Total Pageviews

Friday, February 5, 2016

চড়ুই পাখি, কাক আর লোভের শাস্তি


চড়ুই পাখি, কাক আর লোভের শাস্তি


একবার  চড়ুই পাখি আর কাক বন্ধুত্ব করলো।কাক প্রতিদিনই চড়ুইপাখির বাড়িতে আসতো।আর বলতো, 'কি বন্ধু কেমন আছো?'চড়ুই খুব বন্ধুত্বপূর্ণ আচড়ন করতো। কিন্তু কাক ছিলো খুবই লোভি আর দুস্টু স্বভাবের। একবার কোন এক গৃহস্থের উঠানে চাটাই ফেলে ধান আর মরিচ রোদে শুকাতে  দিয়েছে।কাক  তা দেখে চড়ুইকে বলল, বন্ধু,দেখি  তুমি আগে ধান খেয়ে শেষ করতে পারবে নাকি আমি আগে মরিচ খেয়ে শেষ করতে পারব?কাক আরো বলল, দেখো, আমি মরিচ আগে খাব।’   চড়ুই তখন বলল, না, আমি  আগে ধান খাব।’  কাক বলল, আর যদি তুমি না খেতে পার, তাহলে কি হবে?’  চড়ুই বলল, যদি না  পারি, তবে তুমি আমার বুকের মাংশ খাবে। আর যদি তুমি না খেতে পার, তখন  কি হবে?’  কাক বলল, তুমি আমার বুকের মাংশ খাবে।’  এই বলে চড়ুই আর কাক একত্রে ধান  আর মরিচ খেতে শুরু করল। চড়ুই কুট-কুট করে একটা দুটো করে ধান খায়, আর কাক খপাখপ করে একটি-একটি করে মরিচ খায়। কিছুক্ষনের মাঝে কাক সব মরিচ খেয়ে শেষ করল আর, চড়ুই এর তখন উঠোনের  ধানের চার ভাগের একভাগও  খাওয়া শেষ হয়নি।  তখন কাক বলল, কি ব্যাপার  বন্ধু,? ’  চড়ুই  বলল, এখন কি আর  হবে। বন্ধু হয়ে যদি তুমিব আমার বুক এর মাংশ খেতে চাও, তবে খাবে। তবে ঠোঁট দুটো ধুয়ে নিবে কিন্তু , তুমি নোংরা জিনিস খেয়ে অভ্যস্ত ।
কাক এতে কিছুটা মনোঃক্ষুন্ন হল আর বললো, ঠিক আছে আমি ঠোঁট ধুয়ে এখনি আসছি। বলে সে নাফ নদীতে ঠোঁট ধুতে গেল।   তখন নাফ নদী তাকে বললেন, তোমার নোংরা ঠোঁট দিয়ে আমার গায়ে স্পর্শ  করবে না । ঘটি দিয়ে জল তুলে নিয়ে তারপর ঠোট ধোও।’  তাতে কাক বলল, আচ্ছা, আমি ঘটি নিয়ে আসছি। বলে সে কুমোরের কাছে গিয়ে বলল-কুমোর,  ও কুমোর! দাও তো ঘটি,তুলব পানি, ধোব ঠোঁট।  কুমোর বলল, আমার কাছে তো এখন ঘটি নেই। মাটি আনো, এখুনি বানিয়ে দিচ্ছি। শুনে কাক মহিষের কাছে গিয়ে তার শিং চাইল, সেই শিং দিয়ে সে মাটি খুঁড়বে। কাক বলল-মহিষ,  মহিষ! দে তো শিং,খুঁড়ব মাটি, গড়বে ঘটি,তুলব পানি, ধোব ঠোঁট-তবে খাব চড়ুইর বুক।শুনে মহিষ গেল রেগে। তাকে এমনি গুঁতোতে এল যে সে সেখান থেকে সাথে সাথে  ছুট লাগাল !   তারপর সে কুকুরের কাছে গিয়ে বলল-ও কুকুর,  ও কুকুর!  মারবি মহিষ,নিব শিং, খুড়ব মাটি, গড়বে ঘটি,তুলব পানি, ধোব ঠোঁট-তবে খাব চড়ুইর বুক।  কুকুর তখন বলল, আগে দুধ আন তবে, খেয়ে শরীরেরজোর বাড়িয়ে নেই, তারপর মহিষ মারব।’   শুনে কাক গাইয়ের কাছে গিয়ে বলল-ও গাই, ও গাই! দাও তো দুধ,খাবে কুকুর, হবে তাজা,মারবে মহিষ, নিব শিং,খুড়়ব মাটি, গড়বে ঘটি,তুলব পানি, ধোব ঠোঁট-তবে খাব চড়ুইর বুক।গাই বলল, আগে ঘাস এনে দাও, খাই, তারপর দুধ দেব।’  শুনে কাক মাঠের কাছে গিয়ে বলল-ও মাঠ,  মাঠ! দাও তো ঘাস,খাবে গাই, দেবে দুধ,খাবে কুকুর, হবে তাজা,মারবে মহিষ, নিব শিং,খুঁড়ব মাটি, গড়বে ঘটি,তুলব পানি, ধোব ঠোঁট-তবে খাব চড়ুইব বুক। মাঠ বলল, ঘাস তো অনেক  আছে, কেটে নিয়ে যাওনা যত খুশি!’  তখন কাক কামারের বাড়ি গিয়ে বলল,ও কামার, ও কামার! দাওতো কাস্তে,কাটব ঘাস, খাবে গাই,দেবে দুধ, খাবে কুকুর,হবে তাজা, মারবে মহিষ, নিব শিং,খুঁড়ব মাটি, গড়বে ঘটি,তুলব জল, ধোব ঠোঁট-তবে খাব চড়ুইর বুক।কামার বলল, আমার কাছে তো আগুন নেই। আগুন নিয়ে আস, কাস্তে  বানিয়ে দিচ্ছি ।’   তা শুনে কাক গৃহস্থের বাড়ি গিয়ে বলল-গেরস্ত ভাই, দাও তো আগুন,গড়বে কাস্তে, কাটব ঘাস,খাবে গাই, দেবে দুধ, খাবে কুকুর, হবে তাজা, মারবে মহিষ, নিব শিং,খুঁড়ব মাটি, গড়বে ঘটি,তুলব পানি, ধোব ঠোঁট-তবে খাব চড়ুইর বুক।  তখন গৃহস্থ এক হাঁড়ি আগুন এনে দিল আর বলল, কিসে করে আগুন নিবি?’   বোকা কাক তখন তার পাখা ছড়িয়ে দিল আর বলল,এই আমার পাখার উপরে আগুন ঢেলে দাও।গৃহস্থ সেই হাঁড়িসুদ্ধ আগুন কাকের পাখার উপর ঢেলে দিল, আর সে তখুনি পুড়ে মরে গেল। চড়াইর বুক থেকে আর তার মাংশ খাওয়া হল না।  (বিদেশী রুপকথা  থেকে অনুবাদ কৃত)।


No comments:

Post a Comment