The Garden Party by Katherine Mansfield - Bangla Translation - দ্যা গার্ডেন পার্টি - ক্যাথেরিন ম্যান্সফিল্ড - বাংলা অনুবাদ |
The Garden Party by Katherine Mansfield - Bangla Translation
Part 1 of 2
দি গার্ডেন পার্টি - ক্যাথেরিন ম্যান্সফিল্ড - ২ পর্বের ১ম পর্ব।
মোট কথা আবহাওয়াটা
ছিল খুবই সুন্দর। গার্ডেন
পার্টির জন্য এমন
চমৎকার দিন এরা
এর আগে কখনো
পায়নি।
দিনটি উষ্ণ জোর
হাওয়া নেই। মেঘমুক্ত আকাশ। আকাশের
নীলাভ আচ্ছন্ন হালকা
সোনালি রৌদ্রের আবরণে
ঠিক গ্রীষ্মের সূচনাপর্বে
যেমনটি লক্ষ করা
যায়। বাগানের
মালি ঘাস কাটা,
ঝাড়পোছ করে ডেইজি
ফুলগুলোকে আরো আকর্ষণীয়
করে তুলতেই যেন সকাল
থেকে মহাব্যস্ত। গোলাপ সম্পর্কে
এটা অবশ্য বলতে
হয় যে বাগানবাড়িতে অনুষ্ঠিত
অনুষ্ঠানগুলোতে একমাত্র গোলাপই
প্রধান আকর্ষণ। আসলেই একরাতে
প্রস্ফুটিত হতে পারে শত
শত গোলাপকলি। আরো তখন
সবুজ পত্রগুচ্ছ নতমুখী
দেখে মনে হয়
যেন স্বর্গ হতে ফেরেশতাগণ
এ জায়গায় কিছুক্ষণের
জন্য পরিদর্শনে এসেছিলেন।
সকালবেলার নাস্তাপর্ব শেষ
হতে না হতেই
তাবু টানানোর জন্য
লোক এসে হাজির। তাবুটা
তুমি কোথায় টানাতে
চাও আম্মু?
বাছা আমার,
এ বিষয়ে আমাকে
প্রশ্ন করে কোনো
ফল পাবে না,
এবার আমি তোমাদের হাতেই
সব কাজ ছেড়ে
দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি
তোমার মা,
এটা ভূলে যাও। আমাকে একজন
সম্মানিত মেহমান বলেই
ভাবতে পারো।
কিন্ত মেগ (Meg) সম্ভবত
পার্টির লোকজনের তদারকি
করতে একেবারেই অনিচ্ছুক। সকালের নাস্তার
আগেই সে তার
চুল ধুয়েছে আর
সবুজ একটা পাগড়ির
মতো কাপড় মাথায়
জড়িয়ে বসে বসে
কফিতে চুমুক দিচ্ছে,
কোকড়ানো ভেজা কালো
চুলগুলো লম্বা হয়ে
গালের পাশে সেঁটে আছে। জোজ (Jose)
যেন প্রজাপতি, সর্বদাই সে
নিচে নামে সিল্কের
পেটিকোট আর তার
সাথে আলখেল্লার মতো
একটা জ্যাকেট পরে।
লরা (Laura) এবার তোমাকে
যেতে হবে,
আসলেই তুমি শিল্পগুণমপ্তিত
একজন।
মাখন আর রুটি
হাতে ধরা অবস্থায়ই
লরা দ্রুত চলে
গেল।
ঘরের বাইরে বসে আহারপর্ব
সমাধা করা আসলেই
একটি রুচিকর ব্যাপার। আর
এ ছাড়া সবকিছু
গোছগাছ করতে সে
খুবই ভালোবাসে। অন্যদের থেকে এ
ব্যাপারে একটু বেশি
অগ্রসর হওয়ার বিষয়টি সর্বদা
ওকে ব্যতিব্যস্ত রাখে।
