The Ant and the Grasshopper - William Somerset Maugham
“পুরো গ্রীষ্মকাল তুমি কি করেছো?”
“সঞ্চয়ী, তোমার সামনেই তো আমি গান করেছি, সারা দিন সারা রাত্রী গান গেয়েছি”
“তুমি গান গেয়েছো কেনো, যাও এখন নৃত্য করোগে”।
আমি আমার এ অংশে মূল বিষয় হতে বিচ্যুত হতে চাই না, কিন্তু ছেলেবেলায় এটির সত্যিকার জ্ঞান সম্পর্কে আমার ত্রুটিপূর্ণ ধারনা ছিল যে পাঠের মধ্যে আমি কখোনোই নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারিনি। আমার সহানুভূতি ছিল ঘাসফড়িঙ এর উপর। পিঁপড়ে আমার নজরেই আসতো না, যতক্ষন না আমার পায়ের নিচে না পড়তো। এটির মূল বিষয়ের বিচারে আমার সাধারন জ্ঞান ও দূরদর্শিতা এটাই প্রমান করে। আমি উপকথার মূলভাবনার সহায়তা নিতে পারলাম না। অন্য একদিন দেখলাম জর্জ র্যামজে হোটেলে বসে খাবার খাচ্ছে। আমি কারো মাঝেই এমন গভীর বিষাদের ছায়া প্রতিফলিত হতে দেখিনি। তাকে দেখে মনে হল সারা দুনিয়ার ভার তার কাধে তুলে দেয়া হয়েছে। আমি তার জন্যে দুঃখ পেলাম। আমি তৎক্ষণাৎ বুঝতে পেলাম তার দূর্ভাগা ভাইটি তাকে আবার সমস্যায় ফেলেছে। আমি তার কাছে গেলাম আর আমার হাত বাড়িয়ে দিলাম।
“কেমন আছো?” জিজ্ঞেস করলাম।
আমার মনটা এখন ভালো নেই, বলল সে।
সে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, হ্যা, টমই আবার......।
কেনো, তুমি কি তাকে আদর যত্ন করোনি? পৃথিবীর সবকিছুই তুমি তার জন্যে করেছো। তুমি তো অবশ্যই জানো সে একটা কুলাঙ্গার।
আমি মনে করি প্রতিটি পরিবারেই একটা কুলাঙ্গার থাকে ।
টম তার জীবনের কুড়িটি বছর খুব আরামেই কাটিয়েছে। বেশ ভালো ভাবেই সে তার জীবন শুরু করেছিল। সে ব্যবসায় নেমেছিল, বিয়ে করেছিল, দুটি সন্তানও লাভ করেছিল।
র্যামজে পরিবারের সবাই ছিল সত্যিকার ভাবেই সম্মানিত মানুষ। এটাও ঠিক যে প্রত্যেক ব্যাপারেই টম হতে পারতো একজন সম্মানিত ব্যাক্তি। কিন্তু সে একদিন বিনা নোটিশেই ঘোষনা দিল যে, সে আর কোন কাজ করবে না, বিবাহিত জীবনও তার উপযুক্ত নয়, সে নিজেকে উপভোগ করতে চায়। সে কোন যুক্তি তর্কের ধার ধারবে না। সে তার কর্মস্থল ও স্ত্রীকে ত্যাগ করল। অল্প কিছু টাকা পয়সা সম্বল করে সে দুটো বছর ইউরোপের নানা রাজধানী শহরে ঘুরে ফিরে আরামে কাটাল। তার আত্মীয় পরিজনের মাধ্যমে নানা গুজব মাঝে মধ্যে কানে আসতে লাগল। তারা অন্তরে খুব বেদনা অনুভব করতে লাগল। সত্যি তার ছিল একটা সুখি ও নিরাপরদ জীবন। নিকটজনেরা সবাই মাথা নাড়ত আর জিজ্ঞাসা করতো যখন তার সব টাকা শেষ হয়ে যাবে, তখন কি করবে। তারা দ্রুতই বুঝতে পারলো টম অনেক ঋণ করেছে। সে ছিল খুবই ফুরফুরে মেজাজের এবং নীতিজ্ঞান বর্জিত। জর্জ র্যামজে তার জন্যে কারো সাথে দেখা সাক্ষাৎ করতে পারত না। কারন ঋণকে এড়িয়ে চলা খুবই কঠিন ব্যাপার। সে তার বন্ধু বান্ধবের থেকে নিয়মিত টাকা আদায় করত আর নতুন নতুন বন্ধু জুটিয়ে নিত। সে সর্বদা বলত টাকা পয়সা তুমি খরচ করবে প্রয়োজনে এবং একঘেয়েমি কাটানোর জন্যে; টাকা হল তৃপ্তিকর জীবন যাপনের জন্যে; টাকা খরচ করে বিলাসবহুল জীবনযাপন করো।
