জেফ্রী চসার - জীবন ও কর্ম - Geoffrey Chaucer - Life and works

জেফ্রী চসার - জীবন ও কর্ম - Chaucer - Life and works 

Chaucer - Life and works

ভূমিকা

জিউফ্রে চসার: জীবন ও কর্ম

জিওফ্রে চসার সম্ভবত ১৩৪০ খ্রিষ্টাব্দে লন্ডন শহরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তার পিতা ছিলেন একজন ব্যবসায়ী । ইপস উইচি নামক স্থানে তার পিতার ছোটখাটো একটা জমিদারি ছিল। রাজা তৃতীয় এডওয়ার্ডের রাজদরবারেও তার মাঝেমধ্যে ডাক পড়ত। চসারের জন্ম শহরে। এ কারণে শহুরে জীবনযাত্রার সাথে তাঁর নিবিড় পরিচয় ছিল। অনুমান করা হয়, তিনি লন্ডনের সেন্টপল বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছিলেন। বাল্যকাল থেকেই তিনি ইংরেজি ও ফরাসি দুটো ভাষায় কথা বলতে পারতেন দুটো ভাষাই তিনি আয়ত্ত করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়।

১৩৫৭ সাল, চসারের বয়স তখন মাত্র সতের। সে সময়েই তিনি ক্লারেন্সের ডিউক লিনোনেল ও তার স্ত্রী যিনি ছিলেন উলস্টারের কাউন্টেস, এদের পরিবারে বালক পরিচারক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। উনিশ বছর বয়সে তিনি যোগ দিয়েছিলেন সেনাবাহিনীতে ৷ রাজা তৃতীয় এডওয়ার্ডের সেনাবাহিনীর সাথে তিনি ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছিলেন । যুদ্ধক্ষেত্রে তিনি ফরাসি সেনাদের হাতে বন্দী হন। রাজা তৃতীয় এডওয়ার্ড দুশো চল্লিশ পাউন্ড মুক্তিপণ দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে আনেন। এর কিছুকাল পরই তিনি ইংল্যান্ডের রাজপরিবারে অন্তপুরের পরিচারক নিযুক্ত হন এবং অন্তপুরের অভিজাত রমণীদের কাজকর্মে সহায়তা করতেন তিনি । এই পদটিতে সাধারণত সজ্জন ও ভদ্র ব্যক্তিরাই নিযুক্ত হতেন। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি রানীর প্রধান সখী ফিলিপ্পা রোয়েটের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৩৬৮ থেকে ১৩৭৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি নানা রাজকর্ম হেতু ইউরোপের নানা স্থান ভ্রমণ করতে থাকেন। জানা যায়, তার কূটনৈতিক কর্মকাণ্ডে মুগ্ধ হয়ে রাজা তার জন্য প্রতিদিন এক ভাণ্ড পানীয় বরাদ্দ করেছিলেন। সেকালে জেনোয়া হতে ইংল্যান্ডে যাতায়াতকারী বাণিজ্য জাহাজগুলোর জন্য ইংল্যান্ডে একটি বন্দর নির্মাণবিষয়ক কাজে তাকে ইতালিতে পাঠানো হয়। সে সময়েই ইতালির সাথে নিবিড় যোগ ঘটে চসারের এবং পরবর্তীকালে এ বিষয়টি তার সাহিত্যকর্মে ব্যাপক ছায়া ফেলে। এ সময়ে তিনি ইতালির সাহিত্যিক ও পণ্ডিতজনদের সংস্পর্শে আসেন। ইতালীয় সাহিত্য ও সংস্কৃতি তার মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগায়। তিনি যখন ইংল্যান্ডে ফিরে আসেন তখন সাথে নিয়ে এসেছিলেন দান্তে, বোক্কাসিও আর প্রেত্রার্কের পাণ্ডুলিপিসমূহ। দীর্ঘদিন কূটনৈতিক কর্মে অধিষ্ঠিত থাকার পর ১৩৭৪ সালের দিকে তিনি লন্ডন শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। এ শহরে তাকে বিনা ভাড়াতে একটি বাড়ি প্রদান করা হয় এবং তাকে কন্ট্রোলার অব কাস্টমস পদে নিয়োগ প্রদান করা হয়। ১৩৮২ সালে তিনি একবার তীর্থযাত্রায় বের হয়েছিলেন। ১৩৮৫ সালে তিনি এ পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন এবং এর পরের বছরই তিনি কেন্ট প্রদেশ হতে নাইট হিসেবে পার্লামেন্টে আসন গ্রহণ করেন। কিন্তু ভাগ্য বিরূপ, ডিউক অব ল্যাঙ্কাস্টারের বিপর্যয়ের কারণে তার জীবনেও বিপর্যয় দেখা দেয়। তিনি তার পদমর্যাদা তো হারালেনই, উপরস্ত তার যে অবসরকালীন ভাতা সেটাও বন্ধ হয়ে গেল। এ সময়ে তিনি মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হন। পরে অবশ্য ১৩৯৪ সালে তার অবসর ভাতা পুনরায় চালু করা হয়। ১৪০০ সালে চতুর্থ হেনরিকে জোর করে সিংহাসনচ্যুত করা হলে চসারের জীবনের দুর্যোগ কেটে যায়, কিন্তু চসারের তখন অন্তিম সময় বলা যায়। চসারের বিবাহিত জীবন খুব একটা সুখের ছিল না। চসারের দু সন্তান ছিল, টমাস ও লুই। সম্ভবত ১৪০০ সালের ২৫ অক্টোবর এই মহান কবি দেহত্যাগ করেন। ইংল্যান্ডের ওয়েস্ট মিনিস্টার আ্যাবিতে তাকে সমাহিত করা হয়।

চসার ও তাঁর সাহিত্যকর্ম

জিউফ্রে চসারের প্রথম দিকের সাহিত্যকর্ম ফরাসি রোমান্টিক কাব্যের আদলে রচিত, কারণ তিনি তার জীবনের অনেকগুলো সময় পার করেছেন ফ্রান্সে। সেখানেই তার শিক্ষা দীক্ষা এবং ফরাসি সাহিত্যিকদের কাছেই তার সাহিত্যকর্মে দীক্ষা বলা যায়। ১৩৭৩ সালে চসার যখন দূত হিসেবে ফ্রান্সে আসেন সে সময়েই তিনি ফরাসি সাহিত্য জগতের সংস্পর্শে আসেন এবং তেরো শতকের বিখ্যাত রোমান্টিক কাব্য The Romance of The Rose ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। সেদিন থেকেই শুরু হল সাহিত্যক্ষেত্রে তাঁর রোমান্টিক মানসযাত্রা।

ইতালিতে রাজদূত হিসেবে গমন করে তিনি সে দেশের পেত্রাক, দান্তে, সিসেরো, বোক্কাসসিও এসব যুগসেরা সাহিত্য প্রতিভার সংস্পর্শে আসেন। চসারের সামনে নতুন এক জগতের দরজা খুলে যায়। চসার এ সময়ে রচনা করেন House of Fame, Trailus and Criseyde, Parliament of Fowls, The Book of the Duchess, Anelida and Arcite, Boethius' Consolation of Philosophy, The Legend of Good Women, The Canterbury Tales, A Treatise on the Astrolabe ইত্যাদি। এগুলোর অধিকাংশই বিদেশি সাহিত্য অবলম্বনে রচিত এবং অনূদিত।