ঢিলেঢালা শার্ট পরা
চারজন লোক বাগানের
রাস্তায় সারিবদ্ধ অবস্থায়
দাড়িয়ে ছিল। তারা গোটানো ঢাকনা
দেয়া কিছু ক্যানভাস
বহন করছিল। তাদের সবার
পেছনেই ছিল মালামালের ব্যাগ। তাদের
দেখে বেশ সন্তুষ্টই
মনে হচ্ছিল। এ সময়ে
লরা তার হাতের
মাখন আর রুটিগুলো কোথাও
রাখার জন্য জায়গা
খুঁজল কিন্তু এ
মুহূর্তে সেগুলো ফেলে
দেয়া ছাড়া অন্য কোনো
উপায় খুঁজে পেল
না সে। ওর মুখে
রক্তিমাভা দেখা দিল
আর নিজের মাঝে
কিছুটা কঠোরতার প্রকাশ
ঘটাতে চাইল আর
ওদের সামনে এসে
কিছুটা অন্যমনস্ক ভাব
প্রদর্শন করল।
অবিকল সে তার
মায়ের কণ্ঠ ভঙ্গিমা
অনুকরণ করে বলল,
সুপ্রভাত।
কিন্তু কণ্ঠস্বর তার এতটাই
অপছন্দের মনে হলো
যে সে রীতিমতো
লজ্জা পেল আর
ছোট্ট বাসিন্দার মতোই তোতলাতে
তোতলাতে বলল,
ও অ্যা,
মানে আপনারা এসেছেন
তাবু খাটাতে?
এদের মাঝে লম্বা,
লিকলিকে আধময়লা লোকটা
বলল, আপনি
ঠিকই ধরেছেন মিস! এরপর
সে তার যন্ত্রপাতির
ব্যাগটির স্থান পরিবর্তন
করল, খড়ের
টুপিটাতে টোকা দিয়ে
নিচে নামিয়ে ওর
পানে তাকিয়ে হাসল।
লোকটার হাসিটা খুবই
সহজ ও আন্তরিকতাপূর্ণ
যা লরাকে সহজেই
অভিভূত করল। লোকটার চোখ দুটো
ছোটো ছোটো কিন্তু
গাঢ় নীল। এবার সে
অন্যদের দিকে তাকিয়ে
দেখল তারাও হাসছে। ওদের
হাসি যেন বোঝাতে
চাইছে, প্রাণখুলে হাসো,
আমরা কারো ক্ষতির কারণ
হব না। কর্মচারীগুলো কত
ভদ্র আর আজকের
সকালটাও কত সুন্দর। কিন্তু
সকলে তার উপলক্ষ নয়,
সে কর্মব্যস্ত হতে
চায়।
মূল ব্যাপার তাবু
খাটানো। ভালো
কথা, লিলিফুলে
আচ্ছাদিত লনটি কেমন
হয়? এখানে
সম্ভব? এখন তার
হাতে আর রুটিমাখন নেই,
সে হাত তুলে
জায়গাটা নির্দেশ করল। ছোটো
একটি পেট মোটা
ছেলে ঠোট কামড়ে কিছু
একটা বলার চেষ্টা
করল আর লম্বা
লোকটি ভ্রূ কোচকাল।
আমার কাছে এটা
আকর্ষণীয় মনে হয়
না, বলল
সে, তাঁবুর
পাশে এটা খুব
একটা মানানসই হবে
না বলেই লোকটা
তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে
লরার দিকে তাকাল। আপনার দৃষ্টিতে
যে স্থানটি ভালো
বোধ হবে আপনি
সেখানেই এটা স্থাপন
করতে পারেন। লরা নিঃশব্দে তার
কথাই মানল।
এটা তো টেনিসকোর্টের
এক কোনায়ও হতে
পারে, পরামর্শ দিল
সে।
কিন্তু এর একপ্রান্তে তো
আবার ব্যান্ডবাদকরা বসবে। এই
শিক্ষাদান পর্বটি লরাকে
মুহূর্তের জন্য চমকিত
করল!
