অন্যান্য লিঙ্ক সমূহঃ ১। ইংরেজিতে মূল টেক্সট ২। ১ম অঙ্কের অনুবাদ ৩। ৩য় অঙ্কের অনুবাদ ৪। ৪র্থ অঙ্কের অনুবাদ ৫। ৫ম অঙ্কের অনুবাদ ৬। ড. ফস্টাসের সমস্ত টিকাসমূহ বাংলায় ৭। ক্রিস্টোফার মার্লোর জীবন
The tragical history of Dr. Faustus by Christopher Marlowe - Bengali Translation - ড. ফস্টাস - ক্রিস্টোফার মার্লো - সম্পূর্ন বাংলা অনুবাদ - ২য় অঙ্ক
ডক্টর ফস্টাস।
ডক্টর ফস্টাস।
দ্বিতীয় অঙ্ক
প্রথম দৃশ্য
[ফস্টাস তার পাঠকক্ষে অবস্থানরত]
ফস্টাসঃ অতএব ফস্টাস, এখন তোমার পতন অনিবার্য। পরিত্রাণের কোনই পথ নেই। তাহলে ঈশ্বর বা স্বর্গ নিয়ে ভেবে লাভ কি? ঐসব আকাশ কুসুম কল্পনা, অনর্থক চিন্তা আর হতাশা ঝেড়ে ফেল । ঈশ্বর সম্বন্ধে নৈরাশ্যবাদী হও এবং বিলজীবাবে বিশ্বাস রাখ। দৃঢ়চেতা হও। এখন আর পিছু হট না। কেন দ্বিধান্বিত হচ্ছ? ওহ কে যেন আমার কানে কানে বলছে, ‘ইন্দ্রজাল
চর্চা পরিহার
কর,
ঈশ্বরের
পথে
ফেরো’।
কি,
ঈশ্বরের
পথে?
ফস্টাস,
ঈশ্বর তো
তোমায়
ভালবাসেন
না।
যে
ঈশ্বরের
সেবা
তুমি
করছ
তা
তোমারই বাসনার
প্রতিরূপ। এর মাঝে নিহিত আছে বিলজীবাবের প্রতি প্রেম। তার জন্য আমি গীর্জা আর বেদী নির্মাণ করাব এবং নবজাত শিশুর ঈষদুষ্ণ রক্ত তাকে উৎসর্গ করব।
[সু-দূত এবং কু-দূতের প্রবেশ]
সু-দূতঃ সুপ্রিয় ফস্টাস, ঐ ঘৃণ্য
শাস্ত্র
বর্জন
কর।
ফস্টাসঃ অনুতাপ, প্রার্থনা বা অনুশোচনা এসবের কার্যকারিতা কতটুকু?
সু-দূতঃ ওহে, এগুলোই তোমায় স্বর্গে নিয়ে যেতে পারে।
কু-দূতঃ ওসব নিছক মায়া এবং উন্মাদনার ফসল। যারা এসবে বিশ্বাস করে তারা নির্বোধ।
সু-দূতঃ সুপ্রিয় ফস্টাস, স্বর্গ ও স্বর্গীয় বস্তুগুলোর কথা ভাব।
কু-দূতঃ না, ফস্টাস শুধু সম্মান আর সম্পদের কথা ভাব।
[দূতদের প্রস্থান]
ফস্টাসঃ সম্পদের কথা ভাবব কেন? আমি তো এম্বডেনের২৭ মালিক হয়ে যাব। ওহে ফস্টাস, মেফিস্টোফিলিস যদি তোমার পাশে থাকে, তখন ঈশ্বর তোমার কি ক্ষতিই বা করতে পারবেন? তুমি নিরাপদ। না আর কোন সংশয় নয়। এসো মেফিস্টোফিলিস, পরাক্রমশালী লুসিফারের নিকট থেকে খুশীর খবর নিয়ে এসো। এখন তো মাঝরাত, তাই না? এসো হে মেফিস্টোফিলিস, এসো এসো।
[মেফিস্টোফিলিসের প্রবেশ]
এখন বল, তোমার মনিব লুসিফার কি বলেছেন?
মেফিঃ তিনি বললেন ফস্টাসের জীবদ্দশায় আমি তার সেবায় নিয়োজিত থাকব। তবে এর মূল্যস্বরূপ ফস্টাসকে তার আত্মা বিক্রয় করতে হবে।
ফস্টাসঃ তোমার সেবা পাবার জন্য আমি ইতোমধ্যেই ঐ ঝুকি
নিয়েছি
।
মেফিঃ কিন্তু ফস্টাস, তোমাকে অবশ্যই আনুষ্ঠানিক ভাবে আত্মা সম্প্রদান করতে হবে। দানপত্রটা রচনা করতে হবে তোমার আপন রক্ত ধারায় । মহান লুসিফার, সেই নিশ্চয়তা প্রাপ্তির জন্য লালায়িত। যদি তুমি অস্বীকৃতি জানাও, আমি নরকে প্রত্যাবর্তন করব।
ফস্টাসঃ তিষ্ঠ মেফিস্টোফিলিস! বল, আমার আত্মা তোমার প্রভূর কি উপকারে লাগবে?
মেফিঃ তার রাজ্য
সম্প্রসারিত হবে ।
ফস্টাসঃ সে কারণেই কি তিনি আমাদের এভাবে প্রলুব্ধ করেন?
