টিথোনাস কবিতার বাংলা অনুবাদ
Tithonus - Lord Alfred Tennyson - Bangla Discussion, summary and analysis
টিথোনাস কবিতার সংক্ষিপ্ত আলোচনা
১৮৩৩ সালে যখন প্রথম কবিতাটি লেখা হয় এর নাম ছিল টিথোন। এই সময় কবিতাটি কেউ তেমন কোন গুরুত্ব দেয়নি। তবে ১৮৫৯ সালে যখন এটি টিথোনাস নামে প্রকাশ করা হয় তখন এটি বেশ পাঠকপ্রিয়তা পায়। আলফ্রেড লর্ড টেনিসন গ্রীক পুরাণের একটি কাহিনী অবলম্বনে রচনা করেছেন এই অনন্যসাধারণ কবিতাটি। টিথোনাস কবিতাটি একটি ড্রামাটিক মনোলগ। এখানে পুরো কবিতা জুড়ে একজন বক্তা তাঁর মনের কথা গুলো বলে যান। কবিতাটির মাত্রায় কোন নির্দিষ্ট মিল বিন্যাস বা প্যাটার্ন লক্ষ্য করা যায়নি।
টিথোনাসের প্রাথমিক পরিচিতি
টিথোনাস ছিলেন ট্রয়ের রাজা লাওমেডন এর সন্তান ও রাজা প্রায়াম এর ভাই। তাঁর মা ছিলেন স্ক্যামান্ডার নদীর কন্যা স্ট্রিমো। গ্রীক মিথ অনুযায়ী প্রভাতের দেবী ইওস অর্থাৎ আরোরা তাঁর প্রেমে পরে যায় এবং তাকে চুরি করে ইথিওপিয়াতে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে বিয়ে করে ও ইম্যাথিওন এবং মেমনন এর জন্ম দেয়। মেমননের আর এক নাম হল হেক্টর। পরে সে সাইকাডা নামক পোকায় রুপান্তরিত হয়। যে কখনো মরে না শুধু খোলস পালটায়।
সারাংশ
পুরাণ কাহিনী মতে, উষার দেবী ইওস বা আরোরা ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন মর্তমানব ট্রয়ের রাজা প্রায়ামের ভ্রাতা সুন্দর যুবা টিথোনাসকে। বিয়ের পূর্বে টিথোনাসকে অমরত্ব প্রদান করার প্রার্থনা জানিয়েছিলেন জিউসের কাছে। জিউস টিথোনাস কে অমরত্ব প্রদান করেন কিন্তু দেবী টিথোনাসের চিরযৌবন প্রার্থনা করতে ভুলে যান। এ কারণে স্বাভাবিক নিয়মেই মর্ত্য মানবের মতোই ক্রমে বুড়িয়ে যেতে থাকে টিথোনাস। টিথোনাসকে তখন ঊষাদেবীর কাছে বোঝা স্বরূপ মনে হতে থাকে। ক্রমে ইওস টিথোনাসের কাছ থেকে দূরে সরে যেতে থাকেন। বয়সের ভারে প্রায় স্থবির টিথোনাস। বিগত দিনগুলোর কথা ভেবে হৃদয় হাহাকারে ভরে যায় তার। সে আবার ফিরে যেতে চায় মর্ত্যের মাটিতে। যেহেতু উষা দেবী তার সকল বাসনার পরিসমাপ্তির পর টিথোনাসকে আর আগের মতো কাছে টানেনা, সে কারণে টিথোনাস জ্বলে মরে মর্ম বেদনায়, সে ফিরে পেতে চায় ফের মর্তের সুখী গৃহকোণে, সে সব চাওয়া পাওয়া আর প্রতারণা ভুলে যেতে চায়। অমরত্বের এই পরিমন্ডল থেকে টিথোনাসের মুক্তি পাওয়ার যে সীমাহীন আকুলতা তারই মর্মবিদারী কামনার প্রকাশ ঘটেছে এ কবিতায়।
কবিতাটি বনের গাছের ক্ষয় হয়ে যাওয়ার বর্ণনা দিয়ে শুরু হয় যা বক্তা টিথোনাসকে খুব কষ্ট দিতো। কারন অমর হওয়ার কারনে সে দিন দিন বৃদ্ধ হচ্ছিলো কিন্তু মারা যাচ্ছিলো না। পৃথিবীর অন্যান্য বস্তুর মত মৃত্যুবরণ করতে সে সক্ষম নয়। তাঁর যৌবন কাল অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে বৃদ্ধাবস্থা পার করছিলেন কিন্তু এই অবস্থার আর শেষ হওয়ার নয়। তিনি পৃথিবীর অন্যান্য প্রাণী ও মানুষের কথা স্মরণ করেন যারা যৌবনে কাজ করেন আর যৌবন শেষে মৃত্যুবরণ করেন। তাদের দেখে তিনি খুব আফসোস করেন।
তারপর তাঁর সে দুর্ভাগ্যের কারন ইওসের কথা স্মরণ করেন। সে নিজেকে তখন কোন মানুষ নয় বরং একটি ছায়া আত্মা হিসেবে বর্ণনা করেন। যার কাজ হচ্ছে প্রতিদিন সকালে তাঁর স্ত্রীকে পূর্ণ যৌবনা হিসেবে দেখা কিন্তু অন্য দিকে তাঁর মাঝে যৌবনের কিছুই নেই। তারপর তাঁর পুরোণো দিনে স্মৃতিগুলো বর্ণনা করেন। যখন সে তাঁর কাছে অমরত্ম চেয়েছিল। সে তা মঞ্জুর করেছিল। কিন্তু সে ভুল করে চির যৌবন চায়নি যার ফলে তাকে আজ এই অভিশপ্ত অবস্থা বরণ করে নিতে হয়েছে। প্রতি সকালেই তিনি দেখেন যখন সূর্য ওঠে, ইওস তাঁর রথে চরে আকাশে আসে। পূর্বের স্মৃতি মনে পড়ে যায় যাকে সে একসময় কত ভালোবাসত। প্রতিদিনই তাকে সে বলে তুমি আমায় যা দিয়েছিলে তা ফিরিয়ে নিয়ে যাও কিন্তু সে নিরুত্তর।
এর পরের স্তবকে সে স্মরণ করেন ইওসের সাথে তাঁর সুখের দিনগুলো। সে কেমন ছিল বা সে তাকে কতটা ভালোবাসত। সে আফসোস করেন তাঁর এই জীবন ঠিক ছিল না। ইওসের কাছে এসে যে সুখ পেয়েছিলেন সেই সুখের কথাও স্মরন করেন। শেষ স্তবকে সে ইওসের কাছে দাবী করেন তাকে যেনো পূর্ব দিক থেকে মুক্তি দেয়া হয়। তাকে যেনো মরতে দেয়া হয়। যদি তাকে তা দেয়া হয় তবে সে পৃথিবীর অন্যদের সাথে মরতে পারবে এবং সে তাঁর কবর দেখতে পারবে।
No comments:
Post a Comment