King Oedipus Bangla Translation - Part - 9 - রাজা ঈডিপাস বাংলা অনুবাদ - পর্ব ৯ |
King Oedipus Bangla Translation - Part - 9 - রাজা ঈডিপাস বাংলা অনুবাদ - পর্ব ৯
৯ম পর্ব শুরুঃ
ঈডিপাস :
অবশ্যই জানাব তোমাকে, আমার এ জীবনে যেহেতু তুমিই একমাত্র আপনজন, সে কারণে তোমাকে কোন কথা লুকোনো উচিত হবে না। আমার পিতা ছিলেন করিন্থিয়ান, নাম পলিবাস। আমার মাতা হলেন ডোরিয়ান, নাম মেরোপি। সারা নগরীতে আমিই ছিলাম উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন একজন মানুষ। এ কারণে সবাই আমাকে সম্মান করত কিন্তু একটি ঘটনায় সব এলোমেলো হয়ে যায়। একদিন এক ভোজসভায় একজন মদ্যপ মাতাল অবস্থায় আমাকে দেখিয়ে উপহাস করে বলে আমি নাকি আমার পিতার আসল পুত্র নই। এতে আমি
খুবই ক্রুদ্ধ হই। পরে অবশ্য সেদিনের মতো নিজেকে সামাল দেই। কিন্তু পরদিন আমি আমার পিতামাতার সামনে প্রশ্ন রাখলাম, তারা বললেন, লোকটা আমার সাথে মশকরা করেছে, এটা হেসে উড়িয়ে দেয়ার মতো বিষয়। সে সময়ের
জন্য আমি আমার পিতা-মাতার কথায় শান্ত হলাম।
কিন্তু মন থেকে সন্দেহটা দূর হল না। তখনো এটা নিয়ে চারপাশে কানাঘুষা চলছিল। একদিন আমি আমার পিতামাতার অজ্ঞাতে ডেলফিতে যাই। কিন্তু যেটা জানার জন্য আমি ফিবাসের কাছে গেলাম। সে বিষয়ে
তিনি আমাকে কোন কিছু না বলে হতাশার মাঝে ফেলে
দিলেন। এসবের পরিবর্তে তিনি আমাকে এমন
সৱ কথা শোনান, যা শুনে আমি রীতিমতো ভীত এবং
দুঃখিত হই। তিনি বলেন, আমার নাকি এটাই নিয়তি যে আমি আমার মায়ের দাম্পত্য শয্যাকে কলংকিত করব এবং আমার জন্মদাতা পিতাকে হত্যা করব। এটা শুনে আমি করিন্থ থেকে পালাতে বাধ্য হই। এমন এক দুর্গম জায়গায় চলে যাই, যেখনে ফিবাসের ভবিষ্যৎবাণী ফলে যাওয়ার
কোন সম্ভাবনা নেই। আমি ঘুরতে ঘুরতে সেই স্থানে
হাজির হই, যেখানে তোমাদের রাজপুত্রকে ফেলে দেয়া হয়েছিল। এবার আমি তোমাকে আসল ঘটনাটা বলব। চলতে চলতে আমি সেই জায়গায় হাজির হই যেখানে তিনটি রাস্তা একসাথে মিলেছে। সেখানে এসে আমি প্রথমে একটি অশ্বচালিত গাড়ির সামনে একজন প্রহরীকে দেখতে পাই। সেই প্রহরী হঠাৎ আমাকে রাস্তা হতে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেয়। আমি তখন ক্রুদ্ধ হয়ে লোকটাকে আক্রমণ করি। এটা দেখে গাড়িতে বসে থাকা একজন বৃদ্ধ তার লাঠি দ্বারা আমাকে আঘাত করে। আমি এমন জোরে ঘুষি চালাই যে, সে তখন গাড়ি থেকে উল্টে পড়ে যায়। এরপর আমি তাদের সবাইকে হত্যা করি। এখন যদি দেখা যায় যে, আমার মতো একজন অভাগা রাজা লেয়াসের সাথে সম্পর্কযুক্ত তাহলে আমার মতো এমন অভাজন পৃথিবীতে আর একটিও নেই। দেবতাদের দৃষ্টিতে এমন ঘৃণিত জন আর কেউ নেই। এরকম একজন মানুষকে নগরবাসীদের কেউ আশ্রয় দেবে না, দিলেও তার আসল পরিচয় জানার পর তাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেবে। এটা বলার পর আমি নিজেই নিজেকে অভিশম্পাত করছি। আমি
যে হাত দ্বারা তাকে হত্যা করেছি সে হাতেই তার স্ত্রীর সতিত্বহানি আর সম্ভ্রম বিনষ্ট করেছি। বলো, আমি কি
পাপাচারী নই? আমি কি কলুষিত জন নই? আমার নিজেরই
এখন নির্বাসনে যাওয়া উচিত। কিন্তু অবাক ব্যাপার, এই নির্বাসনকালে আমি আমার নিজের দেশেও যেতে পারব না। আমার রাজ্যের প্রজাদের দেখতে পাব না সেই দৈববাণীর ভয়ে। আর তাতে নিয়তির বিধান মোতাবেক যদি নিজ পিতাকে হত্যা করে ফেলি আর নিজের মায়ের সাথে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হই! নিষ্ঠুর ভাগ্যের যে
বিধান দ্বারা ঈডিপাসের ভাগ্যলিপি রচিত হয়েছে, সেই বিধান অনুযায়ীই তাকে এ অভিশাপ ভোগ করতে হবে। এমন কোন অভিশাপ আমার জীবনে নেমে আসার আগেই যেন আমার মরণ হয়।
কোরাস
গায়ক: মহাত্মা, যদিও এসব শব্দ
ভয় উদ্রেককারী, তবুও আশা আছে। সেই
প্রত্যক্ষদর্শীর কাছ থেকে পুরো বিষয় না জানা পর্যন্ত আপনি হতাশ হবেন না।
ঈডিপাস :
সেটাই আমার একমাত্র আশা। মেষপালক না আসা পর্যন্ত আমি অপেক্ষা
করব।
জোকাস্তা :
কেন, সে এলে কী জানতে চাইবে তার কাছে?