মেফিঃ দুঃসময়ে সঙ্গী পাওয়াটাই তো অভাগার জন্য পরম সান্তনা ।
ফস্টাসঃ মানুষ যে সব কারণে কষ্ট পায়, তেমন কোন যন্ত্রণাবোধ কি তোমাদের মাঝেও বিদ্যমান।
মেফিঃ হ্যা, মানবাত্মার চেয়ে আমাদের যন্ত্রণাবোধ একটুও কম নয়। কিন্তু ফস্টাস তুমিই বল, তোমার আত্মাটি আমি পেতে পারি কিনা। এটি পেলে আমি তোমার ভৃত্য হয়ে তোমার সেবায় রত থাকব। তোমার বিচার বুদ্ধি অনুযায়ী তোমার যা চাহিদা তার চেয়ে বেশীই তোমায় দেব।
ফস্টাসঃ হ্যা, মেফিস্টোফিলিস আমি ওটা তোমায় দান করলাম।
মেফিঃ তাহলে ফস্টাস নিঃশঙ্ক চিত্তে বাহুতে ছুরিকাঘাত কর। রক্তাক্ষরে আত্মা সম্প্রদানের কথা লিখ যাতে কোন এক বিশেষ দিনে মহান লুসিফার এই আত্মার মালিকানা দাবী করতে পারেন। এই দান তোমায় লুসিফারের মতই পরাক্রমশালী করে তুলবে।
ফস্টাসঃ(আপন বাহুতে ছুরিকাঘাত করে) মেফিস্টোফিলিস, দেখ তোমার প্রতি ভালবাসা হেতু আমি হাত কেটেছি এবং আপন রক্ত দিয়ে নিশ্চয়তা দিচ্ছি যে অনন্ত অন্ধকার রাজ্যের প্রধান প্রশাসক লুসিফারই আমার আত্মার মালিক। লক্ষ্য কর, আমার বাহু থেকে কেমন করে রক্ত চুয়াচ্ছে। এ ঘটনা যেন আমার আকাঙ্খা পূরণের জন্য অনুকূল হয়।
মেফিঃ কিন্তু ফস্টাস আত্মা সম্প্রদানের ব্যাপারটি তোমাকে অবশ্যই চুক্তিপত্রের মাধ্যমে ব্যক্ত করতে হবে।
ফস্টাসঃ হ্যা, আমি তেমনটাই করব। (তিনি লিখতে শুরু করেন) কিন্তু
মেফিস্টোফিলিস, আমার রক্ত তো জমাট হয়ে যাচ্ছে। আমি যে আর লিখতে পারছি না।
মেফিঃ রক্তকে তরল করার জন্য আমি এখনি আগুন আনছি।
[প্রস্থান]
ফস্টাসঃ রক্তের প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়া কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে? রক্ত কি চায় না আমি এই চুক্তিপত্র লিখি? রক্তধারা। পুনরায় বয়ে গেলে আমি তো নতুন করে লিখতে পারতাম। ‘ফস্টাস
তার
আত্মা
তাকে
সম্প্রদান করছে’ আঃ
এটুকু লেখার
পর
রক্ত
আর
প্রবাহিত
হচ্ছে
না।
কিন্তু
ফস্টাস,
কেন
তুমি
আত্মা সম্প্রদান করবে না? তুমি কি তোমার আত্মার মালিক নও? তবে আবার লিখ। ‘ফস্টাস
নিজ
আত্মা
তাঁকে
সম্প্রদান করছে’,
[জ্বলন্ত কয়লার পাত্রসহ মেফিস্টোফিলিসের পুনঃ প্রবেশ]
মেফিঃ ফস্টাস, আগুন এনেছি। এসো তা কাজে লাগাও ।
ফস্টাসঃ এই তো, রক্ত পুনরায় তরল হতে শুরু করেছে। আমি এখনি চুক্তিপত্র লেখার কাজ শেষ করব। [সে লিখতে লাগল]
মেফিঃ (জনান্তিকে) ওহ! ওর আত্মাটি সংগ্রহের জন্য আমি কি না করতে পারি?
ফস্টাসঃ ব্যাস কাজ শেষ। দানপত্র প্রণয়নের কাজ সমাধা হল। ফস্টাস তার আত্মা লুসিফারকে সম্প্রদান করল। কিন্তু আমার বাহুতে কি যেন লেখা দেখছিঃ ‘হে
মানুষ
পলায়ন
কর’-কোথায় পালাব আমি? যদি ঈশ্বরের কাছে যাই, তিনি আমায় নরকে নিক্ষেপ করবেন। না, এ আমারই মতিভ্রম, এখানে কিছুই তো লেখা নেই।-আরে আবার স্পষ্ট দেখছি এখানে লেখা ‘হে
মানুষ
পলায়ন
কর’ কিন্তু
ফস্টাস
কোন অবস্থাতেই পলায়ন করবে না।
মেফিঃ(জনান্তিকে) ওর মনটাকে প্রফুল্ল
করার
জন্য
এখন
কিছু
একটা
করতে
হবে। [প্রস্থান]
[শয়তানদের সঙ্গে মেফিস্টোফিলিসের পুনঃপ্রবেশ। ফস্টাসকে মুকুট ও দামী পরিধেয় প্রদানের পর শয়তানরা নৃত্যগীত করে প্রস্থান করে]
ফস্টাসঃ মেফিস্টোফিলিস বল তো এই মূকাভিনয়ের অর্থ কি?
