Poetics - Aristotle - Chapter - 2 - The objects of Poetic Imitation - Bangla translation and explanations
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
কাব্যিক অনুকরণের বিষয়
অনুকরণ১কারী শিল্পীর উপস্থাপনার বিষয় যেহেতু মানুষের ক্রিয়া আর সেই সব মানুষ যেহেতু ভাল অথবা মন্দ চরিত্রের একটি হবেই-কারণ সকল লোকই ভাল-মন্দ ভেদে নৈতিক প্রকৃতির দিক থেকে বিভিন্ন বলে ঐ দুই শ্রেণীর যে কোন একটির অন্তর্গত হতে বাধ্য-সেই হেতু শিল্পীর কাজ হবে এই সব লোককে বাস্তব জীবনে যেমন দেখা যায় তার চেয়ে উন্নততর রূপে অথবা হেয় রূপে, নতুবা যথাযথ রূপে উপস্থাপিত করা। চিত্রকররাও এই
রীতিরই
অনুসরণ
করে
থাকেন।
তাই
দেখি
পলিগনোটাস২ তাঁর চিত্রকর্মে
মানুষকে সুন্দরতর,
মহত্তররূপে উপস্থাপিত করেছেন, পৌজন৩ করেছেন
হেয়
করে
আর ডায়োনিসিয়াস৪ করেছেন জীবনের সাথে মিলিয়ে যথাযথ
রূপে। এটা তাহলে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে উল্লিখিত প্রতিটি অনুকরণ ক্রিয়া এই স্বাতন্ত্রের লক্ষণগুলোকে তুলে ধরবে এবং তা যে অনুপাতে স্বতন্ত্র ধরনের বস্তুর অনুকরণ করবে, সেই অনুপাতেই স্বতন্ত্র শ্রেণীর হয়ে দাঁড়াবে। এমন কি নৃত্য, বাঁশী ও বীণার নানারূপ সঙ্গীতেও এই বৈচিত্র্য দেখা দিতে পারে। ভাষাশ্রয়ী শিল্পেও ঐ বৈচিত্র সঞ্চারিত হতে পারে, সে ভাষা গদ্যই হোক আর গীতিমূর্ছনাহীন পদ্যই হোক। দৃষ্টান্ত স্বরূপ
উল্লেখ
করা
যেতে
পারে
যে,
হোমার৫ তাঁর রচনায় মানুষকে উন্নততর, মহত্তর রূপে অঙ্কন করেছেন, ক্লিওফোন৬ এঁকেছেন
যথাযথ
রূপে
অথচ
প্রথম
প্যারোডি
বা লালিকা
রচয়িতা থেসীয় হেগেমন৭ এবং দেইলিয়াড কাব্য-রচয়িতা নিকোকারিচ৮ তাদের মন্দ করেই দেখিয়েছেন। ডিথির্যাম্ব৯ এবং
নোমিক১০ কাব্যেও একই ব্যাপার ঘটেছে দেখতে পাই। উদাহরণ হিসেবে টিমোথিউস১১ এবং
ফিলোক্সেনাস১২ কর্তৃক বিভিন্নরূপে উপস্থাপিত সাইক্লপস পলিফেমাস১৩ -এর
চরিত্রের
কথা
উল্লেখ
করা
যেতে
পারে। চরিত্র চিত্রায়নের এই পার্থক্যই ট্র্যাজেডিকে কমেডি থেকে আলাদা সৃষ্টির পর্যায়ে উন্নীত করেছে। কমেডির প্রয়াস হচ্ছে মানুষকে লৌকিক জীবনে যেরূপ দেখা যায় তার চেয়ে হেয় রূপে উপস্থাপিত করা, আর ট্রাজেডির উদ্দেশ্য বাস্তবের চেয়ে তাকে মহত্তর রূপে দেখানো।
পোয়েটিকস এর ৩য় পরিচ্ছেদ এর অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও টিকাসমূহ
পোয়েটিকস এর ৩য় পরিচ্ছেদ এর অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও টিকাসমূহ
টিকা ও ব্যাখ্যাঃ
১। অনুকরণঃ Mimesis or
Imitation এর মাধ্যমে বাহিরের বাস্তবতার নতুন সৃষ্টি বুঝিয়েছেন। অনুকরণ বলতে আরিস্টটল, সম্ভবত, মানুষের জীবন বিশেষ উদ্দেশ্য বা ইচ্ছা প্রণোদিতভাবে চিত্রায়নের কথা বুঝাতে চেয়েছেন। বিস্তারিত পড়ুন
