The Snail and the Bee - শামুক আর মৌমাছি
কোন একদিন এক রানী
মৌমাছি তার দলবল নিয়ে মধুর সন্ধানে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। সজোরে ভোঁ ভোঁ করে শব্দ করে
উড়তে উড়তে তারা এসে পড়ল এক বড় শামুকের বাড়ির কাছে।তাদের দেখে মা শামুক ঘর থেকে বেরিয়ে
এল। বলল – ‘আমার বাচ্চারা বাড়িতে ঘুমাচ্ছে। তারা এখনও বড় হয় নি। তাদের আরো পনেরো দিন ঘুমানোর
দরকার, ভালো ভাবে হাটতে হলে। তোমরা এরকম কানফাটানো আওয়াজ করলে তারা
ঘুমায় কি করে? গতকাল তোমার বাড়ির মৌমাছি গুলো তাদের বন্ধুবান্ধব নিয়ে এসে সারাদিন
এখানে ছিল আর খুব হট্টগোল করেছে। আজ আবার তুমি এসে বিরক্ত করছো। এই ভয়ংকর আওয়াজ
সহ্য করতে না পেরে যদি আমার কোন ছেলেমেয়ে মরে তাহলে আমি গিয়ে তোমাদের গোটা
বাড়ি ভেঙ্গে দিব। তোমাদের কোথাও থাকার জায়গা থাকবে না তখন। তোমরা কি জানো যে এই
গাছটা কিন্তু আমার নিজের। আমার মালিক বিশ বছর আগে আমাদের জন্যে এই গাছটা লাগিয়েছিল,
যাতে এর ফল খেয়ে আমরা বাচতে পারি। কিন্তু প্রত্যেক বছরই যখন গাছে
ফুল ফোটে তখনই তোমরা এসে সব মধু চুরি করে খেয়ে চলে যাও। তার ওপর সারাক্ষন বিশ্রী শব্দ করে আমাদের বিরক্ত করো।
এক্ষুনি যদি তোমরা এখান থেকে না ভাগো,নতুবা আমি আমার মালিক
আর আমার বাড়ির লোকদের ডাকবো।’ তখন রানী মৌমাছি বলল – ‘তোমরা তো জন্মেছো ধূলো আর নোংরা থেকে। তোমার কোন
মালিক নেই। বাড়িতে অন্য কোন লোকজনও নেই। কোন কালে তোমার পূর্বপুরুষরা সবাই মারা
গেছে। তাও কোন মানুষ গ্রাহ্য করনি। কারন এই বিশাল পৃথিবীতে তোমরা কারো কাজে লাগ
না। কিন্তু আমরা হলাম মৌমাছি। আমাদের তৈরী মধু খেয়ে মানুষরা ভালো থাকে, শরীরে বল পায়, স্বাস্থ্য ভালো হয়। মধু ওষুধের
থেকেও উপকারী। মৌমাছিরা সারা পৃথিবীর সব জায়গায় আছে। সমগ্র মানবজাতি আমাদের
ভালোবাসে। তাই আমাদের জন্যে তারা ফুল গাছ লাগায়। তোমরা কি মনে করো তোমরা মানুষের
থেকেও উঁচু দরের কোন প্রানী? একটা গল্প বলি শোন। একদিন
একটা দুষ্টু ছেলে আমাদের বাড়ি ভেঙ্গে দিতে এসেছিল। কিন্তু তার মা তাকে বলল – তুমি অনেক কিছু ভেঙ্গে নষ্ট করো। কিন্তু
খবরদার মৌমাছির বাসায় হাত দিও না। ওরা সারাদিন কত পরিশ্রম করে আমাদের জন্যে মধু সংগ্রহ
করে। কোন রানী মৌমাছিকে যদি তুমি মেরে ফেল তাহলে তার সব ছেলেমেয়েরা আমাদের ছেড়ে
চলে যাবে। তখন শীতকালে আমরা রুটি দিয়ে খাওয়ার মতো একটুও মধু পাবো না। তখন ছেলেটা
মায়ের কথা শুনে এখান থেকে চলে গেল। সে পাখি ধরতে পারে, মাছ
ধরতে পারে, ফুল ছিঁড়তে পারে, যা
ইচ্ছে তাই করতে পারে। কিন্তু আমাদেরকে কক্ষনো বিরক্ত করবে না কারন আমরা খুব উপকারী
প্রানী। তোমরা কী? তোমরা সারাদিন শুধু শম্বুক গতিতে
চলাফেরা করো, কারো কোন কাজে লাগো না। ’ মা শামুক এই শুনে খুব রেগে গেল। সে বাড়িতে
গিয়ে ছেলেমেয়েদের বলল – ‘শোন সবাই। মৌমাছিরা আমাদের শত্রু। পনেরো দিন পরে
তোমরা হাঁটতে শিখে যাবে। তখন তোমাদের মধ্যে পাঁচজন মৌমাছিদের বাড়ি গিয়ে ওদের
মৌচাকটা ভেঙ্গে দিয়ে আসবে।’ দেখতে