মেফিঃ কিছুই নয়, ফস্টাস। কেবল তোমাকে আনন্দ দেওয়া ও যাদুবিদ্যা কি সাধন করতে পারে তা দেখানো।
ফস্টাসঃ আচ্ছাআমি কি যখন খুশী প্রেতদের ডাকতে পারব?
মেফিঃ ফস্টাস, তুমি তার চেয়েও মেলা বড় কাজ করতে পারবে।
ফস্টাসঃ যদি তাই
হয়,
তবে
সেজন্য
হাজার
আত্মাও
সম্প্রদান করা চলে। মেফিস্টোফিলিস, এই কাগজ খানা ধর। এটা আমার দেহ ও আত্মা সম্প্রদানের অঙ্গীকার পত্র। তবে শর্ত হচ্ছে যে আমাদের মাঝে সম্পাদিত এই
চুক্তির
যাবতীয়
বিধি
তোমায়
মেনে
চলতে
হবে।
মেফিঃ ফস্টাস, আমি নরক ও লুসিফারের নামে শপথ করছি যে তোমাকে প্রদত্ত সব প্রতিশ্রুতি পূরণ করব।
ফস্টাসঃ চুক্তিপত্রটা পড়ছি, শোন। (সে পড়া শুরু করে) প্রথমতঃ ফস্টাস কায়ায় ও সত্ত্বায় এক বিদ্রোহী আত্মায় পরিণত হবে। দ্বিতীয়তঃ মেফিস্টোফিলিস তার আজ্ঞাধীন থাকবে এবং তার ভৃত্যের
কাজ
করবে।
তৃতীয়তঃ
সে
যখন
যা চাইবে
মেফিস্টোফিলিস তাই করবে বা তাই নিয়ে আসবে। চতুর্থতঃ মেফিস্টোফিলিস ফস্টাসের গৃহে বা কক্ষে অদৃশ্য হয়ে বিরাজ করবে। শেষতঃ উক্ত জন ফস্টাস যখনি যে আকৃতিতে বা রূপে তাকে হাজির হবার নির্দেশ দিবে, তাকে সে ভাবেই উপস্থিত হতে হবে। উপরে উল্লেখিত শর্তের ভিত্তিতে আমি উইটেনবার্গের অধিবাসী, ডক্টর জন ফস্টাস, এই দলিলের মাধ্যমে পূর্বলোকের রাজা লুসিফার ও তার প্রতিনিধি মেফিস্টোফিলিসের নিকট আমার অবয়ব ও আত্মা সমর্পণ করছি। আরো শর্ত থাকে যে উপযুক্ত চুক্তির শর্ত ভঙ্গ না হলে চব্বিশ বছর গত হওয়ার পর তারা পূর্বোক্ত জন ফস্টাসের দেহ, আত্মারক্ত মাংস ও অন্যান্য সমস্ত কিছুই তাদের নিবাসে, যেখানেই তা অবস্থিত হোক না কেন, নিয়ে যাবার পূর্ণ ক্ষমতা রাখবে।
স্বাক্ষর - জন
ফস্টাস
মেফিঃ ফস্টাস, এটা কি অঙ্গীকার পত্র হিসাবেই তুমি আমায় দিচ্ছ?
ফস্টাসঃ অবশ্যই। তুমি এটা ধর। এজন্য লুসিফার তোমায় পুরস্কৃত করবেন।
মেফিঃ ফস্টাস, এখন তোমার অভিলাষ প্রকাশ কর।
ফস্টাসঃ প্রথমে আমি নরক সম্বন্ধে তোমাকে প্রশ্ন করব। বল, মানুষ কর্তৃক নরক নামে অভিহিত স্থানটা কোথায়?
মেফিঃ স্বর্গের নীচে।
ফস্টাসঃ বুঝলাম, কিন্তু কোন অঞ্চলে তার অবস্থান?
মেফিঃ নরকের অবস্থান মহাবিশ্বের সর্ব উপাদানের মধ্যস্থলে যেখানে আমরা চিরকাল অবস্থান করছি ও নিরন্তর যন্ত্রণার শিকার হচ্ছি। নরকের কোন সীমানা নেই, এর অবস্থান কোন নির্দিষ্ট এলাকা জুড়ে নয়। আমরা যেখানে নরকও সেখানে আর যেখানে নরক, সেখানে আমরা অবশ্যই থাকব। উপসংহারে বলতে হয় যখন সারা দুনিয়া বিলীন হয়ে যাবে, প্রতিটি প্রাণীই শুদ্ধ ও পবিত্র হবে তখন স্বর্গ ছাড়া
সব
জায়গাই
নরকে
পরিণত
হবে।
ফস্টাসঃ আমার ধারণা, নরক একটা কল্পলোক মাত্র।
মেফিঃ হ্যা, যতদিন অভিজ্ঞতা তোমার মনে পরিবর্তন না আনছে, ততদিন এমনই ভাবতে থাক।
ফস্টাসঃ তুমি কি মনে কর যে ফস্টাসের উপর অভিশাপ নেমে আসবে?