২। পলিগনোটাস (Polignotus or Polygnotus) খ্রিষ্টপূর্ব ৫ম শতাব্দির মাঝামাঝি সময়ের একজন প্রসিদ্ধ গ্রীক চিত্রশিল্পী। তিনি এগলাওফোনের পুত্র ও ছাত্র। তিনি
খ্রীস্টপূর্ব ৫০০ থেকে ৪২৫ অব্দ পর্যন্ত জীবিত ছিলেন। তিনি ছিলেন থ্যাসস
দ্বীপের
অধিবাসী।
গ্রীক
রাষ্ট্রনায়ক কাইমন, এর
সময়ে
তিনি
এথেন্স
নগরীতে
আগমন
করেন।
শিল্পী
হিসেবে
তাঁর
প্রধান
কৃতিত্ব, মনুষ্য-চরিত্রের সামগ্রিক ব্যঞ্জনা মানুষের মুখে ফুটিয়ে তোলা। এই জন্য তিনি আরিস্টটলের অকুণ্ঠ প্রশংসার অধিকারী হয়েছিলেন। প্রাচীর চিত্র অঙ্কনে তিনি বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। তাঁর বিখ্যাত চিত্রাবলীর মধ্যে রয়েছে ট্রয় লুণ্ঠন, পাতালে ইউলিসিস ইত্যাদি। বিস্তারিত পড়ুন
৩। পৌজন - Powson - একজন প্রাচীন
গ্রীক
চিত্রশিল্পী। তাঁর সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু জানা যায় না। তিনি সম্ভবতঃ খ্রীস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীর শেষভাগে বর্তমান ছিলেন। তার
অঙ্কিত চিত্রে
মানুষকে অনেকটাই হেয় রূপে উপস্থাপিত করা হয়েছে ।
৪। ডিওনিসিয়াস
(Dionysius) ডিওনিসিয়াস এথেন্সের অ্যারিওপ্যাগাসে আদালতের বিচারক চিলেন। তিনি প্রথম শতাব্দীতে বর্তমান ছিলেন। চিত্রশিল্পী ডায়োনিসিয়াস সম্পর্কেও আমাদের জ্ঞান নিতান্ত সীমিত। তিনি আরিস্টটলের পূর্ববর্তী ছিলেন তাতে সন্দেহ নেই। মনুষ্যচরিত্রের যথাযথ রূপের ব্যঞ্জনাই নাকি ছিল তাঁর চিত্রাবলীর বৈশিষ্ট্য। বিস্তারিত পড়ুন
৫। হোমার - (Homer) বিশ্ববিখ্যাত দুই মহাকাব্য ইলিয়াড ও ওডিসির স্রষ্টা মহাকবি হোমার খ্রীষ্টপূর্ব নবম শতাব্দীতে বর্তমান ছিলেন বলে অনুমান করা হয়। বাংলায় বিস্তারিত পড়ুন। ইংরেজিতে বিস্তারিত।
৬। ক্লিওফোন (Cleophon) তিনি ১১ টি নাটক লিখেছিলেন খ্রিষ্টের জন্মের ৪০০ বছর পূর্বে তিনি বর্তমান ছিলেন।প্রাচীন
গ্রীক
কবি ক্লিওফোনের রচনাকে সমালোচকগণ প্রাত্যহিক জীবনের মহাকাব্য রূপে চিহ্নিত করেছেন। মানুষের কল্পিত রূপ নয়, বাস্তব ও যথাযথ রূপ অঙ্কনেই তার কৃতিত্ব সমধিক প্রকাশ পেয়েছে। তাঁর ব্যক্তি পরিচয়মূলক তথ্য দুলভ বলেই তাঁর
সম্পর্কে
নিশ্চিত
করে
কিছু
বলা
সম্ভব
নয়। বিস্তারিত।
৭। হেগেমন (Hegemon) - পেলোপনেশিয়ান যুদ্ধের সময় তাঁর সম্পর্কে জানা যায় এবং তিনি থ্যাসস দ্বীপের অধিবাসী ছিলেন বলে মনে করা হয়। আরিস্টটল
কর্তৃক
প্রথম
প্যারোডি
রচয়িতা
রূপে
উল্লিখিত তিনি মহাকাব্যের ব্যঙ্গাত্মক অনুকরণ করেছিলেন বলে জানা যায়। তিনি আরিস্টোফেনিসের “The Battle of the Frogs
and mice ”-এর আদর্শেই তাঁর ব্যঙ্গকাব্যগুলো রচনা করেছিলেন।
৮। নিকোকারিচ (Nicochares) - দেইলিয়াড নামক ব্যঙ্গকাব্যের রচয়িতা নিকোকারিচ সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না। তাঁর দেইলিয়াড নামক ব্যঙ্গকাব্যটির কথা আরিস্টটল উল্লেখ করেছেন। ডেইলস শব্দের অর্থ কাপুরুষোচিত। সুতরাং দেইলিয়াড নাম থেকে বুঝা যায় এটি কাপুরুষতার মহাকাব্য। এ যেন বীরগাথা ইলিয়াডের এক উলটো ভাষ্য। বিস্তারিত পড়ুন।
