Paradise
Lost: General Critical Remarks
মূল প্রবন্ধ
দ্য স্পেকটেটর, সংখ্যাঃ ২৬৭ শনিবার, জানুয়ারি ৫, ১৭১২
Cedite Romani Scriptores, cedite Graii
- রোম ও গ্রিস
এর লেখকদের জায়গা দাও - প্রোপারসিয়ার
এলিজি ২-৩৪-৬৫
অনুবাদঃ
প্রকৃতিতে সাধারণ আলোচনার মতো বিরক্তিকর আর কিছুই নেই, আর তা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছায় যখন তা নির্দিষ্ট শব্দগুচ্ছের উপর করা হয়। যেহেতু
বিষয়টি নিয়ে কয়েক বছর আগে থেকেই আলচনা শুরু হয়েছে তাই আমি শুধু উপর থেকে হালকা
ভাবে আলোচনা করে যাব বিষয়টি নিয়ে আর তা হল জন মিলটনের প্যারাডাইস লস্টকে বীরত্বগাথামূলক কবিতা বলা যায় কি না? যারা এ কাব্যকে এমন শিরোনাম দিতে
রাজি নন তারা অন্তত অনুগ্রহ করে একে ঐশ্বরিক কবিতাও
তো বলতে পারেন। এ কাব্যে যদি শ্রেষ্ঠ কবিতার বৈশিষ্ট্য,
গুণাবলি বজায় থাকে তবে বীরত্বগাথা নামটি প্রদান করাটাই সঠিক। আর যারা একে বীরগাথা
বলতে কুঞ্চিত হন তারা এটিকে অসম্মানও করেন না। অ্যাডাম ও ঈনিয়াস যেমন এক কথা নয় তেমনি ইভ
এবং হেলেনও একই ব্যাপার নয় ।
এ জন্যেই
আমি এ কাব্যকে মহাকাব্যের নিরিখে বিচার করব আর দেখব ইলিয়াড ও ঈনিডের তুলনায়
এর কোথায় সীমাবদ্ধতা আছে, আরো দেখব ঐসব সৌন্দর্য এ কাব্যে আছে কিনা, যেটা একটি মহাকাব্য
হয়ে উঠার জন্য একান্তভাবেই প্রয়োজন। প্রাথমিক বিবেচনার বিষয় হলো মহাকাব্য কি উপকথা, যা
সত্যিকার ঘটনা হতেও পারে নাও হতে পারে। এর দ্বান্দিক দিক বিবেচনায় বলা যায়
কিছুটা ব্যতিক্রম বাদে মহাকাব্য তো এক ধরণের উপকথাই। এখানে কিছু ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার ব্যাপার আছে, এ ক্রিয়ার আবার তিনটি আলাদা রূপ থাকতে হবে প্রথমে এর মাঝে একটি
মাত্র ক্রিয়া কার্য করবে আর দ্বিতীয় ক্রিয়াটি সামগ্রিক আর তৃতীয়টি হবে একটি
মহতী ক্রিয়া । ইলিয়াড,
ঈনিড আর প্যারাডাইস লস্ট মহাকাব্য ত্রয়ীকে এ তিনটি ক্রিয়ার বিচারে আসতে হবে ।
ক্রিয়ার প্রতি বিশ্বস্ত থাকার জন্যে হোমার তার মহাকাব্য শুরু করতেন মূল ঘটনার একেবারে মাঝখান
থেকে। হোরেস মত প্রকাশ
করেছেন, যদি হোমার যদি লেডার ডিম হতে হেলেনের জন্ম, তার ধর্ষিতা হওয়া এবং
ট্রয় নগরীর প্রতিষ্ঠা পর্ব হতে তার মহাকাব্যের কাহিনি শুরু করতেন তাহলে তাতে হাজারো
ক্রিয়া প্রক্রিয়ার সূচনা ঘটত। এ কারণেই তিনি তার মহাকাব্যের ঘটনার সূচনা করলেন
রাজাদের মাঝে বিরোধকে কেন্দ্র করে আর এটাকে কেন্দ্র করেই বহু ঘটনার সূত্রপাত হলো, ক্রিয়া কিন্তু একটাই রইল আর শেষ পর্যন্ত এই বিরোধ আর মত পার্থক্যের কারণে এক
মর্মান্তিক পরিণতির দিকে এগুলো কাহিনি। ঠিক একই রকম আমরা ঈনিয়াসকে প্রথম ইতালির
সন্নিকটে টাইরেন সাগরে দেখি,
এখানে কবির উদ্দেশ্য তিনি ঈনিয়াসকে
ল্যাটিয়ামে নিয়ে যাবেন, আর