মেফিঃ হ্যা, প্রয়োজনের তাগিদেই তুমি অভিশপ্ত হবে কারণ এই তো সেই দলিল। যার মারফত তুমি তোমার আত্মা লুসিফারকে সম্প্রদান করেছ ।
ফস্টাসঃ তা বটে। কিন্তু দেহটাও তো দান করেছি, তাতে কি বা যায় আসে। তুমি কি ভাব যে এ জীবন অতিবাহিত করার পর কোন যন্ত্রণাভোগের কথা কল্পনা করতে ফস্টাস খুব ভালবাসে। ধ্যাৎ, এগুলো খুবই তুচ্ছ প্রসঙ্গ, নেহায়েৎ গাঁজাখুরি গল্প।
মেফিঃ কিন্তু ফস্টাস, আমার অস্তিত্বই প্রমাণ করে যে তোমার ধারণা ভুল। কেননা আমি অভিশপ্ত এবং নরকেই এখন আমার বাস।
ফস্টাসঃ বল কি! তুমি এখন নরকে? না। মেফিস্টোফিলিস, এটাই যদি নরক হয়ে থাকে তবে আমি স্বেচ্ছায় অভিশপ্ত হব। আহার, নিদ্রা, ভ্রমণ এবং তর্ক বিতর্ক সব কিছুর ব্যবস্থাই তো এখানে রয়েছে। কিন্তু এ প্রসঙ্গ বাদ দাও। আমাকে একটা স্ত্রী জুটিয়ে দাও; তাকে জার্মানীর সেরা সুন্দরী হতে হবে। স্ত্রী ছাড়া আমি চলতে পারব না।
মেফিঃ স্ত্রী! ফস্টাস, স্ত্রীর প্রসঙ্গ অবতারণা কর না। এটা আমার অনুরোধ।
ফস্টাসঃ মেফিস্টোফিলিস, লক্ষ্মী বন্ধু আমার, একটা বৌ আমার লাগবেই। তুমিই তাকে যোগাড় করে দাও।
মেফিঃ ভাল কথা, তোমাকে কি বৌ পেতেই হবে? তাহলে আমি না আসা পর্যন্ত ওখানেই বসে থাক। শয়তানের কসম তোমার জন্য বৌ এনে দেব।
[প্রস্থান]
[মেফিস্টোফিলিসের প্রবেশ। সঙ্গে রমণীর পোশাক পরিহিতা একজন প্রেতাত্মা তার
হাতে
আতশবাজি]
মেফিঃ ফস্টাস বল, স্ত্রী হিসাবে একে তোমার কতটা পছন্দ?
ফস্টাসঃ থুঃ, ও
প্লেগে
আক্রান্ত
হোক
।
মেফিঃ শোন ফস্টাস, বিবাহ একটা অনুষ্ঠান সর্বস্ব ছেলেখেলা। যদি আমার প্রতি তোমার মনের টান থাকে তাহলে বিয়ে-শাদীর কথা আর ভেবো না। তোমার চোখে যাকে ধরবে তাকেই তুমি পাবে। হোক না সে রমনী পেনিলোপের২৮ মত সতী সাধ্বী কিংবা সাবার২৯ রানীর মত বিদূষী অথবা স্বর্গ থেকে পতনের পূর্বে লুসিফার যেমন রূপবান ছিলেন তেমন সুদর্শন। ধর, এই
বইটা
নাও
ও
ভাল
ভাবে
পড়।
[সে
ফস্টাসকে
বইটা
দিল] এই পংক্তিমালা বার বার আবৃত্তি করলে সোনা-দানা মিলে যায়। মাটির উপরে এই বৃত্ত আঁকলে বজ্র, বিদ্যুৎ, তুফান
আর
ঘূর্ণিঝড়ের উদ্ভব হয়। এই শ্লোকটি ভক্তিভরে তিনবার উচ্চারণ করলে সশস্ত্র সৈন্যবাহিনী তোমার সামনে উপস্থিত হবে। তোমার যে কোন আদেশ পালনে ওরা প্রস্তুত থাকবে ।
ফস্টাসঃ ধন্যবাদ, মেফিস্টোফিলিস। তবু, আমি বড়ই আনন্দিত হতাম যদি এমন একটা গ্রন্থ
পেতাম
যার
ভেতরে
যখন
ইচ্ছা
তখন
প্রেতদের
ডেকে
আনবার। জন্য
দরকারী
সব
মন্ত্র
ও
শ্লোক
রয়েছে।
মেফিঃ এই বইয়ের এইখানটায় তুমি তা পাবে। [গ্রন্থের উক্ত অংশ দেখায়]
ফন্টাসঃ তারপর আমি এমন একটি গ্রন্থ পেতে চাই যার দ্বারা আকাশের সব গ্রহ নক্ষত্রের বৈশিষ্ট্য এবং গতিবিধির কথা জানা যাবে।
মেফিঃ এই বইয়ে সে কথাও লেখা আছে। [বইটির
আরেক
অংশ
দেখায়]
ফস্টাসঃ আরো একটি গ্রন্থ আমাকে যোগাড় করে দাও । সেটা পেলেই আমার প্রয়োজন শেষ। সেই বই থেকে যেন জগতের সমস্ত উদ্ভিদ, লতাগুল্ম ও বৃক্ষরাজির কথা জানতে পারি।
মেফিঃ এ সব তথ্যও এখানে রয়েছে ।
ফস্টাসঃ ওঃ ! তোমার ধারণা ভুল ।
মেফিঃ ছি, ছি, আমি
তোমাকে
এ
ব্যাপারে
নিশ্চয়তা দিচ্ছি। [বইটির
ঐ
অংশ
দেখায়
]
দ্বিতীয় দৃশ্য
ফস্টাসের বাসগৃহ
ফস্টাস আর মেফিস্টোফিলিসের প্রবেশ
ফস্টাসঃ যখন আকাশপানে চাই, আমি অনুতপ্ত হই। শয়তান মেফিস্টোফিলিস, তখন আমি তোমায় অভিসম্পাত দেই কারণ তুমিই আমায় স্বর্গীয় আনন্দ থেকে বঞ্চিত করেছ।
মেফিঃ ফস্টাস, কেন ভাবছ যে স্বর্গ পরম মহিমাময় স্থান। শুনে রাখ, স্বর্গ তোমার অথবা মর্ত্যবাসী যে কোন মানুষের চেয়ে অনেক কম সুন্দর।
ফস্টাসঃ এ কথা তুমি কেমনভাবে প্রমাণ করবে?
