Poetics - Aristotle - Chapter - 6
A Description of Tragedy -
Bangla Translation and Explanation
Bangla Translation and Explanation
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ - ট্র্যাজেডির বর্ণনা
আমি কমেডি১ ও এই ৬ মাত্রিক ছন্দে রচিত অনুকরণ কাব্য সম্পর্কে পরে আলোচনা করব। এখন আমি ট্রাজেডির প্রয়োজনীয় চরিত্র বৈশিষ্ঠের সংজ্ঞা থেকে আলোচনা শুরু করব অর্থাৎ যে আলোচনার অবতারণা আমি আগেই করেছিলাম তাঁর পর থেকেই আলোচনা করব। তাহলে
বুঝা
যাচ্ছে, ট্রাজেডি হল এমন এক ঘটনা বা ক্রিয়ার অনুকরণ যা গুরুত্বপূর্ণ, পূর্ণাঙ্গ এবং বিশেষ আয়তনযুক্ত, যা রচিত হয় নাটকের বিভিন্ন অংশের পক্ষে উপযুক্ত বিচিত্র ভঙ্গিমার কলাকৌশল ও
অলংকার-সমৃদ্ধ
ভাষায়,
যা
উপস্থাপিত হয় ক্রিয়ারূপে, আখ্যানরুপে
নয়,
যা
করুণা
ও
ভয়
উদ্রেক
করে
আমাদের
অন্তরস্থ
ঐ
আবেগগুলোর যথাযথ পরিশুদ্ধতা২ ঘটায়। অলংকার-সমৃদ্ধ
ভাষা বলতে
এখানে
আমি
সেই
ভাষার
কথাই বুঝাতে চাই যা ছন্দ, সুর ও সঙ্গীতযুক্ত। বিভিন্ন অংশের
পক্ষে
উপযুক্ত
বিচিত্র ভঙ্গির কলা কৌশল
বলতে এটাই বুঝি যে এর কোন
কোন
অংশ
শুধু
পদ্যেই
রচিত
হয়,
আবার
কোন কোন
অংশ
সঙ্গীত
আশ্রয় করেই ফুটে ওঠে।
এখন কথা হল, অনুকরণের কাজটি যেহেতু ক্রিয়াশীল মানুষের দ্বারাই সম্পাদিত হয়, তা
থেকে
স্বাভাবিকভাবেই এ সিদ্ধান্ত করা চলে যে প্রথমতঃ ক্রিয়াশীল মানুষের জীবনদৃশ্য অবশ্যই ট্র্যাজেডির এক অতি প্রয়োজনীয়
অঙ্গ
হবে,
দ্বিতীয়তঃ তাতে সঙ্গীত ও বাচন অবশ্যই থাকবে, কারণ এ সবের মাধমেই অনুকরণ ক্রিয়া নিষ্পন্ন হয়। বাচন বলতে আমি পদ্যে শব্দের মাত্রাগত বিন্যাস বুঝি। আর সঙ্গীত শব্দের অর্থ তো সকলের নিকটই
স্পষ্ট
। ট্র্যাজেডিতে ক্রিয়ারই অনুকরণ করা হয়ে থাকে এবং তা সাধিত হয় চরিত্র ও মনোভঙ্গীর৩ কতকগুলো গুণের
অধিকারী
মানুষের
দ্বারা। কর্মকর্তার ঐ চারিত্রিক ও
মনোভঙ্গীগত বৈশিষ্ট্যানুযায়ী আমরা ক্রিয়া গুলোর প্রকৃতিও নির্দেশ করে থাকি। মনোভঙ্গী ও চরিত্রকে তাই ক্রিয়ার দুটি স্বাভাবিক কারণ বলা যায়। সকল মানুষের
কর্মের
সফলতা নির্ভর
করে
এ
দুটি
জিনিসের
উপর।
এই
যে
ক্রিয়ার
অনুকরণ
বা
উপস্থাপন,
এটাই
হচ্ছে ট্রাজেডির প্লট, কারণ প্লট বলতে আমি নাটকের ঘটনা পুঞ্জের সুশৃঙ্খল বিন্যাসই
বুঝে থাকি।
অপর
পক্ষে
চরিত্র
বলতে
আমি
নাটকের
সেই
ধর্মটি
বুঝি
যা
ক্রিয়াশীল মানুষের প্রকৃতি নির্ধারণে আমাদের সাহায্য করে; আর চিন্তা বা মনোভঙ্গীর প্রকাশ ঘটে কোন কিছু প্রমাণ করার জন্য যুক্তি উপস্থাপিত করতে গিয়ে বা কোন বিশেষ মত প্রকাশ করতে গিয়ে তারা যা বলে তাতে ।