এর জন্যে সে তার ভাই জর্জের ওপর নির্ভর করত। সে টমের বাজে ব্যাপারকে নিজের মধ্যে প্রশ্রয় দিতো না। জর্জ ছিল খুবই গভীর প্রকৃতির মানুষ। টমের বিপথগামীতার কোন খবরই সে রাখতো না। জর্জ ভদ্র স্বভাবের হওয়ায় সে দু একবার টমকে সংশোধন এর সুযোগ প্রদান করেছে। আবার বেশ কিছু অর্থও প্রদান করেছে নতুন করে শুরু করার জন্যে। আর টম সে টাকা দ্বারা মোটরসাইকেল ও দামী গহনা ক্রয়ে ব্যবহার করেছে। যখন আশেপাশের লোকজন এর থেকে চাপ সৃষ্টি হল, তখন জর্জ সব অনুধাবন করতে পারল। বুঝলো তার ভাই কখনো কোন কর্মে স্থির হতে পারবে না। এরপর সে হাত গুটিয়ে নিল। টম জর্জকে বিবেকহীন এর মত প্রতারণা শুরু করল। কোন সৎ নীতিবান মানুষের পক্ষেই এটি দর্শন করা শোভনীয় হবে না যে তার ভ্রাতা তার প্রিয় হোটেলের পেছন দিকে বসে মদের বোতলে ঝাকুনি দিচ্ছে এবং গাড়ির বক্সে ভর্তি করার জন্যে ক্লাবের সামনে অপেক্ষা করছে। টমের জবাব হল- গাড়িতে আরোহন করে ক্লাবে যাওয়া একটি আভিজাত্যপূর্ণ ব্যাপার। কেবল জর্জই পারে তাকে দুটো দুশো পাউন্ডের নোট প্রদান করতে। সে কি তার পরিবার উচুতে উঠুক এটি চায় না? জর্জ প্রদান করল।
একবার টম হাজতে যাওয়ার উপক্রম হল। জর্জ মানসিক ভাবে ভীষণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ল। সে পুরোপুরি ন্যাক্কারজনক বিষয়ের মধ্যে চলে গিয়েছিল। সত্যিই টম বহুদূরে সরে যাচ্ছে। সে বুনো, নির্বোধ ও স্বার্থপর, কিন্তু এর আগে কখনো কোন অসৎ কর্ম করেনি, যার কারনে জর্জ মনে করল এটা সম্পূর্ণ বেআইনি ব্যাপার। সে যদি আদালতে অভিযুক্ত হয় অবশ্যই সে দণ্ডিত হবে। কিন্তু তোমার ভাই জেলে যাক এটাতো তুমি চাওনা। ক্রনশো নামক এক ব্যাক্তির দ্বারা প্রতিহিংসাবশত টম প্রতারিত হয়েছে ।
কোর্টে ক্রনশো অভিযোগ এ বলেছে টম একটা ইতর, তার শাস্তি হওয়া উচিত। এর মূল্য হিসেবে জর্জকে সীমাহীন ঝামেলায় জড়িত হতে হল। ৫০০ পাউন্ডের চুক্তিতে বাদীর সাথে মিমাংসা হল। আমি এর আগে কখনো জর্জকে এতোটা ক্ষিপ্ত হতে দেখিনি। যখন সে জানতে পারল যে, টাকা প্রদানের পর পরই ক্রনশো আর টম দুজনে মিলে মন্টিকার্লোতে যাত্রা করেছে। সেখানে তারা একমাস আমোদ ফুর্তি করে কাটালো।
কুড়িবছর ধরে টম, রেস খেলাধুলা, নাচ, অভিজাত হোটেলে খাওয়া দাওয়া, দামি পোষাক পড়া, অল্প বয়েসি মেয়েদের সাথে ছিনালী করে কাটিয়েছে। তাকে দেখলে মনে হতো এইমাত্র সে ব্যান্ডবক্স থেকে বের হয়ে এসেছে। তার বয়স যদিও ৪৬ কিন্তু তুমি তাকে দেখলে ৩৫ এর বেশি ভাবতে পারবে না। সে খুব আমুদে একজন সংগী। তুমি তার সাথে মেলামেশা করে কখনোই ভাবতে পারবে না সে একটা অপদার্থ। সে খুবই ফুরফুরে মেজাজের অধিকারী, চালচলনে চটপটে, খুবই সুরুচিসম্পন্ন, আমার অনিচ্ছাসত্ত্বেও সে প্রতিনিয়ত জোর করে টাকা আদায় করত তার জীবনযাপন এর প্রয়োজনীয়তার কথা বলে। অনিচ্ছাভরেও আমি কখনো তাকে ধার না দিলেও আমি তার ঋণে জড়িয়ে গেছি। টম সবাইকে জানত এবং টমকেও সবাই চিনতো। তুমি তাকে সমর্থন না করলেও তাকে সহায়তা করতে চাইবে।