মেফিঃ স্বর্গ নির্মিত হয়েছে মানুষের জন্য অতএব মানুষ স্বর্গের চেয়ে মহত্তর।
ফন্টাসঃ স্বর্গ যদি
মানুষের
জন্যই
নির্মিত
হয়ে
থাকে
তবে
তা
আমার
জন্যও
তৈরী হয়েছে।
আমি
এই
কুহকী
বিদ্যা
পরিত্যাগ
করব
ও
অনুতাপ
করব।
[দুই দূতের আগমন]
সু-দূতঃ ফস্টাস। অনুতাপ কর। তাহলে ঈশ্বর এখনও তোমায় করুণা করবেন।
কু-দূতঃ তুমি এখন অপবিত্র আত্মা। ঈশ্বর তোমায়
করুণা
করতে
পারেন
না।
ফস্টাসঃ আমার কানে কানে কে বলে গেল যে আমি পাতকী আত্মা! আমি শয়তান হলেও ঈশ্বর আমায় করুণা করতে পারেন। হ্যা, হ্যা, আমি অনুতাপ করলে ঈশ্বর আমায় ক্ষমা করবেন।
কু-দূতঃ সে কথা ঠিক, কিন্তু ফস্টাস, তুমি কোন দিনই অনুতাপ করবে না।
[উভয় দূতের প্রস্থান]
ফস্টাসঃ আমার অন্তর এতই কঠোর হয়ে গিয়েছে যে আমি অনুতাপও করতে পারি না। পাপমোচন, ধর্ম বিশ্বাস বা স্বর্গ এসব শব্দ উচ্চারণ করতে গেলেই এক ভয় জাগানিয়া কণ্ঠ আমার কানে চিৎকার করে বলে, ‘ফস্টাস, তুমি তো অভিশপ্ত’। তারপর দেখতে পাই তরবারী, ছুরি, বিষ, বন্দুক, ফাসির দড়ি আর ইস্পাতনির্মিত বিষ মাখানো কৃপাণ আমার সামনেই রয়েছে যাতে আমি আত্মহত্যা করতে পারি। অনেক আগেই হয়তো নিজেকে বধ করতাম যদি না মোহময়ী আনন্দ সম্ভার দিয়ে আমার গভীর হতাশা দূর করতে পারতাম। আমি কি অন্ধ হোমারকে৩০ ডেকে এনে আলেকজাণ্ডারের গভীর প্রেম এবং ইনোনীর মৃত্যুর কাহিনী৩১ শুনিনি? বীণার অপূর্ব সুর লহরী সহযোগে যে ব্যক্তি থীবি নগরীর প্রাচীর৩২ নির্মাণ করেছিল, সে কি আমার মেফিস্টোফিলিসের সাথে যৌথভাবে সঙ্গীত পরিবেশন করেনি? তাহলে কেন আমি মৃত্যুবরণ করব, কেনই বা হতাশায় ভুগব? না আমি সংকল্পবদ্ধ হলাম। আমি কখনই অনুতাপ করব না। এসো মেফিস্টোফিলিস, আমরা আবার তর্কবির্তকে প্রবৃত্ত হই; পবিত্র জ্যোতিষশাস্ত্র নিয়ে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করি । বলতো চাঁদের উপরেও কি অনেক জ্যোতিষ্ক রয়েছে? পৃথিবী
যেমন
বিশ্ব
ব্রহ্মাণ্ডের কেন্দ্রে অবস্থিত ঠিক তেমনি যাবতীয় জ্যোতিষ্ক মিলে কি একটি অখণ্ড ভূমণ্ডল গঠিত হয়েছে?
