দুষ্টু টুনটুনি আর রাজা |
রাজবাড়ীর
বাগানের কোনায় দুষ্টু টুনটুনির বাসা ছিল।
রাজার সিন্দুকের টাকাগুলো রোদে শুকাতে দিয়েছিল, সন্ধ্যার সময় তার লোকেরা টাকা
তুলে আনার সময় তার একটি টাকা তুলতে ভুলে গেল।
সন্ধায় টুনটুনি সেই চকচকে টাকাটি দেখতে পেয়ে তার বাসায় আনল, আর
ভাবল, ‘ঈস! আমি কত বড়লোক হয়ে গেছিরে। রাজার ঘরে যে ধন
আছে, আমার ঘরে সে ধন আছে!’ তারপর থেকে সে খালি এই কথাই
ভাবে, আর বলে-
রাজার ঘরে যে ধন আছে
টুনির ঘরেও সে ধন আছে!
রাজা তাঁর সভায় বসে সে কথা শুনতে পেল।তখন জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ পাখিটা কি বলছে রে?’
সকলে বলল, ‘মহারাজ, পাখি বলছে, আপনার ঘরে যে ধন আছে, ওর ঘরেও নাকি সেই
একই ধন আছে!’ শুনে রাজা খিলখিল করে হেসে উঠলেন।আর বললেন, ‘দেখ তো
ওর বাসায় কি এমন আছে?’
তারা দেখে এসে বললে, ‘মহারাজ,
বাসায় একটা টাকা পড়ে আছে।’
শুনে রাজা বললেন, ‘ও, সে তো আমারইতো টাকা,
নিয়ে আয় সেটা।’
তখুনি লোক গিয়ে টুনটুনির বাসা খুজে টাকাটি নিয়ে এল। সে বেচারা কি
আর করে, সে মনের দুঃখে বলতে লাগল-
‘রাজা বড় ধনে কাতর
টুনির ধন নিলে বাড়ির ভিতর!’
শুনে রাজা আবার হেসে উঠলেন আর বললেন, ‘পাখিটা
তো বড় ঠ্যাঁটা রে! অকে টাকাটা দিয়ে আয়।’
টাকা ফিরে পেয়ে টুনির খুব ভাল লাগল। তখন সে বলছে-
‘রাজা ভারি ভয় পেল
টুনির টাকা ফিরিয়ে দিল।’
রাজা আবার জানতে চাইলেন, ‘আবার কি বলছে রে?’
সভার লোকেরা বলল, ‘বলছে যে মহারাজ নাকি খুব
ভয় পেয়েছেন, তাই ওর টাকা ফিরিয়ে দিয়েছেন।’
শুনে তো রাজা রেগে একেবারে অস্থির! বললেন, ‘কি, এত বড় কথা!, বেটাকে ধরে আনত, ওকে এখুনি ভেজে খাব।
যেই কথা,সেই কাজ। অমনি লোক গিয়ে টুনটুনিকে ধরে আনল। রাজা তাকে
মুঠোয় ভরে নিয়ে বাড়ির ভিতর গিয়ে রানীদের বললেন, ‘এই পাখিটাকে ভেজে আন। আজ আমি এইটার ভাজা মাংশ কাব’
বলে তো রাজা চলে গেলেন, আর রানীরা সবাই মিলে সেই পাখিটাকে দেখছেন।
একজন বললেন, ‘পাখিটা কি সুন্দর ! আমার হাতে
দাও তো একবার দেখি।’ বলে তিনি তাকে হাতে নিলেন। তা
দেখে আবার একজন দেখতে চাইলেন। তাঁর হাত থেকে যখন আর-একজন নিল, তখন ই টুনটুনি হাত ফসকে উড়ে গেল
হায় আল্লাহ! এখন কি হবে? রাজা জানতে পারলে তো.......আমাদের কে আর
রাখবেন না।
এমনি করে তাঁরা দুঃখ করছেন, সে সময় এক ব্যাঙ
সেইখান দিয়ে থপ-থপ করে এগিয়ে যাচ্ছিল।
রানীরা তাকে দেখতে পেয়ে খপ করে ধরে ফেলল, আর বললেন, ‘চুপ চুপ! কাউকে বলা যাবে না যেন। এইটাকে ভেজে দিব, আর রাজা
খেয়ে ভাববেন তিনি টুনটুনিই খেয়েছেন!’