এখানে একজন কর্মচারী
তার প্রতি যথেষ্ট
সম্মান রেখে সরাসরি
বলছে তার চোখে
কী ভালো লাগবে সেটি।
হুম, তাহলে
আপনি ব্যান্ডপার্টিরও ব্যবস্থা করেছেন,
বলল অন্য একজন
কর্মচারী।
সে কিছুটা ফ্যাকাশে। টেনিসকোর্টের
লোকটি অনাগ্রহী দৃষ্টি
নিয়ে তাকাল, লোকটি
আসলে কী ভাবছিল?
শুধু ছোটো একটি
ব্যান্ডবাদক দল,
নম্র সুরে বলল
লরা।
যদিও ছোটো ব্যান্ডবাদক
দল, তাতে এ লোকটার
হয়ত আপত্তি ছিল।
এদিকে তাকান মিস,
ওই যে স্থানটি,
ওইখানে গাছগুলোর পাশে
জায়গাটা পছন্দসই। কারাকাস গাছের নিচে,
তাহলে তো এ
গাছগুলো মোটেই চোখে
পড়বে না। অথচ এগুলোর চারপাশে
মেলে দেয়া চকচকে
পাতা আর হলুদ
ফলের কারণে সত্যিই
মোহনীয়। আপনি
কি ভাবতে পারেন
এই চমতকার গাছগুলো
মরুদ্বীপে জন্যে, একাকী
দর্পের সাথে পাতা আর
ফলগুলো সূর্যের পানে
মেলে ধরে,
একটা তাঁবুর কারণে
অবশ্যই এগুলো ঢাকা
পড়ে যাবে?
অবশ্যই তা ঢাকা
পড়বে, ইতোমধ্যেই অন্য
কর্মচারীগুলো কাঁধে কাঁধ
মিলিয়ে জায়গা তৈরির কাজে
লেগে গেছে। শুধু লম্বা
লোকটি কিছুই করছে
না।
একটা সুগন্ধ বৃক্ষের
সামনে নত হয়ে
সেটির গন্ধ শুঁকতে
লাগল।
লরা তার গন্ধ
শৌকার ভঙ্গিমা দেখে
কারাকাস বৃক্ষের কথা ভুলে
গিয়ে লোকটির বিষয়ে
আগ্রহী হল। খুব কম
মানুষকেই লরা এমনটি
করতে দেখেছে। এই কর্মজীবী
মানুষেরা আসলেই কত
সহজ ও সুন্দর,
ভাবল লরা। কেন যে
এসব উপেক্ষা করে
সে উৎ্কট ছেলেদের
সাথে নেচে খেলে
সময় ব্যয় করে। বিশেষ
করে যারা রবিবারের রাতে
খাবার খেতে আসে। সে
ভাবল ওইসব তুচ্ছ
ছেলেছোকরাদের চেয়ে এই কর্মজীবী
মানুষগুলো অনেক উচুমানের। লরা
ভাবল, এসব একেবারেই ভুলভ্রান্তি
তার।
লম্বা লোকটি একটা
খামের ওপর কিছু
লিখল।
সেটা এমন একটা
লেখা যা গাছে
ঝুলিয়ে রাখা যায়, যেটা
তাদের শ্রেণীগত পার্থক্যের
প্রতিনিধিত্ব করে। এসবের কোনোই
অর্থ নেই। তখন আর ওদের
নিয়ে কোনো চিন্তা
করতে চায় না
সে, একটুও
নয়, এক
টুকরোও নয়...এখন সে
কাঠের হাতুড়ির চক
চক আওয়াজ শুনতে
পাচ্ছে, কে যেন
শিস দিল,
কে যেন সুরেলা
আওয়াজে জানতে চাইল,
তুমি কি ওখানে
ঠিক আছো?