মেফিঃ বুঝলে ফস্টাস, ভূমণ্ডল সংগঠনের উপাদানগুলোর মতই নভোমণ্ডলগুলো একে অপরের সাথে মিলে আছে। এরা সম্মিলিতভাবে একই অক্ষের উপর আবর্তিত হচ্ছে যার প্রান্তসীমা ভূমণ্ডলের বিস্তৃত মেরুতে অবস্থিত। শনি, মঙ্গল
বা
বৃহস্পতি
কোন
কল্পিত
নাম
নয়,
এরা
প্রত্যেকেই ঘূর্ণায়মান গ্রহ।
ফস্টাসঃ কিন্তু, স্থান কাল নির্বিশেষে তারা কি একই দিকে একই গতিতে আবর্তিত হয়।
মেফিঃ প্রত্যেকেই একই সাথে পৃথিবীর দু মেরুর উপর প্রতি চব্বিশ ঘণ্টায় পূর্ব থেকে পশ্চিমে একবার ঘুরে। কিন্তু রাশি চক্রের ক্ষেত্রে এদের গতিবেগ পৃথক হয়।
ফস্টাসঃ ধুর! ঐসব
তুচ্ছ
বিষয়
ওয়াগনারও বলতে পারে। কেন, মেফিস্টোফিলিসের জ্ঞান-বুদ্ধি কি এর চেয়ে বেশী নয়? গ্রহদের দু রকম গতির কথা কে না জানে? প্রথম প্রকার গতির সময়সীমা পূর্ণ একদিন। দ্বিতীয়টার সময়সীমা গ্রহভেদে ভিন্ন। শনির ক্ষেত্রে
ত্রিশ
বছর,
বৃহস্পতির বার বছর, মঙ্গলের চার বছর, সূর্য, বুধ ও শুক্রের এক বছর এবং চাঁদের আটাশ দিন। ধ্যাৎ, এগুলো নবিস লোকের শেখার বিষয়। তুমি বরং আমায় বল, প্রতিটি নভোমণ্ডলের কি নিজস্ব চালিকাশক্তি রয়েছে?
মেফিঃ হ্যা।
ফস্টাসঃ মোট কতকগুলো স্তর বা পরিমণ্ডল রয়েছে?
মেফিঃ নয়টা; সপ্তগ্রহ, নভোমণ্ডল এবং জ্যোর্তিময় স্বর্গলোক ।
ফস্টাসঃ কেন, আমরা
একই
সময়ে
সব
গ্রহের
সম্মিলন,
দ্বন্দ্ব,
স্থান
বৈশিষ্ট্য বা গ্রহণ দেখতে পাই না? কেনই বা কোন বছরে এগুলোর স্বল্পতা আবার কোন বছরে আধিক্য পরিলক্ষিত হয়? তুমি, আমার এসব প্রশ্নের সদুত্তর দাও ।
মেফিঃ এমনটি ঘটছে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সমগ্রতার প্রেক্ষিতে তাদের গতিবেগের পারস্পরিক অসমতার কারণে ।
ফস্টাসঃ বেশ, আমার প্রশ্নের জবাব পেয়ে গেলাম। এবার বল এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের স্রষ্টা কে?
মেফিঃ আমি এ প্রশ্নের জবাব দেব না।
ফস্টাসঃ সুপ্রিয় মেফিস্টোফিলিস, জবাব দাও ।
মেফিঃ জোরাজুরি কর না কারণ আমি এর উত্তর তোমাকে দেব না।
ফস্টাসঃ ওরে পাজী, তুই না আমার কাছে সব কিছু বলার জন্য প্রতিশ্রতিবদ্ধ।
মেফিঃ তা ঠিক। তবে আমাদের রাজ্যের স্বার্থ বিরোধী কিছু আমি বলব না । এই প্রশ্ন আমাদের রাজ্যবিধির বিরোধী। ফস্টাস, যেহেতু তুমি অভিশপ্ত, তুমি নরক নিয়েই চিন্তা ভাবনা কর।
[সু-দূতের প্রবেশ]
সু-দূতঃ ফস্টাস, অনুধ্যান কর সেই ঈশ্বরকে যিনি মহাবিশ্বের স্রষ্টা।
[প্রস্থান]
মেফিঃ আমার কথাটা স্মরণ রেখ।
[প্রস্থান]
ফস্টাসঃ চলে যা অভিশপ্ত প্রেতাত্মা, ঐ নোংরা ঘৃণ্য
নরকে
ফিরে
যা।
তোর
জন্যই ফস্টাসের
আত্মা
বিপন্ন
ও
অভিশপ্ত
হয়েছে।
হায়,
বাঁচার
সময়
আর
আছে কি?
[সু-দূত এবং কু-দূতের পুনঃ প্রবেশ]
কু-দূতঃ ভীষণ দেরী হয়ে গিয়েছে।
সু-দূতঃ যদি ফস্টাস অনুতাপ করে তবে এ বিলম্ব ধর্তব্যের বিষয় নয়।
কু-দূতঃ অনুতাপ করতে গেলে শয়তানরা তোমায় টুকরো টুকরো করে ফেলবে।
সু-দূতঃ তুমি অনুতাপ করলে ওরা কোনদিন তোমার চামড়ায় হাত দিবে না।
[উভয় দূতের প্রস্থান]
ফস্টাসঃ আঃ, প্রভু, ত্রাণকর্তা আমার! ফস্টাসের বিপন্ন আত্মাকে রক্ষার চেষ্টা করুন।
[লুসিফার, বিলজীবাব এবং মেফিস্টোফিলিসের প্রবেশ]
লুসিফারঃ ঈশ্বর ন্যায়পরায়ণ, তাই তিনি তোমার আত্মাকে রক্ষা করতে পারবেন না। আমিই তোমার আত্মার একমাত্র বৈধ দাবীদার।
ফস্টাসঃ কে তুমি? কি ভয়ঙ্কর চেহারা তোমার!
