king Oedipus - Bangla translation - part - 8 - রাজা ঈডিপাস বাংলা অনুবাদ পর্ব ৮
৮ম পর্ব শুরুঃ
৮ম পর্ব শুরুঃ
কোরাস গায়ক
: মাননীয়া, অনুরোধ করছি, রাজাকে বিশ্রামের জন্য আপনি প্রাসাদের ভেতরে নিয়ে যান।
জোকাস্তা :
কী করে এই সমস্যা সৃষ্টি হল?
কোরাস গায়ক
: অহেতুক সন্দেহ; অহেতুক এই কলংকভার ক্রমেই পরিস্থিতিটাকে উত্তপ্ত করে তুলেছে।
জোকাস্তা :
উদ্ভূত এই অভিযোগের কারণটা কী?
কোরাস গায়ক
: আমিও তাই বলি।
জোকাস্তা :
কী কারণে এমনটা ঘটছে?
কোরাস গায়ক
: আবার জানতে চাইবেন না। রাজ্যের এই বিশৃংখল পরিস্থিতিতে এটা ঘটা মোটেই অনুচিত।
ঈডিপাস :
এটাই কি তোমাদের শান্তি স্থাপনকারী ক্রিয়াকর্ম।
কোরাস গায়ক
: আমি আবার বলছি, মহান রাজা, আমাদের সত্যিটা মেনে নিন। আপনার
বিষয়টা যদি আমরা অস্বীকার করি তাহলে সবাই আমাকে নির্বোধ বলবে। একদা যখন আমাদের এই রাজ্যটা ধ্বংসের মুখোমুখি হয়েছিল তখন আপনিই আমাদের রক্ষা করেছেন। আর আজও আপনি আমাদের পথ প্রদর্শন করে অভীষ্ট লক্ষ্যে শান্তির, সমৃদ্ধি পথে
নিয়ে যাবেন।
জোকাস্তা :
তুমি কি আমাকে পুরোপুরি সব বলবে না? অনুরোধ করছি, বলো আমাকে। তুমি কেন হঠাৎ এমন ক্রোধের আগুনে জ্বলে উঠলে?
ঈডিপাস :
সবই বলব, আমি তোমাকে এসব স্বজনদের চাইতেও বেশি শ্রদ্ধা করি। ক্রেয়ন আর তার ষড়যন্ত্রই আমার ক্রোধের কারণ।
জোকাস্তা :
এটা কী করে ঘটল, আর অভিযোগটাই বা কী?
ঈডিপাস : সে
বলে, আমিই নাকি রাজা লায়াসের হত্যাকারী।
জোকাস্তা :
সে কি তা নিজের জ্ঞান থেকে বলছে নাকি অন্য লোকের গুজবে নির্ভর করে বলছে?
ঈডিপাস :
আহু, এটা তার চালাকি; সে নিজে কিছু না বলে
ভণ্ড এক জ্যোতিষীকে এনে তার
মুখ দিয়ে উচ্চারণ করাচ্ছে।
জোকাস্তা :
ওসব কথা নিজে থেকেই ভুলে যাও, আমি বলছি শোন, কোন মানুষই জ্যোতিষীর রহস্যপূর্ণ কথা বুঝতে পারে না। আমি এর প্রমাণ দিচ্ছি, রাজা লায়াস একটি দৈববাণী শুনেছিলেন। সে দৈববাণী ফিবাস কিংবা অন্য কারো কাছ থেকে এসেছিল কিনা আমি তা জানি না। দৈববাণীটা এ রকম ছিল যে, তার নিজের পুত্রের হাতেই তার মৃত্যু ঘটবে। সেই হত্যাকারী নাকি আমারই গর্ভজাত সন্তান। রাজা লায়াসের মৃত্যুর পর লোকেরা জানায় ডেলফি যাওয়ার পথে কয়েকজন বিদেশি দস্যুর হাতে রাজা লায়াস নিহত হন। আর এর আগেই আমাদের একটি সন্তান জন্ম নিলে রাজা লায়াস তিন দিনের মধ্যেই তার হাত-পা বেঁধে দুর্গম এক পাহাড়ি স্থানে ফেলে রেখে আসে। আর এটা কোনক্রমেই হতে পারে না যে, সেই সন্তানই তার পিতাকে হত্যা করবে, এটাই হল জ্যোতিষীর ভবিষ্যৎ বাণী। এসবে তুমি কান দিয়ো না। যদি এতে কোন
রহস্য থেকে থাকে তাহলে দেবতারাই সেটা
প্রকাশ করবেন সময়মত।
ঈডিপাস :
প্রিয়তমা পত্নী আমার, কিন্তু আমার মনটা বড়ই অশান্ত, তোমার কথা শোনার পর থেকে মনটা আরো অশান্ত হয়ে উঁঠেছে।
জোকাস্তা :
কেন, বিষয়টা কী, কিসের অশান্তি?