বেচারা জর্জ তার অপদার্থ ভাইটির এক বছরের বড় হলেও মনে হয় তার বয়স ষাট। গত পঞ্চাশ বছরে একদিনও পাক্ষিক ছুটিটাও সে কাটায়নি। প্রতিদিন সকাল সাড়ে নয়টায় সে অফিসে যেত এবং সন্ধে ছটা না বাজা পর্যন্ত অফিস ত্যাগ করত না। সে ছিল খুবই সৎ, পরিশ্রমী আর রাগী। তার ছিল সুশীলা স্ত্রী, সে কখনোই অসৎ ছিল না, চারটি কন্যার সে ছিল একজন সৎ পিতা। সে তার আয়ের তিন ভাগের একভাগ জমা করত, তার ইচ্ছে ছিল গ্রামের বাড়িতে সে একটি বাড়ি করবে। যেখানে চাষবাস করবে আর গল্ফ খেলে সময় কাটাবে। তার জীবন ছিল অভিযোগবিহীন। সে ছিল খুবই আনন্দিত, কারন সে যেমন বুড়িয়ে যাচ্ছিল, ঠিক তেমনি টমেরও বয়স বাড়ছে। সে দুটো হাত ঘর্ষন করে বলত, তখন সব কিছুই ভালো ছিল যখন টম ছিল যুবা কিন্তু দেখতে ছিল খুব সুন্দর কিন্তু সে আমার চাইতে মাত্র এক বছরের ছোট। আর চার বছর পরে তার বয়স হবে পঞ্চাশ। তখন জীবনকে সে সহজভাবে খুজে পাবে না। এরই মধ্যে আমি তিরিশ হাজার পাউন্ড জমিয়ে ফেলেছি। আমি বলব ২৫ বছর টম শুধু কুৎসার মধ্য দিয়েই ফুরিয়েছে এবং আমরা দেখব সে কিভাবে এটাকে গ্রহন করে। আমরা দেখব কাজ করাই কি সবচেয়ে ভাল নাকি আলসেমিটা ভাল। বেচারা জর্জ! আমি তার সাথে সমব্যাথী। এখন তার পাশে বসে আমি বিষ্মিত। কি অখ্যাতির কাজটাই না টম করল। জর্জ বেচারা সত্যিকারভাবেই খুব বিপর্যস্ত।
এখন কি খবর তা কি তুমি জানো? সে জিজ্ঞাসা করল আমাকে। আমি খারাপ কিছু বলার প্রস্তুতি নিলাম। আমি ভেবে দেখলাম, যদি শেষ পর্যন্ত টম পুলিশের হাতে ধরা পড়ে, জর্জ শক্ত একটা কিছু বলার জন্যে নিজেকে প্রস্তুত করবে।
“তুমি তো আমার পুরো জীবনটাকে অস্বীকার করতে পারো না। সারা জীবন সততা ও সম্মানের সাথে কঠোর পরিশ্রম করেছি। ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্যে শ্রম প্রদান করেছি। আমি সরাসরি সামনের দিকে তাকিয়ে বলতে পারি অবসর জীবনে আমার ছোট আয় দ্বারা নিজেকে নিরাপদ করতে পারব। আমি সর্বদা আন্তরিকতার সাথে শ্রম দিয়েছি। যা আমাকে সুখি ও সমৃদ্ধশালী অবস্থায় এনেছে”।
“আর এটাও তো তুমি অস্বীকার করতে পারবে না যে, টম একটা অলস, অপদার্থ, অসৎ চরিত্র এবং ভবঘুরে দুর্বৃত্ত। যদি এক কোন সঠিক বিচার হয় তাকে অনাথ আশ্রমে যাওয়া উচিত”।
জর্জের মুখে লাল আভা দেখা দিল। কয়েক সপ্তাহ আগে টম তার মায়ের চাইতে বেশি বয়সি মহিলার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। এখন সে মহিলা মৃত্যুবরণ করেছে। তার সব সহায় সম্পত্তির মালিক এখন টম। সে এখন অর্ধ লক্ষ্য পাউন্ড নগদ সহ একটি প্রমোদ জাহাজ(ইয়ট), লন্ডনে একটি বাড়ি এবং গ্রামাঞ্চলে একটি বাড়ি পেয়েছে। জর্জ রামজে টেবিলে মুষ্ঠাঘাত করে বলল, এটা মোটেও ভালো নয়। আমি বলছি এটা মোটেও ভালো নয়। উচ্ছন্নে যাক, এটা মোটেও ভালো নয়।
এ ব্যাপারে আমার কোন সহায়তা নেই। আমি জর্জের ক্রুদ্ধ মুখের দিকে তাকিয়ে উচ্চ হাস্য করলাম। আমি আমার চেয়ারটিকে টেনে তার খুব কাছে নিয়ে এলাম। জর্জ আমাকে কোন দিন ক্ষমা করবে না । কিন্তু টম আমাকে আগামী মে মাসের ডিনারে আমন্ত্রণ জানিয়েছে তার মোহনীয় বাড়িটাতে, যদিও টম বরাবরই আমার কাছ থেকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য পেয়েছে, যদিও এটা অভ্যাসের বশে ঘটেছে কিন্তু এই মহত্ত্বের কাছে সবকিছুই তুচ্ছ।
Translator: Unknown
Composed and Edited: Maruf Mahmood
|
Nice
ReplyDeleteWow
ReplyDelete