লুসিফারঃ আমি লুসিফার। আর এ আমার সঙ্গী বিলজীবাব। নরক শাসনের ক্ষেত্রে সে আমার সহযোগী।
ফস্টাসঃ হায়রে ফস্টাস, এরা তোমার আস্থা নিতে এসেছে।
লুসিফারঃ তুমি যে আমাদের আঘাত দিয়েছ সে কথাটা তোমায় বলতে এসেছি। তুমি প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ
করে
ঈশ্বরের
কথা
বলেছ।
ঈশ্বর
চিন্তা
করা
তোমার
উচিত
নয়। তুমি
শয়তানের
কথা
ভাব।
বিলজীবাবঃ একই সাথে তার মায়ের কথাও ভাব ।
ফস্টাসঃ আমায় ক্ষমা করুন। এখন থেকে ঈশ্বর চিন্তা করব না। ফস্টাস শপথ করছে যে সে আর কখনও স্বর্গপানে তাকাবে না, ঈশ্বরের নাম মুখে আনবে না অথবা তার কাছে প্রার্থনা জানাবে না। আমি সব পবিত্র গ্রন্থ ভস্মীভূত করব, ধর্ম যাজকদের হত্যা করব এবং আমার অনুগত প্রেতদের দিয়ে গীর্জাগুলো ধূলিসাৎ
করে
দেব।
লুসিফারঃ এসব করলে আমরা তোমাকে ভালভাবে পরিতৃপ্ত করার চেষ্টা করব। শোন ফস্টাস, তোমাকে কিছু আনন্দদায়ক দৃশ্য দেখানোর জন্যই আমরা নরক থেকে এসেছি । বস এবং দেখ সপ্ত রিপুর সবাই স্বরূপে এখানে উপস্থিত হবে।
ফস্টাসঃ আদম তার সৃষ্টির
প্রথম
দিনে
স্বর্গদর্শনে যেমন আনন্দ পেয়েছিল ওদের আবির্ভাবের দৃশ্য আমার কাছে তেমনই সুখদায়ক হবে।
লুসিফারঃ স্বর্গ বা সৃষ্টি নিয়ে কথা না বলে বরং এই প্রদর্শনীটি দেখতে থাক। শয়তান ছাড়া অন্য কোন প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করবে না। এই এসো তোমরা।[সপ্তরিপুর প্রবেশ] ফস্টাস, এখন তুমি তাদের নাম-ধাম ও স্বভাব চরিত্র সম্বন্ধে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পার।
ফস্টাসঃ ওহে প্রথম আগন্তুক, তুমি কে?
অহঙ্কারঃ আমি অহঙ্কার। আমার জনক জননী আছে ভাবতে আমি ঘৃণা
করি।
আমি কবি
ওভিডের৩৩ সেই মক্ষিকার মতো। আমি চুপিসারে যে কোন কোনায় যেতে পারি। কোন কোন সময় আমি পরচুলার মত কোন মহিলার কপালে বসি অথবা পালকের পাখার মতো তার ওষ্ঠ চুম্বন করি। কিন্তু ছি ছি কি দুর্গন্ধ এখানে! এখানের মাটি সুবাসিত আর চিত্রিত কাপড় দ্বারা আচ্ছাদিত না করা হলে আমি আর একটি কথাও বলব না।
ফস্টাসঃ এই দ্বিতীয় আগন্তুক, কি তোমার পরিচয় ?
লালসাঃ আমার নাম লালসা। এক বুড়ো ইতরের ঔরসে আমার জন্ম হয়েছিল। আমার ইচ্ছাপূরণ হবে জানলে আমি কামনা করতাম যে এই বাড়ীটা আর এর অভ্যন্তরের সব মানুষ সোনা হয়ে যাক। তাহলে আমি তোমাদের বুকের খাচায় বন্দী করে রাখতাম। ওহ, সোনা
তুমি
কতই
না
মিষ্টি।
ফস্টাসঃ ওহে তৃতীয় জনা, তুমি কে?
ক্রোধঃ আমি ক্রোধ।
আমার
বাবাও
নেই
মাও
নেই
।
বয়স
অর্ধ
ঘন্টা
পূর্ণ
হতে
না হতেই
আমি
এক
সিংহের
মুখ
থেকে
ছিটকে
বেরিয়ে
আসি।
সেই
তখন থেকে
এই
দীর্ঘ
তরবারি
যুগল
নিয়ে
দুনিয়ার
এ
প্রান্ত
থেকে
ও
প্রাত্ত
ছুটে বেড়াচ্ছি । যখন যুদ্ধ করার জন্য কোন প্রতিপক্ষ পাই না তখন নিজেকেই ক্ষত-বিক্ষত করি। জন্ম আমার নরকে। মনে হয়, তোমাদেরই কেউ একজন আমার পিতা বলে প্রমাণিত হবে
ফস্টাসঃ চার নম্বর আগন্তুক, তুমি কে?