এখানে ট্রয় নগরী ভস্মীভূত হওয়ার পর ঈনিয়াসের অতীত কাহিনীটাও তুলে ধরা দরকার, একারণে দ্বিতীয় আর তৃতীয় পর্বে ভার্জিল ঈনিয়াসের মুখ দ্বারাই সে কাহিনীর বর্ণনা দিলেন। আর এ দুজন মহান মহাকবিকে অনুসরণ করেই মিল্টন তার প্যারাডাইস মহাকাব্য রচনার স্থান বেছে নিলেন নরক, নরক হতেই শুরু করলেন, যে নরকে মানুষকে স্বর্গ হতে সরিয়ে দেওয়ার জন্য ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে, আর এটাই হলো
মিল্টনের মহাকাব্যের মূল ক্রিয়া। আর পঞ্চশ, ষষ্ঠ আর সপ্তম
অধ্যায়ে এসে তিনি
সৃষ্টিকর্তার দূতদের সাথে শয়তানের যুদ্ধ জগৎ সৃষ্টির ঘটনাবলি গুলোকে যদি
ঐক্যসূত্রে গ্রথিত করে একের পর এক বিন্যস্ত করতেন তবে ক্রিয়ার ঐক্যের দিকটি
একেবারেই বিনষ্ট হতো। তবে অ্যারিস্টটল মনে করেন ক্রিয়ার ঐক্য বজায় রাখার বিষয়কে
অবলম্বন করে হোমারের প্রশংসা করার মতো কিছু নেই। আবার অন্য দিকে এই মহান গ্রিক কবির ছোটো খাটো
শ্রুটিগুলোকে ক্ষমার চোখে দেখতে অনুরোধ করেছেন। কারো কারো মতে এটা ঈনিড মহাকাব্যের
বেলাতেও খাটে। এর অনেক ঘটনা মূল ঘটনা হতে প্রায় বিচ্ছিন্ন বিষয় বলা যেতে পারে।
আর এ দিকে আমাদের আলোচ্য কাব্যের কোনো ঘটনার মাঝেই কোনো অনিয়ম লক্ষ করা যায় না।
অথচ এখানে একটি মাত্র ক্রিয়াকে অবলম্বন করে ঘটে বলে বহু অসাধারণ ঘটনাবলি আর এটি
আমাদের মাঝে অত্যন্ত সহজ-সরল বৈচিত্র্যের আস্বাদ তৈরি করে। এখানে উল্লেখ করা যায় যে, ভার্জিল র্তার কবিতার
মাধ্যমে যেমন রোমান সাম্রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী ঘটনাবলি তুলে ধরার প্রচেষ্টা
চালিয়েছেন ঠিক একই ক্ষেত্রে তিনি শত্রুপক্ষ কার্থেজকেও তুলে এনেছেন। আর এদিকে ঠিক
তেমনি মিল্টন তার কাব্যে স্বর্গ হতে মানুষের পতন এবং তার সাথে শয়তানেরও পতন
দেখালেন আর এর সাথে পতিত সৃষ্টিকর্তার দূতদেরকেও হাজির করলেন। আর এক পর্বে যেমন
সৌন্দর্যের বিকাশ ঘটেছে অন্য পর্বেও এ সৌন্দর্য চেতনার ঐক্য লক্ষ করা যায় আর
সেখানে পাশাপাশি দুটো ক্রিয়া একটি অপরটির ছায়া বলে মনে হয়। “স্প্যানিশ ফ্রায়ার” কিংবা “ডাবল ডিসকভারিতে” যার সাক্ষাৎ মেলে।
দ্বিতীয়
বৈশিষ্ট্য হলো ক্রিয়া হবে সামগ্রিক। যখন ক্রিয়াই সমগ্রকে ধারণ করে তখন মহাকাব্যের সব অংশে এর পূর্ণ প্রকাশ
ঘটে কিংবা অ্যারিস্টটল যেমন বলেছেন, এর একটি সূচনা, মধ্যি ভাগ আর সমাপ্তি থাকবে। শুরু করার আগে
কিছুই ঘটবে না, মধ্যিখানে বাহুল্য কোনোকিছু ঢোকানো যাবে না, শেষ হওয়ার পর যার অবশিষ্ট
কিছুই থাকবে না। যদি এর মাঝেকার একটি শর্তও ভঙ্গ হয় তাহলে ক্রিয়ার সামগ্রিক
রূপটি থাকবে না। আমরা অ্যাকিলিসের ক্রোধের বিকাশ লক্ষ করি, এর ক্রম পরিণতি দেখি এবং এর শেষ
