৫ পর্বের ১ম পর্ব - পরের পর্বের লিঙ্ক নিচে দেয়া আছে।
জুলিয়াস সিজার (Julius Caesar -William Shakespeare)
জুলিয়াস সিজার (Julius Caesar -William Shakespeare)
প্রচণ্ড ভিড়ের মাঝে দাড়িয়ে থাকা
দুই যুবক যুবতিকে উদ্দেশ্য করে চেঁচিয়ে বললেন ট্রিবিউন ফ্লেভিয়াস (Flavius), ‘ওহে! শোন একটু। আমি তোমাদেরই বলছি’, বলে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রিবিউন মেরুলাসকে (Murrelus) ইশারায়
অপেক্ষা করতে বলে তাদের সামনে এসে দাড়ালেন। যুবকটিকে দেখিয়ে তিনি জানতে চাইলেন মেয়েটির কাছে, ‘ও তোমার কে হয়?’
কথা শুনে লজ্জা পেল মেয়েটি, বলল, ‘আজ্ঞে ও আমার
স্বামী’।
ফ্লেভিয়াস
জানতে চাইলেন, ‘কোথা থেকে আসছ তোমরা?’
ভয়ে ভয়ে যুবকটি উত্তর দিল, ‘গ্রাম থেকে আসছি আমরা’।
তা সেখানে কাজ-কম্মো কিছু কর? জিজ্ঞেস করলেন ফ্লেভিয়াস।
উৎসাহিত হয়ে যুবকটি জবাব দিল, ‘জি, গ্রামে
আমার কামারশালা আছে, আমি তার দেখাশোনা করি’।
চাপা গলায় তাকে ধমকে বললেন ফ্লেভিয়াস, ‘সাত-সকালে
কাজ-কম্মো ছেড়ে বউকে নিয়ে এতদূর
এসেছ কেন?
আবার দুজনের হাতেই দেখছি সাজিভরা ফুল। তা কাকে দেবে এগুলি?’
যুবতি বউটি হেসে জবাব দিল, ‘জুলিয়াস সিজারকে। শুনেছি অনেক দেশ জয় করে ফিরে আসছেন সিজার। একটু বাদেই নাকি তিনি রথে করে
এপথ দিয়ে যাবেন। তাকে দেবার জন্যই গাছের
এই সামান্য ফুলগুলি নিয়ে এসেছি আমরা।
চাপা গলায় বললেন ফ্লেভিয়াস, ‘সিজারকে দেবে বলে এনেছ? তোমরা কি খোঁজ রাখ যুদ্ধে সিজার কাকে হারিয়েছেন?’
‘হ্যা
জানি’ জবাব
দিল যুবকটি। ‘যুদ্ধে পরাজিত করে পম্পিকে হত্যা করেছেন সিজার। তাকে শ্রদ্ধা জানাবার জন্যই দাড়িয়ে আছি এখানে’।
এতক্ষণ চুপচাপ দীড়িয়ে থাকতে থাকতে
অধৈর্য হয়ে উঠেছেন ফ্লেভিয়াসের সঙ্গী
ট্রিবিউন মেরুলাস। দু-জন
গ্রাম্য যুবক-যুবতির সঙ্গে এত কী কথা থাকতে পারে ফ্লেভিয়াসের-একথা জানার
কৌতুহল চাপতে না পেরে পায়ে পায়ে তিনি এগিয়ে এলেন তাদের দিকে। তাকে দেখতে পেয়ে উত্তেজিত হয়ে বললেন ফ্লেভিয়াস-এবার আপনিই দেখুন ব্যাপারটা! যুদ্ধে পম্পিকে হারিয়ে তাকে মেরে ফেলেছেন সিজার-এ খবর শুনে ওদের আর আনন্দের সীমা নেই। সিজার এদিক দিয়ে ফিরবেন শুনে সাত-সকালে গাঁ ছেড়ে
ওরা চলে এসেছে এখানে। এপথ দিয়ে যাবার সময় ওরা ফুল দিয়ে সিজারকে অভ্যর্থনা জানাবে ।'
ট্রিবিউন মেরুলাস বললেন, ‘শুধু এরাই নয়, আরও শত শত মানুষ সে
উদ্দেশে এখানে এসেছে, সে তো আপনি নিজের চোখেই দেখলেন’। আক্ষেপ