ঈর্ষাঃ আমার নাম
ঈর্ষা।
আমার
বাবা
চিমনী
সাফ
করত।
আমার
মা
ঝিনুক কুড়াত।
আমি
পড়তে
জানি
না।
তাই
আমি
চাই
সব
বই
পত্র
যেন
পুড়ে যায়।
অন্য
কাউকে
খেতে
দেখলে
আমি
রোগা
হয়ে
যাই।
ইশ,
দুনিয়া জুড়ে
যদি
দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়ত, যদি সবাই মরতো এবং শুধু আমিই বেঁচে থাকতাম! তখন তুমি দেখতে আমি কতই না মোটা তাজা হয়ে উঠি। কিন্তু তুমি বসেই থাকবে আর আমি দাড়িয়ে রইব? উঠে এসো নয়তো জাহান্নামে যাও।
ফস্টাসঃ বেরিয়ে যা হিংসুটে বঞ্জাত । আচ্ছা পঞ্চমীতোমার নাম কি?
পেটুকঃ জনাব, আমি কে জানতে চান? আমি পেটুক। আমার বাপ-মা বেঁচে নেই আমার জন্য তারা প্রায় কিছুই রেখে যায় নি। যসামান্য ভাতার ব্যবস্থা করে গেছে। তা দিয়ে দৈনিক ত্রিশবার খাবার ও দশ বার হালকা নাস্তা পানি কেনা যায়। প্রাকৃতিক প্রয়োজন মেটানোর পক্ষে এ পরিমাণ বড়ই নগণ্য। ও হ্যা, অত্যুত্তম পরিবারে আমার জন্ম। আমার দাদা ছিলেন লবণজারিত শুকরের মাংসের টুকরা। দাদী ছিলেন ক্ল্যারেট মদের বড় পিপা। লবণাক্ত হেরিং মাছ এবং সন্ত মার্টিন দিবসের৩৪ ভোজসভার নোন্তা, শুস্ক, গো মাংস ছিল আমার ধর্ম পিতা। এক ফুর্তিবাজ ভদ্রমহিলা ছিলেন আমার ধর্ম মাতা।
সব
বড় শহর
নগরে
তিনি
সমাদৃতা
ছিলেন।
নাম
তার
মিস্ট্রেস মার্গারী মার্চ বিয়ার আচ্ছা ফস্টাস, আমার বংশ পরিচয় তো সবই জানলে; তুমি কি আমাকে নৈশ ভোজের দাওয়াত দিবে?
ফস্টাসঃ না আমি বরং তোর ফাসির দৃশ্য দেখতে চাই । নইলে তুই আমার সব খাদ্য আর পানীয় শেষ করে দিবি।
পেটুকঃ শয়তান যেন
তোকে
গলা
টিপে
মারে।
ফস্টাসঃ ওরে পেটুক তুই নিজের গলা টিপে মর গে। এই যে ষষ্ঠী, তোমার পরিচয় দাও।
আলস্যঃ আমি আলস্য।
এক
সূর্যকরোজ্জল সাগর তীরে আমি ভূমিষ্ঠ হয়েছিলাম। জন্মাবধি সেখানেই শুয়েছিলাম। তুমি সেখান থেকে ডেকে এনে আমার বিরাট ক্ষতি করেছ। পেটুক আর লাম্পট্য যেন পুনরায় আমাকে বয়ে নিয়ে ওখানে রেখে আসে । আমি আর একটি কথাও বলব না। রাজার ভাণ্ডার এনে দিলেও না।
ফস্টাসঃ এই সপ্তমী, এই অসংযমী রমণী, তুমি কে?
লাম্পট্যঃ জনাব, আপনি আমার পরিচয় জানতে চান? আমার নামের প্রথম অক্ষরটি হল ‘ল’।
লুসিফারঃ এই তোমরা এখন নরকে ফিরে যাও নরকে! [পাপমূর্তিদের প্রস্থান] বল
ফস্টাস,
এই
প্রদর্শনী তোমার কেমন লাগল?
ফস্টাসঃ আহ! চমৎকার! মনের খোরাক পেয়ে গেলাম।
লুসিফারঃ জানো ফস্টাস, নরকে
সব
ধরনের
আমোদ
ফুর্তির
ব্যবস্থা
আছে।
ফস্টাসঃ ইস! যদি নরক পরিদর্শন করে পুনরায় ফিরে আসতে পারতাম, কতই না প্রীত বোধ করতাম।
লুসিফারঃ সে সুযোগ তুমি পাবে। আজ মধ্য রাতে তোমাকে ডেকে পাঠাব। ইতোমধ্যে এই বইটা ভাল করে পড়ে নাও। অতঃপর তুমি যেমন খুশী তেমন আকৃতি ধারণ করতে পারবে।
ফস্টাসঃ শক্তিমান লুসিফার, অনেক ধন্যবাদ। আমি এ বইটাকে আমার জীবনের মত করেই সংরক্ষণ করব।
লুসিফারঃ বিদায় ফস্টাস। কেবল শয়তানের কথা স্মরণ কর।
ফস্টাসঃ বিদায়, মহান লুসিফার। [লুসিফার
এবং
বিলজীবাবের প্রস্থান]
মেফিন্টোফিলিস, চল যাওয়া যাক
[প্রস্থান]
No comments:
Post a Comment