যে এরুপ নাগরিক সংবর্ধনার যোগ্য। কী আশ্চর্য দেখ, এই লোকটা কীভাবে
পুরো দেশটা শাসন করছে।
আগে কখনও এমনটি দেখেছ? অথচ ভেবে দেখ সিজারের মধ্যে এমন কী আছে যা তোমার নেই। তুমি কি জান ব্রুটাস নামে তোমার এক পূর্বপুরুষ তার বীরত্ব ও দেশপ্রেমের জন্য লোকের কাছে কত আদরণীয় ছিলেন? দেশের সম্মান রক্ষা করার জন্য তিনি শয়তানের সাথে লড়তেও রাজি ছিলেন। ভাব তো সে সব কথা!
আজ কিনা সিজারের মতো লোক দেশের রাজা
হতে চলেছে? আর ব্রুটাস
তুমি,
সেই ব্রুটাসই
রয়ে গেলে। এখন আমার প্রশ্ন এসব কি ঠিক হচ্ছে, আর কেনই বা এসব হতে দেব?”
ক্যাসিয়াসের দিকে চেয়ে ব্রুটাস বললেন, “আমি বেশ
বুঝতে পারছি তোমার মনের অবস্থা। এবার
আমি কিছুটা আন্দাজ করতে পারছি তুমি আমায় দিয়ে কী করাতে চাও। তবে এ ব্যাপারে এখনই আমি কিছু বলব
না, যা! বলার তা পরে বলব। তুমি আজ-বাড়ি চলে যাও। পরে এ ব্যাপারে তোমার সাথে
আলোচনায় বসব আমি”।
ব্রুটাসের কথা শেষ হতে না হতেই
সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে ফিরে এলেন সিজার। ব্রুটাস আর ক্যাসিয়াসকে দেখতে পেয়ে ভুরু কুঁচকে তাকালেন তাদের দিকে। তারপর গলা চড়িয়ে বললেন, “মার্কাস অ্যান্টনিয়াস!” সিজারের আহবানে
অনুগত ভৃত্যের মতো তার সামনে এসে দাড়াল
মার্ক অ্যান্টনি। তুমি সেরূপ কয়েকজন লোককে পাঠিয়ে দেবে। দেখবে লোকগুলো যেন
ক্যাসিয়াসের মতো লিকলিকে না হয়।
ক্যাসিয়াসের যেমন হাড়-জিরজিরে চেহারা, তেমনি কোটরে বসা ওর
দুচোখের চাহনি কত তীক্ষ্ণ আর জোরালো। মনে হয় ও খুব চিত্তা-ভাবনা করে, মাথা ঘামায়। এসব
লোক কিন্তু খুবই
বিপজ্জনক”
অ্যান্টনি
বললেন,
“না মহামান্য সিজার, ক্যাসিয়াসকে আপনি সেরূপ লোক ভাববেন না। দেখতে রোগা হলেও উনি একজন সৎ এবং মহান রোমান।”
সিজার বাধা দিয়ে বললেন, ‘অ্যান্টনি! তোমার কথা সঠিক নয়। আমি আবারও বলছি ক্যাসিয়াস একটু মোটা হলে ভালো হত। ভুলে যেও না ও
প্রচুর পড়াশুনো করে। সবকিছু খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করার ক্ষমতা রয়েছে ওর। তোমার মতো ক্যাসিয়াসও খেলাধুলা, গানবাজনা কিছুই ভালোবাসে না- এমনকি
প্রাণ খুলে হাসতেও জানে না। যারা প্রাণ খুলে হাসে তাদের ও ঘেন্না করে। এসব লোক যখন দেখে তাদের পরিচিত কেউ অনেক উপরে
উঠে গিয়েছে, তখন তারা হিংসায় জ্বলে-পুড়ে মরে। এদের
থেকে যতটা সম্ভব ব্যবধান রেখে চলা উচিত। তাই বলে ভেব না যেন আমি এদের ভয়ে ভীত। জুলিয়াস সিজার ঈশ্বর ছাড়া কাউকে ভয় পায় না।
৩য় পর্ব
৩য় পর্ব
No comments:
Post a Comment