Social status of the characters of The Canterbury Tales - ক্যান্টারবারি টেলসের চরিত্রসমূহের সামাজিক অবস্থা
Canterbury Tales এর চরিত্রসমূহের সামাজিক অবস্থান
চসারের
ক্যান্টারবারি টেলসের কাহিনী আবর্তিত হয়েছে তীর্থ যাত্রার উদ্দেশে বের হওয়া একদল
যাত্রীকে কেন্দ্র করে। ষাট মাইল দীর্ঘ এই পথ
পরিক্রমায় সময় লেগেছিল চার
দিন আর যাত্রীসংখ্যা ছিল ৩১ জন। চসার এখানে
নানা স্তরের মানুষকে একত্রিত করতে প্রয়াস পেয়েছেন। লেখক নিজেও ছিলেন একজন তীর্থযাত্রী। সমাজের নানা পেশার
মানুষের কলগুঞ্জনে মুখর
হয়ে উঠেছিল তীর্থযাত্রীদের বিশ্রামস্থল। এসব তীর্থযাত্রীকে আশ্রয় করে যে বিশাল পরিসরে কাহিনী আবর্তিত হয়েছে সে
পরিসরে আমরা মধ্যযুগীয় ইংল্যান্ডের
সামাজিক নানা দিকের পরিচয় পাই। কারণ চসার দীর্ঘ সময় ধরে এই চরিত্রগুলোর আকার-আকৃতি, পরিচিতি, তাদের
নামধাম, পেশা, আচার-আচরণ
সবই নিখুঁতভাবে চিত্রিত করেছেন। যাত্রীদলের
মাঝে ছিল একজন নাইট, তার
সহকারী তারই পুত্র। মঠের একজন সন্ন্যাসিনী, সন্ন্যাসিনীর তিনজন পুরোহিত, একজন মঠের সাধু, একজন ভিক্ষু, একজন ব্যবসায়ী, একজন অক্সফোর্ড ক্লার্ক, একজন যাজক, একজন আইনজীবী,একজন ভূ-স্বামী, চুড়িমালার দোকানি, ছুতার, একজন রংমিস্ত্রি, একজন নক্সাকারী, পাচক, নাবিক, একজন চিকিৎসক, বাথবাসিনী
একজন মহিলা, ভারপ্রাপ্ত যাজক,
কৃষক, একজন যাতাওয়ালা, একজন
ভাড়ার রক্ষক, একজন ম্যাজিস্ট্রেট, একজন কোর্টের নির্দেশজারিকারী, গির্জার এক ক্ষমা বিলিকারী।
মোট কথা
সমাজের প্রতিটি স্তর থেকেই উঠে এসেছে নানা পেশার মানুষ। প্রথমেই ধরা যাক নাইটের কথা। মধ্যযুগে একজন নাইট ছিলেন সমাজে খুবই সমীহের পাত্র । নাইটেরা হতেন খুবই সাহসী আর
যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী, অসহায়
জনদের সহায়তাকারী। সে সময়ের নানা যুদ্ধাভিযানের বর্ণনা মেলে। এই নাইটের পরিচিতি থেকে। মধ্যযুগীয় একজন নাইটের সকল গুণ
নিয়েই এখানে উপস্থিত এই
নাইট।
নাইটের সহচর
তার পুত্রও খুবই চৌকস যুবা। সব ধরনের ক্রীড়ায় সে অভ্যস্ত, গানবাজনাও জানে। তৎকালীন ইংল্যান্ডের অভিজাত
পরিবারের একজন চৌকস যুবার সব
গুণ তার মাঝে মেলে।
মঠের একজন
সন্ন্যাসিনী তার মর্যাদা নিয়ে এখানে উপস্থিত। সব ধরনের রাজকীয় আচার আচরণ তার নখ দর্পণে। তৎকালীন রাষ্ট্রিক জীবনে একজন সন্ন্যাসিনী ছিলেন খুবই সম্মানের পাত্রী। রাজভবন পর্যন্ত
ছিল তার অবাধ গতিবিধি, শাস্ত্র ও
নিয়মনীতি জানা একজন সরলমতি মহিলা, যার মাঝে অভিজাত মহলের
আভিজাত্যের পরশ লক্ষ করা যায়। অভিজাত সমাজের শ্রদ্ধাভাজন হওয়াতে তাকেও অভিজাতদের সাথে মিশতে হয়েছে। সে কারণেই তিনি তৎকালীন অভিজাত সমাজের রীতিনীতি নিয়ে
উপস্থিত।
দলে ছিল
মঠের একজন সাধু। এই মানুষটির পড়াশুনার পরিধি অনেক। যার কারণে সে সমাজের পুরনো কিছু রীতিনীতিকে ত্যাগ করে নতুন
ভাবাদর্শে জারিত হতে চেয়েছে।
মঠের মাঝে বসে বসে শুধু পুথি পাঠকে সে অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখে। সে ধর্মীয় অনুশাসনের ক্রীতদাস বনতে
মোটেই রাজি নয়।
তীর্থযাত্রীদের
মাঝে একজন ভিক্ষুর দর্শন মেলে। খুবই আমুদে আর গল্পবাজ সে। তৎকালীন ইংল্যান্ডের সমাজ জীবনে ভ্রাম্যমাণ কিছু চতুর লোক যারা