সেটি খুবই আন্তরিকতাপূর্ণ
ডাক, যেটি ভালোবাসার
পরিচয়টাই বহন করে। যেন
লরার উদ্দেশ্য লম্বা
লোকটিকে তার সুখস্থাচ্ছন্দ্য সম্পর্কে
কিছুটা জানানো। আর সে
এটা দেখাতে চেয়েছিল
যে, প্রচলিত
রীতিপদ্ধতিগুলোকে সে কতটা অবজ্ঞা
এবং ঘৃণা করে। একদৃষ্টিতে
লরা ড্রইংরুমের দিকে
তাকিয়ে থাকতে থাকতে সে
তার মাখন মাখা
রুটির একটা বড়ো
টুকরো হাতে ধরল। সে
তখন একটা ব্যস্ত
স্ত্রীলোকের মতোই ভাবছে
নিজেকে।
এমন সময় ঘর
হতে একটা উচ্চ
চিৎকার ভেসে এল,
লরা, লরা
তুমি কোথায়? : তোমার টেলিফোন,
লরা।
আসছি, ধীরেসুস্থে এগোল
লরা।
বাগানের পথ ধরে
বারান্দা পার হয়ে
গাড়ি বারান্দায় উঠল। হল রুমে
ওর বাবা আর
লরি অফিসে যাওয়ার
জন্য তাদের হ্যাটগুলো ঝেড়েমুছে পরিষ্কার করছিল।
আমি বলছি লরা,
লোরি দ্রুত বলতে
থাকল, তুমি আমার
কোটে একটু চাপ
দিয়ে দেখতে পারো,
অবশ্যই তা আজ
বিকেলের আগে। দেখি চাপ
অনুভূত হয় কি
না।
আমি এটা করব,
বলল সে সে
না থেমে হঠাৎ
করেই দৌড়ে গিয়ে
দ্রুত ওর হাতটা দিল। ওহ্,
আমি অবশ্যই পার্টি
পছন্দ করি,
তুমি পছন্দ করো
না? বলেই
সে হাপাতে লাগল। লরা এবার
কৃত্রিম রাগের ভান
করে বালকসুলভ স্বরে
ওর বোনকে ছোটো
একটা ধাক্কা মেরে হাতটা
মুচড়ে দিয়ে বলল,
বুড়ো মেয়ে!
তুমি টেলিফোন নিয়েই
থাকো।
টেলিফোন।
হ্যা হ্যা কিটি,
সুপ্রভাত, বন্ধু। লাঞ্চে আসছ
তো? এটা
খুবই আনন্দের ব্যাপার, খানাপিনাটা
অবশ্যই সংক্ষিপ্তই হবে। খাবারের
মাঝে স্যান্ডউইচ আর
ডিম দ্বারা প্রস্তুত ম্যারিংগো
শেল থাকবে, ব্যস,
এ পর্যন্তই। হ্যা,
আজকের সকালটা খুবই
সুন্দর না?
তোমার মতোই শ্বেতশুভ্র!
ওহ, আমি
নিশ্চিত, তাই হয়ত"
এক মিনিট লাইনে
থাকো, মা ডাকছে। পেছন ফিরল
লরা, কী
বলছ মা?