অবস্থাটাও দেখি। ঈনিয়াসকে ইতালিতে বসতি গড়তে দেখি অথৈ সমুদ্রে বহুদিন ঘুরে বেড়ানোর পর। এখানে কবি মিন্টনের দক্ষ কারুকাজ এর চাইতে কোনো অংশে কম নয় বলে আমার ধারণা। আমরা লক্ষ করি এ ঘটনার শুরু নরক প্রদেশে, এর পরিণতি ঘটে
পৃথিবীতে এর ভাগ্য নির্ধারণ করা হয় স্বর্গলোকে। মোট কথা এর বর্ণনা ভঙ্গিমা সম্পূর্ণ
আলাদা ও ব্যতিক্রমধর্মী।
মহাকাব্যের
তৃতীয় দিকটি হলো এর মহতী দিক। অ্যাকিলিসের ক্রোধের কারণেই গ্রিকপক্ষের
সেনাপতিদের মাঝে ঝগড়ার সূচনা হয়েছে, ট্রয় নগরীর বীর সেনাদের নিপাত করেছে আর সব
দেবতাদের মাঝে মতানৈক্য আর ঝগড়ার সূচনা করেছে। ইতালিতে ঈনিয়াসের বসতি স্থাপনের
কারণে জন্ম হয়েছে জুলিয়াস সিজারের এবং অন্যদের এবং রোম সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা ঘটেছে। এক্ষেত্রে
মিল্টনের প্যারাডাইস লস্ট মহাকাব্য এ দুটো মহাকাব্যকে অতিক্রম করে যায়। এখানে কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি
কিংবা কোনো জাতির ভাগ্য নয় পুরো মানবজাতির ভাগ্যের দিকটির বিকাশ ঘটায়। নরক প্রদেশের সব রকম
অশুভ শক্তিগুলো জোট বেঁধেছে মানবজাতিকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য তারা এক্ষেত্রে কিছুটা সফলতাও লাভ
করেছে, আরো সফল হতো যদি না মহান ঈশ্বর এতে হস্তক্ষেপ করতেন। এখানে পাত্র পাত্রী নারী আর
পুরুষ। পুরুষ এক্ষেত্রে প্রকাশ করেছে তার নিখুঁত দিকটি আর নারীর মধ্য দিয়ে
প্রকাশ ঘটেছে সৌন্দর্যের দিকটি। এই মানবজাতির প্রধান শক্র হচ্ছে স্বর্গ হতে বিতাড়িত শয়তানের দূত সকল। এখানে মহান ঈশ্বর মানবজাতির পক্ষে। মোট কথা এ পৃথিবীতে মহতী যা কিছু
সেটা প্রকৃতির বাইরে কিংবা ভেতরেই থাকুক না কেন এই মহতী বিষয়সমূহ এ মহাকাব্যে বর্ণিত
হয়েছে।
কবিতাও তো
একটি স্থাপত্য কর্ম। পুরোপুরি না হলেও প্রতিটি অংশেই মহতী দিকের প্রকাশ থাকবে। এখানে দ্বিধা ছেড়ে বলা যায় ইলিয়াড কিংবা ঈনিডে
এমনটি নেই। ভার্জিলের সিমিলিকে সামনে স্থান দিয়ে ইলিয়াডি মহাকাব্যের বহু
বিষয়কে প্রশংসার মাঝে রেখে আমি বলতে চাচ্ছি, আর দুটো মহাকাব্যের প্রতি কোনো রকম বিরূপ মনোভাব না
পোষণ করে বলা যায়, প্যারাডাইস লস্ট মহাকাব্যের প্রতিটি অংশই অসাধারণ প্রক্রিয়ায় উপস্থাপন করা
হয়েছে। আর কোনো প্যাগান কাব্য এর চাইতে উর্ধে উঠতে পারে না। কিন্তু অ্যারিস্টটল ক্রিয়ার বৈশিষ্ট্যতা বোঝাতে
মহতী দিক বোঝাতে চাননি, সময়টাকেও বোঝাতে চেয়েছেন, মোট কথা মহাকাব্য
যথেষ্ট দীর্ঘকাব্য হতে হবে আর একই সাথে এর চরিত্রগুলোও হবে মহান মাপের । আর এই মহান
দিকটির অবতারণা করতে গিয়ে তিনি উপমা টেনেছেন— কোনো প্রাণীর আকৃতি যদি বিন্দুর আকার হয়। তাহলে সে
চোখের নজরেই আসে না কারণ চোখের দৃষ্টি একে তাৎক্ষণিকভাবে আত্মস্থ করে ফেলে আর এ
ক্ষেত্রে সামগ্রিক দিকটার একটা ভিন্নতর রূপ প্রত্যক্ষ করি, প্রতি অংশের আলাদা
