As you like it - William Shakespeare - Bangla Translation |
As you like it - William Shakespeare - Bangla Translation - অ্যাজ ইউ লাইক ইট -উইলিয়াম শেক্সপিয়ার - বাংলা অনুবাদ
১
ইউরোপের দুটো দেশ, ফ্রান্স আর বেলজিয়ামের মাঝখান দিয়ে বহুদূর পর্যস্ত চলে গেছে আর্ডেনের
গহন অরণ্য। শুধু ওই দুটি দেশ নয়, ইউরোপের আরও অনেক দেশের
সীমান্ত ছুঁয়ে গেছে সেই
বন। এই বনে পাহাড়, ঝরনা, নদীর
পাশাপাশি রয়েছে গোরু, ভেড়া চরাবার বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠ।
একদিকে যেমন বাঘ, সিংহ, নেকড়ে
প্রভৃতি হিংস্র জন্তুরা শিকারের খোঁজে ঘুরে বেড়ায়, তেমনি
অন্য দিকে ফুল-পাতায় ছাওয়া গাছের ডালে বসে কোকিল আর জংলি ময়নারা রচনা করে এক
সুন্দর পরিবেশ। বনের একধারে স্ত্রী-পুত্র-পরিবার আর পোষা জন্তুদের সাথে বাস করে
কিছু মেষপালক।
ফ্রান্সের একটা ছোটো রাজ্য রয়েছে
ঠিক এই আর্ডেন জঙ্গলের লাগোয়া। সে সময় ইউরোপের অনেক ছোটো রাজ্যের রাজারা ডিউক
উপাধি নিয়ে রাজ্য শাসন করতেন। এ গল্প যে রাজ্যকে নিয়ে লেখা হয়েছে তার প্রাক্তন
শাসকের উপাধিও ছিল ডিউক। এই ডিউক নিজে সৎ ও সুশাসক হলেও তার ছোটো ভাই ফ্রেডারিক
ছিলেন যেমন স্বার্থপর তেমনি ধান্দাবাজ। নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য যে কোনও অন্যায়
কাজ করতেও পিছপা ছিলেন না তিনি।
নিজের মতোই সবাইকে সৎ এবং উদারমনা
বলে মনে মনে ভাবেন ডিউক। এ ধরনের লোককে নিয়েই হয় মুশকিল। পরম নিশ্চিন্তে ছোটো
ভাই ফ্রেডারিকের উপর রাজ্য শাসনের ভার ছেড়ে দিয়ে ধর্ম-কর্ম, পড়শোনা আর নির্দোষ আমোদ-প্রমোদে মেতে রয়েছেন তিনি। ফ্রেডারিক দেখলেন
এই সুযোগ। বড় ভাইয়ের সরলতার সুযোগ নিয়ে অনায়াসেই তিনি কেড়ে নিতে পারেন তার রাজ্য।
এর জন্য যুদ্ধ-বিগ্রহেরও প্রয়োজন নেই। তিনি মতলব ভাজতে লাগলেন। প্রথমে তিনি নিজের মত জঘন্য চরিত্রের কিছু লোককে খুজে বের করে তাদের প্রচুর টাকা পয়সা আর
সম্পত্তি দিয়ে নিজের দলে টেনে নিয়ে এলেন। তারপর তিনি তাদের বসিয়ে দিলেন
রাজ্যের নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে।
তাদের সাহায্যে রাজ্যের সমস্ত ক্ষমতা করায়ত্ত করলেন তিনি। এতদিনে ছোটো ভাই ফ্রেডারিকের আসল চেহারা দেখে আতকে উঠলেন
ডিউক। ফ্রেডারিক তাকে প্রাণে মেরে দেবে এই
আশঙ্কা করে ডিউক পালিয়ে গেলেন আর্ডেনের বনে। সভাসদদের মধ্যে যারা তাকে সত্যি সত্যিই
ভালোবাসত,
তারাও চলে গেলেন ডিউকের সাথে। বহুদিন আগে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়ে মারা যান তার স্ত্রী। যাবার সময় সেই মা-হারা
মেয়েটিকে সাথে নিয়ে যেতে পারলেন না ডিউক।
ডিউকের মেয়ে রোজালিন্ড দেখতে যেমন
সুন্দর তেমনি মধুর তার স্বভাব। ডিউকের পাষণ্ড ছোটো ভাই ফ্রেডারিকেরও মাত্র একটিই মেয়ে, নাম সিলিয়া। ওরা দুই বোনই সমবয়সি। সবে পা দিয়েছেন যৌবনে । রোজালিন্ডের সমবয়সি হলেও
সিলিয়া কিন্তু দেখতে তার মতো সুন্দর নয়। ছোটোবেলা থেকে দুজনে একসাথে বড়ো হবার ফলে প্রগাঢ় বন্ধুত্ব জন্মেছে উভয়ের মাঝে। একে অপরকে ছেড়ে মোটেও থাকতে পারে না। বড়ো ভাই
তার দু-চোখের বিষ হলেও সে কিন্তু নিজের
মেয়ে সিলিয়ার মতোই ভালোবাসে রোজালিন্ডকে। বাবার অভাব যাতে সে বুঝতে না পারে তার জন্য চেষ্টার কোনও ক্রটি নেই ফ্রেডারিকের। সিলিয়াও
সাধ্যমতো চেষ্টা করে রোজালিন্ডকে খুশি
রাখতে তার বাবা যে রাজ্য হারিয়ে বনে বনে ঘুরে বেড়াচ্ছে, কাকার দয়ায় যে সে
বেঁচে - রোজালিন্ড সর্বদাই চেষ্টা করে যাচ্ছে তার
