Mrs. Packletide's Tiger- H. H. Munro - Bangla translation - মিসেস প্যাকলেটাইডের বাঘ - বাংলা অনুবাদ |
Mrs. Packletide's Tiger- H. H. Munro - Bangla translation - মিসেস প্যাকলেটাইডের বাঘ - বাংলা অনুবাদ
এইচ এইচ মুনরো[সাকি]
এইচ এইচ মুনরো[সাকি]
মনস্থির করে
ফেললেন মিসেস প্যাকলেটাইড, একটা বাঘ শিকার
তাঁকে করতেই হবে। হঠাৎ যে হত্যার একটা ঝোক তাঁকে পেয়ে বসলো, তা নয়। কিংবা ভারত
ত্যাগের আগে এই শ্বাপদসঙ্কুল ভূখণ্ড টিকে ভগ্নাংশের পরিমাণে হলেও অধিকতর নিরাপদ
রেখে যাবার মতো কোনো ইচ্ছেও তাঁর জাগেনি। সম্প্রতি আলজিরিয়ান এক বৈমানিকের সাথে আকাশ
পথে এগারো মাইল ভ্রমণ করেছেন লুনা বিম্বারটন- আর এই ঘটনাই তাঁকে শিকারে উদ্বুদ্ধ করেছে। চমৎকার একটা বাঘের চামড়া আর প্রেস
ফটোগ্রাফারদের ক্যামেরার মুহুর্মহুঃ ঝলকানিই কেবল লুনা বিম্বারটনের ও ই কীর্তির উপযুক্ত
জবাব হতে পারে। শিকারের পর লুনা বিম্বারটনের সম্মানে কার্জন দ্বীটের বাসায় যে লাঞ্চ
দেবেন, সে-পরিকল্পনাও মনে মনে করে ফেলেছেন তিনি। নিমন্ত্রিত অতিথিদের সামনের
মেঝে আর আলোচনার অধিকাংশ জুড়ে থাকবে সদ্য শিকার করা সেই বাঘের চামড়া। তাছাড়া লুনা
বিম্বারটনের আগামী জন্মদিনে বাঘের নখের যে ব্রোচটা উপহার দিতে যাচ্ছেন, সেটার ডিজাইনও
তাঁর ছকে ফেলা সারা। খিদে আর ভালোবাসাই যেখানে প্রধানত দখল করে আছে পৃথিবী সেখানে মিসেস
প্যাকলেটাইড এক অদ্ভুত ব্যতিক্রম। লুনা বিম্বারটনের প্রতিটা কাজই তাঁর ঘোর অপছন্দ,
আর এই জিনিসটাই জুড়ে আছে তাঁর পৃথিবী পরিস্থিতি অনুকূলই মনে হলো। মিসেস প্যাকলেটাইড
জানিয়ে দিলেন, ঝুকি বা অতিরিক্ত পরিশ্রমহীন একটা বাঘ শিকারের ব্যবস্থা যে করে দিতে পারবে, তার
জন্যে রইলো নগদ এক হাজার। সৌভাগ্যক্রমে সে সময় পাশের গ্রামেই যাতায়াত ছিলো এক বনেদী বংশের বাঘের,
অতি সম্প্রতি বয়সের কারণে যে বেচারী বড়ো শিকার ছেড়ে মনোযোগ দিয়েছে, গৃহপালিত ছোটোখাট পশুর দিকে। তো, এক হাজার
টাকার ঘোষণা অস্থির করে তুললো গ্রামবাসীদের। দিনরাত পাহারায় বসিয়ে দেয়া হলো ছেলেপেলেদের, ছাগল বেধে রাখা হলো
যেখানে সেখানে। তবু একটা উদ্বেগ ত্রস্ত করে রাখলো গ্রামবাসীদের, পাছে শিকারের দিনটি এসে
পড়ার আগেই বুড়ো বাঘটির আয়ু ঘনিয়ে আসে। সারাদিনের কাজ শেষে ঘরে ফেরার সময় সতর্ক হয়ে রইলো মায়েরা, যাতে
তাদের গানের শব্দে আশে পাশেই নিদ্রারত বাঘটির ঘুমের কোনো ব্যাঘাত না ঘটে। অবশেষে এসে গেল স্মরণীয় সেই শিকারের রাত। একবিন্দু মেঘ নেই আকাশের কোথাও, চাঁদের আলোর