শুনতে পাচ্ছি না।
মিসেস সেরিডানের কণ্ঠস্বর। সিঁড়ি
বেয়ে নামছে। ওকে ওই
চমৎকার হ্যাটটি পরতে বলো, যা সে
গত রবিবার কিনেছে,
বললেন তিনি।
মা বলছে,
তুমি গত রবিবারে
যে সুন্দর হ্যাটটি
কিনেছ সেটি পরতে। ভালো
থেকো, রাখি তাহলে, একটা
বাজে।
বাই বাই।
রিসিভার রেখে মাথায়
হাত দিয়ে কি
যেন ভাবল লরা। এরপর
একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। হাত দুটো
এবার নেমে এল
মাথা থেকে। ওহ,
দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়ল সে। সে একেবারেই
নিশ্চল, কিছু একটা যেন
মনোযোগ দিয়ে শুনছে
সে।
মনে হল ঘরের
সব দরোজাই যেন
একেবারে হাট করে খোলা। হাটা
এবং দৌড়াদৌড়ির শব্দে
ঘরখানা একেবারে সরগরম। রান্নাঘরের
দিকে খোলা। সবুজ রঙা দরজাটি
খুলল এবং বন্ধ
হল।
হঠাৎ করেই একটা
দীর্ঘশ্বাস আর হাসির
শব্দ শোনো গেল। বন্ধের ঘোষণা
দিলেও বাতাস সর্বদা
এটাই করতে পছন্দ
করে।
মৃদুমন্দ হাওয়া আলতো
ঝাপটা দিচ্ছে জানালায়
আর দরজাপথে বের
হয়ে যাচ্ছে আর
সেখানে আসা সূর্যের
আলোর দুটো ছাপ পড়েছে, একটি পড়েছে
কালির দোয়াতে। অন্যটি রূপার
ফটোফ্রেমে পড়েছে।
দোয়াতের ওপর একটা
আবরণ ফেলেছে। একটুখানি উষ্ণতা। ছোট্ট
একটি রুপালি তারকা। এটাতে
পারলে লরা চুমো
দিত।
সদর দরজার বেলটি
সশব্দে বেজে উঠল। সিঁড়িতে
শোনা গেল স্যাডির
প্রিন্টের কাজ করা কাটের
শব্দ।
একটা ক্ষীণ পুরুষালি
কণ্ঠ শোনা গেল। সেটি
যেন কিছু আনমনাভাবেই
জবাব দিল, আসলেই
আমি কিছুই জানি
না।
একটু অপেক্ষা করো। আমি
মিসেস শেরিডানকে জিজ্ঞেস
করব।
লরা হল রুমে
প্রবেশ করে বলল,
এটা কী স্যাডি?
এটা পুষ্পবিষয়ক, মিস
লরা। আসলেই
তাই ছিল। দরজা হতে
একটু ভেতরে বড়
একটা পাত্রে বোঝাই
করে রাখা ছিল লাল
শাপলাগুলো, শাপলা ফুল
ছাড়া আর কিছু
নয়, পত্রগুচ্ছসহ
শাপলা, লাল লাল
বিশাল আকৃতির ফুলগুলো
কেমন উন্মুক্ত, প্রস্ফুটিত দীপ্তিমান। তরতাজা ফুলগুলো
কচি কাণ্ডের ওপর দাড়িয়ে
শোভাবর্ধন করছিল।
ওহ, সেভি বলল, লরা! কণ্ঠটা তার কেমন যেন দুঃখী দুঃখী শোনাল। সে জড়সড় হয়ে বসে পড়ল যেন মনোহর সেই শাপলা ফুলগুলোর সৌন্দর্য দ্বারা নিজেকে কিছুটা উষ্ণ করতে চাচ্ছে। ফুলগুলো যেন তার আঙ্গুল আর ঠোটগুলোতে ছোঁয়া দিচ্ছিল, মনে হয় এগুলো যেন তার বুকের গভীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কিছু একটা ভুল হয়েছে, আনত স্বরে বলল সে, এঃগালোর আরীর কোট দেরনি। সো যাও, মাকে খুঁজে বের করো। আর ঠিক সে মুহূর্তেই মিসেস শেরিডানও ওদের সাথে যোগ দিলেন।
সব ঠিক আছে, মৃদু স্বরে বললেন তিনি, আমি এগুলোর অর্ডার দিয়েছি। এগুলো কি সুন্দর মনে হচ্ছে না? লরার হাতটা চেপে ধরে বললেন, এগুলো আমি গতকাল দোকানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় লক্ষ করেছিলাম জানালা পথে ভাবলাম আমার এলো দরকার আর তাই গার্ডেন পার্টির কথা মনে রেখে এগুলো আমি ক্রয় করেছি।
কিন্তু আমি মনে করেছিলাম এ বিষয়ে তুমি কোনো কথা বলতে চাইবে না, বলল লরা। সেভি এর মধ্যে চলে গেছে। ফুলওয়ালা লোকটি তার ভ্যান গাড়িতে নিশ্চল বসে আছে। সে এবার তার মায়ের গলা জড়িয়ে ধরল পরম মমতায়, সে তার মায়ের কানে মৃদু মৃদু আঘাত করছিল।
প্রিয় কন্যা আমার, তুমি তোমার যুক্তিবাদী মাকে পছন্দ করবে না, তাই নয় কি? না, এ রকম কোরো না, বাইরে লোক আছে।
আরেকটি ট্রে ভর্তি করে সে অনেকগুলো লিলি ফুল এনেছে।
মিসেস শেরিডান বললেন, অনুগ্রহ করে এগুলো ভেতরে নিয়ে এসো এবং গাড়ি বারান্দার দু পাশেই এগুলো জমা করো। লরা, তুমি কি এগুলো মন থেকে গ্রহণ করছ না?