আচার-আচরণ দিয়ে সে নিদারুণ লজ্জা মুছে
ফেলার।
স্যার রোল্যান্ড ডি’বয় (Sir Rowland De’Bois) ছিলেন
রাজ্যহীন ডিউকের অন্যতম প্রিয় বন্ধু। বহুদিন আগেই তিন ছেলেকে রেখে মারা গেছেন তার স্ত্রী। ছেলেদের নাম অলিভার, জ্যাক আর অরল্যান্ডো। ডিউক রাজ্য ছেড়ে বনে চলে যাবার কিছুদিন আগেই মারা যান রোল্যান্ড ডি’বয়। তার সম্পত্তির পুরোটাই একলা দেখা-শোনা করে বড়ো ছেলে অলিভার।
মেজো ভাই জ্যাককে সহ্য করতে পারলেও
ছোটো ভাই অরল্যান্ডোকে মোটেও দেখতে পারে না
অলিভার। মেজো ভাইকে বড়োলোকের
ছেলেদের মতো দামি দামি পোশাক কিনে দিলেও, কেন জানি অরল্যান্ডোকে এ সব থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে অলিভার। বাবার মৃত্যুর পর সে একটাও দামি পোশাক কিনে দেয়নি ছোটো ভাইকে। তার নির্দেশে
স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়েছে অরল্যান্ডোর।
চাষা-ভূষোর ছেলেদের মতো পুরনো ময়লা তালি-মারা পোশাক পরে খেত-খামারে কাজ করতে হয় অরল্যান্ডোকে। কিন্তু এসব
দুঃখ-কষ্ট সত্তেও হতাশ হবার ছেলে নয় অরল্যান্ডো। বড়ো ভাই অলিভারের নজর এড়িয়ে নিজের
চেষ্টায় লেখাপড়া শিখেছে সে। এ বয়সেই সুন্দর কবিতা লিখতে পারে অরল্যান্ডো। ছন্দের দোলায় সেগুলো হয়ে ওঠে এক একটি চমৎকার কবিতা
।
অরল্যান্ডো শুধু দেখতে সুন্দর নয়, সে প্রচণ্ড শক্তিধর। জলে ভিজে, রোদে পুড়ে আর ভেড়া, ছাগল চরিয়ে শুধু তার স্বাস্থ্যই মজবুত হয়নি, দৃঢ় হয়েছে তার মাংসপেশিও। অরল্যান্ডো যে কত শক্তি
ধরে কদিন বাদে তা টের পেয়ে অবাক হল সবাই।
চার্লস নামে এক মাইনে করা কুস্তিগীর
আছে রাজসভায়। মাঝে মাঝেই সে দেশের লোককে আহবান জানায় তার সাথে কুস্তি
লড়তে। আগে অনেকেই তার আহবানে
সাড়া দিত। কিন্তু হেরে যাওয়া কুস্তিগীরের হাত-পা ভেঙে দেয় বলে কেউ তার সাথে কুস্তি
লড়তে যায় না। এবার বহুদিন পর
কুস্তি লড়ার ডাক দিয়েছে চার্লস। তার আহবানে
সাড়া দেয় এক বুড়ো চাষির তিন জোয়ান ছেলে আর
অরল্যান্ডো। কিন্তু কুস্তি লড়ার দিন একরকম গায়ে পড়ে তার সাথে ঝগড়া বাধাল অলিভার।
অরল্যান্ডো তখন বাগানে বসে পুরনো চাকর অ্যাডামের
সাথে কথা বলছিল। কথায় কথায়
তার বাবা স্যার ডি’বয়ের রেখে যাওয়া উইলের কথা তুলে তিনি অ্যাডামকে বললেন, “আমার যতদূর জানা আছে বাবা তার উইলে মাত্র একহাজার
ক্রাউন আমার জন্য বরাদ্দ করে গেছেন, আর
আমায় মানুষ করার দায়িত্ব দিয়ে গেছেন বড়ো ভাইয়ের ওপর, সে কথা তুমিও জানো অ্যাডাম।
কিন্তু আমার বড়ো ভাই শুধু মেজভাই জ্যাককে লেখা-পড়া শেখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছে। লেখা-পড়া শিখে সে উন্নতিও করেছে। আর আমার বড়ো ভাই অলিভার কিনা আমার লেখা-পড়া
বন্ধ করে দিয়ে খেত-খামারে কাজে লাগিয়েছে। সারাদিন সেখানে মজুরের মতো কাজ করার পর রাতে আমায় খেতে হয় চাকর-বাকরদের
সাথে। এভাবে প্রতিদিন সে আমার উপর অন্যায়-অত্যাচার
করে চলেছে। আমি আর কিছুতেই সহ্য করতে রাজি নই অলিভারের এ অন্যায়।
অ্যাডাম
নিজেই এ সব অন্যায়ের সাক্ষী। তাই অরল্যান্ডোর কথায় ঘাড় নেড়ে সায় দিল সে। অলিভার বলল, “অ্যাই অরল্যান্ডো! কাজ-কর্ম বাদ দিয়ে সকালবেলা এই বাগানে বসে
আড্ডা দিচ্ছিস”
গলাটা সামান্য চড়িয়ে বলল অরল্যান্ডো, ‘তা কী আর করব! আমায় তো কোনও কাজ-কর্ম শেখানো হয়নি, তাই কিছু করছি না’।
অরল্যান্ডোকে ধমকে বলে উঠল অলিভার, ‘তাই নাকি? আজকাল দেখছি তোর
বড্ড বাড় বেড়েছে। কার সাথে
কথা বলছিস তা খেয়াল আছে?’
