সম্মান ৩য় বর্ষের সিলেবাস থেকে অন্যান্য লেখা ও অনুবাদ
Tithonus - Alfred Tennyson - Bangla Translation
ক্ষয়িষ্ণু বন, ক্ষয় হয় ও ধ্বসে পড়ে
জলীয় বাষ্পেরা ভূমিতে অশ্রু ঝড়িয়ে হালকা হয়।
মানুষেরা জন্মায়, জমি খোড়ে এবং সেখানেই শুয়ে যায়।
অনেকবছর পরে রাজহংশীটি মারা যায়।
শুধু আমি আবন্ধ নৃশংস অমরতায়
ক্ষীয়মাণ আমি, শুষ্ক করি বাহুযুগল
এখানে এই ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীর বুকে
শুভ কেশধারী ভৌতিক ছায়া হয়ে আমি
স্বপ্নের মতো ঘুরিফিরি স্তব্ধ পূর্ব দিগন্তে
সুদূর মেঘের ভাজে ভাজে উষা দেবীর উজ্জ্বল প্রাসাদ প্রাঙ্গণে।
আহা! একদা এই ধূসর ছায়ায় মানুষ ছিল।
আর এই অবাক সৌন্দর্য পছন্দ করেছিল ঊষাদেবী।
সে চেয়েছিন আমায় তীব্র আকুলতায়
গর্বে ভরেছিল মোর বুক যেন সে ঈশ্বরের অধিক কিছু
বলেছিলাম তাকে, "দাও মোৱে অমরতা
মধুর হেসে সে আমায় তা করেছিল দান
ঠিক সম্পদশালী মানুষের মতোই, যে সবকিছু
ছুড়ে দেয় অন্যদের তরে পরম অবহেলায়।
সময় কাটত তার দু দিগন্তের কর্মব্যস্ততার,
পাওনা মিটিয়ে সে আমায় ছুড়ে দিল চরম অবহেলায়;
হত্যা করল না মোর ছিল শুধু ক্ষণিক যৌবন ব্যবহার
সে রবে তরুণী অনন্তকাল, আর আমি
টিথোনাস বয়সের ভারে ন্যুজ, যৌবন পুড়ে ছাই
তোমার সৌন্দর্য আর আলোবাসা ফিরিয়ে দেবে কি তা
যেটি বন্ধ হয়েছে, রুপালী তারকা, তোমার পথ প্রদর্শক
জলে ভরা কম্পিত চোখে চকমক করে।
শুনাতে পাচ্ছে কি? যেতে দাও মোরে, ফিরে যেতে দাও
ফিরিয়ে নাও তোমার উপহার, কেন যে মানুষ তার পরিবেশ
হতে নিজেকে আলাদা করে, কিংবা ছারায় মানবিকতার সীমা
যখন সকলি ফুরায়, স্বস্তির কারণ হয় কি তা সবার তরে?
মেঘের আঞ্চল ছেড়ে আসে কোমল মধুর হাওয়া
স্পষ্টলোকে ধরা পড়ে আঁধার পৃথিবী যেখানে জন্মেছিলাম আমি
আবার একদা তার পুরনো অলৌকিক আভা ফুটে ওঠে
চোখের ভ্রুতে, পুরুষ্ট তার কাধ আর নিষ্কলুষ হৃদয় হতে
এখন তেজস্ক্রিয়তা প্রকাশে ঝড়ের মতো
প্রকাশ পায় দেবীর লজ্জায় লাল গন্ডদেশ আঁধারে
মনোহর অক্ষিযুগল তার আমাকে ডেকেছে একান্তে
তার আগে মুছে দিয়েছিল তারাদের আলো
আর বুনো অশ্বদের, যারা জোগায় তার প্রেমের আম্বাদ
কাপায় অন্ধকার তার ছেড়ে দেয়া প্রেতাত্মার দল,
আর তাড়িত করে গোধূলির আভা অগ্নিশিখার।
নীরবতার মাঝে কতনা সুন্দর তুমি, একটু তাকাও
কোনো কথা না বলে চলে যাও তুমি
তোমার অশ্রুধারা ঝরে পড়ে গণ্ডদেশে ।
কেন যে তোমার অশ্রুভারে ভীত কম্পিত কর মোরে
সে দিনগুলো গত, তবু বলি সত্যি ফিরবে কি মোর আঁধার পৃথিবী
পুরনো উপহার ঈশ্বরের কখনই হবে না বদল
এই যে! এই যে আমি! আলাদা হৃদয়াবেগে
সেদিন হয়েছে গত, তাকাই আমি ভিন্ন চোখে
খুঁজে ফিরি, যদিও খুঁজে ফিরি তোমার চারপাশের
নিষ্প্রভ অথচ উজ্বল আলোর বলয়
পাক খেয়ে যেন জড়িয়ে ধরেছে উজ্বল আলোর বৃত্ত
আমি দেখতে চাই কীরুপ কালো মেঘ আবর্তিত হয়।
উজ্জ্বল আলোর বৃত্তে, তোমার অলৌকিক পরিবর্তনের
বিভায় আমারও রুপ আর রঙের বদল ঘটে যায়
তারই ঔজ্জ্বল্য অনুভব করি রক্তের শিরায় শিরায়,
রক্তিমাভা ধীরে ক্রমে ধীর লয়ে ছড়ায় উজ্বল আভা
দেবীর উদয়ে আমি শুয়ে পড়ি কারুকার্য খচিত তোরণে
মুখ কপাল আর চোখের ভ্রূতে অনুভব শিশির উষ্ণতা
এপ্রিলের ফুল ঝুড়ির চেয়ে অধিক কোমল,
আমি শুনি তোমার ফিসফাস আওয়াজ
জানি না আমি কোথা হতে আসে এমন বুনো মিষ্টতা
ঠিক যেন অদ্ভুত এক সঙ্গীত, শুনি অ্যাপোলো গাইছে গান
জিউসকে পরিহার করে সুরধারায় জাগিয়েছিল কুয়াশামাখা ট্রয়ের টাওয়ার।
পূর্ব দিগন্তে তোমার সাথে থেকে আমি বড়োই ক্লান্ত ।
মরণশীল আমি কিভাবে জড়িয়ে গেলাম অমরতায়
তোমার গোলাপি আভা আর উষ্ণ করে না আমায়
ওই আভা শুধু মোরে স্নান করায় শীতল ধারায়
তোমার আলোক বড়োই শীতলতম, তোমার উষ্ণ পদও শীতল
এমনকি তোমার উজ্জ্বল অঞ্চলও বড়োই শীতল
সেখানে শুধুই অসহ্য ধোয়া উথিত হয় অন্ধকার মাঠে
সুখী গৃহকোণ প্রত্যাশী মানুষটা তার মৃত্যু চায়।
মৃত্যুতে সুখী জনের কবর ঘাসে ঢেকে যায়;
আমাকে মুক্ত কর পৃথিবীর মৃত্তিকায়
কিছুই নজর এড়ায় না তোমার, সবই দেখো তুমি
এমনকি আমার কবরও নজর এড়ায় না তোমার
দিনে দিনে হচ্ছ উজ্জ্বল হতে আরো উজ্জ্বলতর
আমি ভুলে যেতে চাই মোর চাওয়া পাওয়া আর ফাকি
No comments:
Post a Comment