প্রত্যেক ট্রাজেডিতেই তাই এর গুণ-নির্দেশক ছয়টি উপাদান রয়েছে। এগুলো হচ্ছেঃ কাহিনী বা
প্লট,
চরিত্র,
বাচন,
রচনায় শব্দ নির্বাচন, দৃশ্য
এবং
সঙ্গীত। এর মধ্যে দুটি অনুকরণের মাধ্যম-সম্পর্কিত, একটি অনুকরণের রীতি-সম্পৃক্ত, এবং তিনটি অনুকরণের বিষয়, সংশ্লিষ্ট। এগুলোই ট্র্যাজেডির সার্বিক রূপের ব্যঞ্জনা দিতে সমর্থ, এর বাইরে আর বেশী কিছুর দরকার হয় না। একথা বলা যেতে পারে যে কার্যতঃ প্রায় সকল নাট্যরচয়িতাই তাঁদের সৃষ্টিকর্মে এসব নাটকীয় উপাদান ব্যাবহার করে আসছেন। কারণ সকল নাটকেই সমভাবে
দৃশ্য,
চরিত্র,
কাহিনী
বা
প্লট,
বাচন,
সঙ্গীত,
এবং
রচনার শব্দ নির্বাচনের উপস্থিতি
লক্ষ্য
করা যায়। এ-সব
উপাদানের
মধ্যে
সবচেয়ে
গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে প্লট, মানে ঘটনার সুষ্ঠু বিন্যাস কারণ
ট্রাজেডি
তো
আর
ব্যক্তি-চরিত্রের
অনুকরণ
নয়,
ক্রিয়ার
অনুকরণ,
জীবনের অনুকরণ-সুখ
ও
দুঃখের
অনুকরণ। আর ঐ সুখ ও দুঃখ তো জীবনেরই কার্য-কারণ ঘটিত
ব্যাপার।
জীবনের
পরিণতি
একটা
বিশেষ
কার্যপ্রণালী অনুসারেই ঘটে, তা কোন গুণ-সাপেক্ষ নয়। এ কথা ঠিক যে মানুষের চরিত্রই তার গুণাবলীর নিয়ামক। কিন্তু সে যে সুখী অথবা
দুঃখী
হয়,
তা
তার
কর্মেরই
ফল।
সুতরাং
চরিত্রের
অনুকরণের
জন্য
ট্র্যাজেডি অভিনীত হয় না, যদিও ঘটনার প্রয়োজনে চরিত্র অমনি এসে যায়। কাজেই ঘটনা ও কাহিনীকেই ট্রাজেডির মূল লক্ষ্য রূপে ধরা হয় এবং এই লক্ষ্যই হচ্ছে ট্রাজেডির সর্বপ্রধান কথা। তারপর ঘটনা বা ক্রিয়া ছাড়া ট্রাজেডি সৃষ্টি হতে পারে না, কিন্তু
চরিত্র ছাড়াও
ট্র্যাজেডি সৃষ্টি সম্ভব। বস্তুতঃ আমাদের সাম্প্রতিক কালের নাট্যকারদের রচিত অধিকাংশ
ট্র্যাজেডিই চরিত্র সৃষ্টিতে ব্যর্থ হয়েছে। এই একই অভিযোগ করা চলে অপরাপর যুগের নাট্যরচয়িতাদের সম্পর্কেও। চিত্রশিল্পে এই ধরনের ব্যর্থতার দৃষ্টান্ত হচ্ছেন
জিউকসিস৪ র্যাঁকে তুলনা করা হয় পলিগনোটাসের সঙ্গে। পলিগনোটাসের শিল্পকর্মে অপরুপ চরিত্রাঙ্কন-নৈপুণ্য লক্ষ্য করা যায়; জিউকসিস-অঙ্কিত চিত্রে চরিত্রাঙ্কনের ক্ষমতার কোন প্রকাশ নেই। আবার, কেউ
যদি
পর
পর
এমন
সব
কথার
মালা
গেথে
যান যা
চরিত্রের
দ্যোতনা
সৃষ্টিতে
সার্থক
এবং
বাচন
ও
মননের
দিক
থেকেও
সুসম্পন্ন, তা হলেও তিনি ট্রাজিক সংবেদনা সৃষ্টিতে ব্যর্থ হতে পারেন। কিন্তু যে ট্র্যাজেডিতে এ সব দিকের দৈন্য-সত্ত্বেও একটি প্লট আছে, ঘটনার সৃষ্ট বিন্যাস রয়েছে, সৃষ্টি হিসেবে তার সার্থকতার সম্ভাবনা অনেক বেশী থাকবে। লক্ষ্য করবার আর একটি বিষয় হল। হঠাত পরিস্থিতির বিপরীতমুখি পরিবর্তন ও
প্রত্যভিজ্ঞান নামক যে
দুই শক্তিশালী উপাদানের