ঈডিপাস :
তুমি কি বলনি, রাজা লায়াস যেখানে নিহত হন সেখানে তিনটি রাস্তা একসাথে মিশেছে?
জোকাস্তা :
এটা একটা গল্প, যা লোকেরা এখনো বলে।
ঈডিপাস :
কোথায়, সে স্থানটা কোথায়?
জোকাস্তা :
জায়গাটার নাম ফসিস-যেখান থেকে দুটো পথে ডেলফি আর ডাওলিয়াতে যাওয়া যায়।
ঈডিপাস :
এটা কখন ঘটেছিল?
জোকাস্তা :
সম্ভবত এটা তোমার এ রাজ্যের দায়িত্ব ভার গ্রহণ করার অল্পকিছুকাল আগে।
ঈডিপাস : ওহ,
ঈশ্বর, আমাকে এ কী সংকটে ফেললে।
জোকাস্তা :
ঈডিপাস, কেন তুমি তোমার মনের ভেতরে এমন দুঃসহ ভার চাপাচ্ছ?
ঈডিপাস :
ওহ, আমাকে এটা জিজ্ঞেস কোরো না, এবার বলো, রাজা লায়াস দেখতে কেমন ছিলেন, তার বয়স কত ছিল?
জোকাস্তা :
দীর্ঘদেহী, শ্বেতশুভ্র কেশ, ঠিক তোমার
শরীরের গঠন যেমন।
ঈডিপাস : আহ! কী দুর্ভাগ্য, না জেনে কি আমি ভয়াল এ অভিশাপ বহন করছি?
জোকাস্তা :
সেকি! মহান রাজা আমার, তোমাকে দেখে ভয় হচ্ছে আমার।
ঈডিপাস :
জ্যোতিষীর দৃষ্টিতে যা দেখেছে, ওহ, এটাও কি সম্ভব? এটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য সবকিছু আমাকে খুলে বলো।
জোকাস্তা :
যদিও তোমাকে দেখে ভয় পাচ্ছি আমি, তবুও আমি সবই বলব তোমাকে।
ঈডিপাস :
রাজার সাথে ক’জন অনুচর ছিল? অল্প জয়েক জন, কিংবা পুরো সেনাবাহিনী?
জোকাস্তা :
সব মিলিয়ে পাচজন, তাদের সর্বাগ্রে ছিল একজন ঘোষক। একটি মাত্র গাড়ি, যেটাতে রাজা আসীন ছিলেন।
ঈডিপাস :
পরিষ্কার, সবই পরিস্কার হল, তোমাকে এসব কে বলেছে?
জোকাস্তা :
একজন চাকর। সে-ই একমাত্র জীবিত অবস্থায় ফিরে এসেছিল।
ঈডিপাস : সে
কি এখনো এই প্রাসাদে আছে?
জোকাস্তা :
না, যখন সে ফিরে এল, তখন তোমাকে এই রাজ্যের রাজা হিসেবে অধিষ্ঠিত দেখে সে আমার কাছে অনুনয় করে বলল; দয়া করে আমাকে যেতে দিন, বলল, আমি আমার গায়ে ফিরে গিয়ে মাঠে মেষ চরাব, আমি তাকে যেতে দিলাম। অসহায় দরিদ্র ভৃত্যটার এর চেয়ে বেশি চাওয়ার ছিল না। সে ছিল খুবই বিশ্বস্ত ভৃত্য ।
ঈডিপাস :
অতি সত্বর তাকে কি আমরা এখানে পেতে পারি?
জোকাস্তা :
অবশ্যই তাকে পাব, কিন্তু তার ব্যাপারে এসব জানতে চাচ্ছ কেন?
ঈডিপাস :
প্রিয়তমা পত্নী আমার, আমি ভয় পাচ্ছি, আমি এরই মাঝে অনেক বলে ফেলেছি, আমি মানুষটাকে দেখতে চাই।
জোকাস্তা :
ঠিক আছে, অবশ্যই তুমি তাকে দেখতে পাবে, কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না তোমার মনে কীসের এই দুঃসহ ভার।
No comments:
Post a Comment