শীত
এসেছে। আবহাওয়া অনেক ঠাণ্ডা। স্বচ্ছ স্ফটিকের মত সাদা তুষার দেখতে খুবই ভালো লাগছে
বাচ্চা খরগোশের কাছে। বাচ্চা খরগোশ জন্মেছিল এই গ্রীষ্মে। তাই সে সময় তুষার দেখেনি
সে।“আম্মু, তুষার কী?”, বাচ্চা
খরগোশ তার মাকে জিজ্ঞেস করল।মা খরগোশ বললেন, “তুষার এক রকমের ফুল যা ঐ নীল আকাশে ফোটে।“তুমি কাছে থেকে দেখলে বুঝবে তুষার ছয়টি পল্লব
দিয়ে গঠিত।”মা খরগোশ বললেন, “ কী সুন্দর তুষার! তাই না ? চলো আমরা তুষারমানব বানাই।”মা খরগোশ বাসায় গিয়ে বালতি, শাবল আর অন্যান্য জিনিস আনলেন।
তারপর বাচ্চা খরগোশকে নিয়ে তুষারমানব বানাতে লেগে গেলেন।বাচ্চা খরগোশ শুধু তার মা
খরগোশকে উপর নিচে দৌড়ে দৌড়ে তুষার এনে দিতে লাগল। কারণ সে জানত না যে আসলে
তুষারমানব কী জিনিস। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাচ্চার মতো দেখতে একটি তুষারমানব হয়ে গেল।
বাচ্চা খরগোশ খুশিতে তুষারমানবের চারপাশে নাচতে লাগল। হঠাৎ করে বাচ্চা খরগোশ খেয়াল
করল, তুষারমানবের কোন চোখ ও নাক নেই।মা খরগোশ বললেন,“ঠিক আছে, কয়লা দিয়ে
চোখ আর গাজর দিয়ে নাক বানিয়ে দিচ্ছি।”বাচ্চা খরগোশ সাথে সাথে বাসা থেকে দুই টুকরো কয়লা এবং এক টুকরো গাজর এনে দিলো। একটি সুন্দর
তুষারমানব হয়ে গেল।মা খরগোশ বাচ্চা খরগোশকে তুষার মানবের নাম দিতে বললেন। বাচ্চা
খরগোশ তার নাম দিল “ছোট্ট
তুষার মানব”।বাচ্চা খরগোশের দেয়া নামটি মা
খরগোশের খুব পছন্দ হল। তিনি বালতি
দিয়ে ছোট্ট তুষার মানবের মাথায় একটি টুপি পরিয়ে দিলেন। প্রতিদিন বাচ্চা খরগোশ
বাইরে তাকালেই তুষারমানবকে দেখতে পেত। সে মাকে জিজ্ঞেস করত, তুষারমানবের ঠাণ্ডা লাগে না???।মা খরগোশ বললেন,
“তুষারমানবের ঠাণ্ডা লাগে না।
বরং তুমি তাকে ভিতরে আনলে ও সাথে
সাথে গলে যাবে।”একদিন
মা খরগোশ কাজে বাইরে গেলেন। কিছুক্ষণ পর বাচ্চা খরগোশের একা একা লাগতে লাগল। সে
বাইরে গিয়ে তুষারমানবকে বলল, “তুমি কি আমার সাথে খেলবে, ছোট্ট তুষার
মানব?তুষারমানব সাথে সাথে রাজি হয়ে গেল। সে বলল, “হ্যাঁ অবশ্যই! দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে
গেছি। খেলার জন্য আমিও কাউকে খুঁজছিলাম।”এরপর তারা দুজনে তুষারের উপর দিয়ে দৌড়াদৌড়ি করল। লুকোচুরি খেলল।
খেলতে খেলতে তারা পাশের পাহাড়ি জংগলে দিকে চলে যাচ্ছিল।পাহাড়ের একদিক থেকে বাচ্চা
খরগোশ বলছে, “আমি
বাচ্চা খরগোশ”।অপর দিক থেকে তুষারমানব বলছে, “আমি তুষারমানব।”পরে তারা একে অপরকে খুঁজে পেয়ে দুজনে একসঙ্গে চিৎকার করে উঠল। এই
খেলায় তারা দুজনেই খুব মজা পেল।একে অপরকে চিৎকার করে বলতে লাগল “আমরা ভালো বন্ধু”! ”আমরা ভালো বন্ধু”!খেলা শেষে একসময় ছোট্ট খরগোশ বাড়িতে চলে গেল। আগের মতই তুষারমানব বাইরে