ঢল নেমেছে।
সুবিধেমতো
একটা গাছ দেখে আরামদায়ক একটা মাচা বাঁধা হলো। পারিশ্রমিকের বিনিময়ে-প্রাপ্ত
সঙ্গিনী মিস মেবিনকে নিয়ে মাচায় উঠে বসলেন মিসেস প্যাকলেটাইড। অদূরেই বাঁধা হলো
ক্রমাগত চ্যাচাতে ওস্তাদ একটা ছাগলকে, যাতে বাঘটি আংশিক বধির হলেও কোনো অসুবিধে
দেখা না দেয়। নিখুত লক্ষ্যভেদে সক্ষম একটা রাইফেল আর খুদে এক প্যাকেট পেশেন্স তাসসহ বাঘের আগমন অপেক্ষায় রইলেন
মিসেস প্যাকলেটাইড।
'কাজটাতে
খানিকটা ঝুকি আছে, তাই না?’ জানতে চাইলেন মিস মেবিন। আসলে বুনো জানোয়ারটার চিন্তায় মিস মেবিন কিন্তু আতঙ্কিত
হয়ে পড়েননি। পারিশ্রমিকের তুলনায় এক অণু বেশি কাজ করাটাই তাঁর সবচেয়ে বড়
আতঙ্ক।
‘বোকা কোথাকার’, বললেন মিসেস প্যাকলেটাইড; ‘বাঘটা খুবই বুড়ো। ইচ্ছে করলেও লাফিয়ে মাচায় উঠতে পারবে না’।
বাঘটা যখন
এতো বুড়ো, আরো সস্তায় ওটাকে পেতে পারতেন। এক হাজার টাকা তো আর কম নয়। কিছুক্ষণ পর
গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে এলো বাঘ, ছাগলটাকে দেখেই সটান শুয়ে পড়লো মাটিতে। পরিস্থিতি
সম্পূর্ণ তার অনুকূলে, তবু মূল আক্রমণ চালাবার আগে সে যেন নিতে চায় একটা সংক্ষিপ্ত
বিশ্রাম।
'আমার মনে
হচ্ছে জন্তুটা অসুস্থ’ আশেপাশেই একটা গাছে লুকিয়ে থাকা
গ্রামের মোড়লের উদ্দেশে হিন্দীতে চেচিয়ে উঠলেন মিস মেবিন।
‘হুস!’ ঠোটে আঙুল তুললেন মিসেস প্যাকলেটাইড, আর
.ঠিক তখনই বাঘটা হেলেদুলে এগোতে লাগলো শিকারের দিকে।
‘আর দেরি করবেন না, চালান গুলি’। সামান্য উত্তেজনা প্রকাশ পেলো মিস
মেবিন এর কণ্ঠে, ‘বাঘ ছাগলটাকে ছুতে না পারলে ওটার জন্যে আমাদের দাম দিতে হবে না’।
ভীষণ শব্দে
গর্জে উঠলো রাইফেল।
লাফিয়ে
একপাশে গিয়ে পড়লো বিরাটাকার তামাটে জন্তুটা, নিথর হয়ে গেল পরমুহূর্তেই। চোখের পলকে দলে দলে
লোক এসে হাজির হলো, তাদের চিৎকারে প্রায় তখন তখনই গ্রামে পৌছে গেল সুসংবাদ। দেখতে
দেখতে বেজে উঠলো ঢোল, ধীরে ধীরে যেন সেই আনন্দ একটা প্রতিধ্বনি তুললো মিসেস প্যাকলেটাইড-এর
হৃদয়ে। মনে হলো, কার্জন স্ট্রীটের সেই লাঞ্চ-পার্টি আর খুব বেশি দূরে নয়।
এদিকে
অদ্ভুত এক কাণ্ড ঘটে গেছে, লুইসা মেবিনই সর্বপ্রথম, দৃষ্টি আকর্ষণ করালেন সেদিকে।
মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করছে ছাগলটা, কিন্তু বাঘটার গায়ে কোনো বুলেটের ফুটো নেই। পরিষ্কার