ওহ! হ্যা মা করছি।
ড্রইংরুমে মেগ, জোস আর ছোটো সোনামণি হ্যান্স (Hans) পিয়ানোটা শেষ পর্যন্ত সরাতে সক্ষম হয়েছে।
এখন আমরা গদি আটা সোফাটা দেয়ালে ঠেস দিয়ে চেয়ার ছাড়া বাকি আসবাবপত্রগুলো ঘর থেকে বের করতে পারি, বুঝতে পারছ না তুমি?
পুরোপুরিই।
হ্যান্স, টেবিলগুলো ধূমপান করার কক্ষে নিয়ে যাও আর কার্পেটের দাগগুলো মুছতে একজন সুইপারকে ডেকে আনো। একটুখানি শোনো, মিসেস চাকরদের হুকুম দিতে খুবই পছন্দ করে আর ওরাও একে বেশ সম্মান দেয়। সে তাদের ব্যাপারে এমন মনে করত যে, মনে হয় ওরা যেন নাটকে অভিনয় করছে।
মা, মিস লরাকে এখানে কিছু সময়ের জন্য একটু আসতে বলো। খুব ভালো কথা মিস জোস।
মেগের দিকে ফিরে সে বলল, আজ বিকেলে যদি আমাকে গান করতে হয়, তাহলে পিয়ানোটা একবার বাজিয়ে দেখতে হবে। জীবনটা বড়োই ক্রান্তিকর।
টা টা টি টা বেজে উঠল পিয়ানো। সুরে এতটাই আবেগ ঝরে পড়ল যে, শুনে জোসের চোখেমুখে আশ্চর্য একটা পরিবর্তন ঘটে গেল। সে তার হাতটা চেপে ধরে। ওকে বিভ্রান্তের মতো, বিষাদগ্রস্তের মতো লাগছিল, লরা এবং ওর মায়ের দিকে তাকাল সে, ঘরে ঢুকছিল যখন তারা
এ জীবন বড়োই ক্লান্তিময়,
দীর্ঘশ্বাস আর অশ্রু ছাড়া কিছু নয়
ভালোবাসা সে তো বদলায়
এ জীবন ক্লান্তিতে ডুবে যায়,
শুধু অশ্রু শুধু দীর্ঘশ্বাস
ভালোবাসা বদলে যায়,
এরপর... শুধু বিদায়।
কিন্তু মাঝপথে স্যাডি (Sadie) থামিয়ে দিল তাদের। স্যাডি, এটা কী হল?