সন্নিবেশের ফলে ট্র্যাজেডি আমাদের অনুভূতিকে আলোড়িত করতে পারে তারা প্লটের অংশ। একটি অতিরিক্ত প্রমাণ এই যে, প্রায়শই দেখা যায় নানা ঘটনার সুষ্ঠু বিন্যাস ঘটিয়ে প্লট নির্মাণ করতে শেখার আগেই অনেক নতুন লেখক বাচন ও চরিত্র নির্মাণে নিখুঁত শিল্পবোধের পরিচয় দিতে পারেন। নাট্যচর্চায় নিতান্ত আদি কমিক প্রায় সকল কবি সম্পর্কে একথা সমানভাবে প্রযোজ্য। সুতরাং আমরা মনে করি ট্র্যাজেডির প্রথম ও প্রধান উপকরণ ও জীবনীশক্তি হচ্ছে এর প্লট।
ট্র্যাজেডিতে চরিত্রের স্থান দ্বিতীয়। চিত্রকলার ক্ষেত্রেও ঐ একই ব্যাপার লক্ষ্য করা যায়। কারণ চিত্রকর যদি তাঁর ক্যানভাসে সবচেয়ে সুন্দর রঙগুলোও এলোমেলোভাবে লেপে রাখেন তাহলে তিনি ততটা আনন্দ দিতে পারবেন না, যতটা আনন্দ তিনি দিতে পারবেন সাদা ও কালো রেখায় একটি স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরতে পারলে। ট্র্যাজেডি হল ক্রিয়ার অনুকরণ বা ক্রিয়াশীল চরিত্রের অনুকরণ।
ট্রাজেডির তৃতীয় উপাদান হচ্ছে চরিত্রগুলোর চিন্তার সামর্থ্য অর্থাৎ, বিশেষ পরিস্থিতিতে যা বলা সম্ভব এবং সঙ্গত তা চিন্তা করে বলার ক্ষমতা। রাজনীতি বা বক্তৃতার ভাষার যে ধর্ম, এরও
তাই। প্রাচীন নাট্য-রচয়িতা কবিরা তাদের চরিত্রগুলোকে রাজনীতিজ্ঞের মত করে কথা বলিয়েছেন, কিন্তু আজকালকার কবিরা তাদের কথা বলান বক্তার মত করে। একে চরিত্রের সঙ্গে মিলিয়ে এক করে দেখা চলবে না। নাটকে চরিত্র হচ্ছে তাই যা ক্রিয়া সম্পাদনকারীর নৈতিক উদ্দেশ্য ব্যক্ত করে অর্থাৎ সে কি ধরনের জিনিস পসন্দ করে আর কিই বা তাঁর অপসন্দ তা পরিস্ফুট করে তোলে, সেখানে তা অন্য কোনরূপেই স্পষ্ট নয়। কাজেই যে সংলাপে বক্তার এই ধরনের পছন্দ বা বিরাগ কোন কিছুরই চেতনা প্রকাশ পায় না, তা কখনোই চরিত্র বুঝাতে পারে না। অপর পক্ষে যেখানেই কথায় অথবা বাক্যে কোন কিছুকে সত্য অথবা মিথ্যা বলে প্রতিপন্ন করার চেষ্টা হচ্ছে অথবা যেখানে কোন সাধারণ সত্য প্রকাশিত হচ্ছে, সেখানেই চিন্তার প্রকাশ ঘটেছে।
চতুর্থ উপাদান হচ্ছে সংলাপে ব্যবহৃত কথন ভঙ্গি। আমি এই বাচন ভঙ্গি বলতে শব্দের প্রকাশযোগ্য ব্যবহার বুঝিয়েছি তা আগেই বলেছি। পদ্যে ও গদ্যে এর শক্তির মাত্রা সমান। সঙ্গিতই হচ্ছে বাকি ট্রাজেডির সবচেয়ে আনন্দদায়ক উপাদান। মঞ্চসজ্জার আবেদন
যথেষ্ট
হলেও,
নাট্টকারের
কলাকৌশল
অথবা কাব্যের
সঙ্গে
তার
সম্পর্ক
সামান্যই। কারণ প্রত্যক্ষ অভিনয় এবং অভিনেতার সাহায্য ছাড়াও ট্র্যাজেডির প্রভাব উপলব্ধি করা যায়। তা ছাড়া দৃশ্যসজ্জার সাহায্যে দর্শক-মনে প্রভাব বিস্তারের ব্যাপারটা নাট্যকার অপেক্ষা মঞ্চযন্ত্রীর কলা-কৌশলের উপরেই বেশী নির্ভর করে।
