Tree Without Roots - Syed Waliullah - Bangla Summary and Characters - part 2 of 2
Lal Shalu Summary and Characters
১ম পর্বের পর থেকে
এদিকে খালেক
ব্যাপারির বড় বউ ছিল আমেনা বিবি। ১৩ বছর বয়সে সে ব্যাপারির ঘরে বউ হয়ে এসেছে। আজ
তার বয়স ৩০ কিন্তু এখনো তার কোন সন্তান হয় নাই। অন্যদিকে ব্যাপারির ছোট বউ তানু
বিবির বছর ঘুরলেই সন্তান হচ্ছে। ব্যপারটা তার মনে খুব কষ্ট দেয়। সে তার স্বামীকে
বলে আউয়াল পুরের পীরের থেকে পানি পড়া নিয়ে আসতে। ব্যাপারি এটা নিয়ে সমস্যায় পড়ে
যায়। এক সময় সে তার ছোট বউয়ের ভাই ধলা মিয়াকে বলে গোপনে পানি পড়া নিয়ে আসতে। ধলা
মিয়া তখন বিপদ বুঝতে পেরে চিন্তায় পড়ে যায় আর সারা দিন চিন্তা করে সে একটা বুদ্ধি
বের করে, সে সোজা গিয়ে মজিদের কাছে
বলে এই পীর যে ভূয়া সে সেটা বুঝে তাই সে যেন তাকে পানি পড়া দেয় আর সে ব্যাপারির
কাছে যে টাকা পাবে তার অর্ধেক তাকে দিবে। মজিদ রাগে প্রথমে রাজি না হলেও টাকার
লোভে সে পানি পড়া দেয়। তারপর ব্যাপারিকে বলে সে তার স্ত্রীর ব্যাপারটা জানতে
পেরেছে। ব্যাপারি তাকে পুরো বিষয়টা বুঝিয়ে বলে যে তার স্ত্রী কোথা থেকে কি শুনে
বিশ্বাস করে পানি পড়ার জন্যে গো ধরেছিল। ব্যাপারি বিষয়টাকে সহজ করার জন্যে মজিদের
শুরু প্রশংসা করে। মজিদ তাকে তখন এক অদ্ভুত বেড়ির কথা শুনায় যেটা নাকি রহিমার
পেটেও আছে। তার বড় স্ত্রী আমেনা বিবির পেটেও থাকতে পারে। তার স্ত্রীকে এর থেকে
পরিত্রান পেতে হলে একদিন রোজা রাখতে বলে আর সন্ধায় মাগরিবের নামাজ পড়ে পড়া পানি পেটে
মেখে তার মাজার ৭ বার পাক দিতে বলে। আসার পথে মজিদের সাথে রাস্তায় হাসুনীর মায়ের
দেখা হয়। সে জানতে পারে যে তার মা মারা গেছে।
পরের
শুক্রবার রোজা রেখে আর সারাদিন দোয়া দরুদ ও কোরআন শরীফ পরে সন্ধায় মাগরিবের
নামাজান্তে সে মাজারে যায়। আমেনা বিবির সাদা সুন্দর পা দেখে মজিদের শরীর আরো রাগ
আর হিংশায় জ্বলে উঠে সে প্রতিশোধ নিতে আরো উদগ্রিব হয়ে উঠে। আমেনা রহিমাকে
জিজ্ঞাসা করে সেও কি এই ভাবে ৭ বার ঘুরে দেখেছে কিনা। রহিমা বিবি না সূচক উত্তর
দেয়। এর পর মজিদের দোয়া পড়া পানি পান করে মাজারের চারদিকে দুই পাক ও ৩য় পাকের
অর্ধেক দিলে মাথা ঘুড়িয়ে পরে যায়। মজিদ তাকে শাস্তি দেয়ার জন্যে একটা পরিকল্পনা
করে রেখেছিল কিন্তু সে তার মূর্ছা যাওয়ায় তার পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। তখন নতুন ভাবে
পরিকল্পনা আটে। ব্যাপারি কে সে বলে সে আল্লাহর কালামপড়া পানি দিয়েছিল তার শক্তির
জন্যে কিন্তু উলটো সে মূর্ছা গেল, তার মানে তার মাঝে কোন
সমস্যা আছে। সে একটা খারাপ কিছু দেখেছে এমন ভান করে কিছু একটা বলতে গিয়েও