ঈডিপাস : তা
হল, যদি তার কথার সাথে তোমার কথা মিলে যায়, তাহলে আমি বিপদমুক্ত হব।
জোকাস্তা :
এমন কী গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা আমি তোমাকে বলেছি?
ঈডিপাস :
তুমি পূর্বে আমাকে বলেছ, রাজা লেয়াস দস্যুদের দ্বারা নিহত হন। সে ব্যক্তিও যদি এটাই বলে তাহলে জানব আমি সেই হত্যাকারী নই, কিন্তু সে যদি জানায় একজন লোকই লেয়াস ও তার অনুচরদের হত্যা করেছে তাহলে বুঝবে আমিই সেই অপরাধী।
জোকাস্তা :
ওহ, আমি তোমাকে নিশ্চয়তা দিচ্ছি, সে এখন অন্য কথা বলবে না, শুধু আমি নই, শহরে সবাই এটা শুনেছে। আর যদি সে অন্য রকম কথাও বলে তা হলে তা দৈববাণীর সাথে মিলবে
না। কারণ লক্সিয়াস সেই দৈববাণীতে বলেছিল,
আমার গর্ভের সন্তান দ্বারাই নিহত হবেন রাজা লেয়াস। কিন্তু আমার গর্ভের সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পরপরই তো দুর্গম পাহাড় এলাকায় পরিত্যক্ত অবস্থায় মারা যায়। অতএব, সে দৈববাণী সত্যি হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।
ঈডিপাস :
যথার্থই বলেছ তুমি, তবুও সেই মেষপালককে ডাকো, বিষয়টা একেবারে উড়িয়ে দিও না।
জোকাস্তা :
এক্ষুনি তাকে ডেকে পাঠাচ্ছি, ভেতরে চলো এবার, তুমি। যেটা ইচ্ছা করবে তাই করব আমি।[ঈডিপাস ও জোকাস্তার প্রস্থান]
কোরাস : আমি
শুধু এটাই বলতে চাই, আমার সকল কর্মকাণ্ডে আমি যেন সর্বদা সততা আর পবিত্রতা রক্ষা করে মানুষের কাছ থেকে যথাযথ সম্মান ও শ্রদ্ধা আদায় করতে পারি। অলিম্পাসের দেবকুলের প্রদর্শিত পথে যেন চিরকাল চালিত হতে পারি। আমার নিয়তি যেন আমাকে কখনো বিপথে চালনা না করে। অলিম্পাস পর্বতবাসী এইসব দেবতা সর্বদা অমর, যাদের কোন পিতামাতা নেই, তারা কখনো বিশ্রাম গ্রহণ করেন না, নিদ্রার কোলে সমর্পিত হন না। তারা কখনো বার্ধক্যের ভারে পীড়িত হন না। অত্যধিক দেমাগই মানুষকে অহংকারী করে। অতিরিক্ত সম্পদ বা অন্য কোন বস্তুর মোহে মানুষের দেমাগ ক্রমেই সীমা অতিক্রম করলে একসময় তার পতন ঘটে যাবে অবশ্যই, সে আর কখনো দাড়াতে পারবে না। দেবকুল যেন অবশ্যই আমাদের রাজাকে সব রকম আপদ হতে সুরক্ষা প্রদান করেন। কোন মানুষ যদি দেবতাদের প্রতি অবহেলা প্রদর্শন করে, সুবিচারকে পায়ের তলায় দাবিয়ে রেখে কথা এবং কর্মে বেশি রকম দম্ভ প্রকাশ করে, তাহলে তার উপরে নেমে আসবে এক ভয়াল অভিশাপ। সে তখন সর্বদা অন্যায় কর্মে নিজেকে নিয়োজিত রাখবে। সর্বদা সে অন্যায় আচরণ করতে থাকবে। এ ধরনের দাম্ভিক আর অহংকারী ধর্মহীন মানুষের জীবন দৈব অভিশাপে জর্জরিত হবেই। এ ধরনের মানুষের অন্যায় অপকর্ম যদি সম্মান পায় তাহলে আমরা যাব কোথায়? এটা হলে আমরা আর কোন দেবতার পূজার বেদিতে কিংবা মন্দিরে যাবনা। দৈববাণী যদি মিথ্যে হয়, দেবতার কথা যদি সত্যি না হয় তাহলে দেবতার পূজা করে কী লাভ?
জিউস, তুমি
যদি এই পৃথিবীর অধীশ্বর হও, তাহলে তোমার
সুবিচার অটুট রাখো। লেয়াস বিষয়ক ভবিষ্যৎ
বাণী ক্রমেই পুরনো হয়ে যাচ্ছে, মানুষ তার কথা প্রায় ভুলেই গেছে। অ্যাপোলোর পূজা করছে না আর কেউ। দেবতার আরাধনা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসছে।
No comments:
Post a Comment