করে বললেন ফ্লেভিয়াস, তাই তো দেখছি। যে পম্পিকে যুদ্ধে হারিয়ে
তাকে হত্যা করেছেন সিজার, সেই পম্পিকে সম্মান জানাবার জন্য একদিন রোমের রাজপথে ভিড় জমাত আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা। আমি নিজে দেখেছি পম্পিকে
সম্মান জানানোর জন্য দুধের বাচ্চাকে কোলে নিয়ে ফুলের সাজি হাতে যুবতিরা সকাল-সন্ধে অপেক্ষা করেছে।
অদৃষ্টের পরিহাসে সে দৃশ্যটা আজ পুরোপুরি পালটে গেছে। পম্পির হত্যাকারীকে
সম্মান জানাতে তারা সব কাজ-কর্ম ফেলে দলে দলে
ছুটে আসছে’।
যে গ্রাম্য-দম্পতিকে উদ্দেশ করে এসব
কথা বলা,
তারা তো অনেক আগেই
চলে গেছে। তবুও ভিড়ের মাঝে অনেকেরই কানে এল ফ্লেভিয়াসের আক্ষেপ।
ভিড়ের মাঝে সমবেত লোকদের লক্ষ্য করে
আপন মনে বলতে লাগলেন ফ্লেভিয়াস, “এই সেদিন পর্যস্ত রোমের নিয়ন্ত্রক ছিলেন সেনাপতি পম্পি!
আশ্চর্য! তোমরা কিনা এত সহজে তাকে ভুলে
গেলে?
সিজারের সাথে যুদ্ধে পম্পি হেরে যাওয়ায় আজ তোমরা সিজারের
গুণ-গান করছ! পম্পির উপকারের কথা
তোমরা এত সহজেই ভুলে গেলেঃ তোমরা নিশ্চয়ই জান উপকারীর উপকার যে স্বীকার করে না সে অকৃতজ্ঞ ছাড়া আর কিছু নয়। যাও, চলে যাও তোমরা। বাড়ি গিয়ে ঈশ্বরের সামনে হাঁটু গেড়ে পাপের প্রায়শ্চিত্ত কর তোমরা। নইলে ঈশ্বরের রোষে ধ্বংস হয়ে যাবে রোম।
কানুন, যার বলে তারা
অসীম ক্ষমতার অধিকারী। রোমের সাধারণ মানুষেরা মনে করে তারা গরিব জনসাধারণের
প্রতিনিধি। তাই ট্রিবিউন ফ্লেভিয়াসের ধমক খেয়ে আস্তে আস্তে ভিড় ফাকা হয়ে গেল। যারা সিজারকে সম্মান জানাতে
এসেছিল,
ফ্লেভিয়াসের ধমক খেয়ে মুখ কালো করে তারা সবাই ফিরে গেল। সাধারণ মানুষ মোটেও
ভাবে না পম্পি বা সিজারকে তাদের জন্য কী করেছে।
যে সব উচ্চাভিলাবী তাদের পথের বাধা দূর করে তর তর করে এগিয়ে যেতে পারে - তাকে নিয়েই মাতামাতি করে লোকেরা, মাথায় তুলে নাচে, ফুল দিয়ে সংবর্ধনা জানায়
তাকে।
প্রায়-দু-হাজার বছর ধরে রোমের বীর
সেনাপতিরা দুর্দান্ত লড়াই করে একের পর এক নতুন রাজ্যের সৃষ্টি করেছেন। “এমনই এক বীর সেনাপতি ছিলেন পম্পি। এই সেদিন পর্যস্ত রোমের প্রতিটি মানুষ তাকে দেশের ভাগ্য-নিয়ন্তা বলে ভাবত। কিন্তু যুদ্ধে পরাজিত হবার পর সিজার নিজ হাতে হত্যা করেন পম্পিকে। আজকে আমরা যাকে
ফ্রান্স ও ব্রিটেন বলে জানি, সেখানে তারা পরিচিত ছিল গল ও ব্রিটানি নামে। ওই দুটি রাজ্যে পাকাপাকিভাবে রোমান শাসন প্রবর্তন
করে বহুদিন বাদে বিজয়ীর বেশে দেশে ফিরে আসছেন সিজার।