ব্যাপারিকে বলে না। ব্যাপারির কৌতুহল আরো বেড়ে যায়। তখন তাকে বলে এ বিষয়টা বলা
যাবে না, তবে ব্যাপারি বাচতে চাইলে
তাকে যেন তালাক দিয়ে দেয়। ব্যাপারী ভেবেচিন্তে তাকে এক সময় তাকে তালাক
দিয়ে দিল। আমেনা বিবির জন্যে রহিমার খুব খারাপ লাগল।
এ
সময় মোদাব্বের মিয়ার ছেলে আক্কাস বিদেশ থেকে এসে এলাকায় একটা স্কুল দিয়ে চাইল। এজন্যে
সে চাঁদা তোলার চেষ্ঠাও করল। এটা নিয়ে রাতে বৈঠক ডাকা হল। বৈঠকে আক্কাস মিয়া
মানসিকভাবে প্রস্তুত হয়ে এসেছিল যে কোন উত্তর দেয়ার জন্যে কিন্তু মজিদ তার দিকে
তাকিয়ে থেকে প্রশ্ন করে, যেহেতু সে মুসলমান তাহলে তার
দাড়ি কই। এই প্রশ্নের সম্মুখিন হয়ে সে কিছুটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। কিছু বলতে পারল
না। তারপর মজিদ কথা ঘুরিয়ে ফেলল।
সে বলল যেহেতু তাদের গ্রামের মানুষের এখন আর্থিক অবস্থা ভাল, তাই দশ গ্রামের মাঝে যাতে তাদের নাম হয় এমন
একটা সুন্দর মসজিদ বানানোর মত এখনি সময়। তার কথায় সবাই সায় দিল। কথার এক ফাকে
আক্কাস বলে ফেলে “তয় স্কুলের কথাডা” । আক্কাসের বাপ তাকে ধমক দেয়।
এতোদিনের প্রিয় বউকে হারিয়ে খালেক ব্যাপারি কিছুটা বিমর্ষ ছিল, সে পুরো মসজিদ বানানোর সিংহ ভাগ খরচ বহন করতে
চায়। তারপর সবার প্রচেষ্ঠায় পুরো পাকা না হলেও আধা পাকা একটা মসজিদ তুলে ফেলে। এ
সময় মজিদের মনে ভাবনার উদয় হয় বছর গুলো তার ভালোই কেটে গেছে। রাতে তার স্ত্রীকে
তার মনের কথা বলে, যদি তাদের একটা সন্তান থাকত।
রহিমা পরামর্শ দেয় হাসুনিকে পোষ্য হিসেবে রাখার জন্যে। মজিদ বলে সে অন্যের সন্তান।
পরদিন রাতে রহিমাকে সে বলে, ‘বিবি তোমার একটা সাথী আনুম’?
রহিমার
কষ্ট লাগলেও পরিস্থিতি সে বোঝে ভাল মতই তাই সে বলে আপনে যেমন বোঝেন।
মসজিদের
কাজ একেবারে শেষ হয়ে যায়। এর কিছুদিন পরে মজিদ জমিলাকে বিয়ে করে ঘরে তোলে।
প্রথম
প্রথম জমিলা একেবারে সহজ সরল বিড়ালের বাচ্চার মত ভাব নিয়ে থাকলেও আসতে আসতে তার
আসল চেহারা প্রকাশ হয়ে যায়। আর সে শুধু হাসে আরে হাসে। একদিন একা একাই হাসছিল।
রহিমা তাকে জিজ্ঞাসা করলে বলে, প্রথম দেখায় তাদেরকে দেখে
তার শ্বশুর আর শ্বাশুরি মনে হয়েছিল।
অযথাই
চুপ করে ঘরের চৌকাঠে বসে থাকা অথবা কোন কথা জিজ্ঞাসা করলে উত্তর না দেয়া ইত্যাদি
আচড়নের কারনে, জমিলার আচড়ন কেমন অসংলগ্ন
মনে হয় মজিদের কাছে। আর তার ছিল সন্ধা বেলাতেই ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাস।
একদিন অনেক কষ্টে নামাজ পড়ে সে ঘুমিয়ে পড়ে। মজিদ ভাবে সে নামাজ না পড়েই
ঘুমিয়েছে। তাকে বেঘোর ঘুম থেকে জাগানোর চেষ্টা করে কিন্তু কাজ হয় না এমনকি সে রাগে
মজিদের কথারও কোন জবাব দেয় না। মজিদ তাকে বুঝতে পারে না। এতো বছরের জীবনে কেউ এই