দাঁড়িয়ে থাকল। ওদিকে বাচ্চা খরগোশ ঘরে ঢুকে ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ল।কিছুক্ষণ পরে ঘর
গরম রাখার জায়গা থেকে কাঠের মাধ্যমে আগুন লেগে গেল। আস্তে আস্তে আগুন সারা ঘরে
ছড়াতে লাগল। বাচ্চা খরগোশ আগুন থেকে বাঁচার চেষ্টা করল। কিন্তু ঘন ধোঁয়ার কারণে
কিছু দেখতে পাচ্ছিল না সে। এক সময় বাচ্চা খরগোশ জ্ঞান হারিয়ে ফেলল।তুষারমানব ঠিকই
বাইরে থেকে আগুন দেখতে পাচ্ছিল। কিন্তু আগুনের কাছে যাওয়ার সাহস পাচ্ছিল না। কারণ
আগুনের তাপে সে মুহূর্তের মধ্যে গলে যাবে। আগুন ক্রমশ বড় হতে লাগল। পুরো ঘর একসময়
পুড়ে যাওয়ার উপক্রম হল। শেষ পর্যন্ত তুষারমানব তার বন্ধু বাচ্চা খরগোশকে বাঁচানোর
প্রতিজ্ঞা করল। এমনকি যদি তাতে তার জীবন চলে যায় যাক। তুষারমানব দৌড়ে ঘরে ঢুকলো। সে
বাচ্চা খরগোশকে কোলে করে ঘরের বাইরে নিতে চেষ্টা করল। ইতিমধ্যে ঘর ভেঙে পড়তে শুরু
করেছে। আর এদিকে তুষারমানব গলতে শুরু করল। তুষারমানবের শরীর থেকে টপ টপ করে গলানো
পানি বাচ্চা খরগোশের মুখে পরতে লাগল। তুষারমানব পড়ন্ত দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে কোনরকমে
জ্বলন্ত ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে পারল। কিন্তু তার শরীর এতটাই ছোট হয়ে গেল যে তার
বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ পরই তুষারমানব পুরোপুরি গলে গিয়ে বাচ্চা
খরগোশের পাশে জমানো পানি হয়ে পড়ে থাকল। মা খরগোশ দূর থেকেই তার ঘরে আগুনের শিখা
দেখতে পেলেন। এই দৃশ্য দেখে তিনি দ্রুত বাড়ির দিকে এগোলেন। বাড়িতে পৌঁছে দেখলেন
পুরো ঘর পুড়ে ছাই। আর বাচ্চা খরগোশ টি তুষারের উপর পড়ে আছে। মা খরগোশ তখনই বাচ্চা
খরগোশকে ডেকে তুললেন। চোখ মেলে বাচ্চা খরগোশ সাথে সাথে মা খরগোশের বুকে আশ্রয়
নিল।
"তুমি বেরিয়ে এলে কিভাবে? " মা খরগোস জিজ্ঞাসা করল।
বাচ্চা খরগোশ বলল, “ছোট্ট তুষারমানব।”
তখন মা খরগোশ জানতে চাইলেন, তুষারমানব
টি কোথায় ?”
বাচ্চা
খরগোশ কিছুই বলতে পারল না। শুধু চোখে কান্নার পানি নিয়ে পাশে পরে থাকা চকচকে পানির
দিকে তাকিয়ে থাকল। পানির ভিতর দেখা যাচ্ছে দু'টুকরো কয়লা, একটি গাজরের টুকরো আর একটি বালতি। এগুলো দেখে মা খরগোশ বুঝতে পারলো কী
ঘটেছে। মা খরগোশ বাচ্চা খরগোশকে বললেন, “তুমি মন খারাপ করো না।সামনে যখন শীত আসবে তখন আমরা আবার ছোট্ট
তুষারমানব বানাব।” বাচ্চা
খরগোশ কিছু না বলে পরিষ্কার নীল আকাশের দিকে তাকাল। সেখানে সে যেন দেখতে পেল ছোট্ট
তুষার মানব তার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
No comments:
Post a Comment