পোয়েটিকস এর ৫ম পরিচ্ছেদ এর অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও টিকাসমূহ
পোয়েটিকস এর ৭ম পরিচ্ছেদ এর অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও টিকাসমূহ
পোয়েটিকস এর ৭ম পরিচ্ছেদ এর অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও টিকাসমূহ
ব্যাখ্যা ও টিকাঃ
১। The lost second book of Comedy by Aristotle: আরিস্টটল কর্তৃক লিখিত কমেডি সম্পর্কে কোন বই পাওয়া যায় নি। তিনি কমেডি সম্পর্কে বই লিখে থাকবেন কিন্তু তা কালের অতল গর্ভে হারিয়ে গিয়েছে। বিস্তারিত
২। Catharsis: ক্যাথারসিস শব্দের অর্থ বিশুদ্ধকরণ বা শোধন। ক্যাথারসিস দ্বারা করুণা ও ভয়ের মাধ্যমে মানুষের আবেগ ও অনুভূতির পরিশোধন বুঝায়। বিস্তারিত
৩। Thought: মনোভঙ্গী অর্থবাচক
গ্রীক
যে
প্রতিশব্দটি আরিস্টটল তাঁর কাব্যনির্মাণকলা গ্রন্থে ব্যবহার করেছেন, সেটি আরিস্টটল ব্যবহৃত এমন তিনটি শব্দের একটি যার অনুবাদ বা ভাষান্তর অত্যন্ত কঠিন কাজ। থেকেই
মনে
হয়
তিনিও
এটি
ব্যবহার
করতে
গিযে
বিপন্ন
বোধ
করছেন।
লিভেল
এবং
স্কট
সম্পাদিত
গ্রীক অভিধানে উদাহরণ সহ শব্দটির পাঁচ রকম অর্থের উল্লেখ রয়েছেঃ (১)অভিসন্ধি, উদ্দেশ্যপুর্ণ ভাবনা (২) চিন্তা প্রণালী, (৩) চিন্তাশক্তি ও অনুধাবন ক্ষমতা(৪) ব্যক্ত ভাবনাকোন শব্দ বা অনুচ্ছেদের তাৎপর্য, (৫) নাটকের চরিত্র সমূহের বাক্য ও আচরণে প্রকাশিত মননশক্তি। তবে আরিস্টটলের প্রদত্ত চারটি ব্যাখ্যা দৃষ্টে মনে হয় যে তিনি যখন
শব্দটি
ব্যবহার
করেছিলেন
তখন
তাঁর
মনে
প্রধানতঃ
এই
তিনটি
বিভিন্ন অর্থের
বোধই
কাজ
করেছিল
(১)
বুদ্ধিদীপ্ত আলোচনা বা মননের ক্ষমতা, (২) চিন্তা প্রণালী এবং
(৩)
যে
চিন্তায়
মানুষের
মন
সায়
দেয়
এবং
যার
প্রেরণানুযায়ী মানুষ কর্মে প্রবৃত্ত হয়।
৪। Zeuxis: তিনি
লিউকানিয়ার হেরাক্লিয়াতে ৪৬৪ বছর পূর্বে জন্ম গ্রহন করেন। তিনি ছিলেন বিখ্যাত
চিত্রকর।
তিনি থ্যাসসের
চিত্রশিল্পী নেসিউস-এর শিষ্য ছিলেন (মতান্তরে হাইমেরার ডেমোফিলাস-এর)। ঐতিহাসিক প্লিনির মতে তিনি ৩৯৭ খ্রীষ্টপূর্বাব্দের দিকে জন্মগ্রহণ করেন। ভিন্ন মতে তিনি ৪৪২ খ্রীস্টপূর্বাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। প্লিনি অবশ্য এ মত স্বীকার করেন না। কুইন্টিলিয়ানের মতে তিনি পিলোপনেসীয় যুদ্ধের সময় বর্তমান ছিলেন তার বিখ্যাত চিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে গোলাপ ফুলের মালা গলায় দেবী, হেলেন, পেনিলোপ
প্রভৃতির
মূর্তি।
তাঁর
অঙ্কিত
চিত্রগুলোতে পলিগনোটাসের চিত্রের চরিত্রধর্ম তেমন প্রকটিত হয়নি। তবে তাঁর পেনিলোপ যেন পবিত্রতার প্রতিমূর্তি। বিস্তারিত
No comments:
Post a Comment