দেখতে পনেরো দিন কেটে গেল। মা শামুকের ছেলেমেয়েরা হাঁটতে শিখে গেল। তখন তাদের
মধ্যে পাঁচজন শামুক মৌচাক ভাঙ্গা অভিযানে বেরলো। হাঁটতে হাঁটতে তারা যখন মৌচাকের
কাছে গিয়ে পৌঁছল তখন ঘরে কোন মৌমাছি ছিল না। সব মৌমাছি মধু সংগ্রহে বেরিয়েছে। তাই
দেখে শামুকরা ভারি খুশি হল। বলল – ‘চলো আমরা এখন যত পারি মধু খাই।’ সন্ধ্যের আগে পর্যন্ত তারা মধু খেয়েই চলল।
এপাশে সন্ধ্যে হতেই সব মৌমাছিরা দলবেঁধে গান গাইতে গাইতে নাচতে নাচতে বাজনা বাজাতে
বাজাতে বাড়ি ফিরে এলো। এসেই ঐ পাঁচটা শামুককে দেখতে পেয়ে খুব অবাক হল তারা। রানী
মৌমাছি বলল – ‘তোমরা এখানে কেন এসেছ? আর কেনই বা আমাদের সব মধু খেয়ে নিচ্ছ? এটা
তোমাদের বাড়ি নয় আর এই মধুও তোমাদের খাবার নয়। এখন সন্ধ্যে হয়ে গেছে। তোমাদের বাড়ি
ফিরে যেতে অসুবিধে হতে পারে। তাই আজকের রাত্রিটা আমি তোমাদের এখানে থাকতে দিতে
পারি। কিন্তু তোমাদের কথা দিতে হবে যে ছোট্ট মৌমাছিদের তোমরা কোন ক্ষতি করবে না। ’ পাঁচটা শামুকের মধ্যে যে সব থেকে বড় ছিল সে
হেসে উত্তর দিল – ‘তোমাদের মধুটা খেতে খুব ভালো। আমরা সপরিবারে
এখানে চলে এসেছি। শুধু একটা বা দুটো রাত নয়। আমরা এখন থেকে বরাবরের জন্যে এখানেই
থাকব। আর যতদিন না সব মধু শেষ হয়ে যায় ততদিন আমরা এই মধুই খেয়ে যাব।’ রানী মৌমাছি বলল – ‘শুধু
একটা রাত্রি আমি তোমাদের থাকতে দিতে পারি। কোনভাবেই সারাজীবন তোমরা এখানে বসবাস
করতে পারনা। তাছাড়া তোমরা কোন ভালো কাজ করেও আমাদের সাহায্য করতে পারবে না। এখন তো
তোমাদের একটা রাত্রি এখানে থাকতে দিতেও আমার চিন্তা হচ্ছে। যখন আমরা ঘুমাবো তখন
হয়তো মৌচাকের সব মধু তোমরা খেয়ে শেষ করে ফেলবে বা আমার ছেলেমেয়েদের মেরে ফেলবে।’ চিন্তিত মুখে রানী মৌমাছি ওখান থেকে চলে
গেল। তারপর বৃদ্ধ জ্ঞানী মৌমাছিদের ডেকে বলল – ‘আজ
রাত্রে তোমরা ঘুমিয়ো না। আমি ঐ শামুকগুলোকে বিশ্বাস করতে পারছি না।’ পরদিন সকালে জ্ঞানী মৌমাছিরা রানী মৌমাছিকে
এসে জানালো – ‘মোট পঁয়ত্রিশটা শিশু মৌমাছি কাল রাত্রে মারা
গেছে। শামুকগুলো আমাদের সব ঘরে ঢুকে সারা রাত ঘুরে বেড়িয়েছে। সব মধুতে মুখের নোংরা
লাগিয়ে দিয়েছে। সব মধু বিষাক্ত করে দিয়েছে। এই বিষাক্ত মধু খেলে মানুষরা ও মারা
যেতে পারে। মহামান্য রানী, আমাদের উচিত এক্ষুনি ওদেরকে
এখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া।’ রানী
মৌমাছি বলল – ‘আমরা আর একদিন দেখবো। এর মধ্যে ওরা স্বেচ্ছায় চলে
না গেলে আমরা উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।’ তারপর রানী মৌমাছি গেল শামুকদের সঙ্গে কথা বলতে। – ‘বন্ধুগন, তোমাদের বেশ সাস্থ্যবান দেখাচ্ছে। আমি জানি তোমরা এখানে বেশ মনের
আনন্দে রয়েছ। এখানকার মধুও তোমাদের খুব সুস্বাদু লেগেছে। কিন্তু তোমরা আমাদের ঘরে
থাকা শিশু মৌমাছিদের মেরে ফেললে কেন? আর কেনই বা আমাদের
সব মধু নষ্ট করে দিয়েছ?’ শামুকরা
কোন উত্তর না দিয়ে চুপ করে রইল। – ‘আমার মনে হয় আমি জানি কেন এটা করেছ তোমরা। আমার
বিশ্বাস তোমরা আমাদের শত্রু। কিছুদিন আগে এক মা শামুকের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল যে