‘কেন? আমি কথা বলছি আমার বড়ো ভাই অলিভারের সাথে’, জবাব দিল অরল্যান্ডো, একই রক্ত বইছে আমাদের শিরায়’।
‘তবে রে! তোর এত দূর সাহস!’ বলে তার দিকে তেড়ে এল অলিভার।
একটুও ঘাবড়ে না গিয়ে অরল্যান্ডো
বলল, ‘মুখ সামলে কথা বলবি অলিভার। এদিক দিয়েমতুই আমার চেয়ে অনেক ছোটো’।
অলিভার উত্তেজিত হয়ে বলল, ‘শয়তান, তুই আমায় মারের ভয়
দেখাচ্ছিস!’
অরল্যান্ডো জবাব দিল, ‘শয়তান আমি না তুই নিজে? নেহাত তুই আমার বড়ো ভাই, নইলে তোর জিভ টেনে ছিড়ে ফেলে দিতাম’।
দু-ভাইয়ের মাঝে মারামারি বেধে যাবার
উপক্রম। তখন তাদের থামাতে এসে অ্যাডাম বলল, ছিঃ! ছিঃ! কী করছেন আপনারা? বড়ো কর্তা মারা
যেতে না যেতেই নিজেদের মধ্যে মারামারি শুরু করেছেন? আপনাদের প্রয়াত পিতার কথা মনে রেখে
নিজেদের বিভেদ ভুলে যান।
এরই মধ্যেই মারামারি চলতে লাগল। এক সময় অরল্যান্ডো তার চেয়ে দুর্বল দাদা
অলিভারের গলা টিপে ধরল।
যন্ত্রণায় চিৎকার করে বলল অলিভার, ওরে অরল্যান্ডো! ভালো চাস তো ছেড়ে দে আমার গলা। ভীষণ লাগছে আমার।
আমার কথা না শোনা পর্যস্ত আমি তোমায়
ছাড়ব না, জবাব
দিল অরল্যান্ডো, বাবা তার উইলে আমায় মানুষ করার দায়িত্ব দিয়ে গেছেন তোমার উপর। সে
দায়িত্ব কতটুকু পালন করেছ তুমি? হয় তুমি নিজের দায়িত্ব পালন কর নতুবা বাবা আমার জন্য যা টাকা রেখে
দিয়েছেন তা আমায় দিয়ে দাও। নিজের ভাগ্যকে সাথে নিয়ে চলে যাব আমি ।
গর্জে উঠে অলিভার বলল, বাবার উইল অনুযারী তোমার কিছু পাওনা থাকলে তবে তো পাবে! আর এতই যদি নিজের পাওনা-গণ্ডা বুঝতে
শিখেছ,
তাহলে নিজের ভার নিজেই নিয়ে নাও। আজ থেকে তোমায় খাওয়াবার দায়িত্ব আমি ছেড়ে দিলাম। তুমি এখনই আমার সামনে থেকে
দূর হয়ে যেখানে খুশি চলে যাও। এরপর অ্যাডামের
দিকে সে তাকিয়ে বলল, আর, হ্যা অ্যাডাম, তোর মতো আপদকে পুষতে চাই না আমি । হারামজাদা! তুইও দূর হয়ে যা অরল্যান্ডোর সাথে সাথে।
জলভরা দু-চোখে অলিভারের দিকে তাকিরে
বলল অ্যাডাম, বাহ অলিভার, কি সুন্দর
কথা বলতে শিখেছ তুমি? তোমর স্বর্গবাসী পিতা, আমার মনিবও কখনও এভাবে কথা বলেননি আমার সাথে। বেশ আমি যাচ্ছি। ঈশ্বর
তোমার পিতার আত্মাকে শান্তি দিন।
Next Part
Next Part
No comments:
Post a Comment