মা, অনুগ্রহপূর্বক জানাও স্যান্ডউইচ তৈরির কোনো সংকেত পেয়েছ কি না। বাবুর্টি জানতে স্যান্ডউইচের সংকেত, স্যাডি? কোমল স্বরে প্রত্যুত্তর করলেন মিসেস শেরিডান। তার মুখ দেখেই ছেলেমেয়েরা বুঝতে পারল তিনি তা পাননি। জোরের সাথে বললেন, আমাকে দেখতে দাও। বাবুর্টিকে বললেন, দশ মিনিটের মধ্যেই আমি তা দিচ্ছি।
স্যাডি চলে গেল।
লরা, ওর মা তাড়াতাড়ি বললেন, তুমি এক্ষুনি আমার সাথে ধূমপান করার কক্ষে এসো। কোনো এক জায়গায় ইনভেলাপের পিঠে আমি নামগুলো পেয়েছি। তুমি আমার জন্য তা লিখে দেবে। মেগ, দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে ওপরে যাও এবং অপরিণত ভাবনাগুলো তোমার মাথা থেকে সরাও। জোস, তুমি দৌড়ে গিয়ে তোমার সাজসজ্জার বিষয়টি সমাপ্ত করে ফেলো। মেয়েরা, তোমরা কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছ, কিংবা আমি কি তোমার বাবাকে বলব তিনি আজ রাতে কখন বাসায় ফিরবেন? আর জোস তুমি রান্নাঘরে গিয়ে বাবুর্টিকে সান্তনা দাও, তুমি পারবে কি? আমি আজ সকাল থেকেই তার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন ছিলাম।
অবশেষে খাওয়ার ঘরের ঘড়িটার পেছনে ইনভেলাপটা পাওয়া গেল। তবে এটা সেখানে কী করে গেল মিসেস শেরিডান তা বুঝতে পারলেন না।
বাচ্চাদের মধ্য থেকে কেউ আমার ব্যাগটা চুরি করেছে, এতে সন্দেহ নেই। ক্রিম চিজ আর লেমন কার্ডের (cream cheese and
lemon-curd) কথা স্পষ্ট মনে আছে আমার। তুমি এটা করেছ?
হ্যা।
মিসেস শেরিডান ডিম আর ইনভেলাপটা তার কাছ থেকে গ্রহণ করলেন। এটা ইদুরের মতো মনে হচ্ছে। এটা ইদুরের মতো হতে পারে না, পারে কি?
লরা তার ঘাড় উচু করে বলল, এটা জলপাইসদৃশ। এটা, এটা অবশ্যই জলপাই। কী অদ্ভুত শব্দের মিলন! ডিম আর জলপাই।
শেষ পর্যন্ত এ বিষয়টার আলোচনা শেষ করল তারা এবং লরা সেগুলো রান্নাঘরে নিয়ে গেল। সে লক্ষ করল রান্নাঘরে নিবিষ্টচিত্তে জোস রান্না করছে, ওর মাঝে কোনো রকম উদ্বেগ নেই।
এমন অবাক করা স্যান্ডউইচ কখনো দেখিনি, উৎফুল্ল হয়ে বলল জোস। বলতে পারো কত প্রকার খাবার রান্না করা হয়েছে?
পনেরো, মিস জোস!
ঠিক আছে বাবুর্চি, আমি আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। বাবুর্চি দ্রুততার সাথে স্যানডউইচের আবরণটা খুলল ছুরির সাহায্যে। আকর্ণ বিস্তৃত হাসি ছড়িয়ে পড়ল তার মুখে।
স্যাডি ঘোষণা করল, গডবার (Godber) এসেছে, ভাড়ার ঘর থেকে এখন সব বের করা হবে। সে জানালা পথে লোকটাকে দেখতে পেল।
এর অর্থ হল ক্রিম পাফ এসে গেছে, গডবার এই ক্রিম পাফের জন্য খুবই খ্যাতিমান। এর আগে কেউ এটি ঘরে তৈরি করার কথা ভাবেনি।
প্রিয় বালিকা, ভেতর থেকে ওগুলো বের করে টেবিলের ওপর রাখো, আদেশ করল বাবুর্চি।
স্যাডি ভেতর থেকে সেগুলো বের করল এবং দরজা দিয়ে আবার বেরিয়ে গেল। অবশ্যই লরা এবং জোস. এগুলো দেখাশুনা করার জন্য যথেষ্ট বড়ো হয়েছে। পাফটা ওদের কাছে খুবই আকর্ষণীয় মনে হল, খুবই। বাবুর্চি এগুলো গোছগাছ করার প্রস্তুতি নিল, এর মাঝে চিনি মিশ্রিত বরফ যোগ করল।