আমাদের খুব বকাঝকা করেছিল। সে নিশ্চয় তোমাদের মা। সে যাই হোক। আমি এখন যা বলছি তা
মন দিয়ে শোন। কাল দুপুরের মধ্যে যদি তোমরা এই বাড়ি ছেড়ে না চলে যাও তাহলে তোমরা
সবাই এখানেই মারা যাবে।’ দুষ্টু ও
অহংকারী শামুকের দল তাচ্ছিল্যের সুরে বলল – ‘তোমাদের যা ইচ্ছে তাই করো। আমরা এখানেই থাকবো।
আমরা স্বাধীন। আমাদের যেখানে ইচ্ছে করে সেখানে যাবো, যা
ভালো লাগবে তাই খাবো। এখন আমাদের এই মৌচাকের মধু খেতে ভালো লাগছে, তাই আমাদের ইচ্ছে হলে সব মধু আমরা খেয়ে শেষ করে দেব। মোটকথা আমরা এখান
থেকে নড়ব না। এখানেই থাকব। দেখি তোমরা কী করতে পারো। ’ তখন রানী মৌমাছি খুব গম্ভীর হয়ে গেল। সে
তার সেনাবাহিনীকে ডেকে পাঠালো। তাদের বলল – ‘তোমরা সবাই যুদ্ধের প্রস্তুতি নাও। কাল দুপুর
পর্যন্ত সব মোম প্রস্তুত করে রাখো। তরবারিতে ধার দিয়ে তৈরী থাকো যুদ্ধের জন্যে।’ সঙ্গে সঙ্গে সেনাবাহিনীর মধ্যে সাজো সাজো
রব পড়ে গেল। হুলই তাদের তরবারি। হাজার হাজার সেনা মৌমাছি তাদের হূল শানিয়ে অপেক্ষা
করে রইল। পরদিন দুপুর বেলা শামুকরা কেউ মৌচাক ছেড়ে গেলনা। তাই দেখে রানী মৌমাছি
যুদ্ধ শুরুর আদেশ দিল। ‘সবাই
রন হুংকার দিতে শুরু করো। দরকার পড়লে হুল ফুটিয়ে শামুকদের মেরে ফেলবে।’ আদেশ পেয়েই সেনা মৌমাছিরা ভয়ংকর জোরে
ভোঁভোঁ আওয়াজ করে রন হুঙ্কার দিতে শুরু করল। শামুকরা সেই আওয়াজ শুনে ভয় পেয়ে যে
যার নিজেদের খোলের মধ্যে গুটিয়ে ঢুকে গেল। তখন রানী আদেশ দিল – ‘মোম
আনো জলদি।’ কিছু সেনা মৌমাছি আওয়াজ করে
ওদের ভয় দেখিয়ে চলল। আর কিছু মৌমাছি মোম নিয়ে এসে ওদের মুখের কাছে ঢেলে দিয়ে মুখটা
পুরো বন্ধ করে দিলো। দু ঘন্টার মধ্যে শামুক গুলোর এমন অবস্থা হল যে তারা না পারল
একটুও নড়াচড়া করতে, না পারল নিঃশ্বাস নিতে। তখন রানী
মৌমাছি সব শামুকদের উদ্দেশ্যে বলল – ‘আমি প্রথমে ভেবেছিলাম যে তোমরা আমাদের বন্ধু। তাই
তোমাদের রাত্রে থাকতে দিয়েছিলাম, পেট ভরে মধু খেতে
দিয়েছিলাম। কিন্তু তোমরা ভেবেছ আল্লাহ এই গোটা পৃথিবীটা শুধু তোমাদের একার জন্যেই
বানিয়েছেন। তোমরা ছাড়া আর কেউ সেখানে থাকতে পারবে না। তোমাদের এতো নীচু মন। তোমরা
যদি এরকম ক্ষুদ্র ও দুর্বল প্রানী না হয়ে কোন পাখি বা জন্তুর মতো বড় ও শক্তিশালী
প্রানী হতে তাহলে এই পৃথিবীতে আর অন্য কোন প্রানীরই স্থান হত না। এত করে বলা
স্বত্ত্বেও এখান থেকে চলে যেতে রাজী হলে না, এখন এখানেই
মরো। এটাই তোমাদের যোগ্য শাস্তি।’ তারপর রানী সব মৌমাছিদের নিয়ে আবার একটা নতুন মৌচাক তৈরী করল ও সেখানেই
বসবাস করতে থাকল। একদিন মৌমাছিদের মালিক এলো মধু নিতে। সে দেখল মৌচাকে কোন মৌমাছি
নেই, শুধু পাঁচটা মরা শামুক পড়ে আছে। মালিক সববুঝতে পারল।
বলল – ‘এই মৌচাকের মধু বিষাক্ত। এটা কে ভালো করে পরিস্কার করতে হবে।’ এই বলে সে সব বিষাক্ত মধু আর মরা শামুকদের
মাটিতে ফেলে দিলো। মৌমাছিরা বহাল তবিয়তে সুখে শান্তিতে বেঁচে রইল ও মানুষের উপকার
করতে থাকল।
No comments:
Post a Comment