প্রথম তার অবাধ্য হল। সে ভাবে তাকে অন্য কায়দায় ঠিক করতে হবে।
এর
পরদিন বাদ মাগরিব শিরনি চড়ানো হয় মজিদের বাসায়। গ্রামের সবাই চাল ডাল তরকারি
ইত্যাদি দিয়ে শরিক হয়। মজিদ এর বাসায় বাদ মাগরিব সবাই এসে হাজির হয়। মজিদ তাদের
নিয়ে মিলাদ দোয়া দরুদ পড়া শুরু করে। এর পর শুরু হয় জিকির। এদিকে জমিলা ও রহিমা
গ্রামের কয়েকজন মেয়েকে নিয়ে শিরনি রান্নার কাজে ব্যাস্ত। জমিলা রহিমাকে একবার ডেকে
তারপর ঘর থেকে বের হয়ে আসে। এদিকে জিকিরের তালে এক সময় মজিদ অজ্ঞান হয়ে যায়। একজন
জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখে বাহিরে গাছের নিচে একটা মেয়ের মত আকৃতি দেখা যায়। সবাই
সেটা কি দেখার চেষ্টা করে। মজিদের জ্ঞান ফিরলে সেও তাকে দেখে তারপর তাকে চলে
যাওয়ার জন্যে ধমকায় এবং সবার উদ্দেশ্যে বলে সে হল নতুন বৌয়ের ঝি। এরপর আবার জিকির
শুরু হয়। খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই চলে যায়। রাতে রহিমাকে জিজ্ঞাসা করে বিবি কারে
বিয়া করলাম, তুমি কি বদদোয়া দিছিলা নি?
রহিমা
তাকে বলে সে আসলে কিছুটা পাগলে কিসিমের, মজিদ দোয়া পানি দিলে হয়তো
ঠিক হয়ে যাবে।
পরের
দিন মজিদ সকালে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে এসে জমিলাকে বলে তুমি আমাকে বেইজ্জতি করেছো
তাই তোমার শিক্ষা হওয়া দরকার। তাকে রাতে তারবি নামাজ পড়তে বলে আর মাজারের শায়িত
ব্যাক্তির কাছে মাফ চাইতে বলে। রাতে সে নফল নামাজ পড়ে দেখে মজিদ খুশি হয়। কিন্তু
মাঝরাতে তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। উঠে দেখে জমিলা জায়নামাজেই ঘুমিয়ে গেছে। এই অবস্থায়
তাকে দেখে মজিদ প্রচন্ড রেগে যায়। জোর করে টেনে যখন তাকে মাজারে নিয়ে যাচ্ছিল সে
তখন মজিদের মুখে থুতু নিক্ষেপ করল।
সে
তাকে এবার পাজাকোলা করে মাজারে নিয়ে যায়। এ সময় ঝর শুরু হয়। মজিদের কিছুটা ঘুমের
আবেশ আসে । এক সময় সে কিছুটা ঝিমিয়ে নেয়। তারপর দীর্ঘ রাত শেষ হয়।
শিলা বৃষ্টি শুরু হয় আর মজিদ রহিমাকে বাসায় যেতে বলে। মাজারের ঝাপটা খুলে দেখে
সেখানে জমিলা চিত হয়ে শুয়ে আছে। তারপর তাকে কোলে করে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়।
রহিমা বলে মরছে নাকি? মজিদ তাকে বলে এখনো আছর কাটে
নাই।
তারপর
সে ঘর থেকে বের হয়ে ক্ষেতের দিকে যায়। সেখানে চাষীদের ভিড়। সবাই হায় হায় করছে।
শিলা বৃষ্টিতে ক্ষেতের নতুন ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। কেউ একজন বলে ওঠে হায়, সবই তো গেলো, এখন খামু কি আর পোলাপানরে
খাওয়ামু কি?
মজিদ
বলে ওঠে, নাফরমানী করিওনা মিয়া। খোদার
উপর তোয়াক্কল রাখো।
------------শেষ------------
মারুফ
মাহমুদ
ঢাকা কলেজ
No comments:
Post a Comment