লরা বলল, এ রকম একটি বিষয়ই সবাইকে এই পার্টিতে আনতে পারে।
আমার মনে হয় তা পারে, বলল বাস্তববাদী জোস। যে নাকি কখনোই পিছিয়ে পড়া ব্যাপারটা মোটেই পছন্দ করে না।
আমি জোর দিয়ে বলতে পারি ওগুলো এখন সুন্দর আলোকিত পালকের মতো মনে হচ্ছে।
প্রত্যেকটিই একই রকম সুন্দর, মুদুস্বরে বলল বাবুর্চি, ইয়ারমা তা কখনোই জানবে না।
ওহ্, অসম্ভব। আকর্ষণীয় সেই ক্রিমপাফটা দেয়া হল সকালের নাস্তার পর। এটি সবাইকে হতবাক করল। সবগুলো একই রকম। দু মিনিট পর লরা আর জোস ওদের আঙ্গুল চাটতে লাগল এবং মুখের ভেতরে যেন শুষে নিতে লাগল, এই ডিম মেশানো ক্রিমপাফ।
লরা পরামর্শ দিল, চলো পেছন দিক দিয়ে আমরা বাগানে যাই। আমি দেখতে চাই কীভাবে লোকগুলো তাবু খাটায়। ওরা সত্যিকারভাবেই অদ্ভুত ভালো লোক। কিন্ত স্যাডি, গডবার আর হ্যান্সেরর লোকজন পেছনের দরজাটা আটকে দিয়েছে।
কিছু একটা হয়েছে।
টাক, টাক__ টাক উত্তেজিত মুরগির কণ্ঠস্বর বের হল বাবুর্চির গলা থেকে। দাঁত ব্যথার রোগীর মতো স্যাডি তার হাত গালে চেপে রেখেছিল। বিষয়টা বোঝার জন্য হ্যান্স সেদিকে মুখ ফেরাল। কেবল গডবারই ব্যাপারটা উপভোগ করছে মনে হল, এটা তার কাছে একটা গল্পের মতোই ব্যাপার।
কী ব্যাপার? হয়েছেটা কী?
খুবই ভয়াবহ একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে, একটা লোক মারা গেছে, বলল বাবুর্চি।
একটি মানুষ মারা গেছে? কোথায়? কীভাবে? কখন? কিন্তু গডবারের লোকটি এসব গল্পের মাঝে না গিয়ে নাসিকা কুঞ্চিত করছে মাঝেমধ্যে।
ঠিক নিচেই যে ছোটো একটা কক্ষ আছে তা তো আপনি জানেন মিস, চেনেন কি? অবশ্যই সে তা চেনে। হ্যা, সেখানে একটা যুবক বাস করত- কী তার নাম, একজন কাঠ মিন্ত্রি- আজ সকালে তার ঘোড়াটা ট্র্যাকশন ইঞ্জিনের কাছে এসে থেমে পড়ে। আর তখন ঘোড়া থেকে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পেয়ে লোকটি মারা গেছে।
মারা গেছে? লরা গডবারের লোকগুলোর দিকে তাকাল।
যখন তাকে তুলে দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হয় তখন বোঝা গেল সে মারা গেছে, খুবই রঙ্গ করে বলল গডবারের লোকেরা, তারা যখন মৃতদেহটা বাড়িতে নিচ্ছিল তখন এখানে আসছিলাম আমি। সে বাবুর্টিকে বলল, লোকটি স্ত্রী আর পাঁচটি সন্তান রেখে মারা গেছে।
পরের পর্ব
----------------------------------------------------------------------------
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল
(সা.) বলেন, আল্লাহর কসম, ঐ ব্যক্তি মুমিন নয়; আল্লাহর কসম, ঐ ব্যক্তি মুমিন নয়; আল্লাহর কসম, ঐ ব্যক্তি মুমিন নয়। উপস্থিত সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ কোন ব্যক্তি মুমিন নয়? প্রতি
উত্তরে তিনি বললেন, যার প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ
নয়।’
Hi, nice, thanks for this post
ReplyDeleteThanks for this post.
ReplyDelete