বোঝা যাচ্ছে, বুলেট ছাগলটাকেই আঘাত হেনেছে। বাঘটা মারা গেছে অতি বার্ধক্যের কারণে, রাইফেলের প্রচণ্ড শব্দে
হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে। এই আবিষ্কারে স্বাভাবিক ভাবেই দারুণ বিরক্ত হলেন মিসেস প্যাকলেটাইড। ওদিকে এক হাজার টাকার
অপেক্ষায় থাকা উদ্বিগ্ন গ্রামবাসীরা একবাক্যে স্বীকার করলো, বাঘটা মিসেস প্যাকলেটাইডই
শিকার করেছেন। আর মিস মেবিন তো পারিশ্রমিকের বিনিময়ে সঙ্গিনী। সুতরাং হালকা মনেই
ক্যামেরার মুখোমুখি হলেন মিসেস প্যাকলেটাইড। কয়েক দিনের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়লো তাঁর খ্যাতি। প্রথমে টেক্সাস স্ল্যাপশট-এর পর খবর ছাপলো
নোভো,ভ্রেমিয়া। ওদিকে সপ্তাহখানেক ধরে খবরের কাগজে চোখই বুলোলেন না লুনা বিশ্বারটন।
আর বাঘের নখের ব্রোচ উপহার পেয়ে ধন্যবাদসূচক যে জবাবটা লিখলেন, তা অবরুদ্ধ আবেগের একটা উদাহরণ
হতে পারে। তবে লাঞ্চ-পার্টিতে তিনি আসলেন না; কখনো কখনো অবরুদ্ধ আবেগ বড় ভয়ঙ্কর।
কার্জন স্ট্রীট থেকে বাঘের চামড়াটা গেল ম্যানর হাউসে। সে-চামড়া দেখে ধন্য ধন্য করতে লাগলো সবাই। বিরাট একটা বল নাচের আয়োজন করলেন
মিসেস প্যাকলেটাইড।
‘আসল ঘটনাটা জানতে পারলে সবাই খুব বিস্মিত হবে’, নাচের কয়েকদিন পর বললেন লুইসা মেবিন।
‘কি বলতে চাও তুমি’? নড়েচড়ে বসলেন মিসেস প্যাকলেটাইড।
‘বলতে চাই কিভাবে আপনি ছাগলটাকে গুলি করেছেন আর বাঘটা মারা গেছে আতঙ্কে’, মধুর হাসি ফুটে উঠলো মিস মেবিন-এর মুখে।
‘কেউ বিশ্বাস করবে না’, চকিতে ফ্যাকাসে হয়ে গেল মিসেস প্যাকলেটাইড এর মুখ।
‘লুনা বিশ্বারটন করবেন’, বললেন মিস মেবিন।
সবুজ আর
সাদা মেশানো বিশ্রী একটা ছায়া পড়লো মিসেস প্যাকলেটাইড-এর মুখে।
'তুমি
নিশ্চয় আমাকে ডোবাবে না’?
‘ডরকিং-এর কাছে চমৎকার একটা উইক-এও কটেজ দেখলাম, কিনতে পারলে বেশ হতো’, অপ্রাসঙ্গিক এক
কথা বলে উঠলেন মিস মেবিন। ‘ছ'শো আশি পাউণ্ড, কোনো ঝামেলা নেই। একেবারে পানির দর, শুধু অতো টাকা আমার
নেই এই যা’।
কিছুদিনের
মধ্যেই লুইসা মেবিন-এর অপরূপ উইক-এণ্ড কটেজ হয়ে দাঁড়ালো বন্ধু-বান্ধবদের বিষ্ময় আর প্রশংসার বিষয়বস্তু। গরমে সেখানকার বাগানে দোল খায় টাইগার-লিলি।
‘লুইসা কটেজটা ম্যানেজ করলো কীভাবে’! সবার মুখে এই একই কথা।
মিসেস
প্যাকলেটাইড-এর আর কোনো উৎসাহ নেই বড়ো শিকারের ব্যাপারে।
বন্ধু-বান্ধবদের
কেউ এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি জবাব দেন, ‘আনুষঙ্গিক খরচা বড়ো বেশি’।
No comments:
Post a Comment