রোমে এমন বহু লোক এখনও আছে যারা
পম্পি মারা যাবার পরও তাকে সমর্থন করে জুলিয়াস
সিজারকে ভাবে দেশের শক্র। অন্য দল মনে করে সিংহাসনে বসলে প্রচুর ক্ষমতার অধিকারী হবেন সিজার। দেশ ও দশের পক্ষে তা
মোটেই কল্যাণকর নয়। এই দ্বিতীয় দলের মধ্যে রয়েছে অনেক বুদ্ধিজীবী মানুষ যারা আবার সিজারের বন্ধুও বটে। এদের মধ্যে অনেকেই ভালো যোদ্ধা- তারা মনে করেন সুযোগ এবং ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে তারা অনেকেই
সিজারের মতো কৃতিত্ব দেখাতে
পারতেন। দিন দিন যে ভাবে জুলিয়াস সিজারের ক্ষমতা বেড়ে চলেছে তা দেখে অনেকের চোখের ঘুম উবে গেছে। সিজারকে
ক্ষমতাচ্যুত করার সংকল্প নিয়ে তারা একজোট হয়েছেন। তারা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন দেশের জনমত যাতে সিজারের
বিরুদ্ধে যায়- তারা চাইছেন দেশের মানুষকে সিজারের বিরুদ্ধে
উত্তেজিত করে তুলতে। কিন্তু জয়ের আনন্দে ডুবে থাকা সিজার এ ষড়যন্ত্রের বিন্দুমাত্র আভাসও পাননি। শুরুতে আমরা ফ্লেভিয়াস আর মেরুলাস নামে যে দুজন ট্রিবিউনকে দেখতে পেয়েছি তারা
উভয়েই সিজার বিরোধী। তাদের কথাই এর প্রমাণ।
জনতার ভিড়
ফাঁকা হতেই সহযোগীর দিকে তাকিয়ে বললেন ট্রিবিউন ফ্লেভিয়াস, ‘মেরুলাস, আপনি রাজধানীর দিকেই যান’।
“যাই করুন না কেন, সেটা চিন্তা-ভাবনা করে
করবেন”, তাকে সাবধান করে বললেন মেরুলাস, “আজ আবার লুপারকাল উৎসবের দিন। শহরের সব
বাড়িতেই ভালোমত খানাপিনা হবে।”
“সে যাই হোক, তাতে আমার কিছু আসে যায় না, বললেন ফ্রেভিয়াস, “আমি আপনাকে বলে দিচ্ছি
রোমের রাস্তা-ঘাটে সিজারের মূর্তি বা সাজসজ্জা দেখতে
পেলে আমি তা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেব। আমি চাই আপনিও তা করুন। সিজারের সম্মানের জন্য কোথাও সাজ-সজ্জার
ব্যবস্থা হয়েছে দেখলে আপনি তা টেনে
ছিড়ে ফেলে দেবেন। সিজারের বড্ড বাড় বেড়েছে। ওর ক্ষমতা বেড়ে যাবার আগেই ধ্বংস করতে হবে তাকে। নইলে ঝামেলায় পড়ে
যাব আমরা। এসব কথা বলতে বলতে দু-জন দু-দিকে চলে গেলেন।
রাজধানী রোম শহরের মধ্যে সাধারণত যে
জায়গায় সভা সমিতি হয়, জুলিয়াস সিজার চলে এলেন
সেখানে,
সাথে স্ত্রী কালপুর্নিয়া, মার্ক অ্যান্টনি, ব্রুটাস, ক্যাসকা, সিসেরো
ও ডিসিয়াস।
সিজারের পেছন পেছন এল জনতার এক বিশাল
বাহিনী। তাদের মধ্যে ছিলেন দুই ট্রিবিউন ফ্রেভিয়াস
আর মেরুলাস।
পরের পর্ব
পরের পর্ব
No comments:
Post a Comment