৯। ডিথির্যাম্ব কবিতাঃ
Dithyrambic poetry- গ্রীক
পুরাণে
উল্লিখিত
দেবতা
ডায়োনিসাসের স্তুতি বা বন্দনামুলক এক ধরনের কবিতা। বিস্তারিত পড়ুন।
১০। নোমিক কবিতাঃ Gnomic Poetry - নোমিক
কবিতা
বা
নোমগীতি
ডিথির্যাম্ব
গোত্রীয়
এক
ধরনের
দেবস্তুতি- মূলক গীতি। বিস্তারিত পড়ুন।
১১। টিমোথিউস (Timotheus) - তিনি ছিলেন গ্রীক সঙ্গীতজ্ঞ ও ডিথির্যাম্বিক কবি। তিনি মেসিডোনিয়ার আর্কিলোস প্রথম এর দরবারেও এক বছর ছিলেন। এখানেই হতো এরিস্টটলের সাথে তাঁর পরিচয়। মিলেটাসের অধিবাসী টিমোথিউস খ্রীষ্টপূর্ব ৪৪৭ থেকে ৩৫৭ অব্দের মধ্যে জীবিত ছিলেন। ইংরেজ কবি ও সমালোচক ড্রাইডেন (John Dryden)-এর ‘আলেকজান্ডার্স ফী’ নামক কাব্যে টিমোথিউসের উল্লেখ পাওয়া যায়। তিনি একজন উচ্চ শ্রেণীর সঙ্গীতজ্ঞ ও কবি ছিলেন। ডিথির্যাম্ব কবিতা
রচনায়
তিনি
কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন। বিস্তারিত পড়ুন।
১২। ফিলোক্সেনাস (Philoxenus ) – এথেনিয়ানরা যখন সাইথেরা দ্বীপ দখল করে তখন তারা ফিলোক্সেনাসকে এথেন্সে দাস হিসেবে নিয়ে যায়। ফিলোক্সেনাস ছিলেন ডিথির্যাম্ব রচয়িতা
বিখ্যাত
গ্রীক কবি । তিনি খ্রীস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে বর্তমান ছিলেন । তিনি সাইথেরার অধিবাসী ছিলেন। কিছুকাল তিনি সাইরাকিউজের রাজা বড় ডায়োনিসিয়াসের সভায় অবস্থান করেছিলেন। বিস্তারিত পড়ুন।
১৩। সাইক্লপস পলিফেমাস – Cyclops Polyphemus - পলিফেমাস ছিলেন পোসাইডন ও জলপরি থুসাসের সন্তান। হোমারের অডিসির ৯ম খণ্ডে তাঁর কথা উল্লেখ করে হয়। গ্রীক পুরাণে
উল্লিখিত
অতিকায়
ও
মহাশক্তিশালী এক শ্রেণীর দানব বিশেষকে সাইক্লপস বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এদের কপালে নাকি একটা মাত্র চক্ষুই ছিল। আর এ সকল
সাইক্লপসদের মধ্যে সর্বাধিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তি ছিল পলিফেমাস। যুদ্ধ শেষে ট্রয় থেকে প্রত্যাগমনের পথে অডিসিয়াস জাহাজ
ডুবির
ফলে
১২
জন
সঙ্গীসহ
এক
দ্বীপে
আশ্রয় নিলে পলিফেমাস
তাঁকে
এক
গুহার
মধ্যে
বন্দী
করে
রাখে।
অডিসিয়াস
পরে
কৌশলে পলিফেমাসকে
হত্যা
করে
বন্দী
দশা
থেকে
মুক্তিলাভ করে স্বদেশে ফিরে যান। গ্রীক কবি টিমোথিউস এবং ফিলোক্সেনাস দুই জনেই পলিফেমাসের গল্পাশ্রয়ে ডিথির্যাম্ব কবিতা
রচনা করেছিলেন। ফিলোক্সেনাস ব্যঙ্গাত্মক মনোভাব নিয়ে চরিত্রটি অঙ্কন করেছিলেন। টিমোথিউস বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তাই পলিফেমাস চরিত্রটি তাঁর হাতে অনেকটা আদর্শায়িত হয়েই গড়ে উঠেছিল বিস্তারিত পড়ুন।
যে কোন প্রয়োজন ও সমস্যায় যোগাযোগ মারুফ আল মাহুমুদ
No comments:
Post a Comment