আলাদা রূপ ধরা পড়ে না। আবার অন্যদিকে আমরা দশ হাজার ফুট দৈর্ঘ্যের একটা প্রাণীর
কথা ভাবতে পারি। আমাদের চোখের দৃষ্টি এর ক্ষুদ্র একটা অংশ দ্বারা এতটাই ব্যাপ্ত
হবে যে, আমরা এর পুরো ধারণাটা পাব না। আবার এর বিপরীত দিকটা ভেবে দেখা
যাক, দশ হাজার গজ দীর্ঘ একটা প্রাণীর শরীরের একটা ছোট্ট ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র
অংশ আমাদের চোখে ধরা দেবে এতে করে আমরা সে প্রাণীটার পুরো অবয়বটা দেখতে পাব না।
এসব প্রাণীর অতি দীর্ঘ অতি হ্রস্ব রূপটা যেমন আমাদের দৃষ্টিতে তেমনি ধরা দেবে, এর প্রাথমিক অবয়বটার নাগাল পাব না আমরা আর দ্বিতীয় রূপটা আমাদের চেতনায় ধরা সম্ভব হবে না। হোমার আর
ভার্জিল এমনি ক্ষেত্রেই তাদের ক্ষমতা জাহির করেছেন। ইলিয়াড আর ঈনিড দুটো মহাকাব্যেরই ক্রিয়ার দিকটি
খুবই ছোটো কিন্তু সে সব ততটাই শিল্পমণ্ডিত করে টেনে দীর্ঘাকার করা হয়েছে এবং
অধ্যায়ের পর অধ্যায় তৈরি করা হয়েছে আর দেব কুলের অবস্থানগত বিষয়টি এমন কাব্যিক
মহিমা দ্বারা অংকিত। মিল্টনের কাব্যে ক্রিয়ার দিকটি এতটাই শিল্পগুণমণ্ডিত করে
বিন্যস্ত যে আমি এ যাবৎ যত বিষয় পাঠ করেছি তার মাঝে অন্যতম অসাধারণ একটি বিষয় বলে মনে হয়। তবে এটা বলা যেতে পারে যে, ইলিয়াড ও ঈনিড মহাকাব্য যে প্রাচীন ঐতিহ্য নিয়ে রচিত, সেগুলো ধর্মীয় কাহিনীতে
বর্ণিত মানুষের স্বর্গ হতে বিতাড়ন উপাখ্যানের চাইতে আকর্ষণীয়। আর একটি বিষয় হলো, হোমার এবং
ভার্জিলের পক্ষে সত্যি এবং কল্পনা একত্রে মিশেল করার কোনো সমস্যা ছিল না কারণ ধর্মকে
হেয় করার মতো কোনো রকম সমস্যায় পতিত হতে হয়নি তাদেরকে। কিন্তু মিল্টনের সামনে এ
সমস্যাটা প্রকট ছিল তবুও তিনি তার কাব্যকর্মকে এমন অসাধারণ শিল্পমণ্ডিত করে
বিন্যস্ত করেছেন যে,
সেটা কল্পনাজাত হোক কিংবা নাই হোক সেটা ধর্মীয়
দিকের খুব নিকটে থাকার চেষ্টা করেছে পাঠক সমাজকে বিনোদন প্রদান করেছে, খ্রিষ্টীয় ধর্ম প্রাণ মানুষের ধর্মীয় চেতনায় কোনো ফাটল
ধরায়নি। আধুনিককালের সমালোচকগণ ইলিয়াড ও ইনিড মহাকাব্য হতে অনেক বিষয় তুলে এনে
প্রমাণ করেছেন যে,
এগুলো শ্রেষ্ঠ মানের কাব্য রচনার এক মহতী বিষয় আর এসব কাব্য একটা
নির্দিষ্ট কালকে ধরে রেখেছে। কিন্তু মিল্টনের কাব্য এমন একটি স্থান হতে শুরু যে ক্ষেত্রটা কোনো নির্দিষ্ট স্থান
কিংবা নির্দিষ্ট কোনো সময়ের আওতায় ফেলা যায় না আর এটা একেবারে দৃশ্যগত জগতের বাইরের
ব্যাপার, এ কারণে এর সময় কিংবা এর ইতিহাসগত দিকটি সম্পর্কে
পাঠককে কোনো ধারণা দেয়া সম্ভব নয়। এটা নিয়ে কৌতুহল সৃষ্টি হয় কিন্তু সঠিক দিক নির্দেশনা
পাওয়া সম্ভব নয়। বর্তমানকালের সমালোচকই মহাকাবের ক্ষেত্রে বিশেষ করে এর
অবয়রের ক্ষেত্র মাঝে বৎসর, দিন, মাস অথবা ঘন্টার প্রসঙ্গ তুলেননি কখনো ।
No comments:
Post a Comment