লোকজনকে বোকা বানিয়ে পয়সা কামাত, এই ভিক্ষু সেই গোত্রের মানুষ। সে আবার গির্জার অনুমোদন পাওয়া ভিক্ষু। শহরের প্রতিটা মদের দোকান তার চেনা
ছিল। সরাইখানার পরিচারিকাদের দিকেও তার লক্ষ ছিল। সে খুবই মিষ্টি সুরে কথা বলে সবার মনোরঞ্জন করত। এই ভিক্ষু তৎকালীন সমাজজীবনের একজন চতুর ফন্দিবাজ লোক হিসেবে
চিত্রিত হয়েছে।
দলের
ব্যবসায়ী লোকটি পাটোয়ারী স্বভাবের, সর্বকালে সব দেশের ব্যবসায়ীর স্বভাব-চরিত্র ও কার্যাবলি যেমন হয় এ
ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। সে
তার নিজের লাভের অঙ্কটা সর্বদাই কড়ায় গণ্ডায় বুঝে নেয়। তৎকালীন ইংল্যান্ডের ব্যবসায়ীরা যেমন সমুদ্রপথের খোজখবর
করত, সেও তেমনি সমুদ্রপথে
বাণিজ্যের খবরাখবর রাখে।
যাজকের যে
চিত্রটি এখানে ফুটে ওঠে তাতে আমরা সে সময়ের একজন যাজকের সামাজিক অবস্থানটি অনুমান করে নিতে পারি। সে
দারিদ্রের কশাঘাতে জর্জরিত, তার কোনো
বন্ধুবান্ধব নেই যারা তার উপকার করবে। সে শুধু ধর্মীয় গ্রন্থ নিয়ে ব্যস্ত থাকে, আর বন্ধুদের দানের উপর নির্ভর
করে বেঁচে থাকে। যারা তাকে টাকা প্রদান
করে সে শুধু তাদের জন্যই প্রার্থনা করে।
একজন
আইনজীবীকে দেখা যায় এ দলে। সে খুবই দক্ষ আইনজীবী, অনেক অভিজ্ঞতা তার। তৎকালীন ইংল্যান্ডের একজন দক্ষ
আইনজীবীর কার্যকলাপ, তার
উপার্জন এবং জীবনযাত্রার পরিচয় লাভ করি আমরা। তৎকালীন ইংল্যান্ডের একজন সুখী অলস ভূ-স্বামীর পরিচয়
লাভ করি আমরা। সাধারণ
মানুষদের শোষণ করে সে নিজে বিত্তবৈভবের মাঝে বাস করে চর্ব-চোষ্যসহকারে আনন্দময় জীবন যাপন করে। তার মাঝে
মধ্যযুগীয় ভূ-স্বামীদের
ছায়াপাত ঘটেছে।
পাচক তার
নিজস্ব গুণাবলি নিয়ে এখানে উপস্থিত। চৌকস এই পাচক সব ধরনের খাবার বানাতে ওস্তাদ।
নাবিক তার
স্বভাবসুলভ ভঙ্গিমায় মদের মাঝে চুর হয়ে থাকত। তার বাস ছিল দূর পশ্চিমে, মধ্যযুগীয় একজন নাবিকের যেসব গুণাবলি
থাকত তার সবই তার মাঝে
উপস্থিত। সে গ্রহ-নক্ষত্রের গতিবিধি এবং আবহাওয়া সম্পর্কিত জ্ঞানের ভাণ্ডার ছিল। মধ্যযুগে একজন নাবিকের
এসব গুণাবলি অপরিহার্য ছিল।
চিকিৎসক
এখানে মধ্যযুগীয় একজন হেকিমের বেশে উপস্থিত, সে মানবদেহের সব রসের খবর রাখে। কোন রসের প্রকোপে কী ক্ষতি
হয় মানবের তাও তার জানা। তার যে সহকারী সিরাপ বানায়, সেও তার লাভের ভাগীদার।
দলে আছে
বাথবাসিনী এক মহিলা। গুনে গুনে সে পাঁচটি বিয়ে করেছে। সে আবার ধর্মপ্রাণা মহিলা। সব তীর্থস্থানই তার নখদর্পণে। প্রেম-ভালোবাসার টোটকা তার জানা। এখানে মধ্যযুগীয় নানা তুকতাকের
বিষয়টির ছায়াপাত ঘটেছে।
একজন কৃষকের
সন্ধান লাভ করি আমরা। সব তীর্থযাত্রীর মাঝে এই মানুষটিই
সহজ-সরল রূপের প্রতীক। পরোপকারী হিসেবে সে চিত্রিত। সাধারণ শ্রেণীর এই মানুষটার মাঝে নেই কোনো দন্ত-গর্ভ কিংবা আত্মম্তরিতা। এ কারণেই সে সর্বদা মানুষের সেবার জন্য প্রস্তুত।
একজন চতুর যাতাওয়ালার সন্ধান লাভ করি এর পর। তার ঠাট্টা আর ইয়ার্কি একেবারে নোংরামিতে ভরা। গম চুরি করা, মানুষের কাছ থেকে বেশি মূল্য আদায় এসব ব্যাপারে সে ছিল খুবই দক্ষ। মধ্যযুগীয়
ইংল্যান্ডের কপট আর নিম্ন
মনমানসিকতার অধিকারী লোকজনের প্রতীক হিসেবে উপস্থিত সে।
ম্যাজিস্ট্রেটের
মাঝে আমরা একজন আজ্ঞাবহ কর্মচারীর রূপটিই প্রত্যক্ষ করি। একজন ক্ষমা বিলিকারী ও কোর্টের নির্দেশজারিকারীকেও
প্রত্যক্ষ করি আমরা এখানে।
No comments:
Post a Comment