সেই ব্যাঙটার ছাল ছাড়িয়ে তাকে ভেজে রাজামশাইকে খেতে দিলে তিনি
খেয়ে খুশি হলেন। তারপর মাত্র তিনি সভায় গিয়ে বসেছেন, আর ভাবছেন, ‘এবারে দুষ্টু পাখিটাকে জব্দ করেছি।’
অমনি টুনি বলছে-
‘কি মজা, কি মজা,
রাজা খেলেন ব্যাঙ ভাজা!’
শুনেই তো রাজা তার সিংহাসন থেকে লাফিয়ে উঠেলেন। তখন তিনি বারবার
থুতু ফেলেন, ওয়াক ওয়াক করে মুখ ধোন, আরো কত কি করেন। তারপর রেগে বললেন, ‘সাত রানীর নাক কেটে দাও।’
তখনি জল্লাদ সাত রানীর নাক কেটে
ফেলল।
তা দেখে টুনটুনি বললে-
‘এই টুনিতে টুনটুনাল
সাত রানীর নাক কাটাল!’
তখন রাজা বললেন, ‘বেটাকে ধরে আন এখুনি !
এবার ব্যাটাকে গিলে খাব! দেখি এবার কোথায়
পালায়!’
টুনটুনিকে ধরে আনল।
রাজা বললেন, ‘পানি আনো’
পানি এল। রাজা মুখ ভরে পানি নিয়ে টুনটুনিকে মুখে পুরেই চোখ বুজে ঢক
করে গিলে ফেললেন।
সবাই বললে, ‘এবারে টুনটুনি জব্দ হল'।
বলতে বলতেই রাজাবভোক করে
মস্ত একটা ঢেকুর তুললেন।
সভার লোক চমকে উঠল, আর টুনটুনি সেই ঢেকুরের সঙ্গে বেরিয়ে এসে উড়ে
গেল।
রাজা বললেন, ‘গেল, গেল! ধর্ ধর্!’ অমনি দুশো লোক ছুটে গিয়ে আবার বেচারাকে ধরে আনলো।
তারপর আবার পানি আনা হল। আর সিপাই এসে তরবাড়ি নিয়ে রাজা মশায়ের
পাশে দাঁড়াল, টুনটুনি বেরুলেই তাকে দু টুকরো করে ফেলবে হবে।
এবার টুনটুনিকে গিলেই রাজামশাই দুই হাতে মুখ চেপে ধরে বসে থাকলেন,
যাতে টুনটুনি আর বেরুতেই না পারে। সে বেচারা পেটের ভিতরে গিয়ে নিঃশ্বাস নিতে না
পেরে ভয়ানক ছটফট করতে লাগল!
খানিক বাদে রাজামশাই এর বমি এলো। নাক ধরে। বললেন, ‘ওয়াক্।’ অমনি টুনটুনিসহ তাঁর
পেটের ভিতরের সকল খাবার বেরিয়ে এল।
সবাই বললে, ‘সিপাই, সিপাই! মারো, মারো!
পালালো!’
সিপাই তাতে থতমত খেয়ে গেল।তরবাড়ি দিয়ে যেই টুনটুনিকে মারতে যাবে,
অমনি সেই তলোয়ার টুনটুনির গায়ে না পড়ে, রাজার নাকে পড়ল।
রাজামশাই তো ব্যাথায় ভয়ানক চিৎকার করলেন, সঙ্গে-সঙ্গে সভার সকল লোক
চিৎকার করতে লাগল। তখন ডাক্তার এসে ওধুধ লাগিয়ে দিয়ে পটি বেঁধে দিল। অনেক কষ্টে
রাজামশাইকে বাঁচাল।
টুনটুনি তা দেখে বলতে লাগল-
‘নাক-কাটা রাজা রে।
দেখ তো কেমন সাজা রে!’
বলেই সে উড়ে সে-দেশ থেকে চলে গেল। রাজার লোক ছুটে এল। দেখল, খালি
বাসা পড়ে আছে।
কিছুই